‘মুফতী’ কেন ‘মুফতে’ এবং ‘আমিনী’ কেন ‘কমিনী’?
‘মুফতী’ মানে যিনি ফতওয়া দেন। কিন্তু ইসলামে শুধু ফতওয়া দেয়ার ইলমই বিচার্য বিষয় নয়। পাশাপাশি ছহীহ আমল বা পরহিযগারীও এক্ষেত্রে অনিবার্য বিষয়। আমিনীর কোনোটাই না থাকায় তাকে ‘মুফতী’র পরিবর্তে ‘মুফতে’ এবং ‘আমিনী’র পরিবর্তে ‘কমিনী’ বলা হয়।
মুফতে কমিনীর আলাদীনের চেরাগের কাহিনী
ধর্ম ব্যবসায়ী কমিনীর উত্থান পর্ব অনেকটা আলাদীনের চেরাগের কাহিনীর মতো। দরিদ্র পিতার সন্তান ছিলেন তিনি। বাড়িতে অভাব। অনেক দিন হাঁড়ি জ্বলতো না। পিতা ছিলেন বি-বাড়িয়া শহরতলীর গোপনঘাট এলাকার কাঠমিস্ত্রি ওয়াজ উদ্দীন। ছোটবেলা থেকেই কমিনী মাদ্রাসার পড়তেন। পিতা তার লেখা পড়ার খরচ চালাতে পারতেন না। পরে একদিন কমিনী বি-বাড়িয়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন পুরান ঢাকার বড় কাটারায়। এখানে এসে ভর্তি হন হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসায়। ছাত্র হিসেবে কিছুটা মেধাবী ছিলেন। তাই নজরে পড়ে যান খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ্জীর। তিনি তখন ছিলেন জামিয়া আরাবিয়া কোরআনীয়া লালবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল, পরে আমিনী ধীরে ধীরে হাফেজ্জীর ঘনিস্ট হতে থাকেন। লেখাপড়া শেষ হতে না হতেই হাফেজ্জী কমিনীর সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দেয়। এরপর একই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন।
১৯৮১ সালে শিক্ষক হয়ে রাতারাতি সিনিয়র শিক্ষক হয়ে যান। হাফেজ্জী ১৯৮৬ সালে মারা যাওয়ার পর কমিনী মাদ্রাসারার প্রিন্সিপালের পদ দখল করে নেন। এ সময় তিনি তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির রুটি হালুয়া নিতেও নিয়োজিত হন। গঠন করেন ইসলামী ঐক্যজোট নামের রাজনৈতিক দল। ১৯৮৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারান। এভাবে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হতে হতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে যোগ দেন। যে আসন থেকে প্রতি নির্বাচনই তার জামানত হারাতে হতো, সেই আসনে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হন। ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর উপর চালান স্ট্রিম রোলার।
সশস্ত্র বিদ্রোহের ঘোষণা
১। ২০০০ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়নে ‘ইসলামী আইন বাস্তবন কমিটির জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে’০৬-এ সভাপতির ভাষণে তিনি ফিলিস্তিনী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মতো বাংলাদেশেও ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেন।
মাফিয়া কানেকশন ও মুতায়া বিয়ে জায়িয করার গুরুতর অভিযোগ:
বিগত ১১ আগস্ট, ১৯৯৭ দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় ‘মুফতী আমিনী সমাচার’ ভাষ্যে দুটি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়:
১. মুফতে ফজলুল হক আমিনীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের গোপন বৈঠকের অডিও ভিডিও টেপ রয়েছে।
২. মুফতে আমিনী ইরান থেকে ফিরে এসে মুতায়া ম্যারেজ (কন্ট্রাক্ট বিবাহ) জায়েয বলে ফতওয়া দিয়েছিলেন এসব উত্থাপিত অভিযোগের বিরুদ্ধে মুফতি আমিনীর কোনো প্রতিবাদপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।
মসজিদ ভাঙচুর
এই মুফতে সাহেব ১০-০৮-৯৪ সালে একদল সশস্ত্র লোকের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি লালবাগে হাফেজ্জী হুজুর মসজিদে হামলা করেন এবং মসজিদের দেয়াল ভেঙে ফেলেন। (সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ১১-০৮-১৯৯৪)
জঙ্গিজনক মুফতে কমিনীর বক্তব্য: দেশে কোনো জঙ্গি নেই!
৫। দেশের এই বোমাবাজিগুলো হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে। দেশে যে ইসলামী গণজাগরণ দেখা দিয়েছে তার বিরুদ্ধে এবং তা রোখার জন্যই এ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ গণজাগরণ রোখার জন্য এদেশে আওয়ামী লীগ, এনজিও ও বামপন্থিরা একসঙ্গে কাজ করেছে।
বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই, মৌলবাদী নেই, লাদেনের সঙ্গে এদেশের কারো কানেকশন নেই। কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না। (দৈনিক সমকাল, ০৭ অক্টোবর ২০০৫)
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও কুখ্যাত রাজাকার এই কমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া কওমী মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গি ট্রেনিং কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়েছে জনগণকে।
* ২০০২ সালের এপ্রিলের এক হরতালে এই কমিনীর জঙ্গি বাহিনী রেললাইন উপড়ে ফেলে। এদিকে জোট সরকারের শেষ সময়ে ক্বওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির নামে কমিনীর ভূমিকা ছিল জঙ্গিবাদের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ।
মুফতে কমিনী বলেছে- দেশে কোনো জামাআতুল মুজাহিদীন নেই!
৬। সাপ্তাহিক ২০০০-এ এক সাক্ষাৎকারে মুফতে কমিনী বলেছে, “জামাআতুল মুজাহিদীন কিছু না। সব সাজানো। সারাদেশে বোম রাখার মানুষ ওদের আছে নাকি? এতো লোক কোথায়? আর টাকারও তো একটা ব্যাপার আছে।”
সাপ্তাহিক ২০০০-এর ঐ সংখ্যায় মুফতি আমিনী সম্পর্কে আরো বলা হয়, তার অধীনে সারাদেশে তিন শতাধিক মাদ্রাসা আছে। এই মাদ্রাসাগুলোতে উগ্র জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দরিদ্র শিশুদের দিয়ে ধর্মের নামে রাজনৈতিক চর্চা করা হয়। (সাপ্তাহিক ২০০০, ২৬ আগস্ট, ২০০৫)
তালেবান ও লাদেনের পক্ষে সাফাই এবং বাংলাকে আফগান করার ষড়যন্ত্রে বিভোর আমিনী
১৯৯৯ সালের ৮ মার্চ ঢাকার এক জনসভায় বর্তমান জোট সরকার নেতা ফজলুল হক আমিনী প্রকাশ্যে বলেছে, ‘আমরা ওসামার পক্ষে, আমারা তালেবানদের পক্ষে এবং ২০০০ সালের মধ্যে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা সরকার গঠন করবো।’
২০০০ সালের পর থেকেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান।’
প্রতারণা ও জমি দখলের মামলা
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি/২০০৭ ঈসায়ী তারিখে কমিনীর বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় প্রতারণা ও জমি দখলের একটি মামলা হয়।
এ প্রসঙ্গে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়- “গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লালবাগ থানায় হাজির হয়ে কোতয়ালী থানাধীন ১০১ আবু হাসানাত রোডের বাসিন্দা মৌলভী রশিদ আহাম্মদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় মামলার বাদী মৌলভী রশিদ আহাম্মদ চারদলীয় জোটের সাবেক সাংসদ ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, লুটপাট, দখলবাজী ও হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে এজাহারনামায় আবেদনপত্র লালবাগ থানার ডিউটি অফিসার নয়নের কাছে জমা দেন।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক পর্যালোচনার জন্য অভিযোগপত্রসহ বাদীকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবজ্যোতি খীসার কক্ষে পাঠানো হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় ওসির নির্দেশে মুফতী ফজলুল হক আমিনীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে নিয়ে লালবাগ থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। মামলা নং ৪২। তারিখ ২৭/০২/০৭ ইং। ধারা ৪৪৮/৩২৩/৩৭৯/৩৫৪/৪২৭/৫০৬/১১৪/৩৪ দঃবিঃ।
অর্থ চুরি ও আত্মসাতকারী কমিনী
* বিগত ৩রা মার্চ/২০০২ ঈসায়ী তারিখ শুক্রবার এই মুফতে এমপি সম্পর্কে এক খবরে বলা হয়: “আমিনীর গাড়ি আমদানি নিয়ে আইসিডিতে তোলপাড়।”
“মুফতে ফজলুল হক আমিনী এমপি জালিয়াতি করে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সে সাড়ে ৪৩ লাখ টাকার গাড়ি মাত্র ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্য প্রদর্শন করে আমদানি করেছে। তার বিরুদ্ধে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। ... এদিকে গাড়ি আমদানির এই ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হুন্ডি পাচারেরও অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, আমদানিকারক ফজলুল হক আমিনী এলসির মাধ্যমে পরিশোধ করেছে মাত্র ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এলসি বহির্ভূত অন্য যে কোনভাবে লেনদেন করা হলে তা অবশ্যই হুন্ডি। (দৈনিক যুগান্তর, ৩রা মে, ২০০২ ঈসায়ী, শুক্রবার।)
ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হারাম। কিন্তু ম্যাডাম খালেদার জন্মদিন পালন করা মুফতে কমিনীর মতে ছওয়াবের কাজ। নাঊযুবিল্লাহ!
আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন পৃথিবীতে এসেছিলেন- সেদিন পালন করা বা ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করাকে হারাম ফতওয়া দিয়েছে মুফতে আমিনী গং। কিন্তু ম্যাডাম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে বড় কাটরা মাদ্রাসায় নিজ হস্তে গরু জবাই করে পালন করেছে এই মুফতে আমিনী ওরফে কমিনী। এই হচ্ছে তার আজীবনের হাক্বীক্বত। মুহূর্তেই ভোল পাল্টানো, স্বার্থের জন্য নিজের ফতওয়ার বিরুদ্ধে নিজে কাজ করার পাশাপাশি ইসলামের নামে সন্ত্রাসের গডফাদার এবং জঘন্য জঙ্গিজনক এই মুফতে আমিনী ওরফে কমিনী।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৪