প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ীই জামাতের রাজনীতি নাজায়িয। আর কথিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী তো আরো শক্ত হারাম। সংবিধান দরদী জামাতীরা এখন সংবিধানের নাজায়িয ও হারাম ফতওয়া মেনে করবে কি?
যেখানে কথিত গণতন্ত্র কার্যকর সেখানে খেলাফত তো দূরের কথা ইসলামের নামে কথিত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিও তথা ইসলামের নামে দলীয় রাজনীতিই কখনো সম্ভব নয়।
তথাকথিত জামাতে মওদুদী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে ইসলামের নামে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে বলে প্রচার করছে।
এবং বিগত বিএনপি সরকারের মেয়াদকালের পর তারা নিজেদের খুব বেশি সংবিধান প্রেমিক বলে জাহির করেছে।
সংবিধানের এক চুল খেলাপ করা যাবে না বলে আওয়াজ তুলেছে। বলাবাহুল্য, বিএনপি-জামাতের সথে আঁতাতকৃত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে তারা তখন তাদের সুবিধার্থে সংবিধান রক্ষার জোরদার দাবী তুলেছিলো।
১৯৭১-এর রাজাকাররা ১৯৯০-এ গণতন্ত্রী সেজেছে বলে প্রচারণা রয়েছে। পাশাপাশি ১৯৭১-এর রাজাকাররা ১৯৯৬-এ কিরূপ সংবিধান দরদী হয়েছিলো তা এখনও জাতির মনে আছে।
কিন্তু তাদের সে সংবিধান প্রেম যদি এখনও একইভাবে বজায় থাকে তবে দেশবাসী তাদের অভিশাপ থেকে এখনই নাজাত পায়।
নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কালো টাকা ও পেশীশক্তিমুক্ত রেখে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধন করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আলোচনার পর এই সংশোধনী তৈরি এবং ১৯ আগস্ট তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।”
আর সংশোধিত নির্বাচনী আইন তথ্য ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান অনুযায়ী জামাতে মওদুদী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হতে পারে না।
সংশোধিত আইনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ইসিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নিবন্ধনের জন্য বেশকিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে।
যেগুলো সংযোজিত হয়েছে এই আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারায়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধদেশ ২০০৮-এর ৯০গ(১) ধারায় যেসব দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবে তার মধ্যে রয়েছে,
ক. দলের গঠনতন্ত্রের কোনো ধারা বা উপধারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়,
খ. কোনো দলের গঠনতন্ত্রের ধারা-উপধারায় ধর্মীয় প্রাধান্য বা বৈষম্য বা ভাষাগত বৈষম্য বা নারী-পুরুষের বৈষম্য থাকে।
গ. দলের নাম, পতাকা, প্রতীক অথবা অন্য কোনো কর্মকা- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ভীতিকর অথবা দেশকে কোনো বিবৃতকর অবস্থায় ফেলতে পারে।
ঘ. দলের কোনো অফিস বা কোনো শাখা বা অন্য কোনো কমিটির কর্মকা- বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চেতনার পরিপন্থী হলে।
এছাড়া নিবন্ধনের জন্য ৯০/বি/১ধারা এ(২) উপধারায় বলা হয়েছে, দলের প্রত্যেক কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিধান করতে হবে এবং ২০২০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই বিধান কার্যকর করতে হবে।
উল্লেখ্য, জামাতে মওদুদীর গঠনতন্ত্র এ সকল ধারার পরিপন্থী। দলটির গঠনতন্ত্রের কোথায়ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে স্বীকার করা হয়নি। বরং তারা দলীয়ভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দলের নেতারা সরাসরি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলো।
গঠনতন্ত্রের ৫৩ ধারায় ১ উপধারা অনুযায়ী মহিলা অঙ্গনে আন্দোলনের কাজ পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র বিভাগ থাকবে এবং ইহার নাম হবে মহিলা বিভাগ, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ। আর ২ উপধারা অনুযায়ী আমীরে জামাতকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দানের জন্য তাদের একটি মজলিসে শুরা থাকবে। যা সম্পূর্ণরূপে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনের খেলাফ। (যদিও জামাতীরা আজ পর্যন্ত কোনদিনই তাদের কার্যকলাপে প্রমাণ করতে পারেনি।)
জামাতের গঠনতন্ত্রের ২ ধারায় ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ উপধারায় রাষ্ট্রীয় শাসন ও বিচার ব্যবস্থার কোনো উল্লেখ নেই। বরং আল্লাহ পাক-এর আইনের কথা বলা হয়েছে। ৩ ধারায় উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানব জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ও তাঁর রসূল প্রদর্শিত দ্বীন ইসলামী জীবন বিধান কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি অর্জন করাই আমাদের লক্ষ্য।’
গঠনতন্ত্রের ৪ ধারায় জামাতের স্থায়ী কমিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করবে।
৫ ধারায় আল্লাহর আইন চাই ও সৎ লোকের শাসন কায়েমের কথা বলা হয়েছে। ২৩(ক) ধারায় দলীয় কমিটির তথা কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ গঠনের বর্ণনা থাকলেও সেখানে নারী প্রতিনিধিত্বের কোন উল্লেখ নেই। আবার ৫১ ধারায় পৃথক কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগ বা জামাতের মহিলা শাখার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলো সকল পর্যায়ের কমিটিতে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার যে বিধান প্রণীত হয়েছে জামাতের গঠনতন্ত্রে তা আদৌ নেই। অথচ দেশের প্রচলিত সংবিধানে তা রয়েছে। এবং জামাতে মওদুদীরা দেশের প্রচলিত সংবিধান রক্ষায় বদ্ধপরিকর বলে নিজেদের দাবী করেছে। সুতরাং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তো তারা নিবন্ধিত হতে পারে না।
এছাড়া দেশের সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বিধিমালার ৯০(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও জামাতে মওদুদী দলটি নিবন্ধন যোগ্য নয়। তাদের নিবন্ধন পাওয়া উচিত নয়।
এদিকে বাংলাদেশের সংবিধানের বিধান মতেও জামাতের নিবন্ধন প্রাপ্তির সুযোগ নেই। এমনকি তাদের রাজনীতি করারও কোনো অধিকার নেই। সংবিধানে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সমাজের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু জামাতের গঠনতন্ত্রে তা নেই।
তথাকথিত জামাতে মওদুদীর উদাহরণ উট পাখির মত। তাকে উড়তে বললে বলে আমি পাখি না। আবার বোঝা বহন করতে বললে বলে আমি উট না।
মূলতঃ স্বাধীন দেশে এরূপ বর্ণচোরা, বার বার ভোল পাল্টানো, গিরগিটির ন্যায় ঘন ঘন রং পাল্টানো দলটা কিভাবে দেশে কথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির ফায়দা লুটছে তা বিস্ময়েরও বিস্ময়। তাদেরকে যখন বলা হয়,
কোথায় তোমাদের ইসলামী কর্মকা-?
কোথায় তোমাদের মাঝে ইসলাম?
তখন তারা জবাব দেয়, তারা গণতন্ত্রী।
কিন্তু আবার যখন বলা হয়-
কোথায় তোমাদের মাঝে গণতন্ত্রের শর্ত-শারায়েত?
তখন তারা বলে, আমরা ইসলামী দল(?)।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী জামাতের নিবন্ধন সহীহ নয় মর্মে কয়েকটি দৈনিক খবর করেছে। “দৈনিক ভোরের কাগজ“ সেকেন্ড লিড করেছে: “আইনের গ্যাঁড়াকলে জামাত। সংবিধান ও আরপিওর সঙ্গে দলীয় গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক, ইসির নিবন্ধনপ্রাপ্তির সুযোগ নেই”। (৯-৯-২০০৮)
“দৈনিক ডেসটিনি” সেকেন্ড লিড করেছে: “আইন মানা হলে নিবন্ধন পাবে না জামাত”।
“দৈনিক সংবাদ” প্রথম পৃষ্ঠায় স্পেশাল বক্স আইটেমে শিরোনাম করেছে: “ওরা বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সংবিধান মানে না, প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা মানে না, মূল দলের নেতৃত্বে নারীদের থাকার বিধান নেই। জামাত নিবন্ধের অযোগ্য”।
উল্লেখ্য, জামাতের নিবন্ধনের বিরুদ্ধে এ খবরকে এক কলামে সংক্ষিপ্ত করে ছাপে “দৈনিক যায়যায়দিন”। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ দাবীকারী “দৈনিক জনকন্ঠ”ও এমনকি “দৈনিক ইত্তেফাক”সহ আরো অন্যান্য পত্রিকাও এ খবর হাইলাইট করতে ব্যর্থ হয়। তবে সব পত্রিকাই একটি বিশেষ দিক উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয় যে, জামাতে মওদুদীরা ইসলামের নামে যে ভোট চাচ্ছে যদি গোটা দেশাবাসীর ভোটও তারা পায় তবুও সংবিধানের ৭(১) ও ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা দেশ চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে। সংবিধান অনুযায়ী তাদের দেশ পরিচালনা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হবে।
আসলে জামাতে মওদুদীরা ভাল করেই জানে যে, তারা কোনদিনই এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর চাপা ব্যতীত তাদের আর কোন উপায় নেই। তাদের লেজুর বৃত্তি করে ক্ষমতার যা ভাগ পাওয়া যায় সেটাই তাদের চরম পাওয়া।
কাজেই এরকম ধর্মব্যবসায়ী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার জামাতে মওদুদীকে তাদের ঘৃণ্য ও আজন্ম মুনাফিকীর জন্য শুধু রাজনৈতিক নিবন্ধনই বাদ নয় বরং তাদের শক্ত বিচারসহ দেশ থেকে নির্বাসিত করা উচিত। এ বোধে এ প্রজন্মকে আলোড়িত করতে হবে। তবে অভিশপ্ত এ জামাতে মওদুদী থেকে দেশবাসী রেহাই পাবে।
আর কথিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী তো আরো শক্ত হারাম। সংবিধান দরদী জামাতীরা এখন সংবিধানের নাজায়িয ও হারাম ফতওয়া মেনে করবে কি?