somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এখন এনার্জি ড্রিংকসের নামে আফিম সেবনে বুঁদ। সরকারের ব্যর্থতা দুঃখজনক

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকসের হাত ধরে নিজেদের অজান্তেই নেশার জগতে প্রবেশ করছে দেশের তরুণ-তরুণীরা। কথিত এনার্জি ড্রিংকস নামের এসব পানীয়তে রয়েছে আফিম ও অ্যালকোহলসহ নানা ক্ষতিকর নেশা দ্রব্য। তারপরও রেডিও-টেলিভিশন, পত্রিকা ও রাস্তাঘাটে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করছে বিভিন্ন কোম্পানি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বাজার সয়লাব হওয়া এসব এনার্জি ড্রিংকস পান করলে দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি হতে পারে। চরম ক্ষতি করতে পারে গর্ভবতী মা ও সন্তানের। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর জানায়, এরই মধ্যে কম পরিচিত তিনটি ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকস পরীক্ষা করে তারা ভয়াবহ মাদক আফিম পেয়েছেন। এর পরও আইনি কোনো বাধা না থাকায় বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব ক্ষতিকর পানীয়।

সূত্র মতে, এই মুহূর্তে দেশে এনার্জি ড্রিংকসের বাজার প্রায় সাড়ে ৬শ' কোটি টাকার। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। তবে এগুলোর উপকারিতা, ক্ষতিকর প্রভাব ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয়া থাকে না কোনোটিতেই।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছে, এনার্জি ড্রিংকসে ক্ষতিকর অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি আছে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন যা মৃগীরোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দেহে ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনই যথেষ্ট। একজন নারীর জন্যে এ মাত্রা ৩০০ মিলিগ্রাম। অথচ একটা এনার্জি ড্রিংকসের ক্যানেই থাকে ৩৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন। সফট ড্রিংকস কোম্পানিগুলোর দাবি- এটা তারা ব্যবহার করছে স্বাদ বাড়ানোর জন্য। কারণ ক্যাফেইনের তেতো স্বাদ অন্যান্য ফ্লেভারকে বাড়িয়ে দেয়। বাড়িয়ে দেয় আসক্তি। তরুণরা একবার যখন এতে অভ্যস্ত হয় তখন তার দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে তারা। অন্য সব আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদানের মতো ক্যাফেইনও সাময়িকভাবে মানুষের মুডকে চাঙ্গা করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর রয়েছে অনেকগুলো ক্ষতিকর দিক।

চিকিৎসকরা জানায়, এসব ক্ষতিকর ও নেশাজাতীয় উপাদান মেশানো এক বা দুই বোতল সফট ড্রিংকসই অনিদ্রা, নার্ভাসনেস ও দ্রুত হৃদস্পন্দন সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট। বেশি পরিমাণে খেলে তা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন থেকে শুরু করে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ প্রবণতা, পেশিতে টান লাগা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, বিষন্নতা এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী মহিলা- যারা সফট ড্রিংকস পান করেছেন তাদের গর্ভপাত, সময়ের আগেই প্রসব বা কম ওজনের বাচ্চা জন্ম দেয়ার ঝুঁকি বেশি।

ক্যাফেইনের আরেকটি প্রভাব হলো, এটি প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়ায় এবং দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে। এ ছাড়া সফট ড্রিংকস দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যারামেলের রং আনার জন্যে সফট ড্রিংকস এ পলি-ইথিলিন গ্লাইকোল নামের যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকান, জেনারেল স্টোরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত অন্যান্য পানীয়র সঙ্গে থরে থরে সাজানো হট ফিলিংস, ট্রিপল এক্স, ফাস্ট ফিলিংস, পাওয়ার, এনার্জি, হর্স পাওয়ার, হর্স ফিলিংস, সুপার পাওয়ার, ফাস্ট হর্স, ম্যান পাওয়ারসহ কথিত সব এনার্জি ড্রিংকস।

মাত্র ৪৫ টাকা মূল্যের এনার্জি ড্রিংকস সেবনের পর শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সাময়িক এ উত্তেজনার জন্যই পানীয়গুলো দেদার বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতাদের মত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় অলিগলিসহ অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে এ মাদক সেবন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এনার্জি ড্রিংকের নামে বাজারজাত করা পানীয়গুলোতে যে 'অপিয়েটস' মিলছে, তা আফিম থেকে উদ্ভূত। অপিয়েটস হেরোইন, নেশার ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর মাদকের মতোই ক্ষতিকর। আরেক উপাদান 'সিলডেনাফিল সাইট্রেট' যৌন উত্তেজক হিসেবে কাজ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে তাদের ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকে আকৃষ্ট করতেই এসব ভয়ঙ্কর মাদকের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। বাজার তৈরি করতেই প্রথম পর্যায়ে কম দামে তা বিক্রি করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০-এর ১৯/৩ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কারো কাছে আফিম ও আফিম উদ্ভূত পণ্য পাওয়া যায় এবং তা যদি দুই কেজির বেশি হয় তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদ- অথবা যাবজ্জীবন কারাদ-। আইনের এত কঠোর বিধান থাকার পরও অসৎ চক্রগুলি এনার্জি ড্রিংকের নামে আফিম মেশানো পণ্য উৎপাদন করছে।

মাদকের এ অভিনব ব্যবসার বিস্তার ঘটেছে মূলত গত বছরের গোড়ার দিকে। বিশেষ চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানা খুলে কথিত এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে বাজারজাত করেছে।
এতে উঠতি বয়সের ছেলেরাসহ যুবকরাই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। দেশে এভাবে একটা উপার্জনক্ষম কর্মশক্তি ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ নেশার দ্রব্য অবাধে প্রবেশ করিয়ে এদেশের উপার্জনক্ষম পুরুষ ও যুবশক্তিকে যড়যন্ত্রমূলকভাবে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।

পর্যবেক্ষক মহল জানায়, ১৯৯০ সাল থেকে যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাজ করছে, কিন্তু আইন প্রয়োগের অভাব এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতিপরায়ণতার কারণে এদেশে মাদকের অপব্যবহার বাড়ছে। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অন্ধ, বোবা আর বধিরের মতোই। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি ফ্যাশনযুক্ত শ্লোগান উঠেছে, ‘মাদককে না বলো।’ অথচ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ মাদকের বিরুদ্ধে যা বলা আছে তার প্রচারে মুসলমানের অন্তরে এমনিতেই দাগ কাটার কথা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×