তখন ২০১০ সাল। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ Admission Test দিয়ে ঢাকা ফিরছিলাম ট্রেন এ। আমার সিটটা ছিল জানালার পাশে। আমার ঠিক Opposite সিটে একটা মেয়ে বসে ছিল। ওর নাম অরিন । অরিনের বাবাও পাশের সিটে ছিল। মেয়েটিও আমার মত Admission Test দিতে আসছিলো
ট্রেন চলছে। মেয়েটি আমার দিকে হঠাত হঠাত তাকাচ্ছে। আমিও। কিছুক্ষন পর মেয়েটি আমাকে বলল, তুমিও কি Admission Test দিতে আসছিলা? মেয়েটির প্রশ্ন শূনে অবাক হলাম দুইটা কারনে, এক, আমার হাতে ফাইল, Admit Card এইগুলা ছিল, তাই ওর বোঝার কথা ছিল যে, আমি Admission Test দিতে আসছি। দুই, প্রথম কথাতেই আমাকে ‘তুমি’ বলে ডাকলো। যাইহোক, আমি বললাম,
আমিঃ হুম। তুমি কোথায় কোচিং করেছ?
মেয়েটিঃ রেটিনাতে। তুমি?
আমিঃ Omeca তে।
মেয়েটিঃ তোমার নাম কি?
আমিঃ আলিম।
মেয়েটিঃ ওহ। আচ্ছা, রনি ভাইয়াকে চিনো? Omeca তে ক্লাস নেয়।
আমিঃ না।
মেয়েটিঃ তোমার দেশের বাড়ি কোথায়?
আমিঃ সিরাজগঞ্জ।
মেয়েটিঃ আমরা তো সিরাজগঞ্জ হয়েই যাবো, তাই না?
আমিঃ হুম।
ট্রেন চলছে। ও আমার সাথে গল্প করেই যাচ্ছে। আমিও। বিরতিহীন গল্প। ওর বাবা ঘুমিয়ে পরছে। মাঝে মাঝে ও আমার কথা শূনে এতো Loudly হেসে উঠতেছে যে, সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ও বিষয়টা খেয়াল করেনি। হয়তো করেও না করার ভান করছে। এই গুনটা সব মেয়েদের আছে। ও আমার সাথে এমনভাবে কথা বলতেছে, যেন, আমাকে অনেক আগে থেকে চিনে।
ট্রেন যমুনা সেতুর উপর উঠলো। রাত তখন ১০ টা বাজবে হয়তো। আমি জানালা দিয়ে আমার মাথাটা বের করলাম। জ্যোৎস্না রাত। পুরো নদীটা চাদের আলোয় চিকচিক করছিল। প্রকৃতির কি অপুরুপ সৌন্দর্য ! আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। একটু পর অরিনও আমার জানালা দিয়েই মুখ বার করলো। আমি আবারো খানিকটা অবাক হলাম, কারন, ও এখন আমার খুব কাছাকাছি। একই জানালা দিয়ে মধ্যরাতে দুজন চাঁদ আর নদী দেখছি। ও কোন কথা বলতেছে না। হয়তো প্রকৃতর রুপের কাছে হার মেনে মন খারাপ হয়ে গেছে। প্রচণ্ড বাতাস লাগছে আমাদের চোখ মুখে। অরিনের চুল বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমার মুখে এসে লাগছে ওর চুলের ঝাপটা। এইবার ও চাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে। চাদের আলোয় একটা মেয়েকে দেখতে এতোটা রূপবতী লাগে জানা ছিল না। কি অদভুত সেই মুহূর্তটা !
আমি বললাম, একটা গান সুনাবে? ও বলল, আজ থাক, অন্য একদিন। আমি বললাম আরে, তোমার সাথে কি আমার আর কোনদিন দেখা হবে নাকি। ও কি যেন বলতে চেয়েও বলল না। খানিক্ষন চুপ থেকে গান ধরল,
আমারও পরানও যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো,
আমারও পরানও যাহা চায়...
আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। ওর গান চাঁদ, নদী, সমস্ত প্রকৃতর মাঝে মিশে যাচ্ছিলো। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। ও গান শেষ করে, আমাকে বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। আমি বললাম কি কথা, বলো। ও বলল, না থাক। ও জানালা থেকে মুখ বের করে সিটে বসে পড়লো। আমি আরও কিছুক্ষন থাকলাম।
আবার দুজন গল্প করতে শুরু করলাম। ওর বাবা ঘুমিয়েই যাচ্ছে। ট্রেন প্রায় এয়ারপোর্ট স্টেশন এ চলে আসছে। একটু পর অরিন নেমে যাবে। বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার করে উঠলো। একটা মেয়ের সাথে পরিচয় মাত্রতো কয়েক ঘণ্টার জন্য। তার জন্য কেন এমন লাগছে? কে জানে ! আল্লাহ্ সবকিছু বোঝার ক্ষমতা মানুষকে দেন নাই।
অরিন নেমে যাচ্ছে। অনেক ইচ্ছা করছিল অরিনকে বলতে, তোমার ফোন নাম্বারটা দিবা? বলতে পারিনি। অরিন নেমে যাওয়ার সময় বলল, তুমি এতো ভিতু কেন? আমি কিছু বললাম না।
ট্রেন ছেড়ে দিল। আমি জানালা দিয়ে দেখছি, অরিন ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে!
এখন ২০১৬। অরিনের সাথে আর কোনদিন দেখা হয়নি। অরিন হয়তো কোনদিন জানতেই পারবে না যে, ওকে নিয়ে আমি আজ এতগুলো কথা লিখলাম। আর আমি এখনও ওকে মনে রেখেছি। অরিনের হয়তো আমার কথা মনেই নেই !
অরিন, তুমি কি মেডিকেল এ Chance পেয়েছিলে?
তুমি এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছ ,না?
তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে?
ট্রেন এ আমার সাথে জ্যোৎস্না দেখতে তোমার কেমন লেগেছিল?
অরিন, তুমি আমাকে ওইদিন ভিতু বলেছিলে কেন?
আমার নাম কি তোমার মনে আছে?
আচ্ছা অরিন, তুমি সেদিন কি বলতে চেয়েছিলে?
জীবনে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর কখনই খুজতে নেই !!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৭