১.
সকাল দশটার মতো বাজে। শামীমদের অফিসে হঠাৎ বেশ সোরগোল শুরু হলো। সাভারে নাকি একটা গার্মেন্টস ভবন ধ্বসে পড়েছে। শামীমের অফিসের কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। খবর শুনেই সে সাথে সাথে মোবাইল ফোন দিয়ে অনলাইন সংবাদপত্র ঘাঁটতে শুরু করলো। অবাক বিস্ময়ে দেখলো, সকাল সাড়ে আটটার দিকে নয়তলা একটি ভবন ধ্বসে নেমে এসেছে তিন-চার তলার উচ্চতায়।শামীম সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তার মাথায় প্রথমেই এলো ফ্লোর-টু-ফ্লোর হাইট তাহলে এখন কত? দুই-তিন ফিট? তার মানে মানুষ পুরোপুরি চ্যাপ্টা হয়ে যায় নি। নাকি অনেক মানুষ চাপা পড়েছে হঠাৎ নেমে আসা বিম-এর নিচে?
খবরগুলো পড়তে পড়তে শিউরে উঠছিল শামীম। আগের রাতেই নাকি এই ভবনে ফাঁটল ধরা পড়েছে। এমনকি ঐ ভবনে যে ব্যাংকটি ছিল, আজ তা খোলেই নি। অথচ গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের বাধ্য করেছে ওখানে কাজে আসতে! শামীম একবার কল্পনা করার চেষ্টা করলো, তার এই পাঁচ তলা অফিস ভবনটিতে ফাঁটল দেখা দেবার পর চীফ ইঞ্জিনিয়ার স্যার যদি বলেন, সবাইকে অফিসে আসতে হবে, সে কি আসতো? হয়তো আসতো, ‘বসের অর্ডার’ বলে কথা।
“শামীম সাহেব, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছেন জানেন?” পাশের ডেস্কের অজিত বাবু ডেকে বললেন।
“কী, অজিত দা?”
“লোকজন নাকি বিল্ডিং ঝাঁকিয়ে ফেলে দিয়েছে, হা হা হা”
“বলেন কী? ঝাঁকুনির ল্যাটেরাল ফোর্স এ্যাতো? আমাদের তো তাহলে উইন্ড লোড আর আর্থকোয়েকের সাথে এখন থেকে হিউম্যান-শেইক এর জন্যে লোড ক্যালকুলেট করতে হবে…”
“বাদ দেন, দাদা। কে কোত্থেকে কী শুনে আপনাকে ফাঁসিয়ে দেবে, তখন শ্যাম রাখি, না কুল রাখি করতে হবে…” শামীম একটু হেসে বলে।
অজিত বাবু গম্ভীর হয়ে টেবিলের ফাইলগুলোর প্রতি অতিমনোযোগী হয়ে পড়লেন।
শামীম-এর আর কাজে মন বসে না। আজ তার টেবিলে অনেকগুলো ফাইল। কিছু এস্টিমেট চেক করতে হবে। বিল জমা পড়েছে বেশ কিছু। কয়েকটা টেন্ডার-এর কপিও চেক করা বাকি। কিন্তু তার মন চলে গেছে সাভারে। কী অবস্থা ওখানে? কেমন আছে আটকে পড়া মানুষগুলো? মরেছে ক’জন?
২.
দুপুরের খাবারটা মুখে রুচলো না শামীমের। সুধাকে ফোন করে আগেই বলে রেখেছে, সাভার যাবে সে। সুধা রাজী হয়নি। না হোক, ওর কথা মতো সবই তো করে শামীম। আজ না হয় একবার অবাধ্য হবে। লাঞ্চ বক্সে তখনও সুধার রান্না করা কিছু ভাত আর মাছের তরকারি রয়ে গেল। খাবার নষ্ট করলে সুধা কষ্ট পাবে, তবু আজ আধপেটা খেয়ে শামীম উঠে পড়লো। এক্স-এন স্যারকে আগেই বলা আছে, আধবেলা ছুটি নেবে সে। এক্স-এন স্যার আলম সাহেবের মনটা নরম; চীফ ইঞ্জিনিয়ার স্যারের মতো তিনি অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক যন্ত্র নন। কাজেই যোহরের নামাজটা পড়ে শামীম অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। তার অ্যাকাউন্টে চার হাজার টাকা ছিল। বাসস্ট্যান্ডের এ.টি.এম. বুথ থেকে হাজার তিনেক টাকা তুললো। তারপর বাসে উঠে পড়লো সাভারের উদ্দেশে।
সাভার বাজারের মুখেই ‘রানা প্লাজা’। ভবনটি ধ্বসে পড়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এলাকা লোকে লোকারণ্য। বাস শামীমকে নামিয়ে দিলো বাজারের কিছু আগে। এরপর দীর্ঘ যানজট, সেটা পেরুতে সময় লাগবে অনেক। কাজেই শামীম বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরলো।
রানা প্লাজার সামনে তখন বিভিন্ন ধরনের লোক। ইতোমধ্যে কেউ কেউ ধ্বসে পড়া ভবনের ফাঁক ফোঁকর গলে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। হামা দিয়ে কিছুদূর নাকি চলাফেরা করা যাচ্ছে। এরা কেউ সাভার বাজারে কোন দোকানের বা কোন গার্মেন্টস-এর কর্মচারি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে কিছু ছাত্র। সকলেরই চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। কিছুক্ষণ পর পর দুয়েকজন বেরিয়ে আসছে ভবনের ভেতরটা ঘুরে। চিৎকার করে তারা জানাচ্ছে, ভেতরে আটকে আছে হাজার হাজার মানুষ। সবাই উদ্ধার পাবার জন্যে চিৎকার করছে, কিন্তু ছাদগুলো এমনভাবে নিচে নেমে এসেছে যে, তাদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না।
শামীম রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য ডুবুডুবু। স্বেচ্ছাসেবকের কিছু দল তৈরী হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তারা কেউ কেউ খালি হাতে উদ্ধার কাজে নেমে পড়েছে। কেউ বা হাতুড়ি-শাবল চালিয়ে কিছু দেয়াল-বিম ভেঙ্গে কাউকে কাউকে উদ্ধার করে আনছে। কম-বেশি আহত হয়েছে আটকে পড়া সবাই। কাছেই এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আহতদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে। বিম বা ধ্বসে পড়া দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে মাথায় যারা আঘাত পেয়েছে, তারা আর বেঁচে নেই। জীবিত কেউ বের হলে সকলে উল্লাস করছে, আর লাশ বের হলে বিষন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। মৃতদের জড়ো করা হচ্ছে কাছের অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে।
সুধা কয়েকবার ফোন করেছে শামীমকে। মাত্র কয়েক মাস হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। বাসায় সে একা। শামীমের জন্যে অস্থির হয়ে পড়েছে এতক্ষণে। কিন্তু শামীমের আজ বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। সে নিজে একবার ঢোকার চেষ্টা করেছিল ঐ মৃত্যুপুরীতে। ভেতরটা অন্ধকার। কানে আসছে আর্ত-চিৎকার। অনেকের পা চাপা পড়েছে বলে নড়তে পরছে না, অনেকের বা হাত…। শামীম কয়েকজনকে বাইরে থেকে পানি নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিয়ে এসেছে। বাজার থেকে কিছু বিস্কিট, কলা, ব্রেড কিনে ভেতরে কয়েকজনকে খাইয়ে এলো সে। কিন্তু এর বেশি সে পারছে না। তার মতো অনেকেই খাবার কিনে খাওয়াচ্ছে আটকে পড়া শ্রমিকদের।
ভবনের মালিক রানা নাকি স্থানীয় সাংসদের ডান হাত। সে ঘটনাস্থল থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। গতরাতে সে নাকি জোর দিয়ে বলেছে ফাটলটি সামান্য এবং ভবনটি নিরাপদ। শামীম অবাক হয়ে ভাবে, কোন সাহসে লোকটা এমন বলল! আর তার কথায় বিশ্বাস করে গার্মেন্টস-এর মালিকেরা কেনই বা শ্রমিকদের জোর করেছে কাজে আসতে? কোনটা বেশি দামি? তৈরি পোশাক নাকি শ্রমিকের জীবন? দুয়েকটা শিপমেন্ট বাতিল হলে ক্ষতি কতটুকু হতো? এখন যে ক্ষতিটা হলো, তা কি অপূরণীয় নয়?
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এসে পড়েছে। রেডক্রস, ফায়ার সার্ভিস তাদের কাজ নিজের নিজের মতো করে করছে। মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়ে গেছে। এনাম মেডিক্যাল কলেজে লোকে ভিড় করছে, কেউ খুঁজছে স্বজনকে, কেউ বা স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছে..। বিধ্বস্ত রানা প্লাজায় সবচেয়ে বেশি কাজ করছে সাধারণ মানুষ। ভবনটি একবার ধ্বসেছে। কিন্তু আরো একবার ধ্বসে মাটির আরো কাছাকাছি চলে আসতে পারে এর ছাদ। সে বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই এই মানুষগুলোর। এদের কেউই উচ্চশিক্ষিত নয়, সচ্ছল নয়। এদের বেশিরভাগই শ্রমজীবি, যাদেরকে সমাজে কেউ কখনও মানবতার বাণী শোনায় না, মানুষ বলে গণ্যও করে না অনেকে…। তবু এরাই আজ মানবতার সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। যুগে যুগে দুর্যোগের সময় এভাবেই মানুষ মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছে নিজের জীবন বিপন্ন করে।আজ বোধহয় সৃষ্টি হলো আরেক ইতিহাস…।
সন্ধ্যা নামছে। বাজার থেকে কিছু টর্চলাইট কিনলো শামীম। নিজের কাছে একটা রেখে কয়েকজন স্বেচ্ছা সেবককে বাকি গুলো দিলো। তারপর ঢুকে পড়লো ভেতরে। ভেতরের ধ্বসে পড়া দেয়ালের ফাঁক ফোঁকর থেকেও কিছু আলো আসছিল। আটকে পড়া কেউ কেউ তাদের মোবাইল ফোনের টর্চলাইট জ্বেলে সংকেত দেবার চেষ্টা করছে।তাদের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো শামীম। কলামগুলো এমনভাবে কোমর ভেঙ্গে পড়ে আছে যে, ছাদ নেমে এসেছে হাঁটুঁর উচ্চতায়। শামীম আন্দাজ করার চেষ্টা করল, এটা সম্ভবত: সপ্তম তলা। ভবনটির অষ্টম ও নবম তলা ফাঁকা ছিল। তার মানে অধিকাংশ মানুষই নিচে চাপা পড়ে আছে। আজ রাতে এদের ক’জনকে উদ্ধার করা যাবে? কতজন প্রাণ নিয়ে বেরুবে? কতজন বেরুবে নিষ্প্রাণ হয়ে? যারা এখানে এসেছিল শুধুই জীবিকার প্রয়োজনে, দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের অন্বেষণে, তারা আজ বাড়ি ফিরবে লাশ হয়ে? অধরচন্দ্রের মাঠে লাশের যে মিছিল চলেছে, সেটা খুব বড় হবে না তো?
৩.
গভীর রাতে বাসায় ফিরলো শামীম। সুধার তখন প্রায় পাগলের মতো অবস্থা। গত কয়েক ঘণ্টা শামীমকে ফোনে পাচ্ছিল না সুধা। তার ফোনের ব্যাটারি চার্জশূন্য। সুধা দরজা খুলতেই দেখলো শামীম টলছে। তার শার্ট-প্যান্ট ধুলোয় মাখামাখি, চুল নোংরা, এলোমেলো।
শামীম দেখলো সুধা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর হঠাৎ সব অন্ধকার।
শামীমের জ্ঞান ফিরলো ঘন্টাখানেক পর। তাদের এক প্রতিবেশী ডাক্তার। সুধা তাঁকে নিয়ে এসেছে। শামীমকে পরীক্ষা করে ও সুধার কাছ থেকে সব শুনে ডাক্তার সাহেব কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। জ্ঞান ফিরেই শামীম বলে উঠলো, “আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি একটু পরই ফিরে আসব। পানি নিয়ে আসব আপনার জন্যে”।
ডাক্তার সাহেব বললেন, “ভাবি, সাভারের ঘটনাটি উনার মনের ওপর খুব চাপ ফেলেছে। আমি বরং সিডেটিভ দিয়ে দিই।”
শামীম চিৎকার করে উঠলো, “না। আমি এখনই যাব। আমি ওদেরকে কথা দিয়ে এসেছি, ওদের জন্যে পানি নিয়ে যাবো। ওদেরকে ওখান থেকে বের করে আনবো আমি। আমাকে ওখানে নিয়ে চল, প্লিজ”
শামীম অস্থির হয়ে উঠলো। তাকে শান্ত করার জন্যে ডাক্তার সাহেব ঘুমের ইঞ্জেকশন দিলেন। কিছুক্ষণ বিড় বিড় করে ঘুমিয়ে পড়ল শামীম।
শামীমের ঘুম ভাঙলো পরদিন ভোরে। সুধা তার মাথার কাছে বসে নির্ঘুম রাত পার করেছে। ঘুম ভেঙ্গে শামীম বলল, “সুধা, টিভিটা চালাও। দেখি, সাভারের কী অবস্থা”
“প্লিজ, তুমি আর পাগলামি করোনা। সরকার আছে, এন.জি.ও. আছে। ওখানে কাজ করার জন্যে অনেক ধরনের সমাজসেবক আছে। তুমি এমন পাগলের মতো করছ কেন?”
“পাগলের মতো? এত বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট…”
“মানছি অনেক বড় অ্যাক্সিডেন্ট। কিন্তু তোমার মত কয়জন ঢাকা থেকে ছুটে গেছে, বলতো? ওখানকার স্থানীয়রা কি যথেষ্ট নয়? হঠাৎ তুমি ওর মধ্যে গিয়ে পড়লে কেন?”
“কারণ আছে। আমার একটা দায়িত্ব আছে…” কথা বলতে বলতে শামীম উঠে বসে।
সুধা ব্যস্ত হয়ে বলে, “প্লিজ তুমি উঠবে না। আজ অফিসে যাবে না, তুমি”
“অফিস না, আমি সাভার যাবো” বিছানায় শরীর ছেড়ে দিয়ে বলে শামীম।
“সাভার?” চমকে ওঠে সুধা। “তুমি এত ক্ষেপেছ কেন? তোমাকে কে সাভারের দায়িত্ব দিয়েছে?”
“কারণ আছে। তুমি এই ইতিহাসটা জানো না।”
“কী ইতিহাস?” সুধা অবাক হয়।
শামীম এক গ্লাস পানি চেয়ে খেলো। তারপর বলতে শুরু করল, “আমাদের বিয়ের কয়েক বছর আগের ঘটনা। তাই তুমি জানো না। আমি তখন সদ্য এই চাকরিতে জয়েন করেছি। সরকারি চাকরি। কাজেই অফিসে নিয়ম-নীতির যেমন অভাব নেই, দুর্নীতিরও সীমা নেই। আমার দায়িত্বে আমাদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিদের স্টাফ-কোয়ার্টার এর একটা প্রজেক্ট ছিল তখন। ছাদ ঢালাইয়ের আগের দিন এক্স-এন স্যার আমাকে তাঁর রুমে ডেকে পাঠালেন। ”
“তুমি এই ঘটনাটা বোধহয় আগে আমাকে বলনি..”
“বলিনি, তোমার চোখে আমি ছোট হয়ে যাব, সেই ভয়ে”
“যা হোক, তারপর?”
“স্যার আমাকে ডেকে বললেন, কন্ট্রাকটরের কাছ থেকে তাঁকে তিন লাখ টাকা নিয়ে চীফ ইঞ্জিনিয়ার স্যারকে দিতে হবে। কন্ট্রাকটর টাকাটা দিতে রাজি হয়েছে, কারণ সে ছাদে কিছু রড কম দেবে। আমার কাজ হলো সাইটের খাতায় লিখে দিতে হবে, ডিজাইন অনুযায়ী ঢালাইয়ে রড দেওয়া হয়েছে । এবং কন্ট্রাকটর যে চেকটা দেবে, সেটা চীফ স্যারের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে…”
“কী? তুমি এই কাজ করতে রাজী হয়েছিলে?”
“প্রথমে হইনি। স্যার তখন বললেন, আমি রাজী না হলে চীফ স্যার আমার নামে দুর্নীতির অভিযোগ আনবেন এবং আমার চাকরি খেতে তাঁর এক সপ্তাহ লাগবে। সুতরাং আমি রাজী হলাম। তাছাড়া স্যার বলেছিলেন এস্টিমেটে টুয়েন্টি পার্সেন্ট রিইনফোর্সমেন্ট বেশি ধরা আছে…”
“তারপর?”
“কন্ট্রাকটর রড কম দিলো থার্টি পার্সেন্ট। সিমেন্টও টুয়েন্টি পার্সেন্ট কম। আমি বাধা দিতে গেলে কন্ট্রাকটর চীফ স্যারকে ফোন করল। চীফ স্যার তক্ষুণি সরাসরি আমার মোবাইল ফোনে কল করে আমাকে বেশ ঝাড়লেন। থার্ড ক্লাস স্টাফ কোয়ার্টারের ছাদ নাকি বেশি মজবুত দরকার নেই। তাছাড়া এটা একতলা ভবন…। ইত্যাদি ইত্যাদি…”
“বুঝলাম। তবু মানতে পারছি না। তারপর?”
“পরের বছর বর্ষাকাল শেষ হতে না হতেই সেই ছাদের কিছু বিম-এ ফাঁটল দেখা দিলো। চীফ স্যার আমাকে আর এক্স-এন স্যারকে ডেকে বললেন, কন্ট্রাকটরকে দিয়ে সেই ফাঁটলে কিছু বালু-সিমেন্ট ভরে পেইন্ট করিয়ে দিতে। আমি তাই করলাম…।”
“বাহ।” সুধার কণ্ঠে তিরস্কার।
“তার পরের বছর একটা বিম এর ফাঁটল থেকে কিছু অংশ ধ্বসে পড়লো এক শিশুর মাথায়। মারা গেল সে। চীফ স্যার কিছু টাকা-পয়সা খরচ করে বিষয়টা ধামাচাপা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পাপ আমাকে আজও কুরে কুরে খায়। সুধা, আমি সাভারে গিয়ে কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত করেছি। আজ আবার যাব। প্লিজ তুমি বাধা দিও না।”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মোছে শামীম। সুধার চোখে তখন অবিশ্বাসের জল।