বুখারি শরিফ, কিতাব ১৭, হাদিস ১৪৬, আবু হুরাইরা রা. বলেন, আমি রাসূল দ. থেকে দু প্রকার জ্ঞান অর্জন করেছি। এক ধরনেরটা তোমাদের জানাই। অপরটা জানালে তোমরা (ভুল বুঝে) আমার গলা কেটে ফেলতে।
বেশি পরিমাণে ইবাদাত থাকার চেয়ে বেশি পরিমাণে জ্ঞান থাকা ভাল। আর তোমাদের ধর্মের সবচে ভাল অংশটুকু হল, করুণা, সহমর্মিতা, মায়া, আত্মনিয়ন্ত্রণ।-হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. বর্ণিত, তাবরানি, আওসাত, বাজজার।
ধর্ম/বিশ্বাস/মতবাদ/আক্বিদাহ্ যাই হোক। সত্যি সত্যি কিছুটা শূণ্যস্থান পূরণের জন্য, হিসাবের বাকিটা মিলানোর জন্য, অথবা স্পষ্ট করে জানার জন্য যে কারো যে কোন প্রশ্নে স্বাগতম।
হতে পারি সুন্নি/সূফিবাদী/তরিক্বতপন্থী। হয়ত কিছু বিষয় স্পষ্ট হওয়ার আছে। সেক্ষেত্রে জবাবের দর্শনটাও সেরূপ হবে।
তিরমিযি, হাসান রা. বর্ণিত: জ্ঞান দু প্রকার। হৃদয়ের জ্ঞান- যা আসলেই কাজে লাগে ও জিহ্বার জ্ঞান- যা আদম আ.'র সন্তানদের মধ্যে বিভেদ ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
কোন মতবাদ পরিচয়েই কোন সমস্যা নেই। কোন প্রকার বিতর্ক করা হবে না। কোন প্রকার শ্লেষাত্মক কথাবার্তা বলা হবে না। কোন জবাবই অতি বিস্তারিত করা হবে না। এমনকি কিছু প্রমাণের জন্য হাঁচড়াপাঁচড়ি করে চেষ্টাও করা হবে না।
শেখাও! বিষয়গুলোকে সহজ করো! কোনকিছুকে জটিল করে ফেলো না! (তিনবার পবিত্র কন্ঠে বললেন রাসূল দ.) আর যদি রেগে যাও, তবে মুখ বন্ধ করে ফেলো। (ইবন হাজর আসক্বালানী, মাতালিব আল আলিয়া, ইবন হাম্বল, ইবন আবি শাইবা, আত তায়ালিসি ইবন আব্বাস রা. বর্ণিত)
বিশেষ করে রেফারেন্সের পৃষ্ঠা নাম্বার ফিড করার কিছু নেই। কোন শ্লেষাত্মক কথা থাকতেও দেয়া হবে না। এইসব তো সর্বত্রই হয়। এতে কোন লাভও হয় না, ভালবাসাও হয় না।
তিরমিযি, বাইহাক্বী, শু'আবুল ঈমান- আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণিত: প্রত্যেক মুসলিমের উপরে জ্ঞান অণ্বেষণ করা ফরজ। আর অযোগ্য ও অপ্রস্তুতকে জ্ঞানদান করা হল মণি, মুক্তা ও স্বর্ণের তৈরি হার শুকরের গলায় পরিয়ে দেয়ার মত।
শুধু আসলেই কিছু জানার থাকলে তা জানার চেষ্টা করা হবে।
যে অনুসন্ধানী, তার হৃদয়ের শূণ্যতার জন্য সংক্ষিপ্ত, অর্থবোধক, হৃদয়গ্রাহী সামান্য জবাবই যথেষ্ট। কারণ রাসূল দ. বলেছেন, অনুসন্ধানী আমার ভিতরে, আমি অনুসন্ধানীর ভিতরে। এই লেখা নিয়ে প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা। কোন মন্তব্য/প্রশ্ন স্কিপ করে পরেরগুলোতে গেলে নিশ্চিত, সেটা নিয়ে আরো জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতারা, জান্নাত ও পৃথিবীবাসী সকলে, এমনকি পর্বতসমূহে থাকা পিঁপড়া আর সাগরগুলোর মাছেরাও তাদের জন্য অনবরত শুভকামনা করতে থাকেন যিঁনি মানুষকে সুজ্ঞানের পথ দেখান।- তিরমিযি।
এ উদ্যোগ মহান প্রভু আল্লাহ ও তাঁর প্রিয়তম রাসূল দ.'র সন্তুষ্টির জন্য, প্রয়োজনে অন্যকে দেখার ও অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে।
-----------------------------------------------------
জানা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ইত্যাদি নিয়ে অসাধারণ কিছু হাদিসে মুবারাকা-
তিরমিযি, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.: আল্লাহ তোমাদের দেয়া জ্ঞান কেড়ে নিবেন না। বরং যারা জানে, তাদের মৃততুর সাথে সাথে সে জ্ঞান হারাতে শুরু করবে। জ্ঞানহীনরা পথ দেখাতে শুরু করবে এবং এভাবে পৃথিবীতে পথভ্রষ্টতা বাড়তে থাকবে ক্রমাণ্বয়ে।
বু., আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা.: জ্ঞান অর্জন করো ও মানবজাতির উপর তার সুফল প্রয়োগ করো। ফারাইদ (উত্তরাধিকার আইন) শেখো এবং শেখাও। কুরআন শেখো এবং শেখাও। আমি চলে যাবার পর ক্রমাণ্বয়ে জ্ঞানও চলে যেতে শুরু করবে এবং এক পর্যায়ে এমনও অবস্থা আসবে যে, দুজন মানুষও একমত হতে পারবে না আর তৃতীয় কেউ থাকবে না, যে সমাধান দিতে পারবে।
বুখারি, আবু মুসা রা. বর্ণিত: রাসূলে রাব্বিল উলা দ. বলেন, আল্লাহ আমাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করে পথপ্রদর্শক করে পাঠিয়েছেন, তা সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরল বৃষ্টিবর্ষণের মত। সেই মাটির কিছু কিছু গ্রহণক্ষম, ফলে তা বৃষ্টি শোষণ করে, সেখানে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে তৃণ-লতাপাতা-বৃক্ষরাজি তৈরি হয়। আর মাটির কিছু অঞ্চল শক্ত। ফলে সেই অবিরল বরিষণধারা সে গ্রহণ করে। ধারণ করে রাখে। আর তা থেকে মানুষ, পশুপাখি খায়, পান করে, পরিচ্ছন্ন হয়, পরিতৃপ্ত হয়। আর কিছু অংশ শূণ্য, যা ওই জলধারাকে ধারণও করতে পারেনি, শোষণও করতে পারেনি।
বু., আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বর্ণিত: রাসূল দ. বলেন, জ্ঞান তিন ধরনের। এর বাইরে কোন ধরণ যা আছে, তা অতিরিক্ত (আরো বেশি)। কুরআনের একটা সঠিক বাক্য, সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারা (নিজ জীবনে না বা সমাজে) একটা সুন্নাহ আর সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত করা কোন অবশ্যকর্তব্য (ফরজ)।
আবু দাউদ, কাসির ইবন কায়িস রা. বর্ণিত, আমি আবু দারদা রা.'র সাথে দামিশকের মসজিদে বসে ছিলাম। একজন এসে বললেন, হে আবু দারদা রা.! সুদূর নবী দ.'র শহর থেকে এসেছি এ কথা শুনে যে, আপনি রাসূল দ.'র হাদিস বর্ণনা করেন। আবু দারদা রা. বললেন, রাসূল দ. বলেছেন, যে প্রজ্ঞা-জ্ঞানের খোঁজে পথে ভ্রমণ করেন আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথে ভ্রমণ করান। জ্ঞানাণ্বেষী'র সম্মানে ফিরিশতারা আপন পাখা নত করে বিছিয়ে দেয়। জ্ঞানী'র মাগফিরাত কামনা করবে আকাশ, জমিন ও সাগরগভীরের মাছ সহ সকল বাসিন্দা। ইবাদাতকারীর উপর জ্ঞানীর শ্রেষ্ঠত্ব পূর্ণচন্দ্রের রাতে আকাশে অন্য সব নক্ষত্র থেকে চাঁদকে যত সুন্দর ও উজ্জ্বল লাগে, তেমনি। জ্ঞানীরা তো নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ না দিনার রেখে যান, না দিরহাম। তারা শুধু প্রজ্ঞা ও জ্ঞান রেখে যান। তাই যে-ই তা ধারণ করে, অনেক বেশি কিছুই ধারণ করে।
আবু দাউদ, আবু হুরাইরা রা.: জ্ঞান ব্যবহার না করলে তা ওই সম্পদের মত, যা থেকে আল্লাহ খুশি হন এমন কোন কাজে ব্যয় করা হয়নি।
তিরমিযি, আনাস ইবনে মালিক রা.: কেউ জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হলে (কোনকিছু শুরু করলে বা পদক্ষেপ নিলে) যে পর্যন্ত ফিরে না আসে (পদক্ষেপটা শেষ না করে/কাজটা শেষ না করে) ওই পর্যন্ত আল্লাহরই উদ্দেশ্যে ব্যস্ত ছিল- এমনটা ধরে নেয়া হয়।
তি. আবদুল্লাহ রা.: এটা জ্ঞানের প্রকাশ যে, কিছু না জানা থাকলে বলতে হবে, আল্লাহ ভাল জানেন।
তি.: কিয়ামাতে আল্লাহর একজন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জবাব দিতে পারছে তার সময়, জ্ঞান, সম্পদ ও শরীর, এই চারটা কীভাবে ব্যবহার করেছিল।
মুসলিম শরীফ, আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইবনে হিব্বান রা.'র গ্রন্থসমূহে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ও আবু হুরাইরা রা.'র বরাতে বিভিন্নভাবে বর্ণিত: মানুষের মধ্যে খারাপ ও ভাল'র বিভিন্ন অবস্থান রয়েছে। যেমন, স্বর্ণ ও রূপা (ভাল'র মধ্যে বিভিন্ন রূপ)। তারাই শ্রেষ্ঠ অজ্ঞতার কালে, যারা মুসলিম হয়ে জ্ঞান অর্জন করে।
তাবরানি, মু'জামুল কবীর, ইবন আব্বাস রা.: যখনি তোমরা বেহেশতের মাঠের পাশ দিয়ে যাবে, একটু ঘুরেফিরে নিও। হে আল্লাহর রাসূল দ.! কী সেই বেহেশতের মাঠ? জ্ঞানের বৃত্ত।
তাবরানি, বাজজার, আবু হুরাইরা রা.: জ্ঞানী হও, অথবা ছাত্র হও, অথবা শ্রোতা হও, অথবা জ্ঞানের ভালবাসাকারী হও। পঞ্চম হয়ো না, তাহলে তুমিই আর রইবে না।
বু. আনাস রা.: বিষয়গুলোকে সহজ করো। জটিল করো না। আনন্দিত থাকো। প্রতিক্রিয়াশীল হয়ো না।
আহমাদ ইবনে হাম্বল রা. বর্ণিত: শেখাও ও সুসংবাদ দাও! সহজ করো, জটিল করে তুলো না!
বু., মু., আন নাবাভী, রিয়াজুস সালিহিন, আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা.: দুজন ছাড়া আর কাউকে হিংসা করা যায় না: যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং তা ব্যবহার করার পথ প্রদর্শন করেছেন। আর একজন যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন এবং সে জ্ঞানানুযায়ী কাজ করে ও অন্যকে তা শেখায়।
সহিহ ইবনে হিব্বান, জাবির ইবন আবদুল্লাহ রা.: প্রভু! কল্যাণকর জ্ঞান চাই আর অকল্যাণকর জ্ঞান হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
আবাদা ইবনুস সামিত রা. বর্ণিত: যে বড়দেরকে শ্রদ্ধা করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং প্রজ্ঞাবান-জ্ঞানীদেরকে সম্মান করে না, সে আমার জাতিরই অন্তর্ভুক্ত নয়। (হাম্বল, তাবরানি, হাকিম, আস্কালানি, তারগিব, বার, বায়ান আল ইলম)
যে-ই কল্যাণের পথে ডাকে, তার কাছে ওই সকল মানুষের কল্যাণের সমান সওয়াব/কল্যাণ জমা হবে, অথচ ওইসব মানুষের কল্যাণে কমতি পড়বে না। অকল্যাণে যে ডাকবে, সেও সকলের অকল্যাণের সমান ভাগীদার হবে। (আবু হুরাইরা রা.'র সূত্রে মুসলিম ও ইবনে হিব্বান)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৯