ছেলেবেলায় ভাবতাম, যদি কখনো বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রসঙ্গ আসে, আমার ভূমিকা কী হবে? না, আমার ভূমিকা বাংলা মায়ের সন্তানের মতই হবে। লজ্জাশীলতায় মুখ লুকিয়ে রাখার কোন মানে হয় না।
সামহোয়্যার ইন ব্লগ অনেক আগেই রাজাকারদের সাথে সহবাস নয় ধরনের শিরোনামের একটা পোস্টে সহমত জানিয়ে বলেছিল, যে কোন স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ও দলীয় প্রোপাগান্ডাবাজদের ব্যান করা হবে। এরপর থেকে শিবির বা জামাতি প্রমাণিত হলেই ব্যান করা চলছে। কিন্তু ইদানিং জামাতি নিকগুলো সঠিকভাবে বিবর্তিত হয়। তারা আংশিক বা একটা দুটা জামাত বিরোধী কমেন্ট করে এবং বাকি সমস্ত পোস্ট, কমেন্ট ও প্রিয়তালিকা জামাতি হয়ে থাকে।
জামাত শিবিরকে কেন আমাদের কমুনিটিতে প্রচার করতে দেয়া যাবে না, এ তো চির পরিচিত বিষয়। কারণ তারা গোলাম আযমকে বানাবে বাংলাদেশের মানুষের একাত্তরে বন্ধু। কারণ তারা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করবে, পাকিস্তান ভাঙার চেষ্টা করা আমাদের ভুল ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ছিল ডাকাত। ব্যস।
কিন্তু এর শুরু ২০১৩ সালে নয়। এক কথিত ছাগুসম্রাটের মাল্টিতে তা প্রকাশিত সেই ২০১০ সালে। ২০১০ সালে জামাত ও শিবির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই টেকনিকগুলো এখন মাত্র অ্যাপ্লাই করছে সামুতে তাদের সরাসরি এন্ট্রি না থাকায়। আমরা প্রথম সেই স্ক্রিনশট থেকে যাত্রা শুরু করতে পারি,
১. তারা সব সময় সত্য/ সৎ/সততা এই কথাটাকে খুব হাইলাইট করবে। শত শত জামাতি নিকের উপরদিকে সত্য পেয়েছি, কিন্তু তাদের কেউ সত্য করে বলার সততা রাখে না,
-একাত্তরে কোন তিনটা দল দলীয় সিদ্ধান্তে দলীয় আদেশে দলীয় স্ট্রাকচারে পুরো দল নিয়ে সারা বাংলাদেশে রাজাকারি আলবদরি আলশামসি করেছিল
-এবং তাদের অন্তত পাঁচজন শীর্ষ নেতার নাম কী এবং কারা বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রাম পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিয়েছিল এবং
-কে ছিল আল বদরের প্রতিষ্ঠাতা,
-৯ মাস যুদ্ধ করার পর বাংলাদেশের জন্ম হচ্ছে জেনেও কেন তারা ১৪ ডিসেম্বর ঠিক হওয়া পাকিস্তানি আত্মসমর্পণ পিছিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজ্ঞ, সাহিত্যিকদের হত্যা করল এবং আত্মসমর্পণ করালো ১৬ ডিসেম্বর?
-কে একাত্তরে বলেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সব জামাতের কর্মী সমর্থকের আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না? কেন, জামাতের সব কর্মীর আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না কেন? তারা কী করেছিল ৭১ সালে?
-কে পাকিস্তান আদর্শ রক্ষা তহবিলে স্বাক্ষর করেছিল ৭১ সালে?
-কে পাকিস্তান পুনরুদ্ধার দিবস পালন করেছিল পাকিস্তানে ৭২ সালে?
-কে কে বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পাকিস্তানের সরকারের ডাকা বৈঠকে স্বীকৃতি দানের বিরোধীতা করেছিল ৭৩ সালে?
-কে বাংলাদেশ না-মঞ্জুর আন্দোলন করেছিল ৭৪ সালেও?
-কারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল অসুস্থ মাকে দেখার মানবিক আবেদন জানিয়ে এবং প্রবেশ করেই পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছুড়ে ফেলে দিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়েছিল জন্মদাত্রী মাকে বিক্রি করে ফেলে?
২. তারা সাময়িক এবং স্থায়ী র ধুয়া তুলবে। নিজেদের বোঝাবে, এইযে বেয়াল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশ আছে, তাও সাময়িক, তাদের সত্য আবার প্রতিষ্ঠিত হবে।
৩. তারা জামায়াত, শিবির, ইসলামী, আমীর, নায়েবে আমীর এইসব শব্দ পারফেক্ট বানানে লিখবে। তাদের প্রত্যেক নেতার নাম পারফেক্ট বানানে লিখবে, যেমন, গোলাম আযম। কখনো ভুল করবে না (এখন ইচ্ছা করে করছে, ছদ্মরূপ)। কিন্তু বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় সংগীত, বুদ্ধিজীবী, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু,- এই বানানগুলো চরম বাজেভাবে বিকৃত করবে। কেন???
৪. খেয়াল করুন, পাকিস্তান সরকারের অধীনে ৭১ সালে অনেক বাঙালি অবস্থান করেছিলেন বলে মুক্তিযুদ্ধ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। তারা যে ২০১০ সালের তিন বছর পর ২০১৩ সালেই সামান্য সরকারী কর্মচারীদেরকে গুলিয়ে ফেলবে একাত্তরে সারা বাংলাদেশে মাস কিলিং করার জন্য নির্দেশদাতা জামাতি নেতাদের- যারা প্রতিটা গ্রাম পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিয়েছিল এবং প্রতিটা গ্রাম পর্যায়ে মেয়েদের গণিমত করেছিল- এটা এতদিনে কাজে প্রকাশ পাচ্ছে। জামাতি নেতারা সারা বাংলাদেশের কিলিংয়ে লিডিং দিয়েছে, কোন বাঙালি সরকারী কর্মচারী দেয়নি, জামাতি নেতারা সারা পৃথিবীতে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে এখনকার মত, সারা বাংলাদেশে সমস্ত বাঙালিদের হিন্দু-নাস্তিক-ভারতীয় বলে হত্যা হালাল ও বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। সামান্য সরকারি কর্মচারি আর এই লিডিং অ্যাকটিভ নেতারা কখনো এক হতে পারে না। সরকারী কর্মচারী যদি রাজাকারদের বেতন দিয়ে থাকে নিজ নিজ জেলায়, তাহলে সেই রাজাকারদের রিক্রুট থেকে শুরু করে তাদের দলীয় পরিচয় ও নির্দেশনা সারা বাংলাদেশে দিয়েছে জামাত-মুসলিম লিগ-নেজামে ইসলামীর নেতারা যার মধ্যে তথনো জামাত ছিল মেজরিটি পার্টি।
এখন তারা খুব চাতুর্যের সাথে গুলিয়ে ফেলছে,
-ওই চরম নেতাদের ফাঁসি।
-তাই যারা ভুলে তখন পাকিস্তানের পক্ষে এক দিনও ছিল তাদেরও ফঁঅাসি (আজব!)
-ওরা গণহত্যা করেছে, ধর্ষণ করে হত্যা করেছে, অগ্নিসংযোগ করে ঘরের ভিতর জীবন্ত হত্যা করেছে এবং এই তিনটা কাজে মদদ দিয়েছে যা এম্নিতেই রাষ্ট্রীয় আইনে ফঁঅসির বিধান- যুদ্ধে হোক বা না হোক, এদের সাথে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে তাদেরকে, যারা সরকারি কর্মচারী হিসাবে নো-এস্কেপ সিচুয়েশনে থেকে বাধ্য হয়ে বা ইচ্ছা করে, হোয়াটেভার, রাজাকারদের বেতন দিয়েছিল! (আমরা কি আসলেই যারা হত্যা করেনি, ধর্ষণ করেনি, আগুনও দেয়নি এবং এ কাজে নির্দেশও দেয়নি তাদের ফাঁসি চাই???)
৫. এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। জামাত একাত্তরে রাজাকার। তারা ২০১২ তেও বলেছে, রাজাকারের বিচার করলেই গৃহযুদ্ধ। ২০১৩'র জানুয়ারি ফেব্রয়ারিতেও হুমকি দিয়েছে দেশে গণহত্যা চালিয়ে যুদ্ধ করার। আমরা এ কারণেই জেগেছি। এ কারণেই বেশি ক্ষোভ তাদের উপর।
কিন্তু তারা যে কোন সময় বলে বসতে পারে, আমরা একাত্তরের জন্য লজ্জিত। একাত্তর করেছিল কিছু বিপথগামী নেতা এবং তাদের আমরা এবার ঝুলানোকে স্বাগত জানাই।
এই একটা স্ট্যান্ড ২০১০ সালেই ঠিক হয়ে আছে, অ্যাপ্লাই করা বাকি।
এই শেষ তুরুপ তারা হাতে রেখেই বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনতাকে ক্ষেপিয়ে শেষবারের মত নিজেদের রূপ ঠিক রেখে নেমেছিল। তাই আমরা জামাদের দলীয় ব্যান চাই, তাদের ব্যক্তি লেভেলেও নিষিদ্ধতা চাই। তাদের মধ্যে যারা ৭১ এ অবদান রাখেনি তারা বাংলাদেশে থাক। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন কোন কাজে তাদের সম্পৃক্ততা রাখা যাবে না। রাজনীতি, সরকারি চাকুরি এবং সরকারি কন্ট্র্যাক্ট- এই তিনটা বিষয় বাংলাদেশকে আবার গৃহযুদ্ধের হুমকি দিতে পারে তার প্রমাণ তো আমরা পেলাম। কারণ, কোন স্বাধীন দেশে সেই দেশের স্বাধীনতার সরাসরি প্রতিপক্ষ আদর্শ থাকতে পারে না। এটা স্ববিরোধী। এটা নিজের অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলে। এ ঝুকি স্বাধীন দেশ নিতে পারে না।
৬. তারা একাত্তরে এবং তারপর আরো অনেক বছর সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে রাজাকারির যে পুরো ব্যাপারটা অস্বীকার করে আসছে সেটা গোপন করার মত সামান্য একটা মামুলি ব্যাপার, যা আর করা হবে না!
৭. বিষয়টা যে দলীয়, এতেও তাদের কোন সমস্যা নেই এবং এও খুজছে, আর কে কে দলীয় রাজাকারি করেছিল।
৮. এই একটা কাজ খুব ভাল পারছে জামাত। তারা জানে কি করেছিল। এর পরও, বিচার প্রক্রিয়া বিতর্কিত করাই তাদের একমাত্র কাজ। শুধু শুধু বাংলাদেশের মুসলিমরা তাদেরকে মুনাফিক- জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর, মাল'উন-অভিশ্প্ত, দাজ্জাল মাসিহ উল কাজ্জাব- মিথ্যাবাদী, সত্যের সাথে মিথ্যা সংমিশ্রণকারী এবং জেনেশুনে সত্য গোপনকারী বলেনি।
৯. এই পুরো ব্যাপারটাকে তারা স্রেফ কৌশল বলছে। সমস্ত মিথ্যাচার এবং সমস্ত ভ্রান্তি এবং সমস্ত প্রোপাগান্ডা স্রেফ তাদের কাছে পাল্টা কৌশল- তাও আবার একাত্তরের কৃতকর্ম করার পরও। এভাবেই তারা মনে করে যে, কাঁধে বসা কিরামান ও কাতেবীন ফেরেস্তাদের চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
আরো কিছু হুবহু একই ধারার কাজ দেখে নিই আমরা-
আজকে জামাতের যে অপপ্রচার চলছে, তার পূর্ণ স্বরূপের অর্ধেকটা এখানেই নিহিত। বাকি অর্ধেকটাও ধরা পড়বে-
১০. এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা কপিপেস্টের নাম করে জামাতি খবরগুলো খুব আগ্রহের সাথে পাবলিশ করবে। এতে করে তাদের জামাতি বানানগুলো এবং নেতৃবৃন্দের লক্বব বা টাইটেলগুলো সহ দেয়া সুযোগ হয়ে যায়।
কিন্তু যখন অন্য বানানে ভুল করে, তখন বোঝা যায়, তারা কোন মিডিয়া থেকে কপি করেনি, বরং কষ্ট করে কম্পোজ করেছে
১১. এবং সুযোগ পেলেই জামাতি হাজারো সংগঠন, লক্ষ প্রতিষ্ঠান, কোটি টাকার প্রশংসা করবে এবং সেসবের নাম ইনিয়ে বিনিয়ে ঘিনিয়ে উচ্চারণ করবে
১২. অনেক সময় রাম্ভোদাইয়ের মত সরাসরি বলবে। বাই চান্স, লক্ষ পোস্টের আড়ালে ঢাকা পড়ে ঢিপঢিপ করে টিকেও যেতে পারে।
১৩. তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের মত করে ক্ষমতায় আসবে। মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের একে পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল ধর্মভিত্তিক দল হিসাবে নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসাবে। আমি বিএনপির শত্রু না, কিন্তু ভবিষ্যতের জামাতে ইসলামের মূল রূপ বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করছি। এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করলে উল্টা জামাতের আরো লাভ হবে তা বলছি। কারণ, তাদের ব্যক্তি লেভেলে নিষিদ্ধ করা ছাড়া কোন গত্যান্তর নেই।
১৪. জয় জামায়াত/ শিবির জিন্দাবাদ/ বিজয় কাদের মোল্লার ধরনের শব্দ উচ্চারণ করা তাদের অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ এবং এই কাজের জন্য ছদ্মবেশের প্রয়োজন পড়লে মর্দে মুজাহিদরা পোস্টের কন্টেন্টে জামাতকে বাঁশবাগান দিতেও আপত্তি করে না।
১৫. এই আন্দোলনের পর ব্যাপকভাবে জয় বাংলা অ্যাডো্প্ট করেছে, দাঁড়ি চেছেছে এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া শুরু করেছে যদিও রবীন্দ্রনাথ তাদের পৈতৃক শত্রু।
১৬. তারা দেশকে ভালবাসে এবং এই কথা কইতে খুব আগ্রবোধ করে। কারণ, তারা জামাত করে, তাই দেশকে যে ভালবাসে, সেটা তীব্রভাবে সার্টিফাই করা প্রয়োজন।
১৭. এটা গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রকৃত ইসলাম/ প্রকৃত ইসলামিক দল/ আসল ঈমানদার/ খাঁটি মু'মিন এই টার্মগুলোয় তারা খুব জোর দেয়। কারণ মাত্র একটাই, জামাত ছাড়া আর কোন প্রকৃত মুসলমান সারা পৃথিবীতে নেই। তাই অ-জামাতি সবার প্রাণ হালাল এবং সবার মা-বোন হালাল।
১৮. রাযাকার এবং আমীর বানান দেখুন! একেবারে বিশুদ্ধ। সেরা রাজাকার মানেই জামাতের আমির আর এতে তারা গর্বিত কারণ তারা শর্তবাদী (শর্তের অধীনে যারা সত্য বলে)।
১৯. সংগ্রাম, আন্দোলন, সেনানী ইত্যাদি শব্দগুলোও তাদের পৈতৃক।
২০. তাদের নিকে সিলি ভুল থাকবে। বানান, লেখা ও ফরমেশনেও সিলি ভুল থাকবে, যেন তারা লো প্রোফাইলে থাকতে পারে এবং স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে মনের সাবলিমিনাল লেভেলে জামাতের স্থান করিয়ে নিতে পারে।
২১. তারা বাংলাদেশের মানুষকে অমানুষ বলতে খুবই আগ্রহী। এটা তারা শিখেছে জেনারেল টিক্কা খান ও নিয়াজীর কাছ থেকে। তারা বলেছিল, এ দেশের মানুষ আর বানরের মধ্যে তেমন কোন তফাত নেই।
২২. তারা যদিও সত্যের পক্ষে, তবু তারা প্রকৃত রাজাকারকে রাজাকার বলতে দিবে না। প্রকৃত রাজাকারকে রাজাকার বলার সাথে সাথে ভারতীয় দালাল, ভারতীয় রাজাকার, ভাদা, আম্বা, হাম্বা, আরো কী কী যেন হয়ে যেতেই হবে। ওদের কাছে একাত্তর চলমান। ওরা এখনো আমাদের একাত্তর সালে যা বলত, তাই বলে।
২৩.শুধু তারাই মওদুদীকে রহ. / রাহ. / (র/ রাহিমাহুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করে। মৌদুদীর যে কোন ভুল ধরিয়ে দিতে বলে। কিন্তু ধরানোর সাথে সাথে কমেন্ট ব্যান করে রাখে। মৌদুদী বলেছিল, ইসলামের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুল করেছেন।
তিনি কী ভুল করেছেন সেটা তারা আজো ধরিয়ে দেয় না!
২৪. জামাতকে জামাত বলতে তারা খুবই সরমিন্দা। তারা বলবে ইসলামি আন্দোলন। দেখুন, শিবির আর ছাত্রীসংস্থাকে তারা কখনো জামাতের অংঘ বলে শিকার করেনি। তারা জামাতে ইসলামের বদলে যে টার্মটা ইউজ করে, তা হল ইসলামী আন্দোলন।
২৫. তাদের মূল লক্ষ্য সমাজ সংশোধন মানে, সমাজ থেকে অ-জামাতির সংশোধন অথবা বিনাশ। এবং তারা ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রচলন করবে, যেটার সংজ্ঞায় সাঈদী বলেছিল, দাঁড়ি টুপি ছাড়া নাকি কেউ সরকারি চাকরি পাবে না। তাহলে, বাংলাদেশের ১০-১৫% মানুষ যে মুসলিম নয়, তারা কোথায় যাবে? এবং যারা জামাতি নয় তারাই বা কোথায় যাবে?
২৬. ব্যবসা শুরু করতে হলে পুঁজির দরকার এবং ধর্মীয় লেবাস তাদের রাজনৈতিক ব্যবসার পুঁজি। এটা তাদের প্রতিষ্ঠাতার কথা।
২৭. জামাত বিরোধীরা কুকুর এবং সকল অপকর্মের জবাব দিবে শিবির। বহু আগে থেকে প্রচলিত এইসব তীব্র ভাষার কাছে প্রজন্ম চত্বরের ভাষা ম্রিয়মাণ।
২৮. জামাত ছাড়া যারা ধর্ম করবে তাদেরটা নিছক ধর্ম। জামাতই প্রকৃত ধর্ম- কারণ তারা রাজনীতি করে এবং জামাত করে।
২৯. যুদ্ধাপরাধের বিচার খরকুঁটার মতই আস্তাকুঁড়ের জিনিস এবং জাফর ইকবাল খুব্ খারাপ লোক।
৩০. তারা যে কোন জামাত বিরোধী শক্তিকে অবলুপ্ত করবে এবং যারা একাত্তরে এবং এখনো জয় বাংলার কথা বলেছে তাদের খেতাবালিশ সামলাতে হবে।
এবার দেখা যাক বিএনপির বিষয়ে ১৩ নম্বর পয়েন্টে যে ভয় পাচ্ছিলাম তার যৌক্তিকতা কতটুকু?
৩১. তারা বলবে, সত্য ভালবাসি। বলবে, তারা জাতীয়তাবাদী। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে তারা নিজের ছত্রছায়া করবে। কিন্তু ইচ্ছা করে বানান ভুল করে বিদ্বেষ প্রকাশ ও পোষণ করবে বিএনপি, জাতীয়তাবাদ, জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের প্রতি।
৩২. অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য তথ্য দিবে বাংলাদেশের বিষয়ে। বাংলাদেশে কেউ মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেই পিটিয়ে বা গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এই একই কথা বাংলাদেশে পাত্তা না পেলেও বহির্বিশ্বে খুব পাত্তা পাবে।
৩৩. তারপর তারা যে বইগুলোর প্রচার করবে, সেগুলোতে দ্বয়িফ হাদিসকেও অস্বীকার করা হয়। পৃথিবীর বুকে একমাত্র আহলে হাদীস/ সালাফি/মুসলিম ব্রাদারহুড/ হিজবুত তাহরীর/ জামায়াতে ইসলামী/ আল ক্বায়িদাহ্ নামে যে গ্রুপটা আছে, বিভিন্ন ছদ্মনামে ছড়ানো, তারাই দ্বয়িফ হাদীসকে অস্বীকার করে এবং জাল হাদিস হিসাবে সিনোনিম ব্যবহার করে যা ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিমের কথার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
৩৪. তারা দ্বয়িফ বা গ্রহণযোগ্য কিন্তু বর্ণনাকারীর অবস্থাভেদে বর্ণনাকারী বিবেচনায় আনলে দুর্বল যে হাদিসগুলো, তা কেন অস্বীকার করে? এইখানে তা স্পষ্ট। দেশপ্রেমের দরকার নেই। এবং জাতীয়তাবাদ হল বিষবাষ্প। এক্সাক্টলি! মওদুদী অসংখ্য বইতে অসংখ্য বার বলেছে, জাতীয়তাবাদ হল বিষবাষ্প। তাহলে এই নিকধারীর নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলার কারণ কী, এবং নিজেরই পোস্টে এই সুর আনার কারণ কী?
৩৫. এবং তারা ইসলামের অন্য যে কোন মতবাদকে, মেইনস্ট্রিম ইসলামকেও গালি দিতে বা যে কোন বাজে বিষয়ের সাথে উপস্থাপন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না- তারা ক্ষমতায় গেলে ইসলামের কী হবে তাও ভাবার বিষয়।
৩৬. মুখে বিএনপি থাকার পরও, শুধুমাত্র এন্টি জামাত পোস্টগুলোতে দেখা যায় তাদের অশ্লীল ও কর্কশ পদচারণা।
হাহ! তাদের কাছে বিএনপির সমালোচনা করেন, ইউ আর ওয়েলকাম। জামাতের সমালোচনার পর ব্লক করে রাখা হয় এবং অত্যন্ত দেরি করে দায়সারা গোছের কমেন্ট দেয়া হয়। মরে গেলেও জবাব আসবে না।
৩৭. বাংলাদেশের সব সাংবাদিককে গুলি করা, বোমা মারা, কোমর ভেঙে মাথা ফাটিয়ে দেয়া জায়েজ কেন? কারণ পত্রিকা ও মিডিয়া নির্বিশেষে তারা জন্ডিসের রোগী!
৩৮. এটা আরো বেশি জরুরি। একটা বা দুটা নিক থেকে নয়, ডজন ডজন নিক থেকে আমাদের প্রজন্ম চত্ত্বর আন্দোলনের প্রথমদিন থেকেই ছোট ছোট এবং একেবারে ছেলেমানুষি পোস্ট এসেছিল প্রতিদিন পাঁচ-দশ-বিশ-পঁচিশটা করে! যখনি সামু ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনি এই সুনির্দিষ্ট নিকগুলো থেকে আপাত নিরীহ এবং স্পষ্টত প্রজন্ম চত্বর বিরোধী পোস্ট আসতে থাকে এলেবেলে করে। মজার বিষয় হল, আগের পোস্ট ড্রাফটে নিয়ে তারা পরের পোস্ট করে। শুধু প্রথম পাতা বিভ্রান্ত রাখার জন্যই এত কষ্ট। তাদেরকে প্রথমদিন থেকেই ছাগুফাইটার নামক নিকগুলা থেকে গদাম দেয়া হয়।
৩৯. লিঙ্কের মাধ্যমে নিজেদের পেইজে লোক নেয়ায় তাদের জুড়ি নেই। আগে পরে কিছছু বলবে না। শুধু ফেসবুক, বা আমারদেশ বা অধূনা ব্লকিত সোনারবাংলা ব্লগের লিংকটুকু দিয়ে বলবে, গুতা মারুন বা সামথিং লাইক দ্যাট। সর্বনিম্ন স্তরের হিপোক্রেসি, সর্বনিম্ন স্তরের মুনাফিকি। মুনাফিকদেরও সর্বনিম্ন স্তরে তাদের বসবাস।
৪০. একেবারে প্রথম দিনের প্রথম প্রহর থেকেই আন্দোলনের ঘোরতর বিরোধী পোস্ট দিচ্ছে, কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে বলছে, আমাদের আন্দোলন কোন পথে যাচ্ছে? আমরা কি এই আন্দোলন চেয়েছিলাম... দ্যাট সর্ট অফ হর্স শিট।
৪১. ছবি দুটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে। আমার বলার কিছু নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে এই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ভয় দেখায় এই বাংলাদেশের মানুষকে পাকিস্তানের কিছু বংশবদ! কত্তবড় সাহস! সাবলিমিনাল ল্যাঙ্গুয়েজের মত, তারা শুধু কু শব্দটা আমাদের কাছে পৌছে দিচ্ছে। আগেপরে কু বিষয়ে তেমন কিছু নেই। এটাই যেন মনের ভিতরে অনুরণিত হয়, তাহলেই তাদের কাজ রফা হয়ে যাবে। মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের প্রপাগান্ডা চালানো একেবারে অসম্ভব।
৪২. যাদের আপনি জামাতি সন্দেহ করছেন, তাদের প্রিয় পোস্টের তালিকা দেখুন, দেখতে পাবেন, অলরেডি জামাতির দোষে নিষিদ্ধ জঙ্গিবাদের দোষে নিষিদ্ধ কোন নিকের সন্ত্রাস ছড়ানো বিষয়ক লেখা তাদের শোকেসে শোভা পাচ্ছে। ইয়াহহু!
৪৩. চট্টগ্রাম বিভাগের বাঙালীদের মধ্যে কমবেশি ৩০% জামাতি যা একটা বিশাল পার্সেন্টেজ পুরো বাংলাদেশের যে কোন জায়গার চেয়ে। তাই চট্টগ্রামের উচ্চারণ এবং প্রো-জামাতি এক্টিভিটিজ মানে তারা জামাতি।
৪৪. ২০১১ সালে ওই একই ব্লগারের কমেন্ট রিপ্লাই লক্ষ্য করুন। ফ্যাসিস্ট শব্দটা মাহমুদুর রহমানের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে আসেনি বরং জামাতি থেকেই আমার দেশ পত্রিকায় এসছে। এবং ৭৫ সালে জামাত বিজয়ী হয়েছিল তা বলা হচ্ছে। ৭৫ সালের খুনীদের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়।
৪৫. ইদানিং নিজ নামে এবং নিজ চেহারা দিয়ে কোন উপনাম ছদ্মনাম ব্যবহার না করে এবং সাংবাদিক বা এ ধরনের পরিচয় দিয়ে বেশ বিশ্বাসযোগ্য কিছু নতুন নিক তৈরি করা হচ্ছে এবং সেই নিকগুলো থেকে সব মিলিয়ে একটা বা দুটা কমেন্টে এন্টি জামাত কথা বলেই বাকি সব পোস্ট কমেন্ট ও এক্টিভিটিজ পুরোপুরি জামাতি করা হচ্ছে যা ভয়ানক বিষয়। এখন অবশ্য তাদের গত্যান্তরও নেই।
এইসব ছবিতে যাদের নিকের প্রমাণ রয়েছে বাকি স্ক্রিণশটগুলো তাদেরই ব্লগের। বিষয়টা ভয়ানক। কারণ তারা এক বা দুই কমেন্টে জামাতের ব্যান চাইও বলছেন।
৪৬. তারা যে কোন ব্যক্তির যে কোন কথাকে ব্যবহার করছেন গণজাগরণের বিপক্ষে।
৪৭. এমনকি আমাদের সাধারণ ব্লগারদের, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর ব্লগারদের কিছু নিরপেক্ষ পোস্টেও তাদের বিপুল হাততালি আসে। এবং প্রচুর শেয়ার আসে।
৪৮. মানুষের পরিবার নিয়ে কথা বলতে তাদের বাঁধে না, যদি জামাতের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে।
৪৯. সবচেয়ে আশংকার বিষয় হল, তাদের বর্তমান প্রচার এইরকম, সব মুসলমান ভাই ভাই, নাস্তিকতার/ভারতের দালালের/আওয়ামিলিগের/ব্লগারদের ফাঁসি চাই। এই প্রচারটা এখন অনেক অ-জামাতি সিরিয়াসলি গ্রহণ করেছেন।
৫০. ফেসবুকে তারা বাংলাদেশের পতাকা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরের মানচিত্র, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিকদের ছবি- এইসব ব্যবহার করে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করছে, অথচ শেয়ার করছে পাকিস্তানের নৈসর্গিক দৃশ্য!
দ্রষ্টব্য: পোস্ট দ্রুত লোড হওয়ার প্রয়োজনে, বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথড এর কথা মাথায় রেখে সবগুলো স্ক্রিনশটকে লো রেজুলেশন করা হয়েছে। এখানে কয়েকটা নিকের নাম ও ছবি এসেছে যাঁরা জামাতি নন। শুধু জামাতি নিকের সাথে তাঁদের কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে জামাতি নিকগুলো কী জবাব দেয়া সেটা দেখানোর জন্য।
আমরা কি এমন কোন কিছু করতে পারি, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের স্মরণ করবে মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বা কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের মত? বলেছিলেন সহব্লগার কুনোব্যাঙ।
হ্যা, আমরা পারি মামুন ভাই। আমরা তখনি পারি যখন দেশের সংকট আসে।
সংযুক্তি:
১. দায়িত্ববান নাগরিক ভাই সম্প্রতি একটা পোস্ট করেছেন, সেটায় আমরা সব বাংলাদেশ বিরোধী নিকের তালিকা দিতে পারি কষ্ট করে স্ক্রিনশট/ লিঙ্ক প্রমাণ সহ।- Click This Link
২. আমাদের পৌছাতে হবে অফলাইনে। পৌছাতে হবে প্রত্যন্ত বাংলায়। সরল ও দুর্গম বাংলায়। লিফলেট করা, টিভিকে উদ্বুদ্ধ করা, সংবাদপত্রকে উদ্বুদ্ধ করার বিভিন্ন প্রস্তাবনা সামুতে আসছে, সেসবে নামতে হবে আগে। গাছের পাতায় পানি ঢাললেও লাভ হয়, কিন্তু শিকড়ে পৌছানো খুব জরুরি।
৩. আরেকটি কথা জামায়াত শিবিরের কর্মীরা আন্তজাতিক মিডিয়া ও বিভিন্ন মুসলমান রাষ্ট্রের দূতাবাসে ইমেইল করে এবং কানেকশন ও রেন্টাল সিস্টেম গ্রহণ করে বর্তমানের শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে মিথ্যা,অসত্য আর বানোয়াট তথ্য দিচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়া কাভারেজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য রিঅ্যাকশন নিয়েও ভাবতে হবে। ইমেইল বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে জামায়াতের আগে ঘোষিত গৃহযুদ্ধের খবর, ম্যানিপুলেশন ও প্রোপাগান্ডার ধরণ, গোঁয়ার্তুমি, হিংস্র রূপ তুলে ধরতে হবে দেশের বাইরের মিডিয়াগুলোতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪১