মাঝারি- ছোটখাট সাইজের একটা মাছের প্রজেক্ট আছে আমাদের, যেটা তার পানির তলায় ডুবিয়ে রেখেছে দু বছর ধরে। জ্বি, আমাকেই।
মানুষ যখন জিগ্যেস করে, কী করেন, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকি।
বলতে তো আর পারি না, ভাই, আড়াই বছর হল, লস খাই। আরকিছু করব, সেই মনোবল নাই, গাবের আঠার মত লসের পিছনে লেগে আছি। ফিফার ভাষায়, উঠবোই, পাহাড়টা ওই। মাছ ক্রেতারা খাবে কী, কেয়ারটেকার ফতুর করে কুল পায় না!
তো সেই প্রজেক্ট দেখতে গেছে আমার কলেজবন্ধু তিনজন। যথারীতি, ঢেকি স্বর্গে গিয়ে ধান ভানে আর আমি সরকারি জঙ্গলের পাশে পুকুরের মাচার উপর শুয়ে শুয়ে মেডিটেশন করি। বন্ধুবান্ধব কেউ থাকলে নদীর রচনা লিখি। সেটা কেমন করে যেন আস্তে আস্তে গরুর রচনা হয়ে যায়। মানে, সেই তাসাউউফ নিয়ে কথাবার্তা।
তো মাসুম বলল, দোস, আমাকে একটা কেইস স্টাডি করে দেখা না।
(পড়িনু বীষম বিপদে! ভুলভাল তো আকছার হয়ে যায়। তাছাড়া প্রদর্শন টাইপের কেইস স্টাডি করা চরম নিষেধ। আত্মিক শুদ্ধিতে কী যেন কাদামাটি লেগে যায়…)
বললাম, প্র্যাকটিস নাই দুইমাস ধরে। আসলেই।
তখন দুটা কেইস স্টাডি করেছিলাম। এবং রাজকীয় কিছু ভুল ছিল। আর শুদ্ধ যা ছিল, তা দেখে আমমো নতুন করে চমকেছি। পোস্টটার উদ্দেশ্য শুধু একটা, সাইকিক হিলিঙের ব্যাপ্তি আর অনিয়মে ভ্রান্তি।
মাসুম অচেনা একজনের নাম জানাল। ঠিকানা আর বয়স। শেষ। এর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নাই।
প্রথমেই মাচায় থাকা একজনকে বললাম, দূরে গিয়ে দাড়া। মেডিটেশনে ঢুকে আবার চোখ খুলে তাকে দেখলাম কিছুক্ষণ মন ভরে। তারপর একটা ছোট্ট মেডিটেশন পাচ মিনিটে। শুধু সাইজ-শেইপ আর কালার কম্বিনেশন। এই হল নিজেকে শানিয়ে নেয়া।
তারপর পচিশ মিনিটের মূল মেডিটেশন।
বেরিয়ে বললাম,
ওই ছেলেটা তোদের বাসার অপজিটের গলিতে থাকে। তার ক্লোজ ফ্রেন্ডরা থাকে, তোদের এলাকার মসজিদের পিছনে যে জলামত জায়গাটা আছে, সেটার অপারের বাড়িগুলোয়। ছেলেটার দারুণ একটা পাওয়ার আছে তোদের এলাকার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিটা যেখানে, সেদিকে। ছেলেটা প্রতিদিন বিকাল বা সন্ধ্যায় কলেজ গেইটে আড্ডা দিতে যায়। আড্ডা না দিলে তার গা-হাত-পা চুল্কায়।
তার প্রফেশনাল যাতায়াত হল, টঙ্গী ব্রিজের এইপাড়ে, প্রথম মার্কেটটায়। সেখানে হয় সে প্রফেশনাল কিছু করছে অথবা করার জন্য রেডি হচ্ছে বা আশা করছে। নিয়মিত সেখানে গিয়ে আলোচনা করে।
ছেলেটার গায়ের রং কালো। খুব পাকানো পেশিবহুল শরীর। পায়ের গোছা মোটা মোটা। পায়ের পাতা চ্যাপ্টা-চড়া। ফুসফুস আর হার্ট যেন জান্তব ইঞ্জিন। শরীরে কিছু টক্সিন জমেছে। ব্যাপার না। তেমন কোন মেজর রোগ নাই।
কিছুদিন একেবারে নর্মাল থাকে সে। তখন এমনকি খালি পায়ে, একটা লুঙ্গি পরে গেঞ্জি গায়ে জড়িয়ে বাজারের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতে। আবার কিছুদিন তার ফ্যাশান করার বাতিক ওঠে। তখন এম্নিতেই বড় চুলগুলোকে বড় বড় করে নিয়ে অসমান কাট দেয়, চক্রাবক্রা ছাপ্পামারা জিন্সের প্যান্ট পরে। আংটা মাংটা ঝুলছে এমন বুটজুতা পরে। চরম রঙিন গেঞ্জি অথবা খাকি ইউনিফর্ম স্টাইলের শোল্ডার স্ট্রাইপ অলা শার্ট পরে।
ছেলেটার মন-মানসিকতা ভাল। তবে ঠিক দু বছর আগে, অন্ধকার সময় পেরিয়ে এসেছে সে। অন্ধকার সময়ে ছিল দু থেকে আড়াই বছর। অনেক ধরনের অপকর্ম করেছে তখন। নেশা ফেশা।
তো এই ছিল বর্ণনা। মাসুম বলল, দোস, তুই হুবহু সব ঠিক বলেছিস। গার্মেন্টের কাছে ওর প্রভাব আছে কিনা জানি না। টঙ্গি প্রফেশনাল কাজে যায় কিনা তা জানি না। তবে চার বছর আগে ইন্টারমিডিয়েট ফেইল করে একটু বেতাল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে ছেলের কথা বলেছিস, সে হল আমি যার নাম বলেছি তার ছোট ভাই।
অর্থাত, চর্চার অভাবে আমার সাবজেক্টই চেইঞ্জ হয়ে গেছে।
এবার দ্বিতীয় কেইস স্টাডি।
সাবজেক্ট ঠিক করে দিয়েছে আমাদের কেয়ারটেকার।
ধ্যান থেকে উঠে বললাম,
অই ছেলে আপনার নিকট আত্মীয় হয়। ছেলেদের বাড়িটা বড়। বেশ বড়। বাড়িতে উঠান ঘিরে তিন চারটা ঘর আছে। ঘরে দামি ব্যান্ডের রেডিও টাইপের জিনিস আছে।
তাদের জমি ছিল বা আছে আপনাদের নদীর পাড়ের দুইটা জমি ডিঙ্গিয়ে। ছেলের বড় অণ্তত দুটা ভাই আছে। এই দুই ভাই তাকে সাংঘাতিক আগলে রাখে।
ছেলের মন খুব ফ্রেশ, খুবই ফ্রেশ। খুব বেশি পরিশ্রমী। কিন্তু বাড়তি খাটাখাটনি করে না। গায়ের রং ফর্সা। চেহারা গোলগাল। হাইট আপনার চেয়ে কিছুটা বড়। ছেলে সাদা রঙের শার্ট আর চেক লুঙি পরতে পছন্দ করে। নিজের মত একটু সময় কাটায় নিজের ঘরে। কখনো সিগারেটো ছুয়ে দেখে না। কখনো কোন নেশা করে না।
ছেলে খুবই সুস্থ। এত সুস্থ তার প্রতিটা অর্গান যে, আমি জীবনে কোনদিন কোন সাবজেক্টকে এতটা ভাল দেখিনি। তার ফুসফুস পাকা গোলাপি-লাল। শরীরে কোন ক্রনিক ডিজিজ নেই। ছোটখাট সমস্যা থাকতে পারে, ধর্তব্য নয়।
তার খাওয়াদাওয়া করার প্রতি বাড়তি আকর্ষণ নাই। বিনোদনের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ নাই। নিজেকে নিয়ে খুবই তুষ্ট।
সম্প্রতি দেশে আসার চেষ্টা করছে। হয়ত মাস চার বা ছয়েক পরে আসবে এমন ভাবছে। আর আসার পিছনে কারণ হিসাবে কাজ করছে বিয়ে জনিত কিছু। হ্যা, আপনি মান্নান মিয়া খুব চালাক। বেছে বেছে বিদেশি পার্টি দিয়েছেন আমাকে। যেন না ধরতে পারি। ছেলেটা শ্রমিকের কাজ করে। বেতন পায় অনেক বেশি। যা তার প্রত্যাশার বাইরে। পঞ্চাশ থেকে আশি হাজার সব মিলিয়ে। সে যেখানে থাকে তার দশ কিলোমিটারের মধ্যে পৃথিবীর সবচে বিখ্যাত পোর্টগুলোর একটা আছে। তার কাজো পোর্ট সংশ্লিষ্ট।
এই ছেলের সাথে আপনার বা আপনাদের মামদোবাজি করার একটা সম্ভাবনা আছে। মামদোবাজি যদি করেন, ঠকে যাবেন। যদি তার মন জয় করতে পারেন, তাহলে আপনার বিপদে এমনভাবে সে আসবে, যা কল্পনাতীত। আপনাদের পরিবারকে সে অত্যন্ত ভাল চোখে দেখে।
এখন কন, আমি যা দেখসি তাই কইসি। ভুল হলে কিসসু যায় আসে না।
আজব ব্যাপার, ভুল হতে পারে, এমন কথাগুলো বলিনি একটা।
আমি ভেবেছিলাম, ছেলেটা বোধহয় তার ভাইয়ের মেয়ে জামাই। কিন্তু আসলে সে তার আপন ছোট ভাই। চারভাইয়ের পর ছোট।
আমি ভেবেছিলাম সে সিংগাপুর থাকে, আসলে সে থাকে দুবাইতে পোর্টের পাশে একটা চরায়, তেল কোম্পানিতে।
আর সবকিছু ঠিকঠাক।
মূলত এই পুষ্টটা দিব কি দিব না ভাবছিলাম তিনমাস ধরে। ধূর! মেরে বসে থাকি, গালি যা আসবে, আমিইতো খাবো, কাউকে ভাগ দিব না।
দেখলেন, আসলেই সামু আমাকে খেয়েছে।
আজকে একটা আকামের উলানি পরীক্ষা ছিল (যেখানে ভর্তি হবার কোন দরকারই ছিল না, কিন্তু ভর্তি হয়ে রীতিমত ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি… ) । তিনঘন্টা লিখে উঠে এসে ব্লগ নিয়ে পড়েছি। কালকে আবার পরীক্ষা। পরপর চারদিন।
কিন্তু মন শোনে কার কথা!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩০