অন্ধতা ও ধর্ম পাশাপাশি চলতে পারে না, তাই ঈদ উপলক্ষ্যেই একটা ছোটখাট পোস্ট।
শুধু ইহুদি ও ক্রিশ্চানরা নন, একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে ঐশীগ্রন্থপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে হিন্দু ও বৌদ্ধরাও শামিল।
তাঁদের ধর্ম তাঁদেরই মত করে সংস্কারমুক্ত হয়ে পালন করলে কী হবে? ইসলাম ও কুরআন কী বলে?
'আর হে রাসূল দ., আমি আপনার কাছে সত্য বই পাঠিয়েছি আগের বইগুলোর সমর্থকরূপে। সেগুলোর সংরক্ষক ও সাক্ষীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন তা অনুসারেই তাদের মধ্যে মীমাংসা করুন। আর (হে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী), তাদের ইচ্ছার অনুসরণ করোনা নিজের কাছে আসা সত্যকে ছেড়ে। আমি তোমাদের সবার জন্যই একটা বিধান ও পথ রেখেছি। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তোমাদের সবাইকে মাত্র একটা জাতিতে/ সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে পারতেন। তাই এটাই প্রমাণ হল যে, তিনি তোমাদের (যাকে যাকে) যা দিয়েছেন, তা অনুসারেই তোমাদের পরীক্ষা করবেন। সুতরাং ভাল কাজের বেলায় তোমরা প্রতিযোগীতা কর। তোমরা সবাই ফিরে আসবে আল্লাহরই দিকে। তখন তিনিই তোমাদের জানাবেন, মতভেদগুলো স্পষ্ট করবেন। (৫:৪৮)'
সোজা অনুসিদ্ধান্ত-
১.ঐশী গ্রন্থ যারা পেয়েছে, তারা চাইলে নিজের গ্রন্থ বিশুদ্ধভাবে অনুসরণ করতে পারে, এতে কোন আপত্তি কুরআনের নেই।
২. এমনকি যদি বইপ্রাপ্ত কোন জাতি মুসলিমদের সাথে মীমাংসার জন্য আসে, তবে তাদের বই থেকেই সমাধান দিতে হবে, যেহেতু বইগুলো সম্মানিত ও খোদায়ি।
৩. আল্লাহ চাইলে সবাইকে মুসলিম বা ইহুদি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি শুধু একটা কারণে, যে বিধান তিনি পাঠিয়েছেন নিজ নিজ ধর্মে, সেটা ঠিকমত ও কুসংস্কার মুক্ত হয়ে পালন করতে হবে।
৪. তাই তিনি ধর্মানুসারীদেরকে নিজের নিজের ধর্মে থেকে ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করতে বলছেন।
৫. কিন্তু এই ধর্মানুসারীদের মধ্যে কিছু মতভেদ তো থাকবেই, সেই মতভেদের ব্যাপারে সত্যিটা আল্লাহ শেষদিনে জানিয়ে দিয়ে পারস্পরিক অবিশ্বাস যদি কিছু থাকে, অবিশ্বাসের আঙুল যদি থাকে, তা তিনিই মীমাংসা করবেন।
কথাটা অগ্রহণীয় মনে হতে পারে, তাই মাত্র দুটা আরো আয়াত-
ক. ঠিক আগের আয়াতটা, 'এবং এটাই উচিত যে, ইনজিলের অনুসারীরা নির্দেশ দিবে সেটা অনুযায়ী, যা আল্লাহ ইনজিলে দিয়েছেন। তবে আল্লাহর দেয়া নির্দেশ যারা দেয় না, তারা ফাসিক।'
অনুসিদ্ধান্ত- ইনজিল পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু তাতে আল্লাহর আদেশগুলো দেখে তা মানলেই যথেষ্ট।
থ. একই সূরার ৪৩ নাম্বার আয়াত, 'তারা আপনার কাছে কীভাবে বিচার চাইবে অথচ তাদের কাছে তাওরাত আছে (ইহুদি)। যার মধ্যে আল্লাহর নির্দেশও আছে। এর পরও তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং ঈমান আনছে না।'
অনুসিদ্ধান্ত- যা তাওরাতে আছে তার উপরই ঈমান আনছে না।
সব ইহুদি-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধ কি মুসলিমের শত্রু, বন্ধুর অযোগ্য?
এই সূরাতেই আয়াত ৫৭,
'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের আগে যাদেরকে বই দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের ধর্মকে হাসি-তামাশা ও খেলার জিনিস বানিয়ে নেয়, তাদেরকে ও (আল্লাহকে) অস্বীকারকারীদেরকে= ক্বাফিরদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা।'
অনুসিদ্ধান্ত- যারা নিজের ধর্মে শান্তিপূর্ণভাবে ও ভালভাবে আছে, ইসলামের সাথে লটকালটকি করে না, তারা এমনকি বন্ধুত্ব পাবার উপযুক্ত।
তার পরও, সন্দেহ থেকে যায়, যারা কিতাবি, অর্থাত ইহুদি-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধ, তারা প্রথাগত মুসলিম না হলে আল্লাহ কি তাদের সমর্থন করবেন?
সন্দেহের অবসান,
মা-ইদা'র আয়াত ৬৯,
'নিজেদেরকে মুসলমান অভিহিতকারী, ইহুদিগণ, নক্ষত্র-পূজারীগণ এবং খ্রিস্টানগণ, তাদের মধ্যে যে কেউ সরলমনে আল্লাহ ও বিচার দিবসে বিশ্বাস আনবে এবং সৎকর্ম করবে, তবে না থাকবে তাদের কোন ভয় না কোন দু:খ।'
অনুসিদ্ধান্ত- নিজেকে মুসলিম বলুন, ইহুদি বলুন, হিন্দু বলুন আর বৌদ্ধ বলুন, কিন্তু একমেবাদ্বিতীয়ম পরম ঈশ্বরের প্রতি যে বিশ্বাস রাখে, তাঁর কাছে গিয়ে বিচারের মুখে পড়ার কথা যে বিশ্বাস করে, তাঁর প্রেরিত বই ও প্রেরিত পুরুষের প্রতি যে বিশ্বাস রাখে ও ভাল কাজ করে,
তাদের কোন ভয় নেই,
কোন চিন্তা নেই।
ঈদ মুবারক!
জগতে শান্তি নেমে আসুক।