কিমাশ্চর্যম! (কিমা করে দেয়ার মত আশ্চর্য ব্যাপার) আমি আজকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সেহরি করেছি।
শেষবেলায় আখ চিবাতে চিবাতে ভাবলাম, তিনবেলার খাওয়ার সাথে যুক্ত করেই ধ্যানদর্শনের বিষয়টা লিখে ফেলি।
কদিন ধরে ঘুরছিল, ধ্যানদর্শন কেন জরুরি, এই তত্ত্ব কীভাবে সহজ করে ব্লগানো যায়।
অনেকের ধারণা, শুধু ধ্যান করলেই তো ফল পাওয়া যায়, তার দর্শন জানার দরকার কী?
অথচ মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলছেন, প্রজ্ঞা ছাড়া ধ্যান নাই, ধ্যান ছাড়া প্রজ্ঞা নাই। যার প্রজ্ঞা ও ধ্যানের সমন্বয় ঘটেছে... সেই বোধিলাভ করতে পেরেছে।
আর ধ্যানদর্শন হল প্রজ্ঞা উদঘাটনের মূল উপায়।
আচ্ছা, খাওয়ার কথায় চলে যাই।
যথার্থ ছোটবেলায়। আমার দাদী বলতেন,
শুয়ে শুয়ে খেও না, বরকত কমে যাবে। খাবারের শক্তি গায়ে লাগবে না। হেলান দিয়ে খেও না, গল্প করতে করতে খেও না, ইভেনকি, টিভি দেখতে দেখতে খেও না।
তাহলে খাবার গায়ে লাগে না।
আমি তখন বিশিষ্ট বৈজ্ঞানবিদ।
আমার কথাতো সিম্পল। আমি খামু, শইল্যের ভিত্রে গিয়া গ্লুকোজ না শুক্রোজ কীজানি হইব, তারপর রক্তের পাম্পে পাম্পে সব কোষে কোষে মাল চালান। ব্যস। শক্তি নগদ পয়সায় আগত। এখানে আবার লাগা-না লাগার কী আছে?
অদৃষ্ট মুকাভিনেতা বক্রহাস্য দিয়া তৎক্ষণাৎ কহিলা, রোসো, যেক্ষণে দাদী রহিবে না, সেক্ষণে বুঝিবি, এইরূপ গ্লুকোজ-রহস্য আধখানা জানিবার 'অল্পবিদ্যাভয়ঙ্করীত্ব' কদ্দূর ভয়ানক হইতে পারে।
আর ভাল্লাগতাছেনা ভাই, আজানের টাইম হয়া গেছে, এবার সোজা বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বইলা বিষয় কুরবানি দিয়ালাই-
খাওয়ার সময় যে কোন কাজ থেকে বিরত থেকে এবং যে কোন ভাবনা থেকে বিরত থেকে শুধুমাত্র খাবার দিকে মনোযোগ দিয়ে খেলে এবং খাবারটাকে খেয়াল করে খেলে যা হবে তা হল,
আমার ব্রেন পুরোপুরি এনগেজড থাকবে খাবারের দিকে। মুখের লালাতে যা যা নি:সরণ করার কথা, তা ঠিকমত সিক্রেশন করবে। পাকস্থলীতেও যা যা ফেলার কথা তা ফেলে খালাস।
এবার, ব্রেন খাবারের দিকে এনগেজড থাকার ফলে, আর কোন কাজ বা ভাবনাও না করার ফলে, শতভাগ নিশ্চিত, খাবারটা অনেক বেশি চিবানো হবে, ফলে, পাকস্থলীর উপর এক্সট্রা প্রেশার পড়বে না (আরে ভাই, যার যার কাজ তারে করতে দাও, তোমার পাকস্থলীতে তো আর দাঁত নাইক্কা!)
খাবারের দিকে মনোযোগ দেয়ার ফলে, প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্বাদবর্ধক আমরা এম্নিতেই নিয়ে নিব, এক চিমটি বোম্বাই মরিচ বা এক কামড় লেবুর খোসা। এই এক কামড় লেবুর খোসা বা এক চিমটি বোম্বাই মরিচ কিন্তু কখনোই চেখে দেখব না অন্য কিছু করতে করতে বা ভাবতে ভাবতে খেলে। ওরে বাবা, তখন আমার রুচিও বাধ সাধবে। অথচ এই দুটা জিনিসে এমন সব বায়োকেমিক্যাল রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য ইউনিক চিজ।
খাবার যেহেতু সচেতনভাবে খাচ্ছি, সময় নিয়ে এবং মজা করে খাচ্ছি, স্যাটিসফেকশন আসবে পুরোপুরি সময়মত। অথচ টিভি দেখতে দেখতে, বা অন্যকাজে অবশ্যই অল্প চিবানো, অল্প রসানো (লালা পড়বে কী করে? খাবারের দিকে তাকালে বা মনোযোগ দিলে না লালা পড়ে) অধিক পরিমাণ খাবার পাকস্থলীতে যাচ্ছে। অবশ্যই বেশি খাই। ফলে, পাকস্থলী নিজের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা অবশ্যই রাখতে পারে না। ওভারলোডেড ট্রাক যেমন বাইসাইকেলকেও সাইড দিতে পারে না, তেমনি আমাদের পাকস্থলী, তা বদহজম বা ডায়রিয়া না হলেও, নিদেনপক্ষে ডিসব্যালেন্সড হয়ে যায় লম্বা সময়ের জন্য।
ফলশ্রুতি? অসময়ে ঝিমানি। অন্যদের চেয়ে নিজের শরীরটা একটু কম চাঙা লাগা, আলসেমি- এগুলো মামুলি লক্ষণ। বড় লক্ষণ আরো ভয়াবহ। এইসব হতে থাকলে এক পর্যায়ে গিয়ে সমান খেটে ও সমান সবকিছু করে আপনার পাশেরজনকে দেখছেন ফিট, নিজেকে আনফিট।
কারণ, পাকস্থলি বাবাজি ওভারলোডেড হয়ে হয়ে ওভারডোজের মত করে আপনাকে প্রস্তুত করে ফেলেছে।
আর দৈনন্দিন আরো হ্যাপা তো আছেই। এই সুন্দরভাবে খাওয়াদাওয়া করলে ওজন লক্ষণীয় হারে কম বাড়বে। এবং একবার খেয়াল করে খেয়ে দেখুন, সব সময় নিজের প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে খেতে ভাল লাগবে, আবার সেই সামান্য খাবারটা অনেক স্বাদু করে খেতে ভাল লাগবে, কিন্তু মাংসমোংস বেশি খেতে ভাল লাগবে না।
এই প্রতিটা সূত্রই সুস্থতার সূত্র।
আরো কী কী জানি হাবিজাবি কথা ভাবসিলাম পোস্ট শুরু করার সময়। এখন সেইসব মহাসূত্র মনে পড়ছে না।
যাকগা, এইযে ধ্যানবিদ্যা, সেখানে ধ্যানীকে এভাবে খেতে বলা হয়, এভাবে খেতে বলাটা একটা দর্শন, আর এই খাবারের দর্শনের কার্যকারিতার মাধ্যমে আমরা ক্লিয়ার হতে পারলাম মাননীয় আদালত, যে আব্দুল কুদ্দুস পুরোপুরি নিদ্দুষ। মামলা ডিসমিস।
উৎসর্গ: উদাসী স্বপ্নভাই। আমি ইচ্ছা করেই পোস্টটা তাঁর মত করে লিখেছি। উদাসী ভাই যেমন ফিজিক্সের ক্লাসে একজন বিশিষ্ট ফাঁকিবাজ, আমিও ধ্যানের শিক্ষায়। উদাসী ভাই যেমন মজা করে ফিজিক্সের কঠিন বিষয়গুলো বলতে চান, আমিও তা চাই ধ্যানের বেলায়। তবে তার সাথে সামান্য তফাত আছে, তিনি সহজে বলতে পারেনও। আমার শুধু একটা নীতিকথা মনে পড়ে,
ত্যানা ইজ আ ডিফিকাল্ট থিঙ টু আনপ্যাক।