একজন নতুন হিসেবে অনেকগুলো লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। মনযোগ আকর্ষন করেছে আস্তিকতা ও নাস্তিকতা বিষয়ের লেখাগুলো। যখন দেখলাম সমাজে প্রচলিত তথাকথিত ধর্মের নামে মানুষ জীবনও দিতে প্রস্তুত একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক করছে, স্রষ্টা কি চান যে মানুষ আত্নঘাতী হউক, যারা ধর্মে বিশ্বাস করে?
''মানুষকে ভালোবাস'' অনেকই এই আচরনের উচ্চপ্রশংসা করে থাকেন। এই ধর্মগুলো যদি একে অপরের প্রতি ভালোবাসার বিষয়ে শিক্ষা দিতে সফল হতো, তা হলে মানুষ একে অপরের নিকটবর্তী আর একতাবদ্ধ হতো। আসলে একতার ক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্ম কি জোরালো প্রভাব রাখতে পেরেছে? সম্প্রতি, জার্মানীতে এক সমীক্ষায় এই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ''ধর্ম কি লোকেদের এক করে নাকি তাদের পৃথক করে বলে মনে করে?'' উত্তরদাতাদের মধ্যে ২২% ব্যক্তি মনে করে যে ধর্ম এক করে আর অন্যদিকে ৫২% ব্যক্তি মনে করে যে, তা বিভক্ত বা পৃথক করে।
বিগত ১০০ বছরের ইতিহাস- ধর্ম লোকেদের একে অপরের নিকটবর্তী করার পরিবর্তে বরং তাদেরকে পৃথক করেছে। কোনো কোনো ঘটনায়, ধর্ম এমন এক আবরন হয়ে এসেছে, যার আড়ালে সব চেয়ে মারাত্নক নৃশংসতা সম্পাদিত হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বলকান অন্চলের রোমান ক্যাথলিক ক্রোয়েশীয় এবং অর্থোডক্স সার্বীয়রা একে অপরের বিরুদ্ধে হিংস্র লড়াই এ মেতে উঠেছিল। উভয় দলই যীশুখ্রীষ্টকে অনুসরন করত বলে দাবী করেছে। যিনি তা্ঁর অনুসারীদের প্রতিবেশীদের ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাদের লড়াই এমন দিকে পরিচালিত করেছিল, যা ইতিহাসের সবচেয়ে আতঙ্কিত এক বেসামরিক বেপরোয়া হত্যাকান্ড হিসেবে পরিচিত। ৫লক্ষ্ রও বেশী নারী-পুরুষ এবং শিশুর মৃত্যুতে বিশ্ববাসী ভীতবিহ্বল হয়ে পরেছিলো।
১৯৪৭সালে ভারত উপমহাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০কোটি - পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকর প্রায় ২০ভাগ - মূলত হিন্দু, মুসলমান এবং শিখ। ভারত যখন ভাগ হয়ে যায় তখন ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়। সেই সময় ধর্মের কারনে পর পর কয়েকটা বেপরোয়া হত্যাকান্ড উভয় দেশের লক্ষ লক্ষ শরনার্থীকে পুড়িয়ে মারা হয়, মারধর করা হয়,অত্যাচার করা হয় এবং গুলি করে মারা হয়।
উপরের চাঞ্চল্যকর উদাহরন ছাড়াও, নতুন শতাব্দীর সূচনা সন্ত্রাসবাদের আতঙ্ককে আলোচনার র্শীষে নিয়ে আসে। আজকে, সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়েছে এবং অনেক সন্ত্রাসীদল দাবী করে যে তারা ধর্মের সাথে যুক্ত। ধর্মকে একতার প্রবর্তক হিসেবে দেখা হয় না। এর পরিবর্তে, এটা প্রায় দৌরত্ন্য ও অনৈক্যের সাথে সংযুক্ত। জার্মান সংবাদপত্রিকা 'ফোকুস' - ইসলাম, খ্রীষ্টান, কনফুসিয়াস,বৌদ্ধ, যিহুদী ও হিন্দু ধর্মকে বারুদের সাথে তুলনা করেছে।
যদিও কিছু ধর্ম একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে কিন্তু অন্যরা নিজেদের মধ্যে কলহে জর্জরিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তথাকথিত ধর্ম মতবাদ সংক্রান্ত
বিষয়গুলো নিয়ে তর্কবিতর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রন কি অনুমোদনযোগ্য? গর্ভপাত সমন্ধে কি বলা যায়? সমকামীতার প্রতি কেমন দৃষ্টি ভঙ্গি থাকা উচিত? একজন মহিলার কি শাসক নিযুক্ত হওয়া উচিত? যুদ্ধের প্রতি কি ধর্মের অনুমোদন থাকা উচিত?এই ধরনের নানা মতনৈক্য দেখে অনেকের মনে একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে - ''যে ধর্ম কিনা এমনকি নিজ সদস্যদের এক করতে পারে না, সেটা কিভাবে মানবজাতিকে এক করবে?''
স্পষ্ট্তই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ম একতার এক জোরালো প্রভাব হতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন কোনো ধর্ম কি আছে, যা ভিন্ন __ যা মানব জাতিকে এক করতে পারে???
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৫:১০