দেবেন্দ্র এর গাড়ী ছুটছে পাহাড়ি আকা বাকা রাস্তা ধরে। মানালি শিমলার থেকে নিচু শহর। শিমলা শহর টি যেমন পাহাড়ের উপর,মানালি তেমন নয়, বিয়াস নদীর তীরবর্তী একটি ভ্যালি বলা চলে। ভোর ৪ টায় আমরা পৌছাই কুল্লুর এগ্রো রিসোর্ট এ। এখান থেকেই আমরা আমাদের ১০ কিমি রাফটিং ও ৬০০০ ফিট থেকে পারাগ্লাইডিং করার প্যাকেজ নিয়েছি।
রিসোর্ট এর লোকেশন টাও অসাধারণ সুন্দর। বিশাল পাহাড় আর স্রোতস্বিনী বিয়াস নদীর পাড়েই। রিসোর্ট এর সামনে বসে চা পান করতে করতে সকাল ৭ টা,আর কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্ত হাজির।
শাওন এর ভালোই ভয় লাগছিলো রাফটিং এর কথা ভেবে, কিন্তু করতেই হবে নো অপশন। আমাদের জন্যে গাড়িও চলে এসেছে। এই গাড়ি তে করে আমরা চলে যাবো রাফটিং এর শুরুর পয়েন্ট এ ।
রাফটিং বোটে চরলাম, বিশাল বিশাল ঢেঊ আচড়ে পড়ছে আমাদের শরীরে। পানি এত ঠাণ্ডা যে শরীর ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছিলো। মনে ভয় লাগতে শুরু করলো,এই পানিতে পরলে কি অবস্থা হবে! এগিয়ে চলেছে আমাদের বোট,বিশাল বিশাল ঢেঊ এর মধ্যে লাফাচ্ছি আমরা। কুফ্রি তে করা এক্টিভিটিজ গুলো এখানে আমাদের ভালোই সাহস দিয়েছে। তবে শাওন একটিবারের জন্যেও সামনে ফিরে বসেনি,সাহস যোগাতে পারেনি স্রোত দেখার। শেষে না পেরে আমার হাতের মধ্যে হাত লক করে বসে ছিলো। ওর হয়ত শুধু কান্না করাটাই বাকি ছিলো।
আমাদের রাফটিং এর একটি ছোট ভিডিওঃ Click This Link
রাফটিং শেষ করতে না করতেই প্যারাগ্লাইডিং এর পালা। আবারো গাড়ি দিয়ে চলে গেলাম দুরের কোনো এক পাহাড়ের চুরায়। এখান থেকেই নিচে তাকাতেই ভয় লাগছিলো।
কে এখান থেকে প্রথমে লাফ দিবে তা নিয়ে শুরু হয়ে গেলো জল্পনা কল্পনা! অবশেষে জুবায়ের ই আগে গেলো।
আমি তো সিধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম করবোনা, কিছুতেই এখান থেকে লাফ দেওয়ার মত সাহস যোগাতে পারছিলাম না।
একে একে সবায় করলো, শুধু আমিই বাকি! বুক ধড়ফড় করছে, কি করে সম্ভব! কিন্তু লাফ দিতেই হলো।
শুধু লাফ দেওয়া পর্যন্ত ই ভয়, তারপর সবই স্বপ্ন। আকাশে যখন উড়ি তখনই যেনো চিলের সার্থকতা।
রাফটিং,প্যারাগ্লাইডিং শেষ করে আমরা ছুটি রোহতাং পাস এর দিকে। সময় সল্পতার কারনে আর আমরা সোলাং ভ্যালি পৌছাতে পারিনি। মানালি শহর হয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চললো রোহতাং পাস এর দিকে। গাড়ি এবার শুধু উপরেই উঠছে, রাস্তা ও সংকীর্ণ। কিন্তু আশে পাশের দৃশ্য অপরুপ সুন্দর।
রোহতাং পাস যখন পৌঁছাই তখন শীত কাবু করে বসে আমাদের সবায়কে। চারদিকে যেদিকে তাকাই সেদিকেই পাহাড়,বরফ,মেঘের মিতালি। রোহতাং পাসের উচ্চতা ১৩০৫০ ফিট। এত উচ্চতায় আমাদের সবার ই প্রথম বারের মত আশা,কিন্তু এখানে উচ্চতার কারনে আমাদের কারোর ই কোনো সমস্যা হয়নি।
রোহতাং পাস থেকে আমরা ফিরতে শুরু করি শহরের দিকে, প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ আমরা আমাদের হোটেলে পৌছাই। রাতে শহর টা ঘুরে ঠিক করে রাখি আগামিকাল লেহ যাত্রার জন্যে। মানালি যেই হোটেল এ উঠেছিলাম সেখান থেকে পুরো শহর টা দেখা গিয়েছিলো।
সকালে কিছুক্ষন পুরনো মানালি শহর টা ঘুরে আমরা রউনা হই লেহ এর উদ্দেশে।
আগামি পর্বে থাকবে আমাদের মানালি থেকে লেহ যাত্রার ইতিকথা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬