ইদের ছুটিতে সাজেক আর কাপ্তাই ঘুরার ইভেন্ট ছেড়েছিলাম ৷ ২ মাস ইভেন্ট টি লালন পালন করে ২২ জনের এক বিশাল দল ৷ ২৯ তারিখ রাত শ্যামলী পরিবহনের কল্যানপুর কাউন্টার এ একে একে ১৭ জন হাজির ৷ ১১:৩০ এ কল্যানপুর ছাড়ে বাস খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ৷ গ্রুপের বাকি ৩ জন সায়েদাবাদ ও ২ জন কুমিল্লা থেকে উঠে ৷ ফেনী পার হয়ে ভোর ৪ টায় যখন ফটিকছড়ির রাস্তায় উঠি তখন থেকে মনের মধ্যে রোমান্স এর শুরু ৷ আঁকাবাঁকা পিচ ঢালা পাহাড়ী পথ দেখতে ভালোই লাগছিলো ৷ রামগড় এর চা বাগান,মাটিরাঙার পাহাড়ী সৌন্দর্য পার করে সকাল ৮ টায় পৌছায় খাগড়াছড়ি তে ৷ দুই গ্রুপ ভাগাভাগি করে হোটেল লবিয়ত ও হোটেল নিলয় এ উঠি ৷ সকালের নাস্তা সেরে আগে থেকে ঠিক করা জুলমত ভাইয়ের চাঁদের গাড়ীতে করে রওনা হই আলুটিলা গুহার উদ্দেশ্যে ৷ চাঁদের গাড়ীর ছাদে উঠার মজা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় ৷ আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলছে চাঁদের গাড়ী সাথে চলছে সবার হৈহুল্লোড়,শাহীন ভাই আর গানের সুর ধরা আর ফুল প্যাকেজ শাওন (ওরফে হানিফ) ভাই এর গান গাওয়া ৷ সাথে গলা মিলালেন শোভন ভাই,খান ভাই,রবিন ৷ কিছুক্ষন পরেই পৌছে গেলাম আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ৷ শতবর্ষী বিশাল এক বটবৃক্ষ ছায়া দিয়ে আছে আলুটিলা কে ৷ অগনিত কিছু সিড়ি নেমে পৌছায় আলুটিলা গুহার মুখে ৷ হাতে মশাল নিয়ে সবায় রেডি ৷ ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই নতুন এক জগৎ ৷ পাথরের গুহার মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার, নিচ দিয়ে পানির হালকা স্রোত ৷ ২৮৬ ফিট লম্বা গুহা,কিছু যায়গায় মাজা ভেঙ্গে হাটতে হয় ৷ এই কিছু পরিমান যায়গার মধ্যেই ফাতেমা ভাবী লম্বা হয়ে দাড়াতে যেয়ে খাইছে একখান বারি ৷ মোটামুটি বিপদ ছাড়াই ১০ মিনিটে সবায় পৌছে গেলাম আলুটিলার শেষ প্রান্তে ৷ শেষ প্রান্তে সুৃূর্য হালকা কিরন পরে গুহার সৌন্দর্যের সিমানা ছাড়িয়েছে ৷সবায় ছবি তুলে আবার গিয়ে উঠলাম চাঁদের গাড়ীতে ৷ এবারের যাত্রা রিসাং ঝর্না ৷ ২ কিমি পথ পেরুতেই রিসাং এর গেট ৷ গেট পার করার পরেই শুরু পুল-সিরাত এর পরীক্ষা,কঠিন এক রাস্তা ৷ একটু ভুল হলেই খাদে,হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম চাঁদের গাড়ীর নামের স্বার্থকতা ৷ রাস্তার অর্ধেক যেয়ে সবায় নামলাম ৷ রিসাং পৌছার বাকি আরও ১৫ মিনিটের পাহাড়ী রাস্তা ৷ রাস্তা দেখে তউফিক ভাই আর রেজওয়ানা আপু নামার চিন্তা বাদ দিলো ৷ বাকিরা সবায় নামলাম রিসাং এ ৷ যেরকম অপরুপ ঝর্না টা ঠিক সেরকম ই রিস্কি ৷ একটু স্লিপ খেলেই অনেক নিচে যেয়ে পরতে হবে,ভাঙতে হবে হাত-পা ৷ সবায় যখন ঝর্নার পানিতে গা ভিজাচ্ছি,তখন ফাতেমা ভাবী ব্যাস্ত আমাদের সবার ছবি তোলায় ৷ কিন্তু ঝর্নার পানির লোভ বেশিক্ষন সামলাতে পারেনি,কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের কে জয়েন করলো ফাতেমা ভাবী ৷ কারও তো এখন ঝর্নার পানি ছেড়ে উঠতে মন চায়না,তবুও উঠতে হবে ৷ লাফালাফি,স্লাইডিং করার পর সবায় উঠলাম ৷ রিসাং এ পৌছার সময় পাহাড়ী রাস্তা নেমেছিলাম,কিন্তু এবার তো উঠতে হবে ৷ পাহাড়ে চড়ার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম সবায়,আমার আবার দুই পা গেছে মচকে ৷ চাঁদের গাড়ী পর্যন্ত পৌছানোর মধ্যেই আমার শ্বাস ঘন হয়ে উঠছে ৷ দুপুর ৩ টা নাগাদ আবার চাঁদের গাড়ীতে করে ফিরে এলাম খাগড়াছড়ি শহরে,সবায় এখন ক্লান্ত ৷
কিছু ছবিঃ
১)চাঁদের গাড়ীর ছাদে আমরা
২)আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র,মাটিরাঙা
৩)আমরা ২২ জন গুহায় প্রবেশের জন্যে প্রস্তুত
৪)গুহার ভিতরে,বাম পাশ থেকে যথাক্রমে রবিন,আমি,শাহীন ভাই,লোকমান ভাই
৫)মশালের আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা
৬)রনো ভাইয়ের যাত্রা শুরু
৭)গুহার শেষ প্রান্তে মডেল কানন ভাই
৮)গুহার শেষ ভাগে সূর্যের কিরন
৯)গুহা শেষ,এবার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার পালা
১০)আমরা সবায় আলুটিলার সিড়িতে
১১)রিসাং ঝর্নাতে নামার পথ
১২)উপরের পাহাড় থেকে দেখতে পাওয়া রিসাং ঝর্না
১৩)রিসাং ঝর্নাতে পৌছানোর শেষ কয়েক ধাপের সিড়ি
১৪)দেখা পেলাম রিসাং এর
১৫)আমরা সবায় ঝর্নার পানিতে গোসল করছি
১৬)গোসল পর্ব চলছে
১৭)আমরা গোসলে ব্যাস্ত,ফাতেমা ভাবী ছবি তোলায় ব্যাস্ত
১৮)খানদানি পেট সবার
১৯)মডেল কানন ভাইয়ের স্লাইড
২০)এই দুধসাদা পানি আমাদের মনকে আন্দোলিত করেছে
চলবে..
খাগড়াছড়ি ভ্রমন ২
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০