প্রায় ২ বছর বান্দরবন ঘুরার প্লান নিয়ে ভাবছিলাম,আস্তে আস্তে প্লানটা মাথার বোঝ হয়ে উঠছিলো ৷ অবশেষে ঘুরে আসলাম স্বপ্নের হাতছানি দেওয়া মেঘের ক্যানভাসে আঁকা বান্দরবন ৷ বর্ষাকালে বান্দরবন ঘুরতে যাবো শুনে অনেকেই হাসির ছলে উড়িয়ে দিলো,কিন্তু এই বর্ষাই আমাদেরকে প্রকৃতির সবচেয়ে কাছে নিয়ে গেছে হয়তো ৷মেঘ,বৃষ্টি,রোদ,রংধনু কী নেই বর্ষার বান্দরবন এ?বলতে গেলে এক বর্ষাই ছয়টি ঋতুর ছোয়া লাগালো মনে ৷মাত্র ৩ দিনের এই ভ্রমনে আমরা স্বর্ন-মন্দির,মেঘলা,নিলাচল,শৈলো প্রপাত,মিলনছড়ি ও নিলগীরি ঘুরেছি ৷আজ স্বর্ন-মন্দির,মেঘলা ও নিলাচল এর বিস্তারিত লেখবো ৷
স্বর্ন-মন্দিরঃ বান্দরবন শহর থেকে মাত্র ৪ কিমি দুরুত্বে অবস্থিত অপরুপ সুন্দর স্বর্ন-মন্দির টি ৷শহরের ট্রাফিক মোর থেকে অটোরিকশা তে জনপ্রতি ২০ টাকা করে নিবে ৷ স্বর্ন-মন্দির একটি উপসনালয়,তাই এখানে শর্টপ্যান্ট পরে ঘুরার অনুমতি নেই,কেও না জেনে যদি শর্টপ্যান্ট পরে চলে যান,সমস্যা নেই ২০ টাকা করে লুঙ্গী ভাড়া পাওয়া যায় ৷ জুতা রাখার জন্য আলাদা যায়গা আছে,প্রতি জোড়া জুতা ৫ টাকা ৷ স্বর্ন-মন্দির এ প্রবেশ টিকেট ২০ টাকা ৷ গ্রীষ্মকালে সন্ধ্যা ৬ টা ও শীতকালে সন্ধ্যা ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থী দের জন্য খোলা থাকে ৷ গোধূলি বেলার স্বর্নালী আভা হলো স্বর্ন-মন্দিরের সার্থকতা ,আর ভাগ্য ভালো থাকলে রংধনুর দেখা পাওয়াটাও সৌভাগ্যময়(যেমনটা আমরা পেয়েছি) ৷
মেঘলাঃ মেঘলা বান্দরবন শহর থেকে কেরানীহাট সড়কের পথে ৫ কিমি দুরুত্বে অবস্থিত ৷ শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে সিএনজি তে জনপ্রতি ৩০ টাকা করে নিবে ৷ নামটা তার মেঘলা হলেও মেঘের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই ৷ প্রকৃতির কোলে কৃত্রিম হ্রদ,ঝুলন্ত ব্রিজ,প্যাডল বোট, মেঘলা এক্সপ্রেস(ট্রেন),কেবল কার(অধিকাংশ সময় ই বন্ধ থাকে),পাহাড়ের উপর আদিবাসীদের ফলের দোকান গুলো নিয়েই মেঘলা ৷ ফরমালিন ছাড়া অসাধারণ স্বাদের ফল গুলো মিস করবেন না,আমরাও করিনি ৷ মেঘলা তে প্রবেশ টিকেট ৪৬ টাকা, কেবল কার জনপ্রতি ৩৪ টাকা ৷
নিলাচলঃ নিলাচল বান্দরবন শহর থেকে কেরানীহাট এর পথে ৫ কিমি দুরুত্বে অবস্থিত ৷ সমতল থেকে আনুমানিক ১৭০০ ফিট উপরে এর অবস্থান ৷ শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে মাহেন্দ্র বা সিএনজি তে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে নিবে ৷ নিলাচল নামের সার্থকতা মেঘ ভর্তি নিলের আকাশ থেকে আসে ৷ মোডারেট করার পর অনেকেই নিলাচল কে নিলগীরি থেকে ও সুন্দর বলেন ৷ নিলাচল অসাধারণ,মনে হবে মেঘের সাথে খেলা করছি ৷আমরা মেঘ দেখে এতটা হারিয়ে গিয়েছিলাম যে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র মাহেন্দ্র তেই রেখে নেমে গেছি ৷ নিলাচল এ প্রবেশ টিকেট নিবে ৪৬ টাকা ৷একজন মাহেন্দ্র এর চালকের নাম্বারঃআবুল কালাম( +880 1861 627762) ৷
বান্দরবন কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে শ্যামলি,ইউনিক,সৌদিয়া,ডলফিন,এস আলম এর সরাসরি বান্দরবন এর বাস আছে,ভাড়া জনপ্রতি ৬২০ টাকা ৷ অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম(৩২০ টাকা) রেলস্টেশন ৷ চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থেকে পুরবী বাস এ করে বান্দরবন (১৪০ টাকা) ৷
কোথায় থাকবেনঃথাকার জন্য বান্দরবন এ হোটেল এর অভাব নেই ৷ হোটেল গুলোর মান ও মোটামুটি ভালো ৷ আমরা ছিলাম হোটেল আজমীর এ ৷ হোটেল এর ম্যানেজার এর ব্যাবহার ছিলো অসাধারন ৷হোটেল আজমীরঃ০১৮২৮৮৬৮৬০০(সিঙ্গেল রুম ৪০০ টাকা করে নিবে ) ৷
কোথায় খাবেনঃ তাজিং ডং হোটেল টাই বান্দরবন এর বেস্ট মনে হলো,ট্রাফিক মোড় থেকে ২ মিনিট হাটার পথ ৷ মোটামুটি ১০০-১২০ টাকার মধ্যে পেট পুরে খাওয়া যায় ৷
বিদ্রঃ
১ ডাকাতের সাথে সন্ত্রাসী করার মানসিকতা থাকলেই কেবল সেলুন এ যাবেন ৷
২ বর্তমানে বান্দরবন এ হওয়া বন্যার থেকে আল্লাহ তাদের মুক্ত করুক,এই কামনা করছি ৷
ছবিগুলোঃ
নিলাচল এ
স্বর্ন-মন্দির এঃ
মেঘলা তেঃ
*নিলগীরির বিস্তারিত পরে দিবো
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৫