somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝটিকা সফর: হ্যানয়

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অফিসের কাজে হো চি মিনের দেশে এসে পড়ে আছি বেশ কয়েক মাস... প্রথমে ভেবেছিলাম ধুমাই ঘোরাঘুরির পোষ্ট দিব। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। আশায় গুড়ে বালি বলতে আবার ভেবে বসেন না ঘুরাঘুরি হচ্ছে না। সেটা ঠিকই হয়েছে। কিন্তু বেড়ানোর ফ্লেভারটা ঠিক পোষ্টে লিখে প্রকাশ করার মত যোগ্যতা আমার হয়নি। নিজের সীমাব্ধতার কাছে পরাজয় স্বীকার করে চুপচাপ ছিলাম। আবার অফিসের চাপও ব্যাপারটাতে সহয়তা করেছে। নাভিশ্বাস নামে বাংলায় একটা শব্দ আছে ... এই শব্দটার সাথে বাস্তবে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আমার অফিস অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্তু প্যাচাল পাড়া যার রক্তে মিশে আছে সে কি আর কোন বাধা মানতে পারে?? সুতরাং আমিও ভ্রমণ বৃত্তান্ত লেখা শুরু করে দিলাম।

উপক্রমণিকা:

আমার বেস অফিস হচ্ছে হো চি মিন সিটি (পুরাতন নাম সায়গন)। বলা হয়ে থাকে ভিয়েতনামে বাইরের যত পর্যটক আসে তার ৭০% আসে হো চি মিন সিটিতে। ছবির মত সুন্দর শহর। আমার গল্প এই শহরকে নিয়ে না... আর হো চি মিনে যত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই বেছে নিলাম হ্যানয়কে। ভিয়েতনামের রাজধানী। হো চি মিন সিটির থেকে জৌলুশহীন শান্ত এক শহর। হো চি মিন সিটি থেকে প্রায় ১৪০০ মাইল দূরে। আকাশপথ ছাড়া হো চি মিন থেকে ওখানে যাবার চিন্তা কেউ করে না। ট্রেনেও যাওয়া যায় কিন্তু সময় লাগে পাক্কা ৩০ ঘন্টা (কলকাতা টু দিল্লী ২৩ ঘন্টার ট্রেন জার্নির পর আমি কানে ধরেছিলাম আরে সেখানে ৩০ ঘন্টা হা ঈশ্বর!!)। সে যায় হোক... হ্যানয় ঘুরে আসার একটা সুপ্ত ইচ্ছে মনের ভেতর ছিল। একটা দেশে এসেছি তার রাজধানীতে আমার পদধূলি দিয়ে আসব না সেটা কি হতে পারে!! কিন্তু সময় বা মধ্যবিত্ত সামর্থ্য মাঝখানে চীনের প্রাচীর তুলে ফেলছিল। কিন্তু কানা ছেলে নামো অনেক সময় পদ্মলোচন হয় তেমনি হতভাগারও কখনো কখনো ভাগ্য খুলে যায় .... তাই না?? ঠিক আমার সামনেও এসে গেল অভাবনীয় সুযোগ (ঠিক অভাবনীয় না ক্ষীণ সম্ভবানা ছিল... কিন্তু কপাল আমার কখনো সহায় হয় না ... তাই ক্ষীণ ব্যাপারটি অভাবনীয় হয়ে গিয়েছিল )....

টিকেট টু হলিউড থুক্কু হ্যানয়

আমাদের মূল অফিস হ্যানয়ে ... হো চি মিনে শাখা অফিস। আমাদের ডিপার্টমেন্টেরও মূল শাখা হ্যানয়তে। একদিন অফিসে গিয়ে দেখি ডিপার্টমেন্টের সবাই খুবই তটস্থ। কি ব্যাপার কি ঘটল!!! (আমি যথারীতি ৩০ মিনিট পড়ে অফিসে পৌঁছেছি)... যাকে জিজ্ঞেস করি সেই ব্যস্ততার ভাব করে কাটিয়ে যাচ্ছে। চিন্তা করলাম ভয়ংকর খবর যত কম জানা যায় ততই ভাল .... কেউ বলছে না ভালই তো। চমৎকার সিদ্ধান্তে পৌছানোর পর নিজেকে খুবই ফ্রি কানট্রি ম্যান মনে হতে লাগল। আয়েসি ভঙ্গিতে ডেস্কে লেপটপ রেখে .... পাশের সুন্দরীর তটস্থ দৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে গেলাম ক্যাফেটেরিয়াতে । দিন শুরু করতে হবে এক কাপ ধূমায়িত ন্যাসকেফে দিয়ে। এ কয়েক মাসে ক্যাফেটেরিয়াতে একটা সিট মোটামুটি আমার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছে... কফির কাপ হাতে নিয়ে সেখানে উদাস হয়ে বসে থাকি। কিন্তু আজকে ঢুকেই মেজাজটা গেল বিগড়ে। এক প্রায় ফুটবল (সত্যিকার অর্থেই ফুটবল) বুড়ো আমার সিটে বসে আছে। ভাবলাম কফি বানাতে বানাতে সে হয়তো উঠে যাবে। কফি বানানো শেষ কিন্তু আমার আশায় আবার গুড়ে বালি। বুড়োর উঠার নাম নেই। সে পরম আনন্দে তার সামনে বসে থাকা মধ্যবয়সী এক সুন্দরীর সাথে গল্পে বুদ হয়ে আছে। কি আর করার ... ব্যর্থ মনোরথে সেই অসম জুটিকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় আমার বিখ্যাত হিন্দিতে বলে উঠলাম "দিন গুজাড় গ্যায়া মাগাড় চাহাত নেহী গ্যায়া"... বুড়োটা দেখি হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে একটা জোকারী টাইপ হাসি দিল। পিলে চমকে উঠলাম... লোকটা আমাদের উপমহাদেশের না এটুকু শিওর... তবে মহিলাটা কোন দেশি বুঝতে পারছি না। নিজেকে প্রবোধ দিলাম নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা... বুড়ো কোনভাবেই আমার কথা বুঝেনি। জাস্ট ফ্রেন্ডলি স্মাইল।

আমার ডেস্কে বসতে না বসতেই লিডার কল করলেন। লিডারের কাছে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে গিয়ে উপস্থিত হলাম (এভাবটা আমি তখনোই ধরি যখন হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না)... উনি আউটলুক থেকে একটা মিটিং কল করতে বললেন। কারণ হ্যানয় থেকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ন্যাশনাল ম্যানেজার এসেছেন উনি আমাদের কাজের ধারা সম্পর্কে জানতে চান এবং সাউথ (হো চি মিন) ও নর্থের (হ্যানয়) কাজের মধ্যে সিনক্রোনাইজ করতে চান। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল .... কারণ অফিসিয়াল মিটিং জিনিসটা আমার কাছে খুবই বোরিং লাগে.... যদিও সেটা নিদ্রার জন্য সহায়ক তবুও। কি আর করার মিটিং কল করলাম।

আমি সাধারণত সবার শেষে মিটিং রুমে ঢুকার চেষ্টা করি... কিন্তু প্রায় সময়ই ব্যর্থ হয়। মনে হয় কলিগদের আমার চেয়েও মিটিং এর প্রতি বেশি বিতশ্রদ্ধ ভাব আছে। যায় হোক মিটিং রুমে ঢুকেই আমার মনে হল পায়ের নীচের থেকে মাটি সরে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে সেই ক্যাফেটেরিয়ার ফুটবল আর লাস্যময়ী মহিলাটা। আমার থতমত ভাবটা লিডারের চোখে পড়েছিল কিনা জানি না উনি আমার নাম ধরে ডাক দিয়ে বসতে বললেন।

শুরু হল মিটিং ....

প্রথমেই প্রায় ফুটবল লোকটি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করল .... এই লোকই আমাদের ন্যাশনাল ম্যানেজার.... লেবাননের বাসিন্দা .... নামটা ভীষণ খটমটে... ধরে নি মি: এক্স। মি এক্স নিজের গুণের কথা বলতে গিয়ে বলল সে খুব ভাল ক্যারাওকে সিঙ্গার এবং এক প্রকার বহু ভাষাবিদ। শেষের কথাটা শুনেই আমার মাথা বনবন করতে শুরু করে দিল। তু তো কাম সে গ্যায়া বাচ্চু... ততক্ষণে ফুটবল কি কি ভাষা জানে ফিরিস্তি দিতে শুরু করল .... লেবানিজ, ইংরেজি, ফরাসী, পার্সিয়ান, আর‌্যাবিক, স্পেনিশ, সুইডিশ .. একসময় তার ফিরিস্তি শেষ হল। আমার তো নিজের ভাগ্যকেই বিশ্বাস হচ্ছে না... ব্যাটাতো আর হিন্দি বা উর্দু জানে না ... যাক এখন ঠান্ডা মাথায় মিটিংএ মনোনিবেশ করা যায়। আমি যে কোন কাজ করতে গেলেই হাজার খানেক খটকা মানে প্রশ্ন জমে.... (একারণে আমার উর্দ্ধতনরা একটু অসন্তুষ্টই থাকেন)... কিন্তু কি আর করার স্বভাব যায় মরলে। এখানেও কিছু প্রশ্ন করে বসলাম... ফুটবলকে দেখে মনে হল সে ইম্প্রেসড। সে বলল আমার প্রশ্ন গুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ... সে ভেবে উত্তর দিবে। আরো অনেক ব্যাপারে আলাপ হল। একসময় আমার প্রতীক্ষার অবসান করে মিটিং শেষ। আবার ডেস্কে এসে বসলাম।
"হ্যালো ইয়ং ম্যান কেমন চলছে সব??" পিছনে ফিরে দেখি ফুটবল উপস্থাপকের ভঙ্গিমায় আমাকেই প্রশ্নটা করছেন।
"সব ঠিকঠাক এক্স"
"তুমি ঠিকমত কাজে মন দিতে পারোতো ... আশে পাশে এত সুন্দরী নিয়ে"..... কস কি রে মমিন... একজন ম্যানেজার আমার মত মামুলী বান্দার সাথে এভাবে কথা বলছেন !!!!
আমি বললাম... "প্রথমে একটু হতো হয়তো ...এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি...এখন আর আলাদাভাবে সুন্দরী দেখি না"
"বা বা ভাল... এর অর্থ তোমার একটু চেঞ্জ দরকার তাই না?? "
"আমি সব সময় চেঞ্জের ব্যাপারে আগ্রহী..."
"আসবে নাকি হ্যানয়?? একটা ট্রেনিং করে যাও হ্যানয় থেকে"
আমি তো পারলে ফুটবলকে জড়ায় ধরি... আহলাদে আটখানা হয়ে বললাম
"অবশ্যই অবশ্যই"
"ঠিক আছে সামনের সপ্তাহে তুমি হ্যানয় আসছো... আমি তোমার লিডারের সাথে কথা বলছি"

আহা কি আনন্দ .... আকাশে বাতাসে...

ম্যাড়ম্যাড়ে দিনটা হঠাৎ করে এত্ত উজ্জ্বল আর রঙিন হয়ে গেল কেন??
"ওহো তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি", ফুটবল আমাকে পিছু ডেকে বলল...
"কি কথা এক্স??"
"আমি হিন্দি আর উর্দু ভাষাটাও জানি... তোমাদের বাংলাও বুঝি খানিকটা"

কস কি রে মমিন!!!!

হতবুদ্ধি আমাকে পিছনে ফেলে রেখে শিস দিতে দিতে ফুটবল চলে গেল তার ডেস্কে।


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৪
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×