somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

3 Idiots নাকি 2 Idiots with 1 Superhero

১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এটাকে ঠিক রিভিউ বলা যাবে না। আমি জাস্ট কি ভেবেছিলাম কি দেখলাম টাইপ হৃদয়ের হা হুতাশ ঝেড়ে ফেলার জন্য লিখছি। আমি নিজে জীবনের ৪টা বছর ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পার করেছি… সুতরাং বুঝতেই পারছেন যখন শুনতে পারলাম একটা মুভি হচ্ছে এই লাইনের উপর ভিত্তি করে উপরন্তু সেখানে অভিনয় করছেন আমির খান ( যদিও গজনী দেখার পর থেকে তার স্ক্রিপ্ট পচ্ছন্দ করার উপর আমার বিশ্বাস একটু কমে গেছে) আমার আগ্রহটা কোন পর্যায়ে ছিল ।আমির খানের ঝুলিতে আছে দিল চাহাতা হ্যায়, রং দে বসন্তি , তারে জমিন পরের মত মুভি।
সে যায় হোক যা বলছিলাম… মুভিটার প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল। ইতিমধ্যে বোহেমিয়ানের কথকতার বদৌলতে পেয়ে গেলাম 'Five point someone’ বইটি। সবাই হয়তো জানেন এই বইটার ছায়া অবলম্বনেই আমাদের 3Idiots রুপালি পর্দায় এসেছে (যদিও মুভিটার কোথাও লেখক বেচারার নাম খুঁজে পাইনি)।



আমার আবার নন একাডেমিক বই পড়তে কখনোই খারাপ লাগে না। সুতরাং বইটি ডাউনলোডিত হয়ে গেল এবং দু’দিনের মাথায় শেষ। আহ!!! কি যে শান্তি পেলাম বলার বাইরে। বইটির কিছু ঘটনাতো আমার জীবন থেকে নেওয়া মনে হচ্ছিল। সিম্পল একটা উদাহরণ দিচ্ছি, বইটিতে তিন চরিত্র রায়ান, অলক এবং হরি । রায়ান হচ্ছে বাঊন্ডুলে টাইপের ছেলে জগতে পড়াশুনা ছাড়া যে কোন বিষয়ে তার প্রবল আগ্রহ। তিন জনই দিল্লি আই আই টির মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। ক্লাশ টেষ্ট, সাডেন টেষ্ট, কুইজ, আস্যাইনমেন্টের ঝড়ে তাদের জীবন ছাড়খাড়। এরকমই এক সময়ে রায়ানের ইচ্ছে করল মুভি দেখতে যাবার। কিন্তু আকাশে বাতাসে জোর গুজব শোনা যাচ্ছে কালকে একটা সাবজেক্টের সাডেন কুইজ হতে পারে। কিন্তু মাস্ত রায়ান তার বাক চাতুরীতে বাকি দু’জনকে ভুলিয়ে ঠিকই চলে গেল আরনল্ডের টারমিনেটর দেখতে। মুভি শেষে যখন তারা হলে ফিরে আসল তখন সাডেন কুইজ আর ঠিক সাডেন নেই একদম নিশ্চিত। সুতরাং তিনজন ঝাপিয়ে পড়ল পড়াশুনাতে কিন্তু সব কাভার করতে পারল না। কিন্তু ভাগ্যের কি বিড়ম্বনা কুইজে সব প্রশ্নই আসল রিসেন্ট ক্লাশ লেকচার থেকে যেটা তার পড়ে উঠতে পারে নাই…… যথারীতি ডাব্বা (কিন্তু থ্রি ইডিয়টস মুভির যে ধারা দেখলাম তাতে আমির খান নিশ্চিত হাই মার্কস পেত… সুপার জিনিয়াস)। এখন আসি আমার ভার্সিটি লাইফের গল্পে… প্রথম সেমিস্টারে আমাদের কম্পিউটারের ধারাপাত (Introduction to computers) ক্লাশ নিতেন একজন সুন্দরি ম্যাডাম (যাকে আমি ১ম সেমিস্টারের ছাত্রী ভেবেছিলাম)। তো উনি আমাদের একটা ক্লাশ টেস্ট নিবেন। তার সাবজেক্টের প্রথম টেষ্ট সুতরাং আমদের মত (আমরা থ্রি ইডিয়টস আমি, আহমেদ রাকিব, আরাফাত) গুণমুগ্ধ ছাত্রদেরতো ভাল করতে হবেই। কিন্তু সদ্য ভার্সিটিতে ঢোকা তিন তরুণের কাছে সন্ধ্যার সময় পড়ার টেবিলে মাথা গুঁজে টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ক্ষ্যাতিয় প্রক্রিয়া মনে হল। সুতরাং তিন জনই চায়ের দোকানে আড্ডা মেরে, কম্পিউটার গেমস খেলে রাতের খাবার খেয়ে পড়ার টেবিলে হাজির হলাম ১০:৩০ কি ১১ টার দিকে। ক্লাশ লেকচার খুলেই তো মাথায় হাত… সুন্দরীতো অনেক কিছু পড়ায় ফেলেছেন। যত যায় পড়াক আমাদের ভাল করতে হবেই… দরকার হলে সারা রাত আজকে পড়ার টেবিলের সাথে ফেভিকল বন্ধণে আবদ্ধ হব। শুরু হল পড়া… শেষ পর্যন্ত রাত ৩টার দিকে ক্ষান্ত দিলাম সবাই। পরের দিন সকাল ১০ টাই টেস্ট। মোটামুটি সবকিছুই দেখা হয়েছে। পরম নিশ্চিন্ত মনে আমরা তিন জন ঘুমাতে গেলাম। একটা সুন্দর আমেজে আমার ঘুমটা ভাঙলো… মনে হচ্ছে এত পারফেক্ট ঘুম অনেকদিন হয়নি। ওহো আজকে তো ক্লাশ টেস্ট লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠলাম… বাকি দুই ইডিয়ট তখনো নিদ্রাদেবীর সাথে রঙ ঢঙে ব্যস্ত… হঠাৎ চোখ পড়ল ঘড়ির দিকে। কস কি রে মমিন সময় ১০:২০ … আমাদের মেস থেকে ভার্সিটি যেতে কম করেও ২৫-৩০ মিনিট লাগে। দু’টাকে লাথি মেরে উঠিয়ে বিদ্যুতের গতিতে ছুটে গেলাম ভার্সিটি। সবাই দেখি ডিপার্টমেন্টের করিডরে দাঁড়িয়ে সদ্য শেষ হওয়া ধারাপাত টেস্ট নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা তিন বেকুব কি করব ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় দেখি ম্যাডাম তার রুমের দিকে যাচ্ছেন… আবার দৌড়। ম্যাডাম এত মায়াবতী উনি নিশ্চয় আমাদের ব্যাপারটা বুঝবেন। আমাদের চটপটে রাকু ম্যাডামকে সবিস্তারে সব বলল। ম্যাডামের মুখে মধুর হাসি… আমাদের মনে আশার ঘন্টা। ম্যাডাম বললেন, ‘কোন ব্যাপার না… এর পরের টেস্টগুলোতে ভাল করার চেষ্টা করো…’। /:) :-/



যায় হোক ধান ভাঙতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম। আমি জাস্ট বইটির সাথে আমাদের বাস্তব ভার্সিটি লাইফের সাদৃশ্য দেখালাম… আমি মনে করি বইটির কোন না কোন ঘটনার সাথে কেউ না কেউ সাদৃশ্য খুঁজে পাবে। কিন্তু থ্রি ইডিয়টস সেটা হয়ে উঠতে পারেনি… কেন পারেনি তার গুটি কয়েক উদাহরণ দেয়
>> ডিপার্টমেন্টের হেড অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী হয়েও আমিরের সহজ প্রশ্নের উত্ত্র দিতে পারে না।
>> ফোর্থ ইয়ারের এক স্টুডেন্ট তার প্রজেক্ট শেষ করে উঠতে পারছে না (যন্ত্রপ্রিয় এবং মেধাবী) কিন্তু প্রথম সেমিস্টারের সুপার হিরো আমির খান মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই প্রজেক্টটা করে ফেলল।
>> বিভাগীয় প্রধানের মেয়ে মাতাল অবস্থায় ছেলেদের হলে ঢুকে গেল… কেউ কিছু বলল না।
>> রিক্রেয়শান রুমে টিটি টেবিলের উপর একজন গর্ভবতী নারীর ডেলিভারী করে ফেলল ম্যাকানিকাল ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা ম্যাকাইভার স্টাইলে… (আমার মাকে মুভিটা দেখাতে হবে ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিল… এখন সে বুঝবে চাইলে আমরাও পারি B-) )।

>> ডেলিভারীর পর বাচ্চা নিস্তেজ হয়ে আছে… কোন টু শব্দ করছে না… এমন কি ছবির ডাক্তার নায়িকাও কান্নায় ভেঙে পড়েছেন… তখনই আমাদের সুপার হিরো কিছু শব্দ সমষ্টি উচ্চারণ করল আর বাচ্চা চিৎকার



করে পৃথিবীতে তার উপস্থিতি জানান দিল। এই অংশ চরম হাস্যকর মনে হয়েছে।

আর যায় হোক কারো ভার্সিটি লাইফে উপরের ঘটনাগুলো ঘটেছে শুনলেও আমি অন্তত চাপাবাজী ভেবে এড়িয়ে যাব।

ছবিটার বড় ব্যর্থতা মনে হয়েছে আসল ম্যাসেজটাই তারা ডেলিভারী করতে পারেনি। 'প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাটার পরিবর্তন করা'।



শুধু খারাপ দিক নিয়েই আলোচনা করে গেলাম… আসলে আমি তো আর ঠিক রিভিউ করছি না … জাস্ট নিজের না পাওয়া আমেজটাকে ব্যক্ত করলাম… হয়ত রাজকুমার হিরাণী এবং আমির খানের মত ব্যক্তিত্ব অথবা গল্পের যে প্লট সেটা আমাকে অনেক বড় কিছু একটা পাবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল তার ছিটেফোটাও পাইনি। তবে একটা কথা আমি জানি কোন জনপ্রিয় বই’র উপর ভিত্তি করে কোন মুভি তৈরি হলে সেটা কখনোই সেই বইটাকে অতিক্রম করতে পারে না।

অনেক প্যাচাল হল… একটানা সমালোচনা করে গেলাম। তবে মুভিটাকে যদি সিরিয়াস মুভি হিসেবে না দেখে কমেডি মুভি হিসেবে দেখেন তাহলে ভাল লাগতেও পারে। থ্রি ইডিয়টসের সব অপরাধ আমি ক্ষমা করে দিয়েছি Give me some sunshine গানটার জন্য। একটি মাত্র গান যে কোন মুভির চেয়ে ঐ মুভির বিষয় বস্তু ভাল ব্যক্ত করতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এই গানটি। গানটা প্রিয় কিছু লাইন লিখতে লিখতে আমার আজকের প্যাঁচাল শেষ করে ফেললাম।
Give me some sunshine
Give me some rain
Give me another chance
I wanna grow up once again

৩ ইডিয়টের সব গানগুলোর ডাউনলোড লিংক

মুভিটার ডাউনলোড লিংক
3idiots

বইটির ডাউনলোড লিংক

ছবিসূত্র: গুগল মামা
বই সূত্র: বোহেমিয়ানের কথকতা


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:৪২
৫৩টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×