গত কয়েক মাস যাবৎ চরম ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছি। কোন দিক দিয়ে দিনের আসছে আবার কোন ফাঁকেই বা চলে যাচ্ছে ... বুঝে উঠতে পারছি না। যাণ্ত্রিক জীবনের পাঠ একদম হাতে কলমে হয়ে যাচ্ছে। এক সময় ভাবতাম (এখনো চেষ্টা করি কিন্তু সিস্টেম আমাকে প্রবল পরাক্রমে চেপে ধরেছে) আর যায় হোক আমি আর দশটা মানুষের মত নিজেকে যাণ্ত্রিক হতে দিব না... কিন্তু আমি মনে হয় ১০ শতাংশ হলেও যাণ্ত্রিক হয়ে গেছি। এই যাণ্ত্রিকতা যেন আমার গলায় ফাঁস না হয়ে বসে সেই জন্য ভ্যান্টিলেশন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বই আর মুভি। সাম্প্রতিক কালে কি বই পড়লাম বা পড়ছি আর কি মুভিই বা দেখলাম সেটা নিয়েই প্যাচাল পারতে এসেছিলাম কিন্তু তার আগেই সাত খন্ড রামায়ণ রচনা করে ফেলেছি... ওক্কে নো মোর টকিং ... দেখা যাক আপনাদের সাথে আমার ভাল লাগা মন্দ লাগা শেয়ার করে নিতে পারি কি না । মুভিগুলোতে আইএমডিবি রেটিং দিচ্ছি... কারণ একমাত্র এই রেটিংটা আমাকে কখনো হতাশ করে নাই
মুভি: দ্যা প্রোপোজাল
আইএমডিবি রেটিং : ৬.৯/১০
জেনার: রোমান্টিক কমেডি
এই মুভির দুই প্রধান অভিনেতা সান্দ্রা বুলক আর রায়ান রেনল্ডসের ক্যারিশম্যাটিক অভিনয় মুভিটাকে এক আলাদা ছন্দ দিয়েছে। কাহিণীর শুরু হয় এক বিখ্যাত বুক পাবিলাসার্সের কানাডিয়ান এডিটর সান্দ্রাকে দিয়ে। একরোখা, তেজী এবং ডোন্ট কেয়ার সান্দ্রাকে দু'চোখে দেখতে পারে না অফিসের কেউ। অফিসে সে ডাইনী বুড়ি বলে পরিচিত। সান্দ্রার আ্যসিস্টেন্ট রায়ান... যার স্বপ্ন সে একদিন এডিটর হবে। সান্দ্রার এক নায়কতন্ত্র ভালই চলছিল ... কিন্তু বাধ সাধল ইউ, এস ইমিগ্রেশান ডিপার্টমেন্ট... তারা সান্দ্রার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে নারাজ... ইতিমধ্যে এক বছর হয়ে গেছে... সুতরাং তাকে দেশে ফিরে যেতেই হবে। কাজ পাগল সান্দ্রার মাথায় বাজ। হঠাৎ তার মাথায় খেলে যায় চমৎকার এক আইডিয়া। সে তার তরুণ আ্যসিসটেন্টের স্বপ্নকে পুঁজি করে তাকে ব্ল্যাক মেলিং করতে থাকে। সে জানান দেয় সে তার আ্যসিসটেন্টকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। মার্কিন নাগরিক রায়ান হয়ে উঠে সান্দ্রার ইউ,এস থাকার টিকেট। কিন্তু ত্যাদর ইমিগ্রেশান ডিপার্টমেন্টের ভয়াবহ ভায়ভাই তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে তারা একে অপরকে ভালবাসে এবং সান্দ্রার কানাডা ফেরত যাবার জন্য হঠাৎ করে ব্যাঙের ছাতার মত এই সম্পর্ক জগিয়ে উঠেনি বরং এটা অনেকদিনের অমলিন এক সম্পর্ক। হাতে সময় এক সপ্তাহ। নিজেদেরকে ভালভাবে জানার জন্য তারা বেছে নেয় আলাস্কায় রায়ানের গ্র্যান্ড মার জন্মদিনকে... আলাস্কার অতি আপন পরিবেশ কিভাবে রোবট সান্দ্রাকে চিরন্তণ নারীতে পরিণত করে ফেলল... সেটাই উপভোগ করুন এই মজার মুভিতে ।
মুভিটা আমি খুবই উপভোগ করেছি... তবে মুভির ধারাটায় কিছুটা ওয়াক ইন দ্যা ক্লাউডের ছোঁয়া পেয়েছি... তবুও এক কথায় গ্যারেন্টি দিতে পারি সময় খারাপ কাটবে না আপনাদের।
বই এ থাউজেন্ট স্পেলন্ডিড সানস - খালেদ হোসাইনি (A thousand splendid suns)
আমার রেটিং: ৭.৭/১০
মাত্র ১৫ বছরের মরিয়মকে একদিন রাশেদের সাথে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কাবুল। এর দু দশক পরে মরিয়মের সাথে লায়লী নামের স্থানীয় এক কিশোরীর সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে... ঠিক যেন মা আর মেয়ে। ভালই চলছিল দিন... হঠাৎ কাল বৈশাখীর মত আফগান জনগণের ভাগ্যাকাশে উদয় হল তালিবান শাসনের। এরপরই শুরু হল ক্ষুধা, নিষ্ঠুরতা, মৌলবাদ আর বুনো ভয়ের সাথে অসম লড়াই করে টিকে থাকার সংগ্রাম। এর মধ্যেও ভালবাসা খুঁজে পেল তার অন্য রকম মোহণীয় সংজ্ঞা।
ডাউনলোড লিংক
মুভি: স্টেট অফ প্লে
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৪/১০
জেনার: থ্রিলার
ঘটনার শুরু হয় সিনেটর কলিনসের প্রধান রিসার্চারের মৃত্যু দিয়ে। এক প্রাইভেট সিকউরিটি ফোর্সকে ইরাকের দায়িত্বে বহালের বিরোধীতা করার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রাক্কালে রিসার্চারের মৃত্যু সংবাদে সিনেটর কলিনস সবার সামনে অতি মাত্রায় আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। এখান থেকে শুরু হয় সিনেটর আর তার সুন্দরী রিসার্চারের পরকীয়া নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মাতামাতি। সিনেটরকে এই চক্র থেকে বের করে আনতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তার এক সময়ের রুম মেট এবং তুখোড় সাংবাদিক ক্যাল ম্যাকার্ফি (রাসেল ক্রো)। বন্ধুকে বদনামের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে ম্যাকার্ফি জড়িয়ে পড়তে থাকে একের পর এক চক্রে। সকল গোলক ধাঁধাঁ পেরিয়ে সে যখন উত্তর খুঁজে পায় তখন হতবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার।
এই মুভিটা দেখার সময় খুব মনযোগ দিয়ে ডায়ালগ ফলো করতে হবে। কারণ এখানে ক্যারিশম্যাটিক কোন আ্যকশান নেই.... তবে আছে রহস্যের হাতছানি। মন্দ কাটবে না সময়।
বই হার্টস ইন আটলান্টিস - স্টিফেন কিং
আমার রেটিং : ৫.৫/১০
হার্টস ইন আটলান্টিস বইটা আসলে ৫টা লিংকড গল্পের সমন্বয়ে সংকলিত হয়েছে। ৫ টি গল্পেরই মূল উপজীব্য ভিয়েতনাম ওয়ার। খাপছাড়াভাবে চলতে থাকা স্বাভাবিক ঘটনাকে গায়ের লোম খাড়া করে দেওয়া অনুভুতি এনে দেওয়াটা কিং এর কাছে পানি ভাত। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটায়নি সে।
মধ্য বয়সী ফটোগ্রাফার ববি যখন তার শৈশবের বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ছেলেবেলার শহরে ফিরে আসে.... তখন ১৯৬০ সালের গ্রীষ্মকালে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা তাকে তাড়া করে ফিরতে থাকে।
পিতৃহীন ববি, তার কড়া মা, তার বন্ধুরা... আর অতি অবশ্যই সেই বোর্ডার আপনাদেরকে নিয়ে যাবে এক অদ্ভুত সম্মোহনী জগতে।
আজকে এ পর্যন্তই .... আর লিখতে ইচ্ছে করছে না ।