ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে একাকার মেয়েটি যখন একা আর কাঁদতে না পেরে প্রিয় মানুষটির কাঁধে মাথা রাখে,তখন হয়তো সে ছেলেটিও নির্বাক হয়ে রয়। আশ্বাস বাণীর সাথে দিতে থাকে অতৃপ্ত স্পর্শ।
গৎবাঁধা নিয়মে চলতে থাকা শহুরে নাগরিকদের মধ্যে কিছুটা সময়ের ছুটি অনেক প্রয়োজনীয়। ততক্ষণ না পর্যন্ত তা বোঝা যায়না,যতক্ষণ তার ফল পাওয়া যায়। সবাই বলে সে নিজে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবে। মিথ্যা এক কথা। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের কাজের পেছনে স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। ছেলেটি যে এত দামি দামি উপহার আর মন গলানো কথা বলে তা কেন? মেয়েটিকে শেষ জীবনে সাথে পাওয়ার জন্যে। মেয়েটি যে তার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কোন নারীর হাত থেকে আগলে রাখে তা কেন? যাতে সে তাকে ছেড়ে না দেয়,বিয়ের পিড়িতে তার প্রিয় মানুষটির সাথেই যেন বসতে পারে। আজ ভালোবাসার বিরহে তোমার দুঃখের সময়ে যে সুন্দর ছেলেটা এসে তোমাকে গপ্প-কিচ্ছা শোনাবে,তোমার পাশে থেকে ব্রেইন ওয়াশ করবে তার স্বার্থ জ্ঞান অনেক বেশি। সুযোগ বুঝে তোমাকে হাত করাই তার লক্ষ্য। সুযোগ পেয়ে হঠাৎ যে রূপসী মেয়েটি আজ তোমার সাথে কথা বলার জন্য উঠে পড়ে লাগবে,তারও স্বার্থ রয়েছে। মেয়ে, দুঃখের সময়ে তোমার সাথে রসের কথা বলা ছেলেটির যদি আঁতে ঘা লাগে,সেও তোমাকে একদিন তার সকল কীর্তি কলাপ তুলে ধরে তা শোধ দিতে বলবে। কথায় কথায় খোটা দিবে। আজ ঐ ছেলেটা তোমার মনের কথা মুখর ফুটবার আগেই তোমার ইচ্ছা পূরণ করে দিলো,তার স্বার্থ হলো সুখ। ভবিষ্যতের সুখের আশায় এসব করে বেড়াবে।
তবে দিনশেষে এমন কিছু মানুষ থাকবে,যে তোমারে একবার যদি ভালোবাসে সে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে হলেও ভালোবাসবে। তুলনা দেওয়ার মত রয়েছে কুকুর। এই প্রাণিটি যাকে প্রভু মানে,তাকে আজীবনের জন্যে প্রভুই মানে। তাকে মারলে,অভুক্ত রাখলে,বেত্রাঘাত করলে, দূরে রেখে আসলেও সে ঠিকই তার প্রভুর সামনে এসেই লুটে পড়বে। কখনো খামচে ধরে তার করা কাজের ফেরত চাইবে না। একটুখানি ভালোবাসাই যথেষ্ট। আজকাল এমন স্বভাবের মানুষের সংখ্যা কম। তারা লুকায়িত থাকতে পছন্দ করে। বড্ড.... তাদের রাতগুলো দীর্ঘ হয়। তারাই তাদের কাঁধটিকে আজীবন ঐ প্রিয় মানুষটির কান্না আর মাথা রাখার জায়গা করে দেয়,বিনিময়ে কিছু খোজে না।
তবে আজকালকার মডার্ণ ছেলে মেয়েরা স্বল্প সময়ের দৈহিক সুখ খোজে। প্রথম দিন দেখা,দ্বিতীয় দিনে প্রেম,তৃতীয় দিনে দেখা। চতুর্থ দিনে ডেটিং,পঞ্চম দিনে অাবদ্ধ দেয়ালে সুখ বিনিময়ে, ষষ্ঠ দিনে বিচ্ছেদ আর সপ্তম দিনে তার গত ছয় দিনের প্রেয়সী হয়ে যায় রাস্তার বেশ্যা, আর ছেলেটি হয়ে যায় চতুষ্পদী কিছু পশুর সন্তান।
এই হলো অতি আধুনিক ভালোবাসা,যার ব্যাপ্তিকাল এক সপ্তাহ। মাত্র তো শুরু। মেয়ে, যখন নিজের রগরগা ছবি অন্যেরর হাতে হাতে দেখবা,চলার পথে যখনই নিজেকে বেশ্যা হিসেবে শুনবা তখনই বুঝতে পারবা,আসলে তার বন্ধুরূপি হাতটার গন্তব্যস্থান কই ছিলো!?
তখন বলে বেড়াবে সব ছেলেরাই এক। তবে যে ছেলেটি প্রথম এসেছিলো তোমার কাছে আজীবন এক সাথে থাকতে চেয়েছিলো, তার কথা মনে রবেই না। যে ছেলেটি ব্যাকডেটেড বলে তাকে খ্যাত বলে ছেড়ে গেছিলে,তারই কথা মনে রেখো। সময় আছে,অনেক সময়। জীবনে একজনকে ভালোবাসার মাঝে প্রাপ্তি আর তৃপ্তির খাতাগুলো বিশাল। তাকেই ভালোবাসো যে তোমায় হাসাতে না পারুক, অন্তত কাঁদাতে না চায়। যে তোমাই সম্মান দিয়ে অন্ধকারে নয়,আলোতে পথ চলতে চায়,দুঃখ চেপে ভালোবেসে যায়।