somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলার অার আমার সংসার -১

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই শুনছো?(নীলা)
-হুম। বলো।(আমি)
-কই তুমি?
-বাসায়। এতো ফিসফিসিয়ে কথা বলছো কেনো?
-তো কি চেঁচিয়ে বলবে ওদের সামনে?
-কাদের সামনে?
-ধুর! আরে আমাকে দেখতে এসেছে।
-হাহাহা! তোমাকে আবার দেখতে অাসার কে অাছে?
- পাত্রপক্ষ।
-মানে? (অনেকটা ভয় আর চিন্তিত স্বরে)
-কথা বলি বুঝো না?
-আরে ব্যাপার না। কালো পাউডার মেখে যাও। দেখবা ছেলের চৌদ্দগুষ্টি দৌড়ে পালাবে।
-প্রান্ত এটা ফাইজলামির সময় না।
-হঠাৎ পাত্রপক্ষ কেন?
-অামার মা-বাবা আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে।
-কি বলো? কবে?
-আজ। কেউই আমাদের এ সম্পর্কটা মানতে চায় না। কেউই অামাকে অন্য কেন ধর্মের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চায় না।
-তাহলে মা-বাবার ঠিক করা ছেলেেই বিয়ে করে ফেলো।
-এসব কি বলছো প্রান্ত? (কাঁদতে কাঁদতে)
-সত্যিই তো! কেউই আমাদের ভিন্ন ধর্মের দু'জনকে মানবে না।
-তাহলে এতদিন আশ্বাস দিয়েছিলে কেন?
-আবেগে। শোনো,ছেলেটিকে দেখে বিয়ে করে ফেলো। আমার চেয়ে অনেক ভালো হবে।
-
-রাখছি তাহলে। বিয়ের নিমন্ত্রণ দিও কিন্তু।
-হুম। ঠিক বলেছো। রাখছি। বাই।
টুঁট টুঁট করে ফোনটা কেটে গেল। তবুও ফোনটা কানে লাগিয়েই রেখেছি আমি। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
দুই.
সন্ধ্যায় দু'জনে মিলে ছাদে গল্প করছি আর আকাশে তারা দেখছি আমি। তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে আমার সংসারের সুখের মত!
-তিনটা বছর হয়ে গেলো। তাদের খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।( নীলা)
-অপেক্ষা করো আর কিছুদিন। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। (অামি)
- সেই বিয়ের পর থেকেই তোমার এই এক কথাই শুনে অাসছি।
-আর কিছু যে বলার নেই আমার।
-মা-বাবাকে খু্ব দেখতে ইচ্ছে করছে।
-হুম।
-আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তোমাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। মা-বাবা, ভাই-বোন সবার আদর-ভালোবাসা অনেক দিন ধরে পাই না। তাদের দেখতেও পাই না। আমার মনে হচ্ছে ভুল ছিল।
-
-খুব মনে পড়ছে তাদের। একটিবার দেখতে ইচ্ছে করছে।
-
আমি চলে এসেছি তা নীলা খেয়াল করেনি। দরজায় দাড়িয়ে তার কথাগুলো শুনলাম। নীরবতা দেখে আমায় খুজতে গিয়েই তার ভুল ভাঙলো। মেয়েটি তার মা-বাবর অনেক আদরের ছিলো। আমি স্বার্থপরের মত নিয়ে এসেছি তাদের কাছ থেকে। আর কত দিনই বা সে ধৈর্য্য ধরবে!
কিছুক্ষণ পরই সে ঘরে এলো। আমার সাথে কোন কথা নেই। রাগী আর হতাশ মুখ নিয়ে বসে টিভি দেখছে। আমি এই মুহূর্তে আর কিছু বললাম না। যা রাগী সে! একটু শুরু হলেই আমি শেষ।
তাই একটু পর বুকে অনেক সাহস আর শক্তি নিয়ে আমিও সোফায় বেশ ভদ্র ছেলের মত বসে পড়লাম।
-এই শুনো,কাল আমার কিছু পরিচিত আত্মীয় আসবে। তাদের ভালো কিছু খাওয়ার জন্য আমি বাজার করতে যাচ্ছি।
-কোন আত্মীয়?( বেশ গুমোট স্বরে)
-তুমি চিনবা না। কাল পরিচয় করিয়ে দেবো। এখন যাই।
-হুম।
বলেই বেরিয়ে পড়লাম। আজ নীলাকে খুব বিধ্বস্ত লাগছে। সত্যিই তো,আমি এক আশ্বাস আর কত দিয়ে যাবো!?
তিন.
সকাল এগারোটা। দু'জনেই অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠেছি। আমি বের হওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলাম। আজ অফিস নেই।তবু নীলাকে সারপ্রাইজ দেব বলে ভাবছি। আমাকে দেখে বলল
- কই যাও?
-একটা কাজ অাছে?
-আমাকে বলা যাবে না?
-না।
-ও!
-শুন,তুমি সব রান্না করে রেখো,আমি ১টার দিকে আমার আত্মীয়দের নিয়ে ফিরবো।
-হুম।
বেরিয়ে পড়লাম আমি। নীলাকে আজ খুব হতাশ দেখাচ্ছে। বেচারির মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগতে লাগল।
এখন ১.০৬। নীলা হয়তো বসে বসে অপেক্ষা করছে। কলিং বেল শুনেই দরজা খুলে প্রথমে ১৪ বছরের একটি মেয়েকে দেখলো।তেমন একটা পরিচিত মনে হচ্ছে না। কিন্তু মেয়েটিকে সে চেনে। মেয়েটি নীলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাসায় ঢুকে গেলো। এরপরই নীলা যেন আকাশ থেকে পড়লো। এ কাকে দেখছে সে? স্বপ্ন দেখছে না তো? দরজায় তার বড়দি, এরপর মেঝদি আর সবার পেছনে তার মা। নীলা নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না! সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আমার চিৎকারে হুঁশ ফিরলো নীলার।
-কি ব্যাপার! আমাদের বাসায় ঢুকতে দিবে নাকি এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবে?
নীলা হতচকিত হয়ে দৌড়ে তার মাকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আর পেছনে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো যেন সে আমায় বছর খানেক দেখেনি!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×