somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা আর বাস্তবতার মিশালী : অনন্য এক গল্পগুচ্ছ

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুপ্রিতা ও অর্থো দুজনেই ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থী। একই কলেজে এমনকি একই ক্লাসেই পড়ে। সুপ্রিতা মেয়েটা অনেক শান্ত শিষ্ট। তেমন কারো সাথেই কথা-বার্তা নেই। সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে ওরা। তাই সব কিছু মানিয়ে নিতে একটু সময়ের প্রয়োজন। অর্থো ছেলেটাও অনেক শান্ত। সবার সাথে না হলেও কয়েক জনের সাথে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে থাকে। ক্লাসে যতগুলো মেয়ে আছে,তার মধ্যে সুপ্রিতা অন্যরকম। ওর মধ্যে শান্ত ভাবটা প্রবল। তাই ওকে একটু একটু ভালো লাগতে থাকে অর্থোর। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে প্রবেশ করলেও ছেলেটার তেমন কোন মেয়ে বন্ধু নেই। আর প্রেমিকার কথা নাই বা বললাম।
দিন দিন সুপ্রিতার প্রতি আকর্ষণটা যেনো বাড়তে থাকে। তাই আস্তে আস্তে ওর সাথে নব প্রযুক্তির সহায়তায় কথা-বার্তা চালিয়ে যেতে থাকে। দিন গড়াতে গড়াতে ওদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও গড়ে উঠতে থাকে। তবে যেই ভালো লাগাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিতার প্রতি অন্যরকম যে টান ছিল, তা কমে যায়। সে নিজেকে বোঝায়, চাইলেই হয়তো সবকিছুর ভাগীদার হওয়া যায় না। তাই অর্থো সুপ্রিতাকে অন্যভাবে নেয়। নিজের প্রথম এবং খুব কাছের মেয়ে বন্ধু করে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। সুপ্রিতার প্রতি যে ওর দুর্বলতা ছিল, তা বুঝতে দেয় না এবং নিজ থেকেই কমাতে শুরু করে। ভালো বন্ধু হিসেবে এগিয়ে যায়। এর মধ্যেই সুপ্রিতার ছোট্টকালের ও খুব কাছের বান্ধবী অথীতের দেখা হয়। দেখা বলতে কোন এক কোচিংয়ে ওকে দেখে। নব্য জগতের যোগাযোগ মাধ্যম ফেবুকে দু'জন বন্ধু হয়ে উঠে। সামান্য কথা-বার্তাতেই ব্যাস। হঠাৎই একদিন অর্থোর অক্ষেয়ালেই অথীতের সাথে ধাক্কা লাগে। যদিও ধাক্কাটা তেমন গুরুতর নয়। তবুও কেন জানি ওর নিজের কাছে অপরাধীই লাগতে থাকে। নিজে অনেক অনুতপ্ত বোধ করতে থাকে এবং ঐ দিন রাতেই আগের ধাক্কাটার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয়। অথীত প্রথমে ঠাওর করতে না পারলেও বুঝে নেয়। অর্থোর কথায় অনেকটা হাসিও পেতে থাকে অথীতের।
অর্থোর কথায় হাসতে থাকে অথীত। মনে মনে ভাবতে থাকে ছেলেটা মনে হয় খুব সহজ-সরল। এভাবে করেই তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে। দু'জনের কথা-বার্তার মাধ্যমে আপন হওয়ার চেষ্টা করে যায়। অর্থো ছেলেটা কেন জানি অথীতের প্রতি দুর্বল হতে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হল অর্থোর চেয়ে অথীতই মনে হয় ছেলেটার প্রতি বেশ দুর্বল বলা যায়। ইতিমধ্যেই তাদের কথা-বার্তার মাত্রা বেড়েেই চলেছে। বোঝায় যাচ্ছে যে দুজন দুইজনেরই প্রেমে পড়েছে। এক্ষেত্রে অথীতের পরিমাণটা মনে হয় বেশী। যদিও অর্থো তেমন একটা বোঝাতে চাইছেও না। একসাথে একই কোচিংয়ে পড়ার পরও অথীত নাকি অর্থোকে এখনও ভালভাবে দেখেইনি। এই কথা শুনে তো অর্থোর বোকা বনে যাওয়ার উপক্রম। এতদিন কথা হল,তাও নাকি ওকে এখনো ভালভাবে দেখাই হয়নি ওর।
কথা আগাতেই থাকে। একদিন সন্ধ্যায় দুজনেই কথা বলছিল। ঐ সময়ে কেন জানি অর্থোর মন খারাপ ছিল। এই কথা জানতে পেরে অথীত অনেক সাহস করেই ওর মোবাইল নাম্বারটা খুঁজে। অর্থোতো অনেকটা থতমত খেয়ে যায়। বার বার দেখে যে,এটা কি সত্যিই? নিজের নাম্বারটা দিয়েও দেয়। সাথে ওর নাম্বারটাও চেয়ে নেয়। যদি সত্যিই অথীতের সাথে কথা হয়,তাহলে অথীতই হবে অর্থোর জীবনের প্রথম কোন মেয়ে,যার সাথে সে মোবাইলে কথা বলছে। বলতে গেলে প্রথমই কোন মেয়ে বন্ধু। যদিও সুপ্রিতার সাথে ফেসবুকে কথা হলেও কখনো ফোনালাপ হয়নি। তাই অনেকটা আনন্দ এবং অন্যরকম অনুভূতি নিয়েই ওষুধ কেনার নামে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে। একসাথে দুটোই করা যাবে।
অথীতই অর্থোকে ফোন করে যদিও অর্থো চেয়েছিল সে নিজেই ফোন করুক। অথীতের ফোন পেয়ে অন্যরকম লাগতে থাকে। কি বলবে না কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না সে। ব্যাপারটা বুঝতেও পারে অথীত। ছেলেটা অনেক সরল। মিষ্টিও বটে।অর্থো ও অথীতের প্রথমবারের ফোনালাপটা মন্দ ছিল না। যদিও অনেকটা অগোছালো ভাবই ছিল অর্থোর মধ্যে। প্রথমবার বলে অনেকটা ভয় ও অন্যরকম অনুভূতিই ছিল। স্বল্প সময়ের হলেও অথীতের অনেক ভালই লেগেছিলো ওর। ভাল লাগার মানুষটারর গলার স্বর কখনো সে ভুলবে না। ঐ রাতটিতে দুজনেই একই ধরানার স্বপ্নই দেখল। প্রতিদিনে এবং প্রতিরাতেই দুজন দুজনেরই খাওয়া-দাওয়ার খবর নিতে থাকে। এরই মধ্যে অথীত বোঝানোর চেষ্টা করে যায় সে এই বোকা ছেলেটারই প্রেমে পড়েছে। বোকাটাও মনে হয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। পরক্ষণেই নিজে নিজের চিন্তার কথা ভেবে হেসে উঠে। এই বোকা হাঁদারামটিকে কি অথীতের মত সর্বগুণী মেয়ে কি ভালবাসবে? কিন্তু অর্থো যে অথীতকে অনেকটাই ভালবেসে ফেলেছে। তাই সর্বক্ষণেই ভয় নিয়ে থাকে, অথীত যদি অন্য কারও হয়ে যায়! এই ভয় নিয়েই থাকে সে।
মনের প্রচন্ড ভয় নিয়েই অথীতকে ভালোবেসে যায় অর্থো। বোকা ছেলেটাও কারও প্রেমে পড়েছে। ভাবতেই বড্ড হাসি পায় অর্থোর। কোন এক রাতে কথার প্রসঙ্গে তাদের মধ্য এ ব্যাপারে কথা উঠে।

-আচ্ছা অর্থো, তোকে একটা কথা বলব?

-হুম বল। এত ভণিতা করার কি দরকার?

-না। আচ্ছা তুই কখনো প্রেম করবি না?

-প্রেম??? আমার মত বোকা ছেলের সাথে কে প্রেম করবে?

-প্রেম করতে কি বোকা-চালাক লাগে নাকি??

-না। তবে আমার মত হাবলার কখনো প্রেম হবে না।

- বেশী বুঝিস,না???

-না। একদম না।

-তুই আসলেই বোকা।

-বললামই তো। নতুন করে আর কি বলবি??

-আরে বোকা....!!!

-কি??

-

-কিরে কই গেলি??

-

-কিছু বলবি না? ওকে বাই।

-ওই....

-বল না...

- আই লাভ ইউ।

-কি বললি??

-জানি না।

-আরেকবার বল না....

-পারব না। শুধু কি আমি বলব??

-তো কে বলবে?

-কেন তুই বলতে পারস না।

-

- বলবি না তো? ঠিকআছে তোর সাথে আর কথা বলব না

-আই লাভ ইউউউউউউউ।
ঐ দিনের পর থেকেই অর্থো ও অথীত খুব ভালভাবেই দিন পার করছিল। তাদের নিজেদের ভালোবাসাটা অন্যদের চেয়ে আলাদা। তারা চায় না যে অন্য কেউ তাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলুক। কেউ যেন তাদের এই ব্যাপারটি নিয়ে হাসি তামাশা না করুক। কিন্তু ইদানীং অর্থোর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কোন এক কারণে তার মধ্যে বাঁচার ইচ্ছা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে অথীতকে প্রচন্ড মাত্রায় ভালবাসে যেমনটা ও তাকে করে। তাও... কিন্তু কারণটা সে নিজেও ঠাওর করতে পারে না। শরীরটা বড্ড দুর্বল। খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা। এক মাস ধরে হাতে একটা ক্ষত দেখা যাচ্ছে। এখনো শুকোয়নি। তাই মাকে বলল সে। তার মা পুরোটা জানার পর পরেরদিনেই অর্থোকে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। যথারীতি নানা পরীক্ষা -নিরীক্ষা করার পর অর্থোর অগোচরেই তার মা কে অর্থোর রোগটা বললেন। শুনেই তার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। কিন্তু ডাক্তারের কথামতো অর্থোকে জানালেন না। কিন্তু অর্থো কিভাবে যেন জেনে গেল। রোগের কথা শুনে সে কিছুক্ষণ হাসলো। এর পরেই হু হু করে কেঁদে দিল। হুম। অর্থোর ক্যান্সার। বাচার আশা ক্ষীণ।

রাত গভীর। জানালা দিয়ে উজ্জ্বল চাঁদটাকে দেখে চলেছে আর পরক্ষণেই কালো মেঘের ভিতর হারিয়ে যাওয়া চাঁদটা দেখেই কেমন জানি চঞ্চল হয়ে পড়লো। অর্থো ভাবছে কথাটা কীভাবে অথীতকে বলবে। না। কোনমতেই ওকে বলবে না।

কয়েকদিন হয়ে গেলো অথীতের সাথে কথা হয়নি অর্থোর। তাই অথীতের মনটা খুব খারাপ। অর্থোকে তাই অথীতের ফোন।

-হ্যালো

-হুম বলো।

-এতদিন কই ছিলা। কথা বলোনি যে?

-ইচ্ছা হয়নি তাই বলিনি।

-ও আচ্ছা।

-হুম।

-কি করছো?

-তোমার জানার প্রয়োজন নেই। নিজে ভালো থাকো।

-তুমি এমন করছো কেন?

-কেমন করলাম?

-এভাবে কথা বলছো যে?

-তো আমি কীভাবে কথা বলবো ওটা কি তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে?

-না।

-আর শুনো,আমাকে আর কখনো ফোন দিবে না। তুমি আমার যোগ্য নও। তাই তোমাকে আমি ভালবাসতে পারবো না।

-আমাকে তুমি পর করে দিলা? ঠিক অাছে। এখন থেকে তোমার সাথে আর কখনোই কথা হবে না আমার


-হুম। বাই। ভালো থেকো।


ফোনটা কেটে দিয়েই হু হু করে কেঁদে উঠে অর্থো। আর মনে মনেই বলে যাচ্ছে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ওদিকে অথীতের ও একই অবস্হা। সে ভাবছে এ কার সাথে কথা বললো সে? এটা ওর অর্থো হতে পারে না। কখনোই না।

অর্থো তার সব স্বপ্ন আকাশে উড়িয়ে দিয়ে ঘুমোচ্ছো। রাত পেরিয়ে সকাল। তারপর দুপুর। অর্থোর ঘুম ভাঙ্গে নি। তাকে ঘুমোতে দাও। ওর এখনো অনেক ঘুম বাকি। অনেক। ওর কাজই হচ্ছে ঘুমানো।

>>ভাল থাকুক সকল অর্থো, অথীত এবং সুপ্রিতা। বেচেঁ থাকুক তাদের স্বপ্ন গুলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×