আজকে খবরে দেখলাম আগামী ২২ তারিখে নাকি রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না শুরু করে দিলাম লেখালেখি।
দেশের ব্যবসা বাণিজ্য এবং সমগ্র দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুত অপরিহার্য। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বিদ্যুতের উতপাদন বাড়ানো অনস্বীকার্য। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমাদের অমূল্য সম্পদ সুন্দরবনকে ধ্বংস করে বিদ্যুত উতপাদন করতে হবে। সুন্দরবন আমাদের গর্ব। এই বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন ধ্বংস হোক এটা আমরা চাই না।
সরকারের দায়িত্ব যেমন বিদ্যুত উতপাদন করা তেমনি দেশের পরিবেশ রক্ষা করাও সরকারের কাজ। এখানে একটি কাজ করতে গিয়ে সরকার অন্যটি এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই আমরা চাই বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে রামপাল থেকে সরিয়ে কোন নিরাপদ জায়গায় স্থাপন করা হোক।
এর আগে এই বিদ্যুত কেন্দ্রর ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম, এখানে তা আরো বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করতে চেষ্ঠা করলাম।
এই বিদ্যুত কেন্দ্রের দুরত্ব সুন্দরবন থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে। আর এই বনে প্রায় ২৪,০০০ প্রজাতির জীবজন্তু বাস করে। এটি আকৃতি আর পরিধিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কারনে যদি সুন্দরবন ধ্বংস হয় তবে তা অর্থ দিয়ে পুরণ করা সম্ভব না।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের যে পরিমানে ডাস্ট ও ধুলাবালি হয় যা পরিবেশের জন্য মারাক্তক ক্ষতিকর, তা খুব সহজেই বাতাসের সাথে মিশে যায়। এ ধরনের ডাস্টে থাকে সালফার, সিসা, আর্সেনিক ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্খ আর তা বাতাসে মিশে বাতাসকে করে তুলে দূষিত। আর দূষিত বাতাস জীবজন্তু গাছপালা সবকিছুর জন্যই ক্ষতিকর।
এধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রের এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদনে প্রতি ঘন্টায় মিঠা পানির প্রয়োজন হয় ৮০০ গ্যালন। সেই হিসাবে ১৩৫০ মেগাওয়াট উতপাদনে প্রতি দিন মিঠা পানি লাগবে ৫১ কোটি ৮৪ লক্ষ লিটার। যেহেতু রামপাল উপকূলীয় এলাকা তাই মিঠা পানি খুব বেশি থাকার কথা না। এত মিঠা পানির জন্য অবশ্যই গভীর নলকূপ বসাতে হবে। আর এতে করে মিঠা পানির আধার সম্পূর্ন ধংস হবে।
এই বিদ্যুত কেন্দ্রে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদনে বর্জ্য হবে ২৫০ টন। ১৩৫০ মেগাওয়াট থেকে বছরে কি পরিমান বর্জ্য হবে একবার চিন্তা করুন। এই বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বছরে ১৩৫০ মেগাওয়াট এর জন্য বর্জ্য হবে ৩ লক্ষ ৩৭ হজার ৫শত মেট্রিক টন। এই বর্জ্য তো খাল বিল নদী নালায় ই ফেলা হবে।
এবার আসি এর কুলিং সিস্টমে কি পরিমান পানির প্রয়োজন হবে সেই হিসেবে। এরূপ বিদ্যুত কেন্দ্রে কুলিং সিস্টেমে প্রচুর পানি ব্যবহার করতে হয়। হিসেব করলে দেখা যায় ১৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদনে বছরে পানি প্রয়োজন হয় ১৮৭.৫২ মিলিয়ন লিটার। এই পানি ব্যবহার শেষ হলে তা আবার নদী কিংবা সমুদ্রে ফেলা হয়। আর এই ফেলে দেয়া পানির গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই প্রচুর পরিমানে গরম পানি নদী কিংবা সমুদ্রে পড়ামাত্র জলজ প্রণি ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যাবে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে সাধারণত ৩০-৩৫ শতাংশ কয়লা পোড়ানো হয়। আর কয়লা থেকে উতপন্ন তাপকে প্রকৃতিতে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয় নয়ত পানির মধ্যে তাপকে শোষণ করানো হয়। দুটি অবস্থাই প্রকৃতিকে গরম করে তুলে।
পরিশেষে এটাই বলব আমরা এরূপ পরিবেশ বিপর্যয় চাই না্। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, বুঝেও না বুঝার ভান না করে দ্রুত এটি সরানোর ব্যবস্থা করুন।
কোনপ্রকার ভুল হলে ক্ষমা করবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
আগের পোস্টের লিংক- রামপাল