সারাদিন অনেককে বোঝানর চেষ্টা করে হতাশ হয়ে গেছি। পারমানবিক বিষ্ফোরন আর পারমানবিক কেন্দ্রে বিষ্ফোরনের পার্থক্য কোথায় সেটা বুঝতে হবে। থাইরয়েডের ব্যাপারটাই সবচেয়ে বেশী হাস্যকর। বেটাডিন (অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন) নামের একটি ঔষধ বিক্রির জন্যই এই প্রচারনা। যারা বুঝেছিলেন তারা তারপরও সাবধান থাকাই ভালো বলে বিরক্তির উদ্রেক করছিলেন। জাতিগতভাবেই বোধহয় আমরা সমষ্টিগত আতংককে ভালোবাসি। সবাই মিলে ভয় পাওয়ার জন্য আমরা এত মুখিয়ে থাকি কেন তা জানতে পারলে ভালো হত।
যাক আসল কথা হল, গত শুক্রবার ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ১০ মিটার উঁচু সুনামিতে ভেসে যায় জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূল। এরপর শনি, রবি ও সোমবার ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের তিনটি চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় নিঃসরণ শুরু হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়া ছড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায়। খবরটি সম্পূর্নরুপে সত্য।
কিন্তু এটুকু পড়েই ভীত হয়ে যাবেন না, এই খবরের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে নানা গুজব ছড়াচ্ছে।
সবচেয়ে বড় গুজব হলো এটি-
ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় নিঃসরণের কারণে বাংলাদেশে এসিড বৃষ্টি পড়বে। যদি বৃষ্টি আসে ২৪ ঘণ্টা দরজা-জানালা বন্ধ রাখবেন। যেসব জায়গায় থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে সেইসব জায়গা মোটা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখবেন। বেটাডিন (অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন) দিয়ে ঘাড়ের থাইরয়েড গ্রন্থি-অঞ্চল মুছে ফেলতে হবে। কারণ তেজস্ক্রিয়তা প্রথমেই থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে। অনুগ্রহ করে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রথমেই তেজস্ক্রিয়তা আজ বিকেল চারটার দিকে ফিলিপাইনে ছড়িয়ে পড়বে। যদি আজ বা পরবর্তী কয়েক দিন হংকংয়ে বৃষ্টি হয়, তবে বৃষ্টিতে ভিজবেন না। যদি বাইরে যেতে চান, তাহলে ছাতা অথবা বর্ষাতি ব্যবহার করুন। এমনকি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও। বৃষ্টির মাধ্যমে এই তেজস্ক্রিয়তার ফলে চামড়া পুড়ে যেত পারে, অ্যালোপেসিয়া, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।
তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহতা নিয়ে বিবিসির বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার থেকে ই-মেইল, মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে।
সাধারনত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়া ছড়ায় ২০-৩০ কিলিমিটারের মধ্যে, দুরত্ব যত বেশি হবে তত শক্তি কমতে থাকবে, তবে সর্বোচ্চ ২৫০ কিলিমিটার পর্যন্ত ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে। ফুকুশিমায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে এসিড বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশ জাপান থেকে পাঁচ/ছয় হাজার কিলোমিটার দূরে। ফলে এখানে এসিড বৃষ্টি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই বাংলাদেশে বসে তেজস্ক্রিয়তা আতংকে দরজা-জানালা বন্ধ রাখার দরকার নেই। বাংলাদেশে বৃষ্টি বা অন্যভাবে জাপানের তেজস্ক্রিয়া পাওয়া যাবে না।
সুতরাং গুজবে কান না দিয়ে বাংলাদেশে স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখুন আর অন্যকেও বলুন, ভালো থাকুন শুভ কামনা।