ভুমিকম্প : আমাদের করনীয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমরা সাবাই জানি বাংলাদেশ এখন ভুমিকম্প হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত সময়ের ভুমিকম্পগুলেতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান তেমন না হলেও নতুন-পুরানো দালানে ফাটল, পাহাড়ে ফাটল, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার বিস্ফোরন ইত্যাদি সাধারন মানুষের মনে আতঙ্ক সৃস্টি করেছে। আমার সবাই জানি বা নিশ্চিতভাবেই ধরে নিয়েছি ঢাকা শহরে একটি বড় মাত্রার ভুমিকম্প হবে কিন্তু নিশ্চিতভাবে কেউ জানি না তা কখন হবে।
আজকের ঢাকাতে অনেক সমস্যা এমনিতেই আছে। তার উপর যদি একটা বড় ধরনের ভুমিকম্প হয় তাহলে আমাদের এই ঢাকা এর কি হবে কেউ কি একবারের জন্য ও ভেবেছেন ? ঢাকাতে মাত্র ৭ কিংবা ৬ মাত্রার ভুমিকম্প হলে আমদের এই শহরের কি হাল হবে ?? আগে কখনই ভুমিকম্প নিয়ে এতটা ভাবিনি কিন্তু যখন জাপানে ভূমিকম্প হল তখনই বুঝলাম আমাদের সামনে সমুহ বিপদ।
৬-৮ মাত্রার একটা ভুমিকম্প ঢাকাকে মাটির সাথে মুহর্তেই মিশিয়ে দিতে পারে। তাই আমি মনে করি আমদের সবাইকেই ভুমিকম্প এর ব্যাপারে একটু সচেতন থাকতে হবে । ভুমিকম্প হলে আমদের কিছুই করার নেই যা করার ভুমিকম্প করবে কিন্তু তার পরও আমাদের জানা থাকা উচিত কি করলে অন্তত নিজের জীবনটা বাঁচবে।
ভুমিকম্পের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি কিছু প্রস্তুতির কথা বলছি, আপনাদের উপকারে আসতেও পারে :
ভূমিকম্প হলে সর্ব প্রথম যেটা করণীয় সেটা হল-মাথা ঠান্ডা রাখা,স্থির থাকা,উত্তেজিত না হওয়া। এটা জরুরী এই জন্য যে, উত্তেজিত হলে করণীয় বিষয় কী তা ঠিক করা কঠিন হবে। ভয় দ্রুত সংক্রামক বলে বিপদের মূহূর্তে একজনের সামান্য কথা বা কাজ দ্রুত অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যানিকের মত পরিস্থিতি সৃস্টি করতে পারে।আতঙ্কের সময় জরুরি হলো আতঙ্কগ্রস্ত না-হওয়া।
যা আগেই করণীয়ঃ
১. পরিবারের সবার সাথে বসে এ ধরণের জরুরী অবস্থায় কি করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে- মোট কথা আপনার পরিবারের ইমার্জেন্সি প্ল্যান কী সেটা ঠিক করে সব সদস্যদের জানিয়ে রাখুন।
২. বড় বড় এবং লম্বা ফার্নিচারগুলোকে যেমন- শেলফ ইত্যাদি এমনভাবে রাখুন যেন কম্পনের সময় গায়ের উপর পড়ে না যায়। আর টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার ইতাদি ভারী জিনিষগুলো মাটি বা মেঝে থেকে বেশি উপরে রাখবেন না।
৩. বিছানার পাশে সবসময় টর্চলাইট, ব্যাটারী এবং জুতো রাখুন।
ভুমিকম্পের সময় করণীয়ঃ
১. ভুমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সাথে-সাথে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খোলা স্থানে আশ্রয় নিন।
২. যদি ঘর থেকে বের হতে না পারেন তবে, ইটের গাথুনির পাকা ঘর হলে- ঘরের কোনায়, কলাম ও বিমের তৈরী ভবন হলে- কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিন।
৩. আপনার বাসস্থান আধাপাকা বা টিনের তৈরী হলে খাটের নিচে আশ্রয় নিন।
৪. ভুমিকম্প রাতের বেলায় হলে কিংবা দ্রুত বের হতে না পারলে সজাগ হওয়ার সাথে সাথে ঘরের কোনে, কলামের গোড়ায় কিংবা শক্ত খাট বা টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।
৫. ঘরে হেলমেট জতীয় কিছু থাকলে দ্রুত নিজের মাথায় পরুন ও অন্যদের পরতে বলুন।
৬. রাতে ঘুমানোর সময় ভুমিকম্প হলে কোন হুড়াহুড়ি না করে গড়িয়ে মেঝেতে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। খেয়াল রাখবেন যেন বিচানার নীচে চলে না যান, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন।
৭. বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সময় সিলিং যখন কোন অবজেক্টের ওপর পড়ে একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গা বা void-এর সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় ‘সেফটি জোন’ বা ‘ট্রায়াঙ্গল অফ লাইফ’। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোন সোফা বা বড় কোন অবজেক্ট যেটা কম কম্প্রেস করবে- এরকম কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৮. ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেয়া এসবও করবেন না। কোন সোফা বা সাত নাম্বার পয়েন্টে যেভাবে বলেছি সেভাবে ঘরের মধ্যেই কোন অবজেক্টের পাশে আশ্রয় নিন।
৯. ইন্ড্রাষ্টি কিংবা কারখানায় থাকলে দ্রুত বৈদ্যুতিক সুইচ ও গ্যাস লাইন বন্ধ করে দিন।
১০. টাকা-পয়সা, সোনা-দানা কোন কিছু সংগে নেওয়ার লোভে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
১১. এই সময় কোনমতেই লিফট ব্যবহার করবেন না। কেননা বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে আপনি সেখানে আটকা পড়তে পারেন।
১২. ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। সিঁড়ির ‘মোমেন্ট অফ ফ্রিকোয়েন্সী’ বিল্ডিং-এর চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।
১৩. আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন, তবে সাবধানতার সাথে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত ফাকাঁ স্থান দেখে গাড়িতেই অবস্থান করুন। চেস্টা করুন বিল্ডিং, গাছপালা, বিদ্যুৎ এর খুঁটি,লাইট পোস্ট হতে দূরে থাকতে।
১৪. বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন।
ভূমিকম্প হওয়ার পর কয়েক ঘন্টার মধ্যে করণীয়ঃ
১. বৈদ্যুতিক,গ্যাস চালিত সব ধুরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বিরত থাকুন।
২. যদি বহুতল ভবনের ওপরের দিকে কোনো তলায় আটকা পড়েন, বেরিয়ে আসার কোনো পথই না থাকে, তবে সাহস হারাবেন না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আপনি এখানে আছেন সেটা উদ্ধারকারি দলের কাছে আওয়াজ পৌছানোর চেষ্টা করুন।
৩. ভুমিকম্পের কারণে যদি আপনি আহত হন বা বিম, দেয়াল, স্লাব বা কংক্রিটের তৈরী কোন অংশে আপনার শরীর আটকে গেলে বা চাপা পড়লে বের হবার সুয়োগ যদি না-ই থাকে তবে বেশী টানা-হেচড়া করবেন না এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হয়ে আপনার দ্রুত মৃত্যু হতে পারে।
৪. ভূমিকম্পের ফলে after shocks,effect যেমন সুনামি হতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্ততি নিন।
৫. রেডিও থাকলে দূর্যোগ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য পাবার জন্য সেটি চালু রাখুন। টেলিফোন,মোবাইল চালু থাকলে প্রয়োজনীয় সাহায্য চাওয়ার জন্য এবং ক্ষয়ক্ষতি রিপোর্ট করার জন্য সেটি ব্যবহার করুন।
৬. ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য আগেই সাথে রুমাল বা তোয়ালে বা চাদরের ব্যবস্থা করে রাখুন।
৭. ম্যাচ জ্বালাবেন না। দালান ধ্বসে পড়লে গ্যাস লিক হয়ে থাকতে পারে।
৮. ছোটখাট আঘাতে সম্ভব হলে নিজের পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ক্ষতস্থান বেধে দিন।
৯. চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ অপশন হিসেবে বিবেচনা করুন। কারণ, চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতিকারক ধুলাবালি ঢুকে যেতে পারে। পাইপে বা ওয়ালে বাড়ি দিয়ে বা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন। তবে ভাল হয় সাথে যদি একটা রেফারির বাঁশি বা হুইসেল থাকে, তার প্রিপারেশন নিয়ে রাখুন আগেই।
১০. একজায়গাতে,রাস্তাতে জড়ো না হয়ে বরং সড়কপথকে ফাকাঁ রাখুন যাতে জরুরী সাহায্যের যানবাহন দ্রুত চলাচল করতে পারে।
১১. আহত লোকদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য করুন। কেউ আটকা পড়লে চেস্টা করুন উদ্ধারের। না পারলে তাকে বা তাদেরকে পানি ও খাবার দিন এবং অভয় দিন।
১২. মনে রাখবেন আপনার উত্তেজনা কিংবা ভয় আপনার জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতির কারন হবে তাই যত বিপদেই পড়ুন না কেন কখনোই সাহস হারাবেন না।
আর সর্বোপরি সবচেয়ে বড় নির্দেশনা হল: Use your senses. আপনার বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিপদের মোকাবেলা করুন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন