সম্প্রতি ডাচ গবেষকরা জানিয়েছেন, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক থেকে নির্গত রেডিয়েশন বড় বড় গাছের মৃত্যুর কারন হতে পারে।ওয়্যারলেস রাইটারের নিকটে গাছ লাগানো হলে গাছের শাখা ও পাতা ঝরে যায়।ওয়াই-ফাই থেকে নির্গত রেডিয়েশন কেবল গাছের নয় মানুষের শরীরেও প্রভাব ফেলতে পারে।
নেদারল্যান্ডের একটি গ্রামে বড় বড় অ্যাশ ট্রিগুলোতে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষ করে সরকারিভাবে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।আর সেই গাছ গুলোর উপর গবেষণা করে দেখা গেছে ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন-এর কারনেই মারা গেছে গাছ গুলো।
গবেষকরা জানিয়েছেন,ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক উৎসের নিকট থাকা গাছগুলোর পাতায় সীসার মতো এক ধরনের উজ্জল প্রলেপ পড়ে।রেডিয়েশন-এর ফলে গাছের পাতা মারা যায়, ফলে গাছের বৃদ্ধিও কমে যায়।নেদারল্যান্ডের শহরে এলাকায় শতকরা ৭০ ভাগ গাছেই রেডিয়েশনজনিত সমস্যা দেখা গেছে। তবে যেদিকে অধিক বনাণ্ঞ্চল এবং ঘন গাছ সেদিকে এই প্রভাব পড়েনি।
ডাচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এটি প্রথমিক ফল।তবে এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।২০০৭ সালের বিবিসি প্যানারোমা ডুকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছিলো মোবাইল ফোন রেডিয়েশন-এর চেয়ে ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন-এর স্তর তিন গুন বেশি।ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস পয়েন্ট গুলো গাছপালার ক্ষতি করেছে।বিঞ্জানীরা এমনটি ধারনা করেছেন।তবে এখনই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন নি তারা।তাদের গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হবে কিছুদিন পরে।হল্যান্ডের আল্পেন আন ডেন রিন শহর। এই শহরের গাছের পাতা গুলো কেমন যেন বিবর্ন হয়ে যাচ্ছিল।গাছ গুলো কেমন যেন সতেজ নয়। শহর কর্তৃপক্ষ ঠিক বুঝতে পারছিলেন না এমনটি কেন হচ্ছে। নগর প্রধান এর পর যোগাযোগ করলেন ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিঞ্জানীদের সঙ্গে। কারন খুজে বের করার দায়িত্ব দিলেন তাদের উপর।আর বিঞ্জানীরা আবিস্কার করলেন, গাছপালার এই অবস্থার জন্য দায়ী অপরাধি আর কেউ নয়, ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক-ই এর জন্য দায়ী।গবেষকরা অবশ্য ওয়্যারলেস ফ্রিকোয়েন্সির একটা মানদন্ড নির্ধারন করেছেন। বলেছেন, ২৪১২ থেকে ২৪৭২ মেগা হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস পয়েন্ট গুলো গাছপালার ক্ষতি করার সম্ভাবনা নেই। বিঞ্জানীরা তাদের গভেষণা থেকে যে বিষয়গুলো খুজে পেয়েছেন তার সারাংস তুলে ধরেছেন ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে।সেখানে তার বলেছেন, দ্রুতগতি সম্পন্ন ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের সংযোগের ওয়াইফাই থেকে ৫০ সেমি. দূরত্বের মধ্যে গাছপালা থাকলে এর ধাতব পদার্থের প্রভাব গিয়ে পড়ছে গাছপালার উপর। যেকারনে গাছের পাতা আদ্রতা হারাচ্ছে এবং কিছু কিছু পাতা মরেও যাচ্ছে।তবে বিঞ্জানীরা এই কথাও বলেছেন, তারা প্রথমিক পর্যায়ের এই বিষয়গুলো সনাক্ত করেছেন।এই বিষয়ে আরও ব্যাপল গবেষনা করার পরই কেবল বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব।পাইলট এর গবেষণায়, বিশটি গাছকে দু'ধরনের জায়গায় রাখা হয়েছিল।এক জায়গায় ওয়্যারলেস পয়েন্ট ছিলনা অন্য জায়গায় ওয়্যারলেস পয়েন্ট ছিল। দেখা গেছে যে জায়গায় ওয়্যারলেস পয়েন্ট ছিল সেখানকার গাছের পাতা বিবর্ন হয়ে যাচ্ছে। গবেষণা দলটির প্রধান ড.আন্দ্রে ভান লামেরেন এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা শেষ করতে আমাদের সময় লেগেছে তিন থেকে চার মাস। এখন আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও বিষদভাবে গবেষণা করতে চাই। বিশাল পরিসরে সারা পৃথিবীর গাছপালার জন্য এই বিষয়টিকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন নেদারল্যান্ডের একটি গবেষনা দল। আর তাদের গবেষণার অংশ হিসেবে সেই দেশের একটি শহরের উপর এই বিষয়টি নিয়ে পাইলট গবেষণা চালিয়েছেন ড. ভান।আগামি দিনের ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন গবেষণা কোন দিকে মোড় নেয় তা এখন দেখার বিষয়।
খবরটি ই-বিজ ডিসেম্বর-২০১০ সংখ্যা থেকে নেয়া হয়েছে।