আমাদের সময় এমন কোন দিন যায়নি যে পিঠে, হাত পায়ে বেতের দ্বাগ নিয়ে বাসায় যাইনি। এমন কোনদিন যায়নি যে বড়ুয়া স্যারের (চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) দুই পেন্সিলের চিপায় স্যান্ডউইচ হওয়া আঙ্গুল ফুলে বাসায় ফিরিনি। কিন্তু কখনো কোন টিচার আতঙ্ক ছিলেন না। বাঘা স্যারের নামই ছিল বাঘের মত হুংকার দিয়ে আমাদের ঘাড় ধরে হেলিয়ে পিঠের উপর আধামনি থাপ্পর দেয়ার কারণে। স্কুলের একমাথায় বাঘা স্যারের হুংকার আর এক মাথায় শুনা যেত।
কিন্তু কেউই আতংক ছিলেন না। স্নেহ মায়া মমতায় আমাদের মানুষ করেছেন। অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তাঁদের কাউকে দেখলে হুমড়ি খেয়ে সালাম করি। মাথা তুলে কথা বলি না এখনো।
যুগযুগ ঘরে শতশত হাজার হাজার ছেলে স্কুল থেকে বের হয়ে গিয়েছে আজীবন শ্রদ্ধাভরে প্রত্যেক শিক্ষককে স্মরণ করে।
এখন আছেন এমন কেউ, কোন স্কুলে? থাকলে ক'জন? যাদের কথা বাচ্চারা বুকভরা ভালবাসা নিয়ে স্মরণ করে।
এখানেই আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, বড় লজ্জা।।
ভালবাসাহীন চাপিয়ে দেয়া পাহাড়সম ভার নিয়ে বাচ্চারা ঘরে ফেরে? মনের কথা কাউকে বলতে ভয় পায়। আবদার আর্জি নিয়ে টিচারদের সামনে যেতে ভয় পায়। সমস্যা বলতে ভয় পায়। টিচারদের ছায়া দেখলেও ভয় পায়।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় একই অবস্থা।
যুগ পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার বাচ্চারা হয়েছে মারাত্মক সংবেদনশীল এবং আত্মকেন্দ্রিক। এদের মেরে সংশোধন করা দুষ্কর। আতংক ছড়িয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে জয় করতে হবে এদের।
পিঠে ব্যাগের ভার। রোবোটিক জীবন। বাবা মায়ের জীবন যুদ্ধ। শুধু পড়া আর পড়া। এর সাথে যদি যুক্ত হয় আতংক আর ভয়!! আমরা কি পেয়েছি, আর এরা কি পাচ্ছে!!! করুণা হয় আমাদের বাচ্চাদের জন্য।
স্কুল হবে বাবা মায়ের বিকল্প। আতঙ্কের নাম নয়। কিন্তু এখন বাচ্চাদের কাছে আতঙ্ক, অনেকের বুকভরা গর্ব!!
প্রিয় মাহবুব কবির মিলন স্যারের লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩