বাংলাদেশে যারা একটু-আধটু বই পড়েন তাদের মধ্যে তিন গোয়েন্দার নাম শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব । সব রকম পাঠকগোষ্ঠীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই সিরিজের স্রষ্টা রকিব হাসান । বিদেশী বিভিন্ন গল্পের ছায়া অবলম্বনে রচিত এই সিরিজটি কিশোর-কিশোরীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় । অনেকে বড় হওয়ার পরেও এই সিরিজটি পড়ে যান । ছোট বেলার মোহ কাটাতে পারেন না আরকি!
তিন গোয়েন্দা পুরোপুরি মৌলিক নয় । কিশোর বয়সীদের উপযোগী বিদেশি বিভিন্ন গল্পের ছায়া, কখনো শুধু গল্পের চরিত্র বদলে তিন গোয়েন্দায় পরিণত করা হয়েছে । তিন গোয়েন্দার প্রথম দিককার বইগুলো রবার্ট আর্থারের ইংরেজি সিরিজ "থ্রি ইনভেস্টিগেটরস" অবলম্বনে রচিত। আবার কিছু বই এনিড ব্লাইটনের "ফেমাস ফাইভ" অবলম্বনে রচিত।
১৯৮৫ সালের আগস্ট মাস থেকে সুলেখক রকিব হাসানের হাত ধরে তিন গোয়েন্দার পথচলা শুরু । টানা ১৬০টি কাহিনি লিখেছেন তিনি । রকিব হাসানের লেখা "তিন গোয়েন্দা"-এর কাহিনীগুলো যখন ছোটবেলায় পড়তাম, টানটান উত্তেজনা পাওয়া যেত প্রায় প্রতিটি বইয়ে । প্রায় সব ধাঁচের কাহিনী নিয়েই তিন গোয়েন্দা রচিত হয়েছে । অ্যাডভেঞ্চার, হরর, শুধুই গোয়েন্দা ইত্যাদি । রকিব হাসানের লেখা সবগুলো বইতেই থ্রিল ছিল কিশোরদের জন্য । দক্ষিণের দ্বীপ, রূপালী মাকড়সা, হারানো কামান, ওকিমুরো কর্পোরেশন, কবরের প্রহরী, কঙ্কাল দ্বীপ, জলদস্যুর দ্বীপ, অথৈ সাগর, পোচার, যুদ্ধযাত্রা, আরেক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, দুর্গম কারাগার, প্রেতের অভিশাপ, চাঁদের পাহাড় ইত্যাদি আমার মতে তিন গোয়েন্দার শ্রেষ্ঠ বই। এগুলো সবই রকিব হাসানের লেখা । রকিব হাসানের পরে তিন গোয়েন্দার হাল ধরেন শামসুদ্দীন নওয়াব । অনেকের মতে শামসুদ্দীন নওয়াব গোস্ট রাইটার । কারণ, উনার লেখার ধাঁচ একেক বইতে আমার কাছে একে রকম মনে হয়েছে । কাহিনীও খুব একটা জমাতে পারেননি । শামসুদ্দীন নওয়াবের লেখা তিন গোয়েন্দার মধ্যে শুধু "উড়ন্ত রবিন" বইটা আমার কাছে ভালো লেগেছিল ।
তিন গোয়েন্দার ভলিউম ৬০ পর্যন্ত পড়লে ভালো লাগে । এরপরের বইগুলোতে তিন গোয়েন্দাকে সেই রূপে খুঁজে পাওয়া যায় না । ৬০ এর পরের ভলিউমগুলোএ কাহিনী একঘেয়ে হয়ে গেছে । বিদেশী ভালো কাহিনী না পাওয়া, গোস্ট রাইটার দিয়ে লেখানো ইত্যাদি কারণে আগের তিন গোয়েন্দা আর নেই এখন ।
পুরনো ভালো বইগুলোর রিপ্রিন্টও হয় না এখন । বাজে কাহিনী দিয়েই নতুন বই প্রকাশ হয়েছে । তবে কালে-ভদ্রে ভালো কাহিনী নিয়েও বই বের হয় । কিন্তু সেগুলো তিন গোয়েন্দার সেই পুরনো বইয়ের কাছে কিছুই না । ভাল বইয়ের অভাবেই এই প্রজন্ম অনেকটা বই বিমুখ । সেবার কাছে আনুরোধ, ভাল কাহিনী না হলে বই বের করার দরকার নেই । পুরনো বই রিপ্রিন্ট করুন । পরের প্রজন্মেরও কৈশোরের সঙ্গী হোক তিন গোয়েন্দা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬