somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ার করলাম আজকের প্রথম আলোতে দেয়া একটি দারুন গল্প: তিন নারী ও আমি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখক: ইমদাদ বাবু (নিউ্ইয়র্ক)

‘মাই নেম ইজ শিলা শিলাকি জ...।’ মনের আনন্দে বিছানায় শুয়ে গলা ছেড়ে মাত্র গানটা ধরেছি।
এই তুই থামবি? রান্নাঘর থেকে বউয়ের চিৎকার।
ভাবলাম এই গান বউয়ের হয়তো পছন্দ না, তাই নতুন গান ধরলাম।
‘মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে...।’ এবার বউ একা না, বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে দুটিও চিৎকার করে উঠল। বউ ছিল রান্নাঘরে। দৌড়ে বেডরুমে ঢুকল।
তোর সমস্যা কি?
কোনো সমস্যা নাই। কেন কি হইছে? নরম গলায় উত্তর দিলাম।
তুই চিৎকার করছিস কেন?
আমি চিৎকার করলাম কই? আমিতো গান করছিলাম।
এগুলো গান? রুচি বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। আশপাশের মানুষ শুনলে কি ভাববে।

আমি ছয়তলাতে থাকি। আর এই তলাতে শুধু আমরা ছাড়া আর কোনো বাঙালি নেই। এমনকি ভারতীয় বা পাকিস্তানিও নেই। আর এই বিদেশিরা আমার গান শুনে কী বুঝবে, আর কী ভাববে, সেটা আমার মাথায় ঢুকল না।
প্রতিবেশীরা আর কি ভাববে। এত বড় এক শিল্পী তাদের বিল্ডিংয়ে থাকে, এটা ভেবেই তারা বরং আরও গর্বিত হবে।
মাই গড, তুই কি এর মধ্যেই নিজেরে শিল্পীও ভাবা শুরু করেছিস?
আমিতো শিল্পীই, এখানে ভাবাভাবির কি আছে! আর শোন তুই কি বুঝতে পারছিস, কত বড় সুপ্ত প্রতিভাধর একজন শিল্পী তোর স্বামী। আরে তুইতো ভাগ্যবতী। তোর তো খুশি হওয়া উচিত।
আমিতো খুশি। এত খুশি যে রাখার জায়গা পাচ্ছি না।
তাহলে যাই, কয়েকটি বস্তা কিনে আনি?
মানে কি?
তুই না বললি খুশি রাখার জায়গা পাচ্ছিস না। তাই ভাবলাম কয়েকটি বস্তা হলে রাখা যেত।
তুই কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছিস। শোন তোর সাথে মজা করার মতো সময় আমার নাই। স্কুল বন্ধ, বাচ্চারা বাসায়। তোর এসব কুরুচিসম্পন্ন গান বন্ধ কর।
তা হলে রবীন্দ্র আংকেল বা নজরুল আংকেলের গান গাই। আরও রাগানোর জন্য বললাম।
না, তুই গানই গাইবি না। ঝাঁজালো গলায় বউ বলল।
আচ্ছা গাইব না। কিন্তু কেন গাইব না তাইতো বুঝলাম না?
কেন আবার। আমি বলছি গাইবি না, ব্যাস গাইবি না।
এটা আমেরিকা, আমার স্বাধীনতায় তুই হস্তক্ষেপ করতে পারিস না। আগুনটা আরেকটু উসকে দিলাম। আমি শিওর এবার নির্ঘাত ফেটে পড়বে।
তোর স্বাধীনতার গুলি মারি। তোর গান গাইতে ইচ্ছে হয় তুই রাস্তায় যা। রাস্তায় গান গা, নাচ, যা খুশি কর I don't care কিন্তু আমার ঘরে না। বলে গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। মন খারাপ করে বসে আছি। এতক্ষণ ঝগড়া শুনে মেয়েরা বুঝল আমার মন খারাপ। দুজনে এক সাথেই এল আমার কাছে।
আচ্ছা আম্মু বলো তো, আমার গানের গলা কি খুব খারাপ? কণ্ঠে একটু আবেগ মিশিয়ে প্রশ্ন করলাম। উদ্দেশ্য যদি একটু সিমপ্যাথি ও সমর্থন পাওয়া যায়।
অবশ্যই খারাপ। আর তোমার ওই সব হিন্দি গানতো আরও খারাপ। বড় মেয়ে সরাসরি উত্তর দিল।
সে একটু স্পষ্টবাদী। যেটা সত্য সেটাই বলবে। ওরে আবেগ দিয়ে দলে আনা যাবে না। এবার ছোট মেয়ের দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকালাম। আমার ধারণা সে আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসে। গলায় আরও বেশি আবেগ মিশিয়ে করুণভাবে বললাম, আম্মু তুমিও কি তাই মনে কর? আমার গান কি তোমার ভালো লাগে না।
It's ok, কিন্তু গান না গাইলে কি হয় না। তোমার গান গাওয়ার কি দরকার।
এটা দেখি আরও বড় মাতব্বর। আরে তোর কাছে কি আমি উপদেশ চাইছি। মেজাজটাই গরম হয়ে গেল।
বের হ আমার রুম থেকে। রেগে গিয়ে বললাম। বড়টা চলে গেল। ছোটটা বসে আছে। বলল, আব্বু মন কি বেশি খারাপ?
না, আমার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে, নাচি?
আব্বু প্লিজ না। তোমার নাচ আরও খারাপ। তুমি বরং ঘুমাও।
ভাগ সামনে থেকে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। মেয়ে সরি বলে রুম থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে শুয়ে থাকলাম। মিনিট পাঁচেক পরে, ড্রেস পাল্টিয়ে বাসা থেকে বের হতে যাব, বউ আবার চিৎকার করে উঠল, কই যাস তুই?
প্রতীকী ছবি। অলংকরণ তুলিএখন যে তুই চিৎকার করছিস, আশপাশের মানুষেরা শুনছে না? নাকি সব ইয়াবা খাইয়া ঘুমাইছে? নরম সুরে বললাম।
আমার ঘরে আমি যা খুশি করব। মানুষের কি? আর তুই ইয়াবার কথা কি বললি? তোর তো দেখি ইয়াবার ব্যাপারে অনেক জ্ঞান! নাকি খাওয়া শুরু করে দিছিস? তাইতো বলি এত আজেবাজে গান বের হয় কেমনে?
মারে মাফ চাই। ক্ষমা কইরা দে। আমার ভুল হইয়া গেছে। আল্লাহর দোহাই লাগে, ঝগড়ার লাইন বদলাইয়া গান থেকে ড্রাগে যাইস না। দুই হাত জোড় করে বলি।
ঠিক আছে বাদ দিলাম। কিন্তু এখন বল কই যাস?
বারেকের বাসায়, ওরে আমার গান শুনাইয়া আসি। গম্ভীর গলায় বললাম।
মানে কি?
তুই না বললি ঘরের বাইরে গিয়ে গান করতে। তাই বাইরে যাচ্ছি। কাউকে না কাউকে তো শোনাতে হবে। প্রতিভা তো আর অযত্নে নষ্ট করা যাবে না।
তাই নাকি? ভালো। কিন্তু বারেকটা কে? তাকে তো চিনলাম না।
আরে বারেকরে চিনলি না? আমাগো বারাক ওবামা।
তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করস? আমি কি তোর ভাবি লাগি?
কেন কাবিনে কি লেখা আছে বউয়ের সাথে ফাজলামি করা যাবে না। আর বিয়ের আগে যেহেতু তুই আমার সহপাঠী ছিলি, সেহেতু বন্ধু হিসেবে ফাজলামি করার পূর্ণ অধিকার আমার আছে।
জি বুঝছি আপনার অনেক অধিকার আছে। এখন ফাজলামি বাদ দিয়া ঘরে যেয়ে বসেন, আমি নাশতা আনছি। একেই বলে জুতো মেরে গরু দান। এতক্ষণ ঝেড়ে এখন নাশতা। তোর নাশতা তুই খা। কিন্তু কথাগুলো মুখে বলার সাহস হলো না। অবশ্য বেশি সাহস ভালো না।
শুধু আজ না। আমি দেখেছি যখনই আমি কোনো গান গাইতে চেষ্টা করি তখনই এই তিন নারী মানে বউ আর দুই মেয়ে আমাকে নাজেহাল করে ছাড়ে। বিশুদ্ধ ও ভালো গান সুর করে গাওয়ার চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। একই প্রতিক্রিয়া। বাথরুমে গান গাইতে পারি না। কারণ যে কাজে বাথরুমে যাই, সে কাজে কনসেনট্রেট না করলে, সেই কাজ আবার ঠিকমতো হয় না। কিন্তু আমার গান গাইতে ইচ্ছে করে। আমার ধারণা আমার গলা ততটা খারাপ না, যতটা প্রতিক্রিয়া ওই তিন নারী দেখায়। আগে ভাবতাম আমার বউ হয়তো আমার প্রতিভা দেখে জেলাস ফিল করে, তাই এমন করে। কিন্তু মেয়ে দুটির প্রতিক্রিয়া দেখে আমি বড়ই হতবাক। ওরাতো হিন্দি বা বাংলা গানের অর্থই বোঝে না। সুর বোঝে বলেও মনে হয় না। তাহলে সমস্যা কোথায়।
সবাই বলে, পৃথিবীর সকল সফল পুরুষের পেছনে একজন নারী থাকে। আমার বেলায় উল্টো। আমার শিল্পী প্রতিভা বিকশিত না হওয়ার পেছনে এক নয়, দুই নয় তিন তিনজন নারী। আমার ভেতরে যে সুপ্ত প্রতিভা আছে, তারতো বিকশিত হতে দিচ্ছেই না বরং আরও গলা টিপে দম বন্ধ করে মারছে। এটাতো রীতিমতো ক্রাইম, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কে জানে হয়তো আমার মাঝেই লুকিয়ে আছে একজন কিশোর কুমার বা মো. রফি।
বি. দ্র. এই লেখা পড়ার পর আমার বউয়ের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। ইয়া মাবুদ রক্ষা কর।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:১২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×