রাফি, রোহান আস্তে দৌড়াঁও পড়ে যাবে তো, বাচ্চা দুটোর খেলা দেখতে দেখতে কখন যেন মনটা হারিয়ে গেল আর খুলে দিল স্মৃতির জানালা..
আজ থেখে দশ বছর আগের কথা, আমরা তিন বন্ধু রাফি, রোহান আর আমি সুমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ি। কিছুদিন আগে ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হল হাতে অফুরন্ত সময় জহরুল হক হলের পুকুর ঘাটে বসে গল্প করতেছি হঠাৎ রোহান বলে উঠল চল সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে আসি, আমি বললাম তোরা যা আমার বাড়ি যেতে হবে। কয়েকদিন যাবৎ মা শুধু বাড়ি যেতে বলছিল কিন্তু ওরা কি আর আমার কথা শুনে, বলল না তোকে যেতেই হবে। শেষে রাজি হয়ে গেলাম মাকে ফোন করে ওরাই ম্যানেজ করল।আর রাজি না ই বা হই কি করে, ওরা যে আমার বাল্যবেলার বন্ধু।ছোটবেলা থেকেই একসাথে যাদের বেড়ে উঠা, পথ চলা। সবকিছুই তিনজনের একসাথে করা চাই যেন একটি নাটাই আর তার তিনটি ঘুড়ি।একবার কি হল আমি আর রোহান নটরডেম কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলাম কিন্তু রাফি পেল না তাই তিনজন মিলে সিটি কলেজে গিয়ে ভর্তি হলাম। বিশ্ববিদ্যলয় ভর্তির সময় অবশ্য ভাগ্য পক্ষেই ছিল।তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে একই ডিপার্টমেন্ট ভর্তির সুযোগ পেলাম।
তো যেই ভাবা সেই কাজ পরদিন সকালে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আড্ডা দিতে দিতে গাড়ি চিটাগাং পার হয়ে গেলে আমি ওদেরকে বললাম তোরা গল্প কর আমি ঘুমাই।হঠাৎই মনে হল সবকিছু যেন উল্টে যাচ্ছে এবং কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে।এরপর যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি হাসপাতালের বিছানায় আর আমার মা বাবার কথা শুনতে পাচ্ছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। মা কেদেঁ উঠল আমি জিজ্ঞেস করি মা রাফি রোহান ওরা কোথায়? আমাকে পাশে কোথাও নিয়ে যাওয়া হল।একটা হাতের স্পর্শ পেলাম বুঝলাম এটা রাফির হাত কিন্তু রোহান? রাফি ডুকরে কেদেঁ উঠে ধীরে ধীরে বলল জলেপড়া গাড়ি থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করতে পারলেও ঐ পাগলটা নিজেকে বের করে আনতে পারেনি।আমার কাছে অন্ধকার দুনিয়াটা তখন আরও অন্ধকার হয়ে গেল।
বন্ধুর হাতটা ছুটে গেল,আমি ডাকলাম রাফি, জানলাম ওকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনঘন্টা পর ডাক্তার এসে বলল উই আর সরি, আর বাবার হাতে একটুকরা কাগজ দিল যাতে লেখা ছিল আমি তোর দু চোখ হয়ে থাকব।নাটাইের ঘুড়িগুলো যেন সুতা ছিঁড়ে দূর আকাশের পানে ছুটে চলল...
হঠাৎ দুটো কোমল হাতের স্পর্শে পিছন ফিরে তাকালাম, দেখলাম রাফি আর রোহান আমার দিকে তাকিয়ে আমি ওদের জড়িয়ে ধরলাম।