নিউ ইস্কাটন রোডের একটি পুরানো দোতলা বাড়ির ছাদেঁ বাসা বাধে একজোড়া টুনটুনি পাখি।উন্নত জীবনের আশায় সদ্যই তারা গ্রাম ছেড়ে এই অচেনা শহরে উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। বাসার সামনেরটা গাছগাছালিতে ভরা, অনেকটা তাদের গ্রামের বাসার মত। অপরিচিত শহরে এরকম একটি বাসা পেয়ে টুনটুনি দম্পতি যারপরনাই আনন্দিত। তাদের এই আনন্দ কয়েকগুন বেড়ে গেল যখন তাদের কোল জুড়ে আসল নতুন অতিথি।তারা এই নতুন অতিথির নাম দিল টুনি।কাওরান বাজারে গিয়ে খাবার খোজাঁ, আদরের সন্তানের দেখাশুনা করা আর চাদনীঁ রাতে খোলা আকাশের নিচে ছোট্ট টুনিকে সাথে নিয়ে গল্প করার মধ্যে দিয়ে ভালই দিন কাটছে তাদের। টুনি এখন উড়তে শিখেছে তাই সারাদিন এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়ায় সে। এদিকে টুনিকে ভাল টুইবারি স্কুলে ভর্তি করানো নিয়ে টুনিদম্পতি আছে বেশ চিন্তায় (আমাদের যেমন প্রাইমারি টুনটুনিদের সেরকম টুইবারি)।
একদিন বিকেলে টুনির বাবা এসে ডাক পারল ও টুনির মা বলি টত্রিকা- টুত্রিকা (পত্রিকা) কিছু পড় নাকি সারাদিন মেয়েরে নিয়েই পড়ে থাক।টুনির মা জবাব দেয় কেন কি হইছে? দেশের অবস্থা ভাল না, শুনলাম কি সব দাবীদাওয়া নিয়ে সামনে নাকি অনেক গোলমাল হইতে পারে। আর মেয়েরে কইও এ বাসা ঐ বাসা গিয়া কাটুন পাটুন কম দেখতে।কেন বাবা এত গোলমাল কিসের? টুনি আইসা জিজ্ঞেস করে।মারে তুই এতসব বুঝবিনা, শুধু যাইন্না রাখ সব মানুষ ভালা না। ঐ বাড়ির দজ্জাল মহিলা রাজুর মার মত।কেন রাজুর মার লগে তোর কি হইছে?আর কইওনা আমারে দেইখা কয় ইট্টুনি পিচ্চি পাখি আবার আইচে কাটুন দেখতে, যা ভাগ।
এমন্ সময় টুনির বাবারে চিন্তিত দেইখা টুনির মা জিজ্ঞেস করে কি হইছে টুনির বাপ? একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টুনির বাপ কইল, একটা ঘটনা মনে পইড়া গেল দাদার কাছ থেকে শুনছিলাম, দাদার আব্বার সময়ের ঘটনা। অনেকদিন আগে একবার দেশে দুর্ভিক্ষ লাগছিল তখন কোথথেকে যেন অনেকগুলো বড় বড় ডানাওয়ালা পাখি আইছিল আর অইগুলো মাঠে নাইমা সবাইরে খাবার দিতে লাগল।সবাই ঐগুলারে ডাকত মহাপতঙ্গ কইয়া। অল্পদিনের মধ্যেই সব অভাব দূর হইয়া গেল, চারদিকে শুধু সুখেরই জয়গান।
কয়েকমাস পর ওইগুলি আবার আইল সবাই ভাবল এবার মনে হয় আরো বেশি খাবার নিয়া আইছে, তাই সবাই মাঠের দিকে দৌড় দিল। কিন্তু এবার আর অইগুলো মাঠে নামলনা, আকাশ থাইকাই ডিম পাড়তে লাগল আর যেই ডিমগুলি ফুটলো চারদিকের সঅঅব কিছু ধংস হয়ে গেল।দাদার বাপ ভাগ্যক্রমে বাইচা গেলেন কিন্থ স্ত্রী সন্তান কাউরে খুইজা পাইলেন না। এরপর দাদার বাবা শহর ছেড়ে দূর গ্রামে চলে গেলেন আর কখনো গ্রামের বাইরে গেলেন না, এমনকি দাদা, বাবা ও না।
টুনির মা জিজ্ঞেস করে কিন্তু ঐগুলো কি ছিল ডিমের মত? টুনির বাবা কিছু বলার আগেই টুনি বলে উঠে ঐগুলা ছিল বোমা। বোমা কিন্থু তুই জ়ানলি কি করে? রাজুদের পাঠ্যবইয়ে এই গল্পটা আছে। সেদিন রাজুর পড়ার সময় কিছুটা শুনছিলাম আইজ বাবার কাছ থেকে পুরাডা শুনলাম।
কয়েকদিন পর টুনি বাপ-মারে কইয়া রাজুদের বাসায় যাওয়ার জন্য রাস্থা পার হতে লাগল কিন্তু ঠিক তখনই একটি ডিম ফাটার আওয়াজ টুনির বাবা মাকে স্তব্ধ করে টুনির জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল।শোকেবিহব্বল বাবা-মা টুনিকে তার প্রিয় আম গাছের নিচে শায়িত করে এই ঘৃন্য শহর ছেড়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
কিন্তু… বিধাতার চাওয়া মনে হয় একটু অন্যরকমিই ছিল। গ্রামের কাছাকাছি দু দলের তীব্র মারামারি আর পুলিশের আবিরাম গুলি বর্ষন টুনির বাবা-মাকে একসাথে পথ চলতে দিল না, চির জীবনের জন্য টুনির বাবাকে একাকী করে দিল।একটু শান্তির আশায় গ্রামের পানে ছুটে চলা টুনির বাবা টুনির মাকে হারিয়ে দিগবিদ্বিক শূন্য হয়ে বিলাপের ন্যায় আর্তনাদ করতে লাগল আর বলতে লাগল আমাকে কি দোষে বাচিঁয়ে রাখলে!।
পাগল্প্রায় টুনির বাবা আবার শহরে ফিরে যেতে লাগল আর উচ্চসরে বলতে লাগল.. কেউ নিরাপদ নও, কোথাও নিরাপদ নও শহর গ্রাম সবযায়গায় শুধু ধংস আর ধংস রক্ত আর রক্ত, কারন এটা মহাপতঙ্গ নয় এ যে মহাআতঙ্ক..মহাআতঙ্ক।