আমার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। গতকাল শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখমের খবর দেখার পর দেখলাম পরিচিত অনেক লেখক ব্লগার ফেসবুকে রক্ত চেয়ে পোস্ট দিয়েছে। মেডিকেলের কাছে থাকায় রক্ত দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম , আমার দেওয়ার প্রয়োজন হয় নি। অনেকে আমার চেয়ে আগে পৌছে গেছে। মেডিকেলেই অপেক্ষা করছিলাম , একা একটু দুরে বসে। আমার পরিচিত কেউ সেখানে ছিল না । আর ব্লগার লেখকদের সাথে আমার পরিচয় একতরফা, উনাদের লেখার সাথে পরিচিত , শাহবাগের সময় দেখেছি, টিভিতে দেখেছি এই পর্যন্তই। তারপরেই আরো ভয়াবহ সংবাদ -জাগৃতির কার্যালয়ের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন। মনটা ভীষন ভীষন খারাপ হয়ে গেছে।
এদের চিন্তা ভাবনা কী??? এভাবে লেখক, প্রকাশক হত্যা করলে কি সবাই লেখালেখি ছেড়ে দিবে? সব প্রকাশনী কি মুক্তচিন্তা প্রকাশ বন্ধ করে দিবে? পাঠকরা কী রহস্যোপন্যাস,ছড়া ,ভ্রমন কাহিনী পড়বে? অন্যকিছু পড়া যাবে না?? লেখক ,প্রকাশক যদি লিখে, প্রকাশ করে ওদের চোখে দোষী হয়, তবে তো আমরা সাধারণ পাঠকরাও চাপাতির কুপ খাওয়ার দাবিদার হয়ে গেছি।
ব্লগারদের খুব কৌশলে সাধরন মানুষদের কাছে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করেছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। এ কাজে তারা সংবাদপত্র, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, ব্লগারদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ইত্যাদি সুযোগ গুলোকে সর্বত্তম ভাবে কাজে লাগিয়েছে। খোদ ঢাকাতে গত পরশুদিন বায়তুল মোকাররমের উল্টোদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্রের ওয়াজ মাহফিলে বক্তা যে ভাবে ব্লগারদের পরিচয় তুলে ধরছিলেন সেটা শুনলে ব্লগ কি এ সম্পর্কে জানার ইচ্ছা সাধারন মানুষের আর থাকবে না । গ্রামের দিকের অবস্থা আরো ভয়াবহ।অন্যদিকে ব্লগাররা ব্যর্থ হয়েছে ব্লগ কি, ব্লগার কারা, তারা কি লিখে , কেন লিখে এ সমস্ত বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে।
আপনার আমার সাধারন বন্ধু, কলিগদের বা কাছের সাধারণ মানুষ গুলোর কাছে জিজ্ঞাস করে দেখেন বেশির ভাগের ব্লগ সম্পর্কে ধারনা গ্রামের সাধারণ মানুষের মতই, সেটি নেতিবাচক। আরেকটা শ্রেণী আছে যারা সারা বছর ধর্ম কর্মের ধার ধারে না তারা ব্লগার হত্যাকান্ডে উল্লাস প্রকাশ করে । ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে এরা বেশি।
আমাদের প্রতিষ্ঠিত লেখক সাহিত্যকগণও যেন বর্তমানে নেই। সমাজের,দেশের ,রাজনীতির ব্যাপারে তাদের যেন কোন প্রতিক্রিয়াই নেই! নেই সক্রিয় বিরোধীদল, সরকারদলীয় নেতা,কর্মী,সমর্থক সব দলকানা। প্রশাসন কিভাবে চলে বুঝি না, একই ঘটনা পুনরায় পুনরায় ঘটছে তবুও কোন কিনারা হচ্ছে না!
হত্যা করে যদি বিরুদ্ধমত থামিয়ে দেওয়া যেত তাহলে পৃথিবীতে এত দলমত কবেই শেষ হয়ে যেতো। জোর করে মানুষ কে হয়তো আটকে রাখা যায়, মানুষের চিন্তা চেতনা কে আটকে রাখা সম্ভব নয়।
সবার উপরে মানুষ সত্য ,তাহার উপর নাই।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩