শবে বরাত সম্পর্কে এই বিশ্বাস পোষন করা হয় যে,
আল্লাহ তায়ালা এই রাতে আল- কুরআন অবতীর্ণ করেছেন,
তিনি এই রাতে মানুষের হায়াত, রিযিক ও ভাগ্যের ফায়সালা করে থাকেন,
এই রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে লিপ্ত হলে আল্লাহ হায়াত ও রিযিক বাড়িয়ে সৌভাগ্যশালী করেন।
..
যেহেতু এই বিশ্বাসগুলো কুরআন কিংবা কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়,
সুতারং এই বিশ্বাসগুলোর মাধ্যমে কি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হচ্ছে না???
..
আল্লাহ বলেন,
যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে; তার চাইতে অধিক যালেম আর কে? আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
(আস-সফ :৭)
..
তবে শবে বরাত পন্থি আলেমরা এই বিশ্বাসগুলোকে সঠিক প্রমান করার জন্য কুরআন থেকে দলিল দিয়ে থাকেন। কুরআনের দলিল হল:
আল্লাহ বলেন,,
হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, ১-৪)
.
তারা এখানে বরকতময় রাত বলতে ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন। আমি এখানে স্পষ্টভাবেই বলব যে, যারা এখানে বরকতময় রাতের অর্থ ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন যা আল্লাহর কালাম বিকৃত করার মত অপরাধ। কারণ কুরআন মাজীদের এ আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা হল সূরা আল-কদর।
.
আল্লাহ বলেন,
আমি এই কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য মালাইকা (ফেরেশ্তাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কাদর, ১-৫)
.
তারপরেও যদি তারা সূরা দুখানের লাইলাতুল মুবারাকার অর্থ শবে বরাতের দিকে নিয়ে যায় তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাড়ায় আল কুরআন শাবান মাসের শবে বরাতে নাযিল হয়েছে। অথচ আমরা সকলে জানি আল-কুরআন নাযিল হয়েছে রামাযান মাসের লাইলাতুল কদরে।
.
যেমন সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
: রামাযান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন।
.
সুতরাং বরতময় রাত্রিটি অবশ্যই রমজান মাসের লায়লাতুল কদরে শবে বরাতে নয় (যদি আপনি কুরআন বিশ্বাস করেন তবে এটা মানবেন)।
..
এত স্পশট দলিল দেয়ার পরেও যদি কেউ দাবি করে "না, না," বরকতময় রাত শবে বরাতই। তাহলে কুরআন এবং (জাল হাদিস থেকে নয়) সহিহ হাদিস থেকে দলিল দেখান অন্যথায় দয়া করে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ বন্ধ করুন!
..........
আর শবে বরাত উপলক্ষে কোন ইবাদাত, নামাজ কিংবা রোজা রাখার অস্তিত্ব দ্বীন ইসলামে নেই। এই ব্যাপারে যতগুলো হাদিস বর্নিত হয়েছে যেমন: ইবনে মাজাহাতে তা সবই জাল ও বানোয়াট।
.
তবে যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ শবে বরাত সম্পর্কিত মাত্র একটি হাদিসকে ৭- ৮ সনদে বর্নিত হওয়ার কারনে তিনি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন কিন্তু সেই হাদিসে কোন ইবাদাত নেই।
হাদিসটি হলঃ
মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, নবি করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও সুন্নতকে ঘৃনাকারি মানে বেদাতি ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
.
অর্থাৎ যার ভিতর সারাবছর ব্যাপি শিরক ও বিদাতমুক্ত এই দুইটি গুন থাকবে সে যদি ঘুমিয়ে ও থাকে তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শবে বরাত উপলক্ষে কোন ইবাদাত, নামাজ কিংবা রোজা রাখার কথা এই হাদিসে বলা হয়নি। এই রাত সাধারন রাতের মতই একটি রাত
..
মোট কথা, বরকতময় রাত হল শবে কদর, শবে বরাত নয়। শবে বরাতকে উদ্দেশ্য করে কোন ইবাদাত করা, নামাজ পড়া কিংবা রোজা রাখা স্পশট বিদাত!! কারন এই ব্যাপারে জাল হাদিস ছাড়া কোন সহিহ হাদিস পাওয়া যায় না।
-
আল্লাহ আমাদের শবে বরাত সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারনাগুলো দূর করার এবং এর উপলক্ষে ইবাদাত করার মাধ্যমে বেদাত থেকে বাচার তৌফিক দান করুক। (আমিন)