টেলিফিল্ম : রঙ্গীন স্বপ্নের মৃত্যু : চরিত্র বিন্যাস
দৃশ্য-১ (দুপুর বেলা)
কনিকা খাটের নিচ থেকে নাটাই আর ঘুড়ি বের করে হাতে নিয়ে অভিকে বলবে-
কনিকা : দাদা চল।
(বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অভি আর কনিকা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে বাইরের খোলা মাঠটায় গিয়ে দাঁড়ালো দুজনে। হঠাৎ সুমা দূর থেকে অভি আর কনিকাকে দেখতেই কাছে এসে অভি আর কনিকার দিকে চেয়ে)
সুমা : কি ব্যাপার ভর দুপুরে দুই ভাই-বোন ঘুড়ি উড়াতে এসেছ?
কনিকা : (সুমার দিকে চেয়ে) আরে সুমা, কেমন আছো তুমি?
সুমা : বেশ ভাল। তুমি কেমন আছ?
কনিকা : ভাল। কোত্থেকে আসছিলে?
সুমা : কলেজে গিয়েছিলাম। তা আমার মিষ্টি কোথায়?
কনিকা : (মুচকি হেসে) মিষ্টির কথা আমাকে কেন বলছ, দাদাভাইকে বল।
(অভি সুমার কথায় বিরক্ত হচ্ছিল)।
সুমা : কি অভি পাশ করেছ মিষ্টি খাওয়াবে না?
অভি : (বিরক্তি গলায়) সুমা এখন যাতো। এ মাঠে মিষ্টি কোথায় পাব আমি? মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসিস।
সুমা : বাড়ি গেলেও তো তুমি আমাকে সহ্য করতে পার না।
(সুমা চোখের ইশারায় কনিকাকে চলে যেতে বলল)।
কনিকা : দাদা ভাই আমার খুব মাথা ব্যথা করছে।
অভি : কেবলই তো এলি, এখনই মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে?
: ( সুমা আবার ইশারায় কনিকাকে চলে যেতে বলার সময় অভি সুমার দিকে চোখ পড়তেই)
অভি : ও বুঝেছি এসবই সুমার চালাকি। যা কনিকা তুই চলে যা।
(সুমা খানিক চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে অভির কাছে)।
কনিকা : আসি সুমা, কাল অবশ্যই আমাদের বাড়িতে যেও।
সুমা : আচ্ছা। (কনিকা চলে গেল)।
অভি : (সুমার দিকে রাগত দৃষ্টিতে চেয়ে) তুমি আবার মুর্তির মত দাঁড়িয়ে আছো কেন, তুমিও চলে যাও। আমি একাই ঘুড়ি উড়াতে পারব।
সুমা : অভি, মনটা আজ ভাল নেই। প্লিজ আমি আজ তোমার সাথে একটু থাকতে চাচ্ছি।
(সুমা তার সঙ্গে নিয়ে আসা বইণ্ডলো মাঠে রেখে ঘুড়ি ধরে উড়াতে যাবে এমন সময় অভি সুমার হাত থেকে ঘুড়িটা কেড়ে নিয়ে পকেট থেকে একটা সাইন পেন বের করে)-
অভি : বলতো দেখি ঘুড়িটাতে এখন আমি কার নাম লিখব?
সুমা : কার নাম আবার লিখবে? আমি তোমার পাশে আছি আমার নাম লিখবে।
অভি : উহু বলতে পারোনি। আমি এখন রূপার নাম লিখবো।
সুমা : প্লিজ অভি, তুমি আমার নামটা লেখনা।
(অভি সুমার কথা না শুনে রুপা নামটি তিনবার লেখল ঘুড়ির মধ্যে। সুমার মনটা খারাপ হয়ে গেল)।
সুমা : (গম্ভীর গলায়) আমি তোমাকে এত গভীর ভাবে ভালবাসি জেনেও তুমি ঘুড়িটিতে রুপার নামই লিখলে?
অভি : তুমি যতটুকু ভালবাস আমাকে এর চেয়ে অনেক অনেক ণ্ডণ বেশী রুপা আমাকে ভালবাসে।
সুমা : (সুমা ঘুড়িটা হাতে নিয়ে উড়াতে উড়াতে বলবে) যদি ঘুড়িটা কেউ কেটে ফেলে তবে বুঝব তুমি রুপাকে আর পাচ্ছ না।
অভি : আরে না কেউ কাটতে পারবেনা ঘুড়িটা। সুতোতে বেশ মাজা দিয়েছি। (অভির সংগে আরও দু তিন জন ঘুড়ি উড়াচ্ছে। একজন আরেক জনের ঘুড়ি কাটার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ তুহিন নামের একজন অভির ঘুড়ি কেটে ফেলে আনন্দচিত্তে চিৎকার করে)
তুহিন : হুররে অভির ঘুড়ি কেটে ফেলেছি। হুররে। (এদিকে অভির মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। অভি নাটাই হাতে নিয়ে মাটিতে বসে খানিক চুপ করে বসেছিল। সুমা বসে অভির হাতের বাহুতে হাত রেখে)-
সুমা : প্লিজ অভি, মন খারাপ করো না। আমি কথা দিচ্ছি, তোমাকে খুব বড় একটা ঘুড়ি দেব।
অভি : (দুঃখী বলায়) জানিস সুমা, যেদিন রুপা এ গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়, তার ঠিক দু দিন আগে রুপা আর আমি এ মাঠটাতে ঘুড়ি উড়িয়েছি। রুপা আমার ঘুড়িটাতে তার নাম তিনবার লিখে ঘুড়িটা আকাশে উড়িয়ে দিয়ে কি বলেছিল জানিস ?
সুমা : (অবাক গলায়) কি বলেছিল ?
অভি : বলেছিল, ওই যে ঘুড়িটা সে কি তুমি তা জান ? আমি বলেছি জানিনা। রুপা বলল, ওই ঘুড়িটা হলাম আমি, আর এ ঘুড়ির মালিক হলে তুমি। আমি যত দূরেই যাইনা কেন একদিন ভালবাসার টানে তোমার কাছে ফিরে আসবই।
অভি কথাণ্ডলো বলে ঘুড়ির নাটাই না নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতের পীঠ দিয়ে অশ্রুসিক্ত দু চোখ মুছতে মুছতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো। সুমা ও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে ---
সুমা : অভি, তোমার ঘুড়ির নাটাইটা নেবে না?
(অভি সহসা থমকে দাঁড়িয়ে সুমার দিকে তাকিয়ে)----
অভি : না। নাটাইটা আমার আর লাগবেনা। বরং ওটা তুমিই নিয়ে যাও।
(কথাটি বলেই অভি ধীরপথে বাড়ির দিকে এণ্ডচ্ছে। এমন সময় সুমা পেছন থেকে),
সুমা : অভি দাঁড়াও। অভি কথা শোন।
অভি সুমার কথা ভ্রক্ষেপ না করেই বাড়ির দিকে চলে গেল। সুমা এক হাতে নাটাই আর অন্য হাতে বইণ্ডলো বুকে চেপে ধরে বাড়িতে ফিরে চলল।
--------
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬