এই ছবিটি বাণিজ্য মেলার একটি শিশুদের খেলনা বিক্রয়ের স্টল থেকে তোলা। নানারকম খেলনা দেখতে পাচ্ছেন এখানে। গিটার, খেলনা পশু, গাড়ি ইত্যাদি। সেই সাথে আছে একে-৪৭ রাইফেলও। চমৎকার খেলনা, তাই না?
আসুন এবার সাম্প্রতিক কিছু খবর পড়ি-
(১) উত্তরায় কিশোরদের দুই গ্রুপের বিবাদের জেরে হত্যা করা হলো এক কিশোরকে।
(২) ফরিদপুরে মোটর সাইকেল কিনে না দেয়ায় বাবা-মা’র গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এক কিশোর।
(৩) মতিঝিল এজিবি কলোনির কিশোর বাইকারদের দলের সন্ত্রাসের বলি হলেন একজন মা।
(৪) ড্রাগ এ্যাডিক্ট কিশোরী ঘুমের বড়ি খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যা করলো তার বাবা-মাকে।
(৫) ফেসবুকের ‘আনসেন্সর্ড’ গ্রুপে রাতভর অশ্লীলতায় মগ্ন কিশোর-কিশোরীরা।
ভাবছেন, সামান্য খেলনার প্রসঙ্গে এত কথা কেন বলছি? আসুন এবার অন্য একটি ছবি দেখি,
এই মেয়েটা এসেছে বাণিজ্যমেলারই অন্য একটি স্টলে। বিস্মিত হয়ে দেখছে নানারকম সায়েন্স টুলস। ছবিটা দেখুন, আর ভাবুন। একটা আশাবাদ জাগে না? একটু ভরসা পাওয়া যায় না?
আমাদের অবিমৃষ্যকারীতায় লুট হয়ে যাচ্ছে শিশুদের বিনোদন আর সৃজন। তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে সেক্স আর ভায়োলেন্সের প্রতি। এই নগরায়নের যুগে শুধুমাত্র আপনার শিশুর অবসর সময়টাকে রি-ডিফাইনড না করতে পারার কারণে তারা হয়ে পড়ছে বিচ্ছিন্ন আর বিষণ্ণ। আনন্দের খোঁজে বেছে নিচ্ছে ধ্বংসাত্মক উপায়। এর প্রভাব থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন বলে ভাবছেন? ঐশির বাবা-মা বাঁচতে পারে নি, রাজনের বাবাও পারে নি। তাই, সময় থাকতেই সতর্ক হোন। আজ আপনি মরছেন, কাল আমি মরবো, পরশু পুরো দেশেই ম্যাসাকার লেগে যাবে।
শিশুর অবসর হোক সুন্দর। কিছু পরামর্শ-
১) গল্প লেখার পাল্লা! – শিশুরা গল্প শুনতে পছন্দ করে। রঙীন ছবিওলা মজার গল্পের বই হলে তো কথাই নেই! গল্পের প্রতি এই আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে আপনি তাকে আরো সৃজনশীল করে তুলতে পারেন। এমনিতে হয়তো সে তেমন আগ্রহ বোধ নাও করতে পারে। তবে যদি বলেন যে, আপনার সাথে পাল্লা লেগে গল্প লিখতে হবে, এবং জিতলে পুরষ্কার দেবেন, তাহলে সে উৎসাহী হবেই। আর এক্ষেত্রে যে আপনি ইচ্ছে করে বারবার হেরে যাবেন তা তো বলাই বাহুল্য!
(২) অরিগ্যামি বা ট্যানগ্রাম জাতীয় খেলার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করুন- কিছু কাগজ, কিছু নকশা, আর অনেক আনন্দ। শুধু শিশুদের জন্যে না, আপনি নিজেও মজা পাবেন অনেক!
(৩) বোর্ড গেম খেলুন- তাকে লুডু, চেকারস, দাবা ইত্যাদি বোর্ড গেম শেখান। এগুলো যেমন আনন্দ যোগাবে, তেমন বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশেও সহায়ক হবে। দাবার কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়। দাবা তো স্রেফ একটি খেলা না, একটি বিজ্ঞান! খেলতে খেলতে বিজ্ঞান চর্চা, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!
(৪) জাদুঘরে নিয়ে যান- প্রথম জাদুঘরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রত্যেক শিশুর জন্যেই বিশেষ। পুরাতন আমলের বিশাল বিশাল খাট-পালঙ্ক, তিমি মাছের ফসিল, নৌকা, উল্কাখণ্ড, নানারকম জিনিস দেখে সে আনন্দে আপ্লুত হবে, জানার আগ্রহও তৈরি হবে।
(৫) চিঠি লেখা শেখান- খুব দূরের কাউকে না, পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই চিঠি দিক! এতে সে লেখার শৈলী অর্জন করবে, এবং পরস্পরের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
হ্যাপি প্যারেন্টিং।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯