somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিজি ভেলাসকুয়েজ- দ্যা মোস্ট বিউটিফুল গার্ল অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড

২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একজন টিন এজ কিশোরী। ইউ টিউবের একটি ভিডিও। কিছু সহিংস এবং অপমান সূচক মন্তব্য...
“মাইরা ফালাও ওরে!”। “ছি, ছি! কী জঘন্য দেখতে!” “তুমি বেঁচে আছো কী মনে করে?শুট ইয়োরসেলফ!” “ওকে আগুনে পুড়িয়ে মারো”।
কেউ কেউ আবার এক কাঠি সরেস। তারা নিজেদের রসের ভাণ্ডার ওপর করে দিয়েছে তার প্রতি,
“বাইরে বের হবার সময় মাথার ওপর একটা বস্তা চাপিয়ে যেও। তাহলে পরিবেশটা সুন্দর থাকবে।“
যার প্রতি মানুষের এত ঘৃণা, এত আক্রোশ, এত ক্রোধ, তার অপরাধ কী ছিলো? এক কথায় জবাব দেয়া যায়- “কিছুই না”। কিছু না করলেও নিরীহ একজনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা, মানুষই পারে। মানুষের পক্ষেই সম্ভব নিষ্পাপ প্রাণকে নিজেদের পাপাচারী মনের কলুষতা দিয়ে আক্রমণ করা।
আক্রান্ত কিশোরীটির নাম লিজি ভেলাসকুয়েজ। তার অপরাধ- তিনি জন্মেছিলেন বিরল এক অসুখ নিয়ে। অসুখটির নাম “Neonatal progeroid syndrome”. এই অসুখ হলে শৈশবের কোমলীয়তা, কমনীয়তা থাকে না। চামড়া কুঁচকে যায় বিশ্রী ভাবে। নষ্ট হয়ে যায় বডি টোন। আক্রান্ত হয় হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, মুখ, চোখ। অকাল বার্ধক্য এসে ভর করে শরীরে। আক্রান্তদের ওজন বলতে গেলে বাড়েই না। ২৭ বছর বয়েসী, পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা লিজ্জির ওজন মাত্র ৫৮ পাউন্ড বা ২৬ কেজি! তবে তার পরিবার তাকে সবসময় বুঝিয়েছে যে, সে স্বাভাবিক একজন মানুষ। অন্যেরা যা পারবে সেও তাই পারবে। তাই এটা নিয়ে লিজ্জির তেমন মাথাব্যথা ছিলো না। কিন্তু হায়! অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?

সেই ভীষণ কদর্য দিনটায় লিজি ফুরফুরে মেজাজে ইউটিউবে বসেছিলেন । ভেবেছিলেন হোমওয়ার্ক করার আগে কিছু রিলাক্সিং মিউজিক শুনলে মন্দ হয় না। ইউটিউবে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে অকস্মাৎ একটি অদ্ভুত শিরোনামের ভিডিও খুঁজে পেলেন। আট সেকেন্ডের ছোট্ট একটি ভিডিও। তখন কি তিনি ভাবতে পেরেছিলেন এই আট সেকেন্ডের ভিডিওটা তার জীবন বদলে দেবে? ভিডিওটা শিরোনাম ছিলো অদ্ভুত। “The ugliest woman of the world”. এভাবে কারো চেহারা নিয়ে কটুক্তি করাটা মোটেও লিজির আদর্শের সাথে মেলে না। কিন্তু কৌতুহলের কাছে পরাজিত হলেন তিনি। তারপর কী দেখলেন?

শিরোনামের সেই কুৎসিত মেয়েটা আর কেউ নয়, তিনি নিজেই! একটি টিভি শো থেকে কপি করে আপলোড করা হয়েছে। প্রথমে হেসেই উড়িয়ে দিলেন। “যাহ, তাই হয় না কি! আমি মোটেও মন খারাপ করি নি দেখে। কে না কে আপলোড করে আমাকে কুৎসিত বললো তাতে কী এসে যায়! অন্যেরা নিশ্চয়ই এর প্রতিবাদ করবে।“ ভাবলেন, “দাঁড়াও, মজা দেখতে পাবে। আমার ভাই-বোন, বন্ধুদের যদি দেখাই যে তুমি এই কুকর্ম টা করেছো, তাহলে ওরা তোমাকে উচিত শাস্তি দেবে। ইতিমধ্যেই হয়তো কমেন্টে সবাই তোমাকে আচ্ছা করে ঝেড়েছে!” রাগী রাগী মনে তিনি কমেন্ট পড়া শুরু করলেন।
সেখানে সম্মুখীন হলেন তার জীবনের বিভৎসতম অভিজ্ঞতার। কিছু কমেন্টের উদাহরণ লেখার শুরুতেই দেয়া হয়েছে। সেগুলোই সব নয়। এমন কমেন্ট ছিলো হাজার হাজার। হিংস্র উন্মত্ততায় তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো লিজির মনটাকে দুরমুশ করে দেয়ার পৈশাচিক অভিপ্রায়ে। লিজি প্রতিটা কমেন্ট পড়েছিলেন। একটিও বাদ দেন নি। তিনি আশা করেছিলেন অন্তত একজন তার পক্ষে কথা বলবে, যে তার প্রতি ভায়োলেন্ট হবে না, তাকে নিয়ে মজা করবে না। একজন অন্তত প্রতিবাদ করবে বর্বরতম এই আচরণের। কিন্তু লিজির পক্ষে কেউ ছিলো না সে দিন। প্রতিটি মন্তব্যই তার কাছে ছিলো চপেটাঘাতের মত। শত শত থাপ্পড় তাকে গুড়িয়ে দিয়েছিলো, ভেঙে দিয়েছিলো। বিরুদ্ধ স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতরে অভ্যস্ত লিজি এর আগে কখনও এত অসহায় বোধ করেন নি। কেউ একজন তার পক্ষে কথা বললো না! এত অবিচার আর অনাদর এই পৃথিবীতে!

কিছুক্ষণের জন্যে লিজি বড় বিপন্ন অনুভবে ডুবলেন। হারিয়ে ফেললেন আশা, উৎসাহ এবং প্রেরণা। সৌভাগ্যের ব্যাপার, তা ছিলো ক্ষণস্থায়ী। “আমার বাবা-মা বলেছেন আমি আলাদা কেউ নই। আমার শিক্ষকেরা শিখিয়েছেন আমিও পারি। আমার আছে অনেক বন্ধু, ভাই-বোন, আর শুভাকাঙ্খী। আমি ভেঙে পড়বো এই কয়টি ভার্চুয়াল বখাটের গুন্ডামিতে?”
এই উপলব্ধি তাকে সাহসী করলো, শক্তি যোগালো। এমন কী তার মনটাও ভালো করে দিলো নিমিষেই। ফূর্তির মেজাজে গুনগুনিয়ে প্রিয় গানের সুর ভাজতে ভাজতে তিনি একটি কঠিন প্রতিজ্ঞা করে ফেললেন। এই বখাটেগুলোকে দেখিয়ে ছাড়বেন লিজি কী পারে আর না পারে। “হু হু! লিজিকে তো চেনো না, সারা পৃথিবীকে আমি দেখিয়ে ছাড়বো লিজি কী চিজ!”
যা হতে পারতো প্রকৃতির বৈরীতার বিরুদ্ধে লড়তে থাকা একটি মানুষের যুদ্ধের সমাপ্তি, তা হয়ে উঠলো একটি অসাধারণ ফিরে আসার কাহিনী। এই মেয়েটি একদিন পরিচিত হবে তার উদ্দীপ্ত ভাষণে, লেখায়, দৃঢ়তায়, এই কথা কি কেউ ভাবতে পেরেছিলো? তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন জীবনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে। তার শরীর দুর্বল এবং ভঙ্গুর হলেও মন ছিলো মজবুত এবং আলোকিত। অন্তর্গত সৌন্দর্যে ঋদ্ধ হয়ে জীবনের সূর্যস্নাত আঙিনা থেকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছিলেন যাবতীয় অশুভ আবর্জনা। তাকে এখন পৃথিবী “কুৎসিততম নারী” হিসেবে চেনে না, চেনে একজন মোটিভেশনাল স্পিকার, এবং লেখক হিসেবে। লিজি এখন বরং সেই অনলাইন দুর্বৃত্তদের ধন্যবাদ জানান। বলেন, “তোমাদের কারণেই আমি আজকের লিজি ভেলাসকুয়েজ হতে পেরেছি।“
আর সেই অনলাইন দুর্বৃত্তরা? তাদের খবর নিতে মানুষের বয়েই গেছে! হয়তো কোথাও নীরবে নিভৃতে লুকিয়ে পরাজিত এবং হতোদ্যম জীবন কাটাচ্ছে। কালের প্রবাহে তারা হারিয়ে গেছে দৃশ্যপট থেকে। বঞ্চিত হয়েছে জীবনের আশীর্বাদ থেকে।

সম্প্রতি লিজিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র; “A Brave Heart: The Lizzie Velasquez Story.” সাধারণত ডকুমেন্টারি সিনেমার প্রতি দর্শকদের তেমন আগ্রহ থাকে না। কিন্তু লিজির কাহিনী তারা বরণ করে নিয়েছে অগাধ ভালোবাসায়। কেনই বা নেবে না? এমন মানুষ কজন দেখেছে পৃথিবী? প্রোজেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত খুব বেশি দিন বাঁচে না। আর বাঁচলেও তাদের জীবন হয় অসম্মানজনক। লিজি সেই কাতারের অন্তর্ভুক্ত নন। তিনি, তার পরিবার, শিক্ষক এবং বন্ধুরা বর্ণনা করেছেন লিজির জীবনের বিভিন্ন বাঁক এবং বৈচিত্র। চলুন ফিরে দেখি লিজির শৈশব কেমন ছিলো।

স্কুলে যাবার আগে বাবা- মা তাকে পইপই করে শিখিয়ে দিয়েছিলেন, “লিজি, তুমি অন্যদের চেয়ে আলাদা নও। স্রেফ আকৃতিতে একটু ছোট। অন্যেরা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে মন খারাপ করবে না কিন্তু একদম”। পনি টেইল করা ছোট্ট ছটফটে লিজি খুব আগ্রহের সাথে স্কুলে এসেছিলেন। নতুন জীবন! কত্ত রঙ! কত্ত খেলা! কত্ত মজা! কিন্তু সে কী! কেউ তার সাথে বসতে চাইছে না। কথা বলছে না। এমন কী অনেকে ভয়ও পেয়ে গেলো তাকে দেখে। শিশুদের আর দোষ কী! প্রোজেরিয়া রোগের উদাহরণ তো আর আশেপাশে তাকালেই দেখা যায় না! লিজি খুব অবাক হয়েছিলো সে দিন। আকুল হয়ে জানতে চেয়েছিলো, “কেন এমন করছো আমার সাথে? আমার কী দোষ?”। লিজ্জি সেদিন জানতে পারে নি তার ‘দোষ’ কী। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঠিকই এই সমাজ তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কী তার ‘দোষ’!
অবশ্য প্রথমদিকের সেই বাজে অভিজ্ঞতা গুলো কাটিয়ে উঠে লিজ্জি নিজ প্রতিভায় পরিচিত হতে পেরেছিলো স্কুলে। পারবে নাই বা কেনো? সে দৌড়ুতে পারতো, নাচতে পারতো, লিখতে পারতো, অন্যদের সাথে স্বাভাবিক ভাবে ব্যায়ামও করতো। তাহলে আর বাধা কোথায়! প্রাথমিক তিক্ততা কাটিয়ে সবার সাথে মিশে গেলেন, সবার প্রিয় হলেন। যুক্ত হলেন স্কুলের সাপ্তাহিক কাগজের সাথে। চিয়ার লিডিং টিমেও ছিলো তার উদ্ভাসিত পদচারণা।

লিজি সবসময়ই তার অসাধারণ বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সুযোগ পেলেই। ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার শিক্ষক এবং বন্ধুদের। তার ভাগ্য, তিনি এমন বাবা-মা পেয়েছেন, যারা সন্তানের সুন্দর জীবনের জন্যে ত্যাগ করেছেন নিজেদের যাবতীয় বিলাসব্যসন। লিজির দুজন ভাই-বোন আছে। যারা স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যবান। তারাও সবসময় লিজিকে আগলে রেখেছে যাবতীয় অবহেলা থেকে।
তার মা যখন গর্ভবতী হলেন, সেই সময় থেকে জন্মের পূর্ব পর্যন্ত চিকিৎসকেরা কেউ ধারণাই দিতে পারে নি যে তাদের সন্তান এমন হতে যাচ্ছে। লিজি জন্ম নিলো। যেন একটি ছোট্ট চড়ুই পাখি। এতই পলকা! তার ওজন ছিলো মাত্র ২ পাউন্ড ১০ আউন্স। সন্তানের এই দুরবস্থা দেখে লিজির মা সেদিন কেঁদেছিলেন। এখনও কান্না পায় সেদিনের কথা মনে পড়লে। লিজির বাবা-মা চান নি তাদের কান্না, কষ্ট মেয়েকে স্পর্শ করুক। তাকে গড়ে তুলেছিলেন আদর- সোহাগে, চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন তার স্বকীয়তা। বলেছিলেন, “তুমি আলাদা কেউ নও”।

“সিনেমাটা যদি দেখে থাকেন, তাহলে এটা শুধুই আমার গল্প ভাবলে ভুল করবেন। আমি এবং আমার প্রতিকুলতা গুলো খুব অচেনা-অজানা কোন গল্প নয়। আমি বুলিয়িংয়ের শিকার হয়েছি, আপনি কি কখনো হন নি? কখনও হবেন না, এটা দিব্যি দিয়ে বলতে পারেন? বুলিয়িং চলে আসছে আদি কাল থেকেই। এটা কখনও থামবে না, চলতেই থাকবে। কিন্তু তাই বলে আমরা মুখ বুঁজে বসে থাকবো? কখনই না। এটা আমার, আপনার সবার গল্প। আমরা উৎপীড়ন বন্ধ করতে না পারি, উৎপীড়িতের পাশে তো দাঁড়াতে পারি! তাকে সাহস যোগাতে পারি!”
সিনেমাটিতে আমরা লিজির এই ইস্পাতদৃঢ় মনোবলের সাথে পরিচিত হই। সিনেমা, এবং পরবর্তীতে রচিত বই, এবং ভাষণগুলো তাকে “রিয়াল লাইফ হিরো’র মর্যাদা দেয়। অগুনতি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে লিজ্জির নাম উচ্চারিত হয় সম্ভ্রমের সাথে। এই ক্ষীণ তনু, ‘বিশেষ’ তরুণীর ভেতরের অফুরান শক্তি বিস্ময়ে অভিভূত করেছে সবাইকে, সাহস যুগিয়েছে। স্পেন থেকে মেক্সিকো, কলোরাডো থেকে সিয়াটলে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে।
লিজি সবসময় চেয়েছেন তাকে যে সব সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে, অন্য কেউ এমন কিছুর মুখোমুখি হলে তার পাশে দাঁড়াতে, সাহস যোগাতে। তার লেখনীতে, বক্তব্যে বার বার এসেছে জীবনের সৌন্দর্যের কথকতা, ইতিবাচকতা, এবং সত্যকে মেনে নেয়ার সৎ সাহসের ইতিবৃত্ত।
নাতিদীর্ঘ জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তাকে একজন প্রাজ্ঞ পরামর্শদাতায় পরিণত করেছে। তার কিছু অমূল্য পরামর্শ এখানে বর্ণিত হলো ,
“আপনি খুব ভালো, নিষ্কলুষ জীবন যাপন করতে পারেন, তার মানে এই না যে আপনার সাথে কোন অন্যায় ঘটবে না। বরং ভালো মানুষের সাথেই এসব দুর্যোগ-দুর্বিপাক যেন গাঁটছড়া বেঁধে থাকে! সবাই যেন ওৎ পেতে থাকে কখন একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়বে সুযোগ পেলেই। তবুও লড়াইটা চালিয়েই যেতে হবে। কারো সহযোগীতা না পেলে একাই। আর মনুষ্যত্বের শক্তি এমনই, যার পালে একটু হাওয়া লাগলেই সে দস্যু জাহাজকে পেরিয়ে এগিয়ে যাবে।
নিজের প্রতি বিশ্বাসের চেয়ে বিশ্বস্ত আর কিছু নেই। যখনই আপনি দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হবেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, “কেন আমার সাথে এরকম হচ্ছে?” “আমি কি খুব খারাপ?”“আমি কী করেছি?”। অন্যরা আপনাকে পেয়ে বসার আগেই আত্মশূদ্ধি করুন। আপনার কোন দোষ থাকলে তা সংশোধন করুন। দোষ-ত্রুটি নিয়েই মানুষ, তাই সংশোধনে কোন সংকোচ থাকা উচিত না। আর আপনার যদি কোন দোষ না’ই থাকে, তাহলে এগিয়ে যান নির্ভয়ে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন। চাহিদা এবং যোগানের সরল অংক কষুন। আপনি আরো সুন্দর, আরো স্বাস্থ্যবান, আরো আকর্ষণীয় হতে চান? নিজের এইসব চাহিদা মেটানোর জন্যে আপনি কি প্রস্তুত? অলীক কল্পনায় ডুবে থেকে আর যাই হোক, আত্ম উন্নয়ন হয় না। নিজেকে নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হলে “ওৎ পেতে থাকা” মানুষেরা তো সেই সুযোগ নেবেই! অন্যেরা আপনাকে যা ভাবছে, অথবা আপনার সম্পর্কে যা বলছে, তার চেয়ে আপনি বেশি কার্যক্ষম অথবা দক্ষ, এই বিশ্বাস রাখুন।

সবাই যা করছে তাকে চলতি ট্রেন্ড হিসেবে ধরে নিয়ে ফূর্তিতে মেতে ওঠার আগে একবার ভাবুন, আপনার আমোদে কেউ কষ্ট পাচ্ছে না তো? কারো চোখের জল ঝরছে না তো? অন্যদের অনুভূতিকে যথাযথ সম্মান দিতে পারছেন তো?
“সমালোচনা যেমনই হোক, আমি মেনে নিতে পারি”- এই মনোভাব আসলে বড়ই কৃত্রিম। সমালোচনা কম বেশি সবাইকেই আহত করে। তাই অন্তত আপনার কাছের মানুষদের কাছে নিজেকে মেকি বানাবেন না। আপনার সত্যিকারের মনোভাব প্রকাশ করুন তাদের কাছে। প্রতিদিন অকারণেই কত অগুনতি প্রাণকে আমরা কষ্ট দিয়ে থাকি তার লেখাজোকা নেই।
আপনি কী করতে পারেন, না পারেন, কিসে সফল হবেন, বিফল হবেন, তা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন। অন্যেরা যেন আপনাকে নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞায় সংকুচিত করতে না পারে। তবে আগুনের জবাবে আগুন নয়, ব্যবহার করুন শীতল পানি। কারণ, পানিই পারে আগুন নেভাতে। অন্যদের কূটকচালিতে খুব সহজে ক্ষেপে যাবেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানুন। আবার বাড়াবাড়ি আত্মবিশ্বাসও ভালো নয়। মানুষের শব্দ এক ভয়াল অস্ত্র। আপনার বহুদিনের অর্জিত সাফল্য এবং সম্ভাবনা চোখের পলকে চুরি হয়ে যেতে পারে অন্যদের একটি মাত্র শব্দ বা বাক্যে।
অশুভ স্বত্ত্বাকে ভয় পাবেন না। মানুষের মাঝেই আছে দেবতা, মানুষের মাঝেই আছে শয়তান। কিন্তু দিনশেষে সবাই মানুষ। আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা ভিডিও গুলো আমি বারবার দেখতাম। প্রথম বার খুব আঘাত পেয়েছিলাম। পরে তা দূর করতে পেরেছিলাম। আমি ভয়ের মুখোমুখি হতে ভয় পেতাম না। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সবসময় সজাগ ছিলাম। তাই কেউ কখনও আমার ওপর চড়ে বসতে পারে নি।
হাসি পেলে হাসুন, কান্না পেলে কাঁদুন। অনুভূতিদের বেড়ে উঠতে দিন। ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতিগুলোই নিয়েই তো জীবন!
মানুষের বহিরঙ্গ দেখে কোন কিছু বিচার করবেন না। হ্যাঁ, কারো আকর্ষণীয় সজ্জা দেখে প্রলুদ্ধ হতেই পারেন, তবে তা দেখে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াটা স্রেফ নির্বুদ্ধিতা।
এবং সবশেষে, পরিবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। পরিবারের ভালোবাসা শর্তহীন। এই যে আমি আজ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি, আপনাদের পরামর্শ দিতে পারছি, পরিবার না থাকলে এর কিছুই সম্ভব হতো না। আমি স্রেফ ধূলোয় মিশে যেতাম। বাবা-মা যে ভিতটা গড়ে দেয়, তার ফলে সন্তান কখনই ভীত হয় না, কোন পরিস্থিতিতেই।

লিজির জীবন এখন চমৎকার কাটছে। জীবনে যেসব বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তাতে তিনি কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু বিপর্যস্ত হন নি। বিষাদী হয়েছেন, হতাশ হন নি। ভেঙে পড়ে্ন নি। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সুতরাং আজ তাকে রুখতে পারবে এমন কোন শক্তি নেই।
“প্রোজেরিয়ার কারণে আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই প্রায়শই অসুস্থ থাকতে হয়। কিন্তু তাতে আমার উদ্যম কমে নি। আমি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে অসুখ আমাকে পেয়ে বসবে। আমি তো শুধু আমার জন্যে বাঁচি না। আমার সাথে সংযুক্ত আছে হাজারো মানুষ, যারা আমার কাছ থেকে দুটো আশার বাণী শুনলে বেশ চাঙা বোধ করে। তাদের শেখাতে হবে সুখের সূত্র। জানাতে হবে কীভাবে ভালোবাসার স্পর্শে সতেজ হয়ে ওঠে মানুষের মনভূমি। ব্যর্থতার ধ্বংসস্তুপ থেকে কীভাবে সাফল্যের মিনার গড়ে তোলা যায়।“

সংক্ষেপে এই হলো লিজি!
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কাজ করছেন পার্লামেন্টে এ্যান্টি বুলিয়িং বিল পাস করানোর জন্যে। “আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক দিনের, যখন বুলি’রা সামাজিক প্রতিরোধের সম্মুখীন হবেন। তাদের কে সমাজ ঘৃণার সাথে ত্যাগ করবে। জয়ী হবে শুভ অনুভূতি। জয়ী হবে মানবতা”। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে এ জন্যে অনেক দিন থেকেই। ঘুরতে হচ্ছে নানা জায়গায়। অনেক বড় বড় মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। যারা তাকে উৎসাহ এবং সাহস যুগিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন, হিলারী ক্লিনটন এবং মাইকেল জর্ডানের মত ব্যক্তিত্বেরা! প্রথমবার যখন ২০১৫ সালে পার্লামেন্টে এ্যান্টি বুলিয়িং বিল উত্থাপিত হয়, তখন সর্বমোট ৫৩৫ টি ভোটের মধ্যে হ্যাঁ ভোট পড়েছিলো মাত্র ১টি। অন্য কেউ হলে হয়তো বা ভেঙে পড়তো। কিন্তু লিজির চিন্তার গড়নটাই অন্যরকম। তিনি ভেঙে পড়বেন কী; উল্টো মহা খুশি হয়েছেন অন্তত একজন তার সাথে আছে জেনে! এই মেয়েকে পরাভূত করবে কার সাধ্যি! ইতিমধ্যে দুটো নাতিদীর্ঘ বইও লিখেছেন। Lizzie Beautiful: The Lizzie Velásquez Story এবং Choosing Happiness নামে।
“মাঝেমধ্যে অকারণেই আমার মন খারাপ হয়। কোন এক বৃষ্টির দিনে কিছুই ভালো লাগে না। সব অসহ্য ঠেকে। তখন সবকিছু বন্ধ রেখে প্রিয় শিল্পী আডেলের গান শুনি। নিয়ম ভেঙে জাঙ্ক ফুড খাই। ভাই-বোন, বন্ধুদের সাথে “দুঃখ পার্টি” করি। প্রেরণার অভাব, আমার অন্তত হয় না। আমি সেসব সৌভাগ্যবানদের একজন, যারা জীবনের আলোয় উদ্ভাসিত। “


প্রতিদিন নতুন সূর্য ওঠে, এবং আলোয় প্লাবিত করে চারিপাশ। সেই আলোয় প্লাবিত হয়ে ২৭ বছর বয়েসী তরুণী লিজি ভুলে যান সমস্ত ব্যথা-বেদনা, অপ্রাপ্তি এবং অশুভের কথা। নতুন ভাবে এগিয়ে যাবার শক্তি অর্জন করেন। তাকে চলতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে অনেক দূরে। থেমে থাকলে চলবে না। কারণ তিনি থেমে থাকলে আরো অনেকেই থেমে যাবে। সামষ্টিক শক্তিতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় স্বপ্নালু এবং প্রাজ্ঞ এক প্রাণ। লিজি ভেলাসকুয়েজ, একটি প্রেরণার নাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৬
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×