মার্কেটিং জিনিসটা মজার। বিপননের জন্যে যে কতরকম কৌশল এবং রিসার্চ তার ইয়ত্তা নেই। কোন পণ্যকে মার্কেটপ্লেসে একটা দারুণ জায়গায় নিয়ে যেতে মার্কেটিং এ্যানালিস্ট, কপিরাইটার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার সবারই অবদান রাখতে হয়। একেক জনের কাজের ক্ষেত্র এবং দক্ষতা ভিন্ন হলেও একটি বিষয়ে অবশ্যই সবাইকে জ্ঞান রাখতে হবে। তা হলো মার্কেটিং সাইকোলজি। আসুন মার্কেটিং সাইকোলজি নিয়ে দারুণ কিছু রিসার্চ এবং তার ফলাফল জেনে রাখি। এটা পড়তে আপনাকে মার্কেটিংয়ের সাথে যুক্ত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে পড়ার পর যদি আপনার লক্ষ্য ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবার বদলে মার্কেটিং এক্সপার্ট হবার দিকে মোড় নেয় সেজন্যে আমাকে দায়ী করা যাবে না!
১। স্থৈর্য (Consistency Principle)
“ধর তক্তা মার পেরেক” এই যদি হয় আপনার বিজনেস পলিসি, তাহলে আপনি ভুল পথে আছেন। ধৈর্য ধরতে শিখুন, টার্গেটেড অডিয়েন্সকে তত্ত্বাবধান করুন। প্রিন্সটনে একবার কিছু গবেষক একটি এক্সপেরিমেন্ট করেন। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির জন্যে কিছু ভলান্টিয়ার প্রয়োজন পড়লো। তারা কিছু মানুষকে ফোন করলেন এ বিষয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে। রেসপন্স করলো মাত্র ৪ পার্সেন্ট। কয়েক দিন পর আবারো তারা অন্য কিছু মানুষকে ফোন করলেন। তাদেরকে জানালেন কিছুদিন পর আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির জন্যে ভলান্টিয়ারের দরকার পড়তে পারে। তাদেরকে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ দিয়ে ৩ দিন পর ফোন করা হলো তারা ভলান্টিয়ার হিসেবে থাকতে পারবে কি না জানতে চেয়ে। এবারের রেসপন্স রেট হলো ৩১ পার্সেন্ট!
আপনার বর্তমান কাস্টমার এবং সম্ভাব্য কাস্টমারদের পরিচর্যার মধ্যে রাখুন। তাদের এক্সপেকটেশন লেভেলটা স্টাডি করুন। তাদের জন্যে বিভিন্ন কোর্স এবং মার্কেটিং স্পেশালিস্টদের প্রস্তাবিত টুলস তৈরি করতে পারেন। যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতা মোটেও কাম্য নয়। এভাবে টেক কেয়ার করলে আপনার কোম্পানির প্রতি তারা একাত্মতা অনুভব করবে, আগ্রহী হবে।
২। ফ্রেমিং এফেক্ট (Framing Effect)
একটা বিষয় নিয়ে কে কীভাবে রি-এ্যাক্ট করবে তা নির্ভর করে প্রেজেন্টেশনের ওপর। এ্যামোস ভের্স্কি এবং ড্যানিয়েল কাহনেমান একবার একটা সমীক্ষা চালান। একটি প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা এবং সারভাইভ করার সম্ভাবনা নিয়ে। গ্রুপ ১ কে বলা হলো,
ট্রিটমেন্ট-১, “দুইশ মানুষ বেঁচে যাবে”
ট্রিটমেন্ট-২, “৬০০ মানুষকে বাঁচানোর সম্ভাবনা এক তৃতীয়াংশ, এবং কারো বেঁচে না থাকার সম্ভাবনা দুই তৃতীয়াংশ।“
বেশির ভাগ মানুষ কোনটা বেছে নিলেন বলুন তো? হ্যাঁ, ট্রিটমেন্ট-১। সহজ এবং অকপট ভাবে বললে মানুষ সেটার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
গ্রুপ-২ কে বলা হলো,
ট্রিটমেন্ট-১ “৪০০ মানুষ মারা যাবে”
ট্রিটমেন্ট-২ “কেউ মারা যাবে না, এই সম্ভাবনা এক তৃতীয়াংশ, এবং ৬০০ মানুষ মারা যাবার সম্ভাবনা দুই তৃতীয়াংশ”
এবার কিন্তু তারা বেছে নিলো ট্রিটমেন্ট ২। ট্রিটমেন্ট ১ কেন বেছে নিলো না? কারণ সেখানে নেগেটিভিটি ছিলো।
মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এটা খুব বেসিক একটা তত্ত্ব। লিখতে হবে যথাসম্ভব পজিটিভ উপায়ে।
৩। সামাজিক প্রভাব এবং অনুকরণ (Conformity and Social Influence)
ক্লাশের ফার্স্ট বয়কে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলো। সে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে ভুল উত্তর দিলো। আপনি সঠিক উত্তরটা জানেন। কিন্তু ভাবছেন ফার্স্ট বয় কি ভুল উত্তর দিতে পারে! কনফিউজড হয়ে গেলেন এবং আপনি তাকে অনুসরণ করে ভুল উত্তর দিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেন! এরকমটা কিন্তু সবখানেই হয়।
সলোমান এ্যাশ্চ নামক একজন সোশ্যাল সাইকোলজিস্ট ১৯৫০ সালে একটি মজার এক্সপেরিমেন্ট করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে আয়োজিত একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ জানান কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কে। তাদেরকে বলা হয়েছিলো ভুল উত্তর দিতে। ফলাফল? বেশির ভাগ শিক্ষার্থীও তাদের দেখাদেখি ভুল উত্তর দিলো, যেগুলো তাদের জানার কথা!
মার্কেটিংয়ের জন্যে এটা এক অনন্য সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সবসময়। সমাজে প্রভাব রাখে এমন ব্যক্তিত্বদের বেশি করে নিযুক্ত করুন আপনার পণ্যের মার্কেটিংয়ের জন্যে! মিথ্যা বলাটা এখানে এনকাউরেজড করা হচ্ছে না, মূল বিষয়টা হলো সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতাটি কে মার্কেট প্লেসে সূক্ষ্ণ চাতুর্যের সাথে ব্যবহার করা।
৪। নীরব বশ্যতা (Acquiescence Effect)
আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে সবসময় যে যৌক্তিক ভাবনা থেকে উত্তর দেবেন, এমন নাও হতে পারে। “এই উত্তরটা দিলে অন্যেরা আমাকে কী না কী ভাবে!” এই মানসিকতাও কাজ করে। আর সামাজিক গণমাধ্যম, যেমন ব্লগ বা ফেসবুক প্রভাবিত এই সমাজে তো এটা আরো বেশি সত্যি। “অমুক ফেসবুক সেলিব্রেটি যেহেতু তমুক কে ছাগু বলেছে, তাহলে আমারও তাই বলা উচিত, তাহলে আমি জাতে উঠেবো”। এই ভাবনা কি আপনাকে কখনই প্ররোচিত করে নি? সাইকোলজিকাল ওয়েবসাইট “Changing Minds” তাদের গবেষণায় এ সংক্রান্ত তিনটি উপাত্ত আবিষ্কার করেছেন। কেন মানুষ এমন উত্তর দেবে, যা নিয়ে তারা নিজেরাও সংশয়ে আছে? কারণ গুলো হলো,
১/ অন্যদের চেয়ে উৎকৃষ্ট হবার প্রবনতা।
২/ অন্যদের কাছ থেকে উপকৃত হবার ঝোঁক।
৩/ নিজের একটা নতুন আইডেন্টিটি তৈরি করা।
সুতরাং, বিভিন্ন সার্ভে অথবা প্রশ্নমালায় লিডিং কোশ্চেন গুলো এমন হওয়া উচিত, যাতে সে অনুধাবন করে যে এই জরীপের মাধ্যমে সে স্মার্ট মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে। নিজের প্রতি এই আত্মবিশ্বাস কে সে বিনিয়োগ করতে পারে আপনার প্রোডাক্টে।
৫। পুনঃপ্রদর্শন (Mere Exposure Theory)
রবার্ট জায়ঙ্ক একবার একটি চাইনিজ চরিত্রের ছবি কিছু অ-চাইনিজকে দেখালেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন এই চরিত্রটি দেখে তাদের কী মনে হচ্ছে? যত বেশিবার তিনি দেখালেন তত বেশি পজিটিভ রেসপন্স আসতে লাগলো।
পরবর্তীতে কান্সট এবং উইলিয়ামস একই রকম একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন। পার্থক্য হলো, তারা একটি অষ্টভূজের ছবি দেখান, মাত্র এক মিলিসেকেন্ডের জন্যে। স্বাভাবিক ভাবেই কেউই বুঝতে পারলো না এটা আসলে কী। কিন্তু এর পুনরাবৃত্তিক ব্যবহারে তাদের মধ্যে একটা আগ্রহ এবং স্নেহ তৈরি হলো।
ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ঠেকতে পারে আপনার কাছে। একই জিনিস যদি বারবার দেখাতেই থাকেন, দেখাতেই থাকেন, কে কী মনে করবে! এসব ঝেড়ে ফেলে দিন। কারণ এতে আসলেই কাজ হয়।
৬। তথ্যগত প্রভাব (Informational Social Influence)
আমরা যখন কী করতে হবে কিছুই বুঝে উঠতে পারি না, তখন অন্যদের কপি করি। এবং এভাবেই শ্রেয়তর হয়ে উঠতে চাই। এই ধারণাটি সম্পুর্নতা পায় এ্যালেক্স লাস্কির একটি সমীক্ষায়। তিনি ছিলেন একটি এনার্জি সেভিং কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। ভোক্তাদের কাছে প্রডাক্ট সম্পর্কে ৪ রকম মেসেজ পাঠালেন।
১/ আপনি ৫৪ ডলার সেভ করতে পারবেন।
২/ এর মাধ্যমে পৃথিবী রক্ষা পাবে।
৩/ আপনি ভালো নাগরিক হয়ে উঠবেন
৪/ এটি ব্যবহার করে আপনার প্রতিবেশীরা ভালো ফল পাচ্ছে।
প্রথম তিনটি মেসেজ কোন রকম পাত্তাই পায় নি। শেষটি একদম কেল্লা ফতে করে দিয়েছে! এর ফলে ২% এর মত এনার্জি সেভিং বেশি হয়েছে।
এটি চমৎকার একটি ট্রিক, এবং এটা প্রমাণের জন্যে যে আপনাকে বিশাল কাগজপাতি জমা দিতে হবে তাও না।
৭। ডিকয় এফেক্ট (Decoy Effect)
আপনার কাছে যে অপশন গুলো আছে সেগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করতে চাইলে, একটি অনাকর্ষণীয় এবং ম্যাড়ম্যাড়ে অপশনও রাখুন। এর সঠিক প্রয়োগ চমকে দিতে পারে আপনাকে। একবার একটি আইটি কোম্পানি এমআইটির শিক্ষার্থীদের কাছে একটি অফার পাঠালো।
Web Subscription – $59
Print Subscription – $125
Web and Print Subscription – $125
তিন নম্বর অপশনটি চোখ বুঁজে বেছে নেয়া যায়, তাই না? হ্যাঁ, ফলাফল দেখুন-
Web Subscription – $59 (16 students)
Print Subscription – $125 (0 students)
Web and Print Subscription – $125 (84 students)
Total revenue: $11,444
এবার দেখুন ম্যাজিক। দুই নম্বর অপশনটি গায়েব করে দিন। ছু মন্তর ছু! ফলাফল?
Web Subscription – $59 (68 students)
Web and Print Subscription – $125 (32 students)
Total revenue: $8,012
নিমিষেই রেভিনিউ কমে গেল ত্রিশ পার্সেন্ট!
এই থিওরি অনুসরণ করা এ্যাপলের একটি বিজ্ঞাপন দেখুন, এখানে ৩২ জিবি’র পণ্যটা কীভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।
প্রাইসিং স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রে এটা দারুণ একটি থিওরি।
৮। লভ্যতা অনুসন্ধান (Availability Heuristic)
আপনাকে একটি প্রশ্ন করা হলো, এবং চারটি বিকল্প উত্তর রাখা হলো। উত্তর দেবার সময় ধরুন ৩০ সেকেন্ড। তখন আপনি কী করবেন? আরে এটা তো আর বাঁচা-মরার লড়াই না, ভুল হলে হবে! এই ভাবনা থেকে আপনি বেছে নেবেন সেই উত্তরটি, যা আপনাকে আকৃষ্ট করেছে। এ্যালেক্স সাচম্যানের একটি সমীক্ষা দ্বারা বিষয়টি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি তার কোম্পানি ‘কোরা’র একটি লিফলেট সরবরাহ করলেন কাস্টমারদের কাছে, এবং জিজ্ঞেস করলেন সেখানে কোন সাত অক্ষরের শব্দে ষষ্ঠ অক্ষর হিসেবে ‘n’, নাকি ‘ing’ দিয়ে শেষ হওয়া শব্দের সংখ্যা বেশি হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর কী ছিলো বলুন তো! হ্যাঁ, আপনি যা ভেবেছেন তাই। সবাই দ্বিতীয় অপশনটাই বেছে নিয়েছিলো। অথচ ভেবে দেখুন, প্রতিটা ing এর মধ্যে n থাকবেই। সুতরাং অবশ্যই লিফলেটটিতে ষষ্ঠ অক্ষর হিসেবে n এর থাকার সম্ভাবনা বেশি।
এই সিম্পল পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাটাও সিম্পল, কিন্তু জরুরী। আপনার কাস্টমার কোনভাবেই জটিল বা গুরুতর অপশন বেছে নেবে না।
৯। বাফার এফেক্ট (Buffer Effect of Social Support)
আপনি যদি বন্ধু অথবা প্রিয়জনদের দ্বারা শক্ত সাপোর্ট পান, তাহলে বাড়তি স্ট্রেস নিতেও আপনার আপত্তি থাকবে না। অন্তস্বত্ত্বা মহিলাদের ওপর পরিচালিত এক রিসার্চে চমৎকার ভাবে বিষয়টি অনুধাবিত হয়েছে। দেখা গেছে, যাদের সাপোর্ট করার মত মানুষ কম এবং হাই স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, এমন মহিলাদের ৯১ শতাংশই নানারকম জটিলতায় ভুগেছেন। অপর দিকে যারা সাপোর্ট পেয়েছেন, হাই স্ট্রেস থাকলেও তাদের মধ্যে তা তেমন একটা প্রভাব ফেলে নি। শতকরা অংকটা হলো মাত্র ৩৩ পার্সেন্ট।
এই শিক্ষার সফল প্রয়োগ করা যায় মার্কেটিংয়ে। কাস্টমার দের সাপোর্ট দিন। হতে পারে সেটা ই-মেইল, ব্লগ, এ্যাপস, ইত্যাদির মাধ্যমে। একটি ক্রেতা গোষ্ঠী তৈরি করতে হলে পর্যাপ্ত সময় এবং যত্ন নিতেই হবে।
৯। বেন ফ্রাংকলিন এফেক্ট (Ben Franklin Effect)
আপনি একজন মানুষকে অপছন্দ করেন। কিন্তু সে যদি আপনার কাছ থেকে কোন উপকার চায় তাহলে কিন্তু আপনার অপছন্দটা কিছুটা হলেও নাড়া খাবে। একই সাথে মানুষ কাউকে ঘৃণা এবং তার উপকার করতে পারে না। আপনি যেহেতু একজন সভ্য, সামাজিক মানুষ, না বলতে আপনার বাধবে। তার উপকার করতে গিয়ে কখন যে অপছন্দটা উধাও হয়ে যাচ্ছে টেরই পাবেন না! এটাই বেন ফ্রাংকলিন এফেক্ট হিসেবে পরিচিত।
এই থিওরির চমৎকার এক ইমপ্লিমেন্টেশন করেন জিম জেকার এবং ডেভিড লেন্ডি। তারা একটি কুইজ শো এর আয়োজন করলেন। বিজয়ীদের পুরষ্কার ছিলো অর্থ। একজন অভিনেতা বিজ্ঞানীর বেশে কুইজ শোটি পরিচালনা করলেন। তার উপস্থাপনা ছিলো মোটামুটি কাঠখোট্টা এবং কঠোর। যাকে পছন্দ করার কোন কারণ নেই। এর পরেই তারা একটি দারুণ মন্সতাত্ত্বিক চাল চাল্লেন! অনুষ্ঠানটি শেষে বিজ্ঞানী মহাশয় করুণ মুখ করে প্রতিযোগীদের এক তৃতীয়াংশের কাছ থেকে টাকা ধার চাইলেন। আরো এক তৃতীয়াংশের কাছে স্টাডিটির সেক্রেটারি জিজ্ঞেস করলেন তাদের কে টাকা ফেরত দিতে বলা হলে তারা কী করবে। বাকি এক তৃতীয়াংশের কাছে কিছুই চাওয়া হলো না।
এরপর তাদের ওপর একটা জরীপ করা হলো। প্রশ্নটি ছিলো, বিজ্ঞানী মহাশয় কে কার কেমন লেগেছে? দেখা গেলো যাদের কাছ থেকে তিনি টাকা চেয়েছিলেন তারাই তাকে বেশি পছন্দ করেছে।
তাই, আপনার কাস্টমার, অডিয়েন্স বা গ্রহীতাদের কাছ থেকে কোন ফেভার চাইতে দোনোমনা করবেন না মোটেও।
১০। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দোলাচল (Reciprocity Principle)
কাউকে যদি কিছু দেন, সেটা যত সামান্যই হোক, তার মনে বিরাট প্রভাব ফেলে। কিছুই না, ধরুন একটা শুভেচ্ছা স্মারক দিলেন, সেটাও তারা মনে রাখবে। অর্থমূল্য এখানে কোন ব্যাপার না। আপনার পজিটিভ ইনটেনশনটাই মুখ্য। কী দিতে পারেন তাদের? আপনার ওয়েব সাইটের ফ্রি ট্রায়াল, ফ্রি বুকলেট বা গাইড, বিশেষ দিবস উপলক্ষ্যে সারপ্রাইজ গিফট ইত্যাদি।
১১। ফিৎজের সূত্র (Fitt’s Law)
অনলাইন মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ফিৎজের সূত্র এক দারুণ দিক নির্দেশনা। বারাক ওবামার ই-মেইল ক্যাম্পেইন; যা এই ক্ষেত্রের সর্বকালের অন্যতম সফল উদাহরণ, পরিচালিত হয়েছিলো এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে। আপনি যখন নেটে সময় কাটাচ্ছেন, তখন আপনার সবচেয়ে বড় সহায় কী? মাউস। আপনি, আমি, আমরা কীভাবে মাউস ব্যবহার করি তার কিন্তু একটি ফর্মেশন আছে। কখন কোন বাটনে ক্লিক করবেন তার পেছনে রয়েছে সাইকোলজি। এটা নিয়ে গবেষণাও কম হয় নি। ফিৎজের সূত্র অনুযায়ী আপনি আপনার মাউস কীভাবে রোটেট করবেন, কোথায় ক্লিক করবেন, তা নির্ভর করে দুটো বিষয়ের ওপর।
১/ আইকনের দূরত্ব
২/ আইকনের আকার।
সাদা কথায়, যদি আপনি কাঙ্খিত ফল চান, তাহলে আইকন গুলোর দূরত্ব কমিয়ে আনুন, অথবা আইকন বড় করুন। আর উলটো ফল চাইলে (যেমন আনসাবস্ক্রাইব বাটন) ঠিক এর বিপরীত কাজটি করুন। একটি ছবির মাধ্যমে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। দেখুন বারাক ওবামার ই-মেইল ক্যাম্পেইনের একটি স্ক্রিনশট।
১২। হ্রাস্ব বানিজ্য (Reduce Options)
ধরুন একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেন। সেখানে মেনুতে হাজার হাজার খাবার দাবার! বিচিত্র তাদের নাম, বিচিত্র চেহারা, বিচিত্র সাজ! এত কিছু দেখতে গিয়ে কনফিউজড হয়ে অর্ডার দিলেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর কর্ন স্যুপ। এতে কি রেস্তোরাটা খুব লাভবান হলো?
এতক্ষণে আপনি নিশ্চয়ই রিসার্চ লদ্ধ ফলাফলের অনুরক্ত হয়ে পড়েছেন! তবে তাই সই। মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ শিনা লিংগার তার কোম্পানিকে কিছু ফ্রি জ্যামের স্যাম্পল দেয়ার পরামর্শ দিলেন। প্রথম দিন ২৪টি ফ্লেভারের অফার দেয়া হলো। পরের দিন দেয়া হলো ৬টি ফ্লেভার। ফলাফলে পার্থক্য প্রকটভাবে উন্মোচিত হলো!
প্রথম দিন- ২০% মানুষ দাঁড়ালো। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৩% ক্রয় করলো।
দ্বিতীয় দিন- স্যাম্পল চেখে দেখার পর কিনলো ৩০%!
এখানে স্বাদ কোন ফ্যাক্টর না। ফ্যাক্টর হলো মার্কেটিং সাইকোলজি। নবীন উদ্যোক্তাদের উচিত প্রথম দিকে বিকল্পের সংখ্যা যথাসম্ভব কম রাখা। পরে না হয় ধীরে সুস্থে বাড়াবেন।
এবং সবশেষে এটাই মূল সূত্র। ধীরতা, স্থিরতা। মার্কেট স্টাডি করে গ্রাহক বাড়ানো এক দিনে হয় না। দিনের পর দিন কাজ করতে হয়, সাইকোলজি বুঝতে হয়, চলতি ট্রেন্ডের সাথে নিজেদের আপগ্রেড করে নিতে হয়, তবেই আসে কাঙ্খিত সাফল্য।
শুভ পণ্যায়ন!
সূত্র- Click This Link
https://blog.bufferapp.com/psychological-studies-marketing
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯