তাদের নিস্পন্দ দেহ থেকে রক্ত আর অশ্রূর নোনা গন্ধ ভেসে আসছে। তাদের কৃতকর্মের দলিল হিসেবে দেহের আনাচে কানাচে ক্ষত আর আঘাতের ভূগোল। উপড়ে নেয়া চোখের ফাঁকা কুঠুরী থেকে বাজছে শোধশঙ্খের মন্দ্র সুর। জিহবার খন্ডিত অংশে রক্ত আর লালা জমে যেন স্বাক্ষী দিচ্ছে পাপ এবং প্রায়শ্চিত্তের। পৃথিবীটা এখনও দানবদের ক্রীড়াক্ষেত্র হয়ে ওঠেনি। তাই তারা যখন পাপের দস্তানা পরিধান করে স্বর্গের পাখিদের গলা চেপে ধরে, তারা ডানা ঝাপটাতে থাকে অসহায়, অতঃপর পড়ে থাকে নিথর, কিংবা যখন তারা আমাদের রূপকথার নদীতে প্রস্রাব করে দূষিত করে, মেরে ফেলে উচ্ছল জলরাশিকে, তখন হত্যাকান্ডের শিকার হওয়াই তাদের জন্যে প্রকৃত ন্যায়বিচার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবশ্য ন্যায়কর্মটি ঘটে না, তবে এক্ষেত্রে ঘটেছে। পাপলালসায় পাগলপারা দুই নরনারীকে খুন করেছি আমি। আমি একজন সৎ এবং গর্বিত খুনী। সমাজের চোখেও আমি বিশেষ সম্মানের আসনেই অধিষ্টিত হবো। শুধু অন্ধ, গোঁয়ার আইনের রক্তচক্ষুই যা সমস্যা। তাই তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে লাশদুটোর যথাযথ ব্যবস্থা করা দরকার। খামোখা কেন নিষ্ঠুর, লোভী পেশাদার খুনীদের সাথে এক কামরায় থাকা? আমি বৈষয়িক কারণে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা লোভের বশে খুন করি নি। আমি ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে খুন করেছি। পাপের শাস্তি দিয়েছি তাদেরকে। এর জন্যে আমি সমাজের তৈরি জড়ভরত আইনের শিকার হতে রাজী নই, আর যদি তা হতেও হয়, মানুষজন যেন আমাকে ভুল না বোঝে, একজন মহান ন্যায়বিচারক হিসেবে দেখে, এটাই আমার চাওয়া।
আমার নাম আলম। খুব সাধারণ একটা জীবন আমার। সাধারণ চিন্তাভাবনা। আমার আশেপাশের ঝলমলে ছেলেমেয়েরা কতকিছু করে বেড়ায়! ছবি আঁকে, গান গায়, রাজপথে মিছিল করে, পুলিশের বাড়ি খায়, শীতের সময় চারশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে যায় শীতবস্ত্র নিয়ে। আমি এসব কিছুই করি না। এ নিয়ে বেশ একটা হতাশা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। কিন্তু এখন আর এসবের কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমার সাধারণ জীবন এখন আর মোটেও হেলাফেলা করার মতো না। আমি তাদের কাতারে, কিংবা বলা যায় তাদের চেয়েও কয়েক পা এগিয়ে গেছি দুটো হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এখন আমি আর স্রেফ ভীড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া আনস্মার্ট একটা ছেলে না। আমার মধ্যেও গর্ব করার মতো ব্যাপার আছে। কারেন্টের বিল দিতে গিয়ে ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর সময় পেছন থেকে কেউ অযথা ধাক্কাধাক্কি করলে আমি শীতল দৃষ্টি হেনে তাদেরকে সাবধান করে দিতে পারি। আমি খুন করেছি এক রক্তপিপাসু নিষ্ঠুর দম্পতিকে। যারা তাদের এগার বছর বয়সের কাজের মেয়েটাকে খুন্তির ছ্যাকা দিতো, গরম পানি ঢেলে দিতো গায়ে, তার স্পর্শকাতর অঙ্গে (হায় এই বয়সের আবার স্পর্শকাতরতা!) গৃহস্বামী আদরের নামে তার লালসা মেটাতো, আর গৃহকর্ত্রী তা দেখেও না দেখার ভান করতো।
তারা সম্পর্কে আমার খালা-খালু। আমার সাথে তাদের আচরণ অবশ্য যথেষ্টই হৃদ্যতাপূর্ণ। খুনের পরিকল্পনা মাথায় আসার আগ পর্যন্ত আমি তাদেরকে সুখী, সজ্জন, সচ্ছল জনগোষ্ঠীর আলোকিত অংশ ভাবতাম। তাদের বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা ছিলো আমার। পানাহার এবং মনোরঞ্জক বস্তু দিয়ে আমাদের সময় কাটতো ভালোই। গোল বাঁধলো নতুন কাজের মেয়েটি বাসায় আসার পর। মানুষের পশুরূপ, পিশাচমন যে কখন কীভাবে প্রকাশিত হয়, সে এক অদ্ভুত ব্যাপারই বটে! মেয়েটির নাম কতিমন। সে যখন এই বাসায় প্রথম এসেছিলো, নিটোল লাবন্যভরা শ্যামলা ত্বক আর উচ্ছল হাসিতে সবাইকে আপন করে নেবে, বাড়ির একজন সদস্য হিসেবেই গণ্য হবে এমনটাই ভেবেছিলাম আমি। কিন্তু আমার অগ্রজ আত্মীয়দ্বয় তা ভাবেন নি। তা না ভাবুক, এর জন্যে তাদের আমি দোষ দিতে যাবো না। কাজের মেয়েকে কজনই বা আপন ভাবতে পারে? কিন্তু আপন না ভাবুক, তাই বলে এমন অত্যাচার করতে হবে? কী দোষ ছিলো তার? আর হঠাৎ করে তারাই বা এমন বদলে যাবেন কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত করে বলা কঠিন, তবে আমার মনে হয়েছে, দীর্ঘ নিঃসন্তান জীবনে কতিমনের আগমনে সে যখন সবাইকে তার সদাচরণের মাধ্যমে জয় করে নিচ্ছিলো, তখন সন্তান না পাবার বেদনাটা উশকে বলগ উঠে ক্রোধে রূপান্তরিত হয়ে এমন সহিংস আচরণে প্রলুদ্ধ করে তাদের। অথচ ব্যাপারটা বিপরীত হতে পারতো কী সহজেই! এজন্যেই তো বলছিলাম, মানুষের পিশাচ হয়ে ওঠার কারণগুলো বড় অদ্ভুত হয়।
ব্যাপারটা আমার প্রথম নজরে আসে কতিমন এ বাড়িতে আসার সপ্তাহখানেক পরে। আমি বৈকালিক আড্ডা দিতে তাদের বাসায় গিয়েছিলাম। চা দিতে একটু দেরী হওয়াতেই সে কী ভীষণ চোটপাট শুরু করলেন খালা! খালুও তার সাথে তাল মিলাচ্ছিলেন। তাদের এই হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়ায় আমি বেশ অপ্রতিভ হয়ে পড়ি। কথাবার্তা চালাতে তেমন উৎসাহ পাই না। তবে তারা বেশ উৎসাহ ভরে বলে চলছিলো নতুন আসা কাজের মেয়েটা কীভাবে তাদের হাড়মাস জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আমিও হ্যাঁ-হু করে সাড়া দিচ্ছিলাম। চা দিতে এসে কাপ থেকে একটু ছলকে পড়তেই ঠাস করে তাকে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলেন আমার খালা। সেদিন আমি ব্যথিত এবং অবাক হলেও কোন প্রতিবাদ করতে পারি নি, আমি পারতাম না আমার অতি সাধারণত্বের কারণে। কখনই পারি নি স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানোর সাহস করতে, বিরুদ্ধ হাওয়ার প্রবল ঝাপটায় চিৎকার করে কথা বলতে।
এর পরে বেশ কিছুদিন যাই নি তাদের বাসায়। একসময় এই পলায়নপরায়নতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই হয়তো গেলাম তাদের বাসায়। তারাও আমার যথোচিত সমাদর করলেন। আমি মনে মনে অপেক্ষা করছিলাম কতিমনের জন্যে। ওর কী অবস্থা করেছে কে জানে। আমার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হতে থাকলো। কতিমন এলো না। চায়ের পেয়ালা হাতে খালা নিজেই এলেন।
-কী ব্যাপার খালা, কতিমন কোথায়?
জিজ্ঞেস না করে পারলাম না আমি।
-আর বলো না! কামচোরা শয়তান একটা। অসুখের ভান করে শুয়ে রয়েছে।
-কতদিন ধরে অসুখ?
-এইতো কদিন হবে।
-ডাক্তার দেখান নি?
-আরে রাখো ডাক্তার! এদের সহজে কিছু হয় না। বললাম না, কামচোরা ক্ষুদে শয়তান একটা। মটকা মেরে পড়ে রয়েছে ঘরের ভেতর।
আমি তাকে দেখতে যেতে চাইলে তাদের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তিকর অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, এবং তারা ব্যাপারটি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। আমিও আমার প্রিয় সাথী পলায়নপরতার প্রবোধে আর বেশি আগ না বাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। ব্যাপারটা হয়তোবা সেভাবেই চুকে বুকে যেতো, যদি না আমি বেসিনে হাত ধুতে যাবার সময় মেয়েটির কাতর আর্তনাদ শুনতে না পেতাম। তার আর্তধ্বণি শুনে মোটেই মনে হচ্ছিলো না সে ধোঁকা দেবার জন্যে শুয়ে আছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, তার সারা শরীরে কেমন যে ফোশকা পড়ার দাগ। কাছে গিয়ে নিরীখ করে বুঝতে পারি, এটা গরম পানি শরীরে পড়ার ফল।
-কতিমন, কীভাবে হলো এমন?
আমার জিজ্ঞাসার জবাবে কিছু বলার শক্তি চিলো না তার। ততক্ষণে পরিস্থিতি বুঝে খালা চট করে চলে এসেছে সেখানে।
-আরে বলো না, ছেরি পানি ঢালতে গিয়ে নিজের গায়ে ঢেলে কী এক অবস্থা করেছে!
-এ তো ভয়াবহ অবস্থা! আর আপনি বললেন সে কাজ চুরি করতে শুয়ে আছে?
মুখে একটা চিন্তিত ভাব এনে খালা বললেন,
-হ্যাঁ অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে দেখছি। আমরা অবশ্য ডাক্তার ডাকার কথা ভাবছিলাম। আজকে রাতেই ডাক্তার ডেকে আনবো।
বলে আমাকে ঠেলেঠুলে ও ঘর থেকে সরিয়ে নিলেন তিনি। আমি আবারও পরাজিত হলাম নিজের বিবেকের কাছে। জয়ী হলো পলায়নপরতা।
এভাবে আর কতদিন? কতদিন বিবেককে বেশ্যা বানিয়ে সমাজপতিদের রঙমহলে খেমটা নাচ নাচানো? কতদিন পালাতে পালাতে, নামতে নামতে সমাজের নিকৃষ্টতম অংশের শিশ্নচোষক হওয়া? তারা কেড়ে নিয়েছে গ্রাম্য বালিকার ভানহীন হাসি, তাকে করেছে তাদের কামনা আর নিষ্ঠুরতার বশংবদ, আর আমি...আমার নীরবতা কি তাদের অপরাধের আজ্ঞাবহ না? খিকখিক করে কারা যেন হাসছে। হাসছে সেইসব চৌকস ছেলেমেয়ে, যারা গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে ধর্ণা দেয়। হাসছে ব্যানার আর ফেস্টুন হাতে শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করা আমার বন্ধুরা আমার অপারগতার নগ্নরূপ দেখে। হাসছে শ্যামলিমা, হাসছে বসুন্ধরা, হাসছে ধানীক্ষেত, হাসছে সবুজ আল, হাসছে নির্যাতক, হাসছে নির্যাতিতা, হাসছে কতিমন...
নাহ, আমি আর নিজেকে বিকিয়ে দেবো না, সঁপে দেবোনা বিবেককে। আরেকবার যদি আর একটা অনাচার দেখি...
সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি খুনের সিদ্ধান্ত নেই। পৃথিবী আমায় চিনবে এখন, আমি হবো নতুন আলোর ঝাণ্ডাধারী। তোমরা সবাই আমায় কুর্ণিশ করবে। সম্ভ্রম করবে।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে একটি খবরে আমার চোখ আটকে যায়,
"রাজধানীর সবুজবাগে গৃহপরিচারিকার ওপর ন্যাক্কারজনক নির্যাতন। আটক গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রীর জামিন মঞ্জুর"।
নামগুলো আমার খুব পরিচিত!
হ্যাঁ, এরকমই তো হবার কথা! সচ্ছলেরা সাচ্ছন্দ্যে অত্যাচার করবে, গরম পানি ঢেলে দেবে, খুন্তি দিয়ে খোঁচাবে, যৌন নির্যাতন করবে সবুজ গ্রাম্য বালিকার ওপরে, অতঃপর কিছু টাকা জামিন দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবে! নাহ, এবার আর ওসব হতে দিচ্ছি না আমি। আমার চৌকস বন্ধুদের অযথা আন্দোলন শুরু করার আগেই ফলপ্রসু কিছু একটা করবো। হ্যাঁ, হত্যা করবো তাদের। চরম কষ্ট দিয়ে। এছাড়া তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত কোনভাবেই হতে পারে না।
আমি যখন খালুর কলার ধরে তার মাথা দেয়ালে ঠুকে দিলাম, খালার চোখে তখন বিস্ময়।
-হাসপাতালে পাঠাইসেন, না? খুব জ্বর সেজন্যে? ভাবসেন আমি কিছু বুঝি না?
খালুর অন্ডকোষে কষে একটা লাথি মারলাম আমি। সে আপাতত কিছুক্ষণের জন্যে অচল। খালার দিকে নজর দেয়া যাক এবার। বটি নিয়ে তার পিছু ধাওয়া করলাম। মোটা মানুষ, অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠলেন। যখন বুঝলেন যে দৌঁড়ে আর লাভ নেই, আত্মসমর্পণ করলেন।
-বাবা শোনো, হ্যাঁ আমার ভুল হয়েছে...
-চুপ মাগী। আর একটা কথাও না।
তার গলা চেপে ধরলাম। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে জিহবা বের করে হাঁপাতে লাগলো সে। তার জিহবা খাঁমচে ধরে বটি দিয়ে দু টুকরো করে তার হাতে গুঁজে দিলাম। চোখের ভেতর স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খোঁচাতে লাগলাম। চোখের মনিতে এক ধাক্কায় সেটি ঢুকিয়ে দিয়ে চারপাশের সাদা অংশে চাড় দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে তুলে ফেললাম আস্ত দুটো চোখ। খালা ততক্ষণে নেতিয়ে পড়েছে। আর খালু তার অন্ডকোষ ধরে চেচাচ্ছে তখনও। খালুর কানের ভেতর একটা লম্বা সুঁই ঢুকিয়ে দিলাম একদম মগজে বিঁধে দিয়ে। একটু ছটফট করে তার দেহটাও নিথর হয়ে গেলো। ধুর! এত তাড়াতাড়ি মরে গেলো! আমি ভেবেছিলাম আরো কিছুক্ষণ খেলবো তাকে নিয়ে।
খুন দুটো আমি করেছিলাম ঘোরের মধ্যে। হঠাৎ সংবিৎ ফিরে পাওয়ার পর আমি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। একটা ন্যায্য বিচার করা হয়েছে, এই বোধের বদলে অজানা একটা ভয় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগলো। তাদের শূন্য চোখের দৃষ্টিতে যেন আমার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। নাহ, এমনটা হলে তো চলবে না। আমি একটা মহৎ কাজ করেছি। সবাই আমাকে চিনবে এখন। জবুথবু, কম্পমান, আতঙ্কিত আমাকে দেখলে সবাই আমাকে ছ্যাচরা খুনীই ভাববে। কেউই আমার অন্তর্গত ন্যায়বোধ দেখবে না। মাথাটা ঠান্ডা করার জন্যে বাইরে থেকে একটু চা সিগারেট খেয়ে আসা দরকার।
বাইরে বের হয়ে চা সিগারেট খেয়ে সময় নষ্ট করার চিন্তা বাদ দিয়ে দিই। মাথাটা কাজ করছে এখন। লাশ লুকোতে হবে, সমস্ত চিহ্ন ঝেড়ে ফেলতে হবে, অনেক কাজ বাকি। আমি দ্রুতই আবার তাদের ফ্ল্যাটের দিকে রওনা দেই। এখন আমার ভেতর এক আশ্চর্য প্রশান্তি কাজ করছে। প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারছি আমি।
ফ্ল্যাট নং ৩/সি। হু, ঠিকঠাক আছে সব। কী মনে করে যেন কলিংবেল টিপি। কেউ সাড়া দেবে না সে তো জানা কথাই! পুরোনো অভ্যাস তো!
ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয় কেউ একজন।
আমার খালা।
-আরে আলম! কেমন আছো তুমি বাবা? অনেকদিন পর এলে। ভালো সময়ে এসেছো। তোমার খালুজান তোমাকে ফোন করার কথা ভাবছিলো। কী যেন ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে, দুজনে মিলে দেখবে বেশ, এসো! আমি একটু ব্যস্ত থাকবো। কতিমনের খুব জ্বর। দেখার কেউ নেই"
হ্যাঁ এমনটাই তো হওয়ার কথা! খালা-খালুরা চিরজীবন সজ্জন থেকে যাবেন, কতিমনকে সামান্য জ্বরের জন্যে হাসপাতালে পাঠাবেন, কোন অছিলায় মারধোর করবেন না, আর আমি বেওকুফ অপেক্ষায় থাকবো কবে তারা ভয়ানক কিছু করেন আর আমি তাদেরকে খুন করে হিরো হবো! আমার মুক্তির দাবীতে আন্দোলন হবে রাস্তায়। হতাশায় শ্রাগ করি আমি। অবশ্য আমার নিস্তরঙ্গ জীবনে এসব ভেবে যদি একটু রোমাঞ্চ আর বিনোদন পেতে চাই, রাজা হতে চাই, নায়ক হতে চাই, সেজন্যে আমাকে খুব বেশি দোষ দেয়া যায় না নিশ্চয়ই! হতাশা চেপে আমি জিজ্ঞেস করলাম খালুকে,
"কতিমনের জ্বর কি খুব বেশি?"