দুর্ঘটনা-১
হেকমত সাহেব একজন মোটামুটি সুখী মানুষ। সুখী এই অর্থে- তার রাতে ভালো ঘুম হয়। অন্যান্য মধ্যবিত্ত মানুষের মত তারও সমস্যা আর হতাশা আছে। তবে সেসব নিয়ে তিনি খুব একটু ভাবেন না। ভাবার সুযোগ পান না বলেই হয়তো। সারাদিনের কর্মমুখর ক্লান্ত দিনের পর বাসায় ফিরে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া আর বাচ্চাদুটোর ওপর হালকা হম্বিতম্বি করে টিভিতে জ্বালাময়ী টকশো দেখার পর এগারটা বাজতে না বাজতেই তার চোখে ঘুম নেমে আসে। পুরো রাত মরা কাঠের মত ঘুমান। তাই তাকে সুখী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে কারো আপত্তি থাকার কথা না। হঠাৎ একদিন রাতে এই নির্ঝঞ্জাট দিনলিপির পাতায় কালি ঢেলে দিলো যেন কেউ। তিনি রাত দুটোর সময় খাট থেকে পড়ে গিয়ে মশারির সাথে আটকে এক অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে নিজেকে আবিষ্কার করলেন। কাতর চিৎকারেও ঘুম থেকে উঠলেন না তার সহধর্মিনী। তিনি হয়তো তার চেয়েও সুখী মানুষ। হেকমত সাহেব জীবনের এই সংকটময় মুহূর্তে দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি স্বকীয় কার্যপ্রণালী প্রস্তুত করলেন মনে মনে। প্রথমত, মশারির প্যাচটা ছুটোতে হবে, তারপর বিছানায় গিয়ে শুতে হবে। এই অংশটা বেশ সহজ, তবে তারপরের পর্বটাই কঠিনতম। এমন একটি দূরাবস্থা থেকে মুক্তি পাবার পরপরেই তাকে ঘুমোতে হবে। না হলে তিনি আর সুখী মানুষ থাকতে পারবেন না। বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। একটানা ঘুম দিয়ে অভ্যস্ত তিনি। ভাঙা ঘুম জোড়া লাগানো, তাও আবার এমন একটা দুর্ঘটনার পরে, তার জন্যে বেশ দুরূহ একটা ব্যাপার হবে। বিছানায় ওঠার পর মিনিট পাঁচেক চোখ ডলে ঘুম না আসার সম্ভাবনায় মুষরে পড়ে তিনি ভেড়া গুনতে থাকলেন।
দুর্ঘটনা-২
জিমন্যাস্ট হবার ইচ্ছে অরিনের ছিলো, এমন কথা কেউ কখনও শোনেনি। তবে তার মেদহীন স্থিতিস্থাপক শরীর মাঝেমধ্যেই তারুণ্যের ঝলকে উথলে উঠে আনমনে কিছু শারীরিক কসরৎ করে ফেলে, যার জন্যে দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এই যেমন, শরীরটাকে পেছনের দিকে বাঁকা করে মাটি ছোঁয়া অথবা ডান হাতের মুঠো পিঠের ওপর দিয়ে প্রক্ষেপ করে নিচে রাখা বাম হাতটা ধরা। এসব সে খেয়ালবশতই করে। ইদানিং তার নতুন বাঁই উঠেছে হাতের ওপর ভর দিয়ে হাঁটার। এটা অবশ্য সে একলা থাকলেই কেবল করে। নিজের ঘরে, পর্দা টেনে দিয়ে। পাশের বাসার সুন্দরী মেয়েটা তাকে এ অবস্থায় দেখতে পেলে নির্ঘাৎ পাগল ঠাউরাবে। জানলা বন্ধ করে, পর্দা টেনে দিয়ে এ্যারোবিক্সের মিউজিক ছেড়ে দিয়ে সে চমৎকার একটা আবহ তৈরি করে ব্যায়ামের জন্যে। সঙ্গীত ব্যায়ামের জন্যে ভালো সঙ্গী। টেকনো বিট শরীরটাকে প্রলুদ্ধ করে ইলাস্টিক হতে।
১...
২...
৩...
৪...
৫...
সাফল্যের সাথে পাঁচ মিনিট হাতের ওপর ভর দিয়ে থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে গিয়েই বিপত্তিটা ঘটে। পায়ের পাতার বদলে নখ সজোরে অবতরণ করে মেঝেতে বিছিয়ে রাখা ফোমের ওপর। ফোম বিছানো থাকায় ব্যথা খুব একটু পায় না অরিন। সে ভাবতে থাকে এসময় যদি পাশের বাড়ির মেয়েটা তার কাছে থাকতো, একটা বেশ মেলোড্রামাটিক রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি হতো। তখন সে মেকি আর্তনাদও করতো সহানুভূতির প্রত্যাশায়। এমনতর উচ্চতর প্রেমময় চিন্তা করতে গিয়ে সে নিজের অজান্তেই নিমজখম হওয়া বুড়ো আঙ্গুলটার ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে।
দুর্ঘটনা-৩
বেকার জীবন সুখের হয় পয়সাওলা পিতার গুণে
এই কথা সত্যি হয়েছিলো জুবায়েরের জীবনে
জুবায়েরের জীবনে!
জুবায়েরের সুখময় একেকটা দিনের শুরু হয় বেলা দুটোর দিকে ঘুম থেকে উঠে তিন কোর্সের নাস্তা করার পর। নাস্তা করে কিছুক্ষণ আয়েশী ভঙ্গিমায় পত্রিকা পড়ে এক কাপ চা না হলে তার চলবে না। তবে বাসার দার্জিলিং ফ্লেভারের চা না, তার চাই আনাসুর এর টং দোকানের কড়া মিষ্টি চা। সাথে স্যাঙাতদের সাথে মনের আনন্দে গুলতানি না করতে পারলে চায়ের মজাটা জমে নাকি? আজকে নাস্তায় তেমন কিছু নেই। খিচুড়ি শুধু। সাথে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাঁটি গাওয়া ঘি আছে, গতকাল রাতে মায়ের কাছে শুনেছে। গেল কই সবাই? বাসা ফাঁকা। নিজেকেই এখন কাজ করতে হবে। বিরক্তি ভরে ভাবে সে। তার বিরক্তি উবে যায় ঘি এর জন্যে অপেক্ষা বিলম্বিত না হওয়াতে। ফ্রিজ খোলার সাথে সাথেই সে পেয়ে যায় ঘিয়ের বয়ামটি। খয়েরি রঙ এর লোভনীয় তরল, বয়ামের গা চিকচিক করছে পু্ষ্টিবিন্দুতে। প্রসন্ন মনে ঘি নিয়ে খিচুড়িতে ঢেলে মাখাতে থাকে সে। গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না তেমন, কয়েকদিন ধরে ঠান্ডায় তার নাক বন্ধ তো তাই। মাখানো শেষ হলে মুখে দেয়ার পরে এক অস্বাদপূর্ব মিষ্টি স্বাদে তার মুখটা বিকৃত হয়ে আসে। সে ভুল করে ঘি এর বদলে গুড়ের কৌটো নিয়ে এসেছিলো। ঘুমচোখের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে 'সকালের' নাস্তাটা নষ্ট করে। আজকে সারা দিনটাই খারাপ যাবে জোবায়েরের এই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার ফলে।
দুর্ঘটনা-৪
গ্রামে বেড়াতে আসা সবুজের জন্যে অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। বিশেষ করে সেটা যদি হয় সমবয়েসী স্বজনদের সাথে ঝটিকা সফর। সময়টা কেটে যায় ফড়িঙের ডানায়, চঞ্চল। তাদের গ্রামের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বস্তু হলো বিশাল এক পুকুর। তার চারপাশে নারিকেল আর জামগাছের স্নেহাতুর ছায়া। টলমলে স্বচ্ছ জলে গা ডুবোলেই শরীরটা জুড়িয়ে যায়। শহরের সাপ্লাইয়ের জলে বাথটাব ভর্তি করে দামী সাবান-শ্যাম্পু মেখে এই অনুভূতির ধারেকাছেও যাওয়া যায় না। গোসল না করতে চাইলে শান বাঁধানো ঘাটে গাছের ছায়ায় শুয়ে শরীর জুড়োও যতক্ষণ খুশী, কেউ মানা করবে না। দুইদিন হলো গ্রামে এসেছে তারা, কিন্তু এখনও পুকুরে স্নান করার সময়ই পায়নি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে উপশহরে বসবাসকারী আত্মীয়দের বাসায় ঘুরতে গিয়ে। আজকেই শেষদিন। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে তারা। সবুজ সোৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়লো স্বচ্ছ জলে। সে সাঁতার পারে না, তবে তাতে হুটোপুটি করতে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা করলো কিছু বেয়ারা জলবিন্দু তার কানের ভেতর সেঁধিয়ে গিয়ে। বাকিটা সময় তাকে কান থেকে পানি বের করতেই বেশি মনোযোগ দিতে হলো। অস্বস্তি নিয়ে কি পুকুরস্নান উপভোগ করা যায়? শেষপর্যন্ত অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনাটির কারণে তার স্নানের আনন্দ অসমাপ্তই থেকে গেলো!
দুর্ঘটনা-৫
লুবনা খুব উত্তেজিত। সে বসে আছে দেশের সবচেয়ে চাকচিক্যময় এবং মর্যাদাপূর্ন বার্ষিক তারকামেলার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের গ্যালারিতে। অপ্রত্যাশিতভাবেই এখানে আসার সুযোগটা পেয়েছে সে। তার এক বান্ধবীর বরাতে সে যেতে পারছে। সেই বান্ধবী এক্সট্রা টিকেট রেখে দিয়েছিলো তার প্রেমিকের জন্যে। বেচারা হঠাৎ জ্বরে পড়ে যাওয়ায় আসতে পারে নি। তাই লুবনার এই অভাবিত উৎসবযোগ। উপস্থাপকের প্রাঞ্জল সঞ্চালনে গতিময় হয়ে উঠেছে অনুষ্ঠান। দর্শক এবং নিমন্ত্রিত অতিথি সবাই খুব উপভোগ করছে। নানা কলায় পটিয়সী শিল্পীরা তাদের পেশাদারীত্ব এবং আবেগ, এই দুইয়ের সংমিশ্রণে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। যারা আসতে পারেনি তাদের জন্যে রয়েছে দূরদর্শনে সরাসরি সম্প্রচারের সুব্যবস্থা। তার দিকেও হয়তোবা ক্যামেরা তাক করতে পারে ভেবে লুবনা শিহরিত হচ্ছে বারবার। দর্শকদের পর্ব শুরু হবে এবার। উপস্থাপক সরস ভঙ্গিমায় কিছু কথা বলে দর্শকদের হাসিয়ে প্রতিযোগিতার নিয়ম জানিয়ে দিলেন। প্রথমে বাছাই পর্ব। সমবেত দর্শকদের মধ্যে চারজনের আসনে বিশেষ চিহ্ন দেয়া আছে। সেই চারজনকে নিয়েই শুরু হবে দর্শকদের পর্ব।
লুবনার আসনে যে সেই বিশেষ চিহ্নটা আছে এটা তার বান্ধবী আবিষ্কার করলো। অনুষ্ঠানে জাঁকজমকপূর্ন পরিবেশনায় লুবনা এতটাই আবিষ্ট হয়ে গিয়েছিলো যে তার মাথায়ই আসেনি সেও নির্বাচিত দর্শকদের একজন হতে পারে। দর্শকসারি থেকে মঞ্চে যাবার সরু প্যাসেজটি নার্ভাস রাজকন্যার মত করে অতিক্রম করার সময় লাল-হলুদ স্পটলাইটটি যখন তার ওপর পড়লো, সে খেয়াল করলো তার জুতা আর জামার রঙ ম্যাচিং করে নি। এমন মূঢ় কর্মের জন্যে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো সে। আগে যদি জানতো সে নির্বাচিত দর্শকদের তালিকায় থাকবে তাহলে কি এমন ভুল করতে পারতো? এমন দুর্ঘটনা ঘটবে তার জানাই ছিলো। এমনই ঘটে এসেছে তার ক্ষেত্রে সবসময়, অশ্রূসিক্ত লুবনা ঠোঁটে দাঁত চেপে কান্না সামলাতে সামলাতে ভাবলো।
দুর্ঘটনা-৬
-আমি এখন যে কবিতাটি পাঠ করবো, তা লিখতে আমাকে সাতটি বিনিদ্র রাত কাটাতে হয়েছে। আমার সঙ্গী হয়েছিলো দূর আকাশের নক্ষত্রেরা। ভোরবেলা শিশির ভেজা ঘাসের আর্দ্র স্পর্শ ধুয়ে দিয়েছিলো রাত জাগার ক্লান্তি। এই কবিতায় মিশে আছে তিলোত্তমা প্রকৃতি আর নিঃসঙ্গ রাতের একাকী দিনলিপির কথকতা।
"সালেহ ভাইয়ের কাছে পাই পঞ্চাশ টাকা
সানি লিওনের সিডিটা নিছে শাওন হালায়
আমাশয় প্রকরণ বইটা কিনতে হবে নীলক্ষেত থেকে
বড্ড কষ্ট পাচ্ছি পেটের বিষে..."
ভুল করে কবিতার বদলে টু-ডু লিস্ট পাঠ করায় বিব্রত হন কবি সাজেদুল ইসলাম। এই হাস্যকর দুর্ঘটনার পরেও নিজেকে সামলে নিয়ে নতুনভাবে আবৃত্তি শুরু করেন তিনি। কবিদের এতকিছু মনে রাখলে চলে না। তাদের জীবনে বিমূর্ততাই চরম সত্য এবং বাস্তব। তারপরেও তার কবিতা পাঠ তেমন জমলো না আর সেদিন চাপা হাসি আর বিদ্রূপপূর্ণ ফিসফিসানির উপদ্রবে।
দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটির কার্যালয়
টিউনিং টিউনিং... এ্যাক্সিডেন্ট লোকেটেড। লোকেশন ১০৮১ কোড নং-৩৬৭৮৯। সেন্ড ফোর্স। ব্রিং দ্যা ভিকটিমস। কুইক। ওভার এ্যান্ড আউট।
দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি বা দুনিক বিদেশের অর্থায়নে পরিচালিত একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে মোটা অংকের টাকা পাওয়ায় তাদের ঠাঁটবাটের অভাব নেই। টিভিতে বিশাল বাজেটের নাচগান সম্বলিত বিজ্ঞাপন প্রচার করে তারা গৌরবর্ণের তরুণ তরুণীদের একত্র করে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক এবং হৃদয়স্পর্শী বিজ্ঞাপনও প্রচার করে যা দেখে নরম হৃদয়ের বৃদ্ধেরা চশমার কাঁচে চোখ মোছেন। সম্প্রতি তাদের একটি শ্লোগান পুরো দেশকে আন্দোলিত করেছে। তা হলো, "লাল নয়, রঙধনুরঙা রক্তে বর্ণিল হও দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার মানুষ"। শ্লোগানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছে তারা এভাবে "দুর্ঘটনাগ্রস্থ মানুষ যেন নিজেকে অসহায় ভেবে ভীত না হয় তাই আমরা রক্তের রঙকে রঙধনুর সাথে তুলনা করেছি"। তুমি সম্বোধনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক বিষয়ক হৃদ্যতাপূর্ণ কথাবার্তা বললেও তা সর্বমহলে সমভাবে গ্রাহ্য হয়নি। অনেকের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে তারা কীভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্থ মানুষের উপকারে আসবে, তারা কোন স্বাস্থ্যসংস্থা কী না, অর্থ সাহায্য দিবে কী না। মূল উদ্দেশ্যটা এখনও তারা ঘোলাটেই রেখেছে। বিজ্ঞাপন এবং বিলবোর্ডের প্রসারেই তাদের নজর বেশি। তবে বিজ্ঞমহল যতটুকু ধারণা করছেন তা হলো, আক্রান্তদের মানসিক শক্তি যোগাতেই এই সংস্থাটির উদ্ভব। দুর্ঘটনাগ্রস্থ এই এলাকায় এমন একটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বয়ান করে কলাম লিখেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদেরা।
-আমাদের কার্যক্রম জোরেসোরে শুরু করা উচিত। খালি এ্যাড দিয়ে আর কয়দিন?
কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বললেন।
-হাহা! ইউরো আর পাউন্ডে হেল্প আসছে। ওগুলো হালাল করতে হবে না? কাজ তো করবোই। কাজ না করলে কী আর টাকা পাবো?
জবাব দিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির প্রধান সদস্য।
-তো কাজ কিরকম করছেন, এর গতিবিধি আমাকে একটু জানান তো দেখি! অনেকদিন কোন আপডেট পাই না।
-আমরা কাজ করছি প্রজেক্ট রঙধনুর জন্যে তা তো জানেনই। দুর্ঘটনাগ্রস্থ সাতজন মানুষ যোগাড় করা হবে। তারপর তাদের দুর্ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ এবং প্রচার করা হবে একত্রিত করে। এরপর হোটেল সোনারগাঁওতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জানিয়ে দেয়া হবে কীভাবে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষেরা সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলতে পারে সুখের রঙধনু।
-বাহ চমৎকার আইডিয়া। কতজন যোগাড় হল এখন পর্যন্ত?
-ছয়জন।
-খুব সাবধানে সিলেক্ট করবেন। একদম বেছে বেছে। সমাজের সর্বস্তর থেকে। আর প্রোডাক্ট যেন পাবলিকে খায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে বুঝলেন? পাবলিক যত খাবে তত টাকা।
-তা তো অবশ্যই।
-গ্ল্যামারের ব্যাপারটা জরুরী। ইয়ে মানে একদম সেইরকম উন্ডেড, রক্তাক্ত কাউকে নিয়ে আসলে কিন্তু গ্ল্যামারের গ্রামার বজায় থাকবে না। তারা হোটেল সোনারগাঁওয়ে যেয়ে নাচা গানা কীভাবে করবে?
-আরে এসব বলতে এত ইয়ে মানে'র দরকার নেই স্যার! এগুলো তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি কিছু সাবজেক্ট চুজ করেছি, যা আপাতদৃষ্টিতে দেখলে খুব খেলো মনে হবে। তবে আপনি তো জানেনই সবকিছুই ডিপেন্ড করে প্রেজেন্টেশনের ওপর। পাবলিক ইমোশন আমরা তৈরি করবো। আমরা ইমোশনের নতুন মাত্রা তৈরি করবো। তুচ্ছ ইমোশনকে কমার্শিয়ালাইজড করে বাজারজাত করার দক্ষতা আমাদের আছে বলেই তো ইউরোপ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি ইউরো বিনিয়োগ করা হচ্ছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর। তাদের চাওয়া পূরণ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং অবশ্য। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড প্রব্লেমগুলোকে থার্ড ওয়ার্ল্ডের বেসিসে ক্যাটাগরাইজড করে প্রেজেন্টেবল বানানো। ইউ নো জনসংখ্যা বৃদ্ধি, লঞ্চডুবি, সিডর এসব টু মেইনস্ট্রিম হয়ে গেছে। ইউরোপের মহান দাতারা আমাদের সাহায্য করতে মুখিয়ে আছে, তাদেরকে জাস্ট মোটিভেট করতে হবে নিউ আইডিয়া দিয়ে।
-আর এজন্যে আমাদের প্রথম প্রজেক্টটা অত্যন্ত জরুরী। আপনি কেসগুলোর ডিটেইলস আমাকে বলেন ইন ব্রিফ।
-কেস-১
হেকমত আলি। মধ্যবিত্ত চাকুরে। রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় খাট থেকে পরে গিয়ে আঘাত পান। মশারি পেঁচিয়ে যাওয়ায় অবস্থাটা আরো গুরুতর হয়ে ওঠে।
-আমাদের হিডেন ডিভাইসগুলো ভালো কাজ করছে। মানুষের গোপন দুর্ঘটনাও নিখুঁতভাবে বের করে ফেলছে। দারুণ!
-খুব চমৎকার। অবশ্য কিছু সাংবাদিক এসবের নৈতিক দিক নিয়ে ট্যাঁ ফো করতে পারে। ওদেরকে কিছু গুঁজে দিলেই হবে। আমরা এত সময় আর অর্থ ব্যয় করে দুঃখু বাজারজাত করছি, তোরা কোথাকার কোন দু পয়সার কলমচাকর আমাদের কাজে বাগড়া দিতে আসিস এ্যাঁ?
-সেটাই। বলে যান।
-কেস-২। অরিন চৌধুরী। ছাত্র। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ব্যায়াম করতে ভালোবাসে। একদিন ব্যায়াম করতে গিয়ে তার পায়ের বুড়োআঙ্গুল মচকে যায়।
-আহা! দুঃখজনক। তবে এটাকে প্যাথেটিক ঘটনা হিসেবে প্রেজেন্ট করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। কীভাবে কী করবেন ভাবছেন?
-এসব ব্যাপার আমাদের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আর্ট ডিরেক্টর দেখবেন। ৫ মিনিটের একটা প্রোমো বানালেই হবে। সেখানে দেখানো হবে কী করে অরিন সারাজীবন ধরে স্বপ্ন দেখে আসছে বড় জিমন্যাস্ট হবার। সাথে নাদিয়া কোমোনোচির কিছু ক্লিপ জুড়ে দেবো। তার বাবা-মার স্বপ্ন, বোনের তদারকির ইত্যাদি এমনভাবে দেখানো হবে যে তার বুড়ো আঙ্গুল মচকানোর মত সামান্য ঘটনাতেও অডিয়েন্স শকড হবে। তেমনিভাবে কেস ওয়ানের ব্যাপারে আমাকে আর্ট ডিরেক্টর যা বলেছেন তা হলো, হেকমত সাহেব সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে আসেন, রাতে ঘুমোনোটাই তার সবচেয়ে সুখের সময়। সেই সুখের সময়টায় পতন মানে জীবনের পরাজয় সাথে মশারি একটা মেটাফরিক এলিমেন্ট হিসেবে থাকবে। এ্যানিমেশনের মাধ্যমে দেখানো হবে তা অজগর হয়ে তার গলা পেচিয়ে ধরছে।
-ব্রাইট, রিয়ালি ব্রাইট আইডিয়া।
-সেটাই আপনাকে বলছিলাম। তুচ্ছাতিতুচ্ছ দুর্ঘটনাও আর্ট আর কমার্সের সংযোগে হাইলি ট্রাজিক এটমোসফিয়ার তৈরি করতে পারে। অডিয়েন্স খাবে না মানে! গিলে খাওয়ানো হবে। আর সাত দুর্ঘটনা মিলে রঙধনুর আইডিয়াটাতো তোলপাড় করে দেবে একদম। আমাদের ফাইনাল সিরিমনিতে দেখেন।
তারা দুজন সন্তুষ্টচিত্তে বাকি কেসগুলোকে নিয়ে গবেষণা করে কীভাবে গ্ল্যামারাইজড এবং ট্রাজিক করা যায় সেই উপায় বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
গ্রুমিং সেশন
প্লিজ কিপ দ্যা লাইন। ইয়া! অরিন, তুমি একটা ব্যথার এক্সপ্রেশন দাও। দুই হাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে কিভাবে তোমার জীবনটা ডেস্ট্রয় হলো তার একটা নিট সামারি থাকবে। হ্যাঁ গ্রেইট! ইউ আর লার্নিং ফাস্ট বয়!
হেকমত সাহেব, মনে করুন যে একটা অজগর সাপ আপনাকে জড়িয়ে ধরছে। আপনার গলায় চাপ বাড়ছে। এই চাপ সংসার এবং চাকুরীজীবনে বঞ্চনার... কী বললেন, আপনি সংসার এবং চাকুরি নিয়ে হ্যাপি? ইউ ডোন্ট নো এনিথিং এবাউট হ্যাপিনেস। যা বলছি করুন...
লুবনা, কাম অন গার্লি! এটা কী ড্রেস পরিয়েছে তোমাকে? ইয়েলো কান্ট বি দ্যা কালার অফ পেইন। কস্টিউম ডিজাইনার কোথায়? আর তাছাড়া আঁটোসাঁটো হয়নি তো তেমন। ব্রা এর স্ট্র্যাপ দেখা যাওয়ার কথা বাহির থেকে। কী? ডোন্ট বি সাচ আ ভিক্টোরিয়ান ফুল! ওসব ছাড়ো তো কন্যা! আর ইউ নট পেইড এনাফ? ওকে...ওকে। হ্যাঁ এই তো ভালো মেয়ে। বুঝতে পেরেছো। এখন তুমি তোমার জামার কালার মিসম্যাচ হয়ে যাওয়া নিয়ে সেই ডায়ালগটা দিবা। মনে আছে তো? হ্যাঁ আমাকে শোনাও। রাইট রাইট। খুব ভালো হয়েছে। তবে "আমার মাও এমনটা ভাবতেন" এইখানে "মা" বলার সময় তোমাকে একটু গলাটা কাঁপাতে হবে। মা শব্দটা ঠিকঠাক বলতে পারলে ধাঁইধাঁই করে টিআরপি বাড়তে থাকে...
নম্বর সাত
-যন্ত্রটাতে কোন গোলমাল হয়েছে স্যার মনে হয়। টিউনার আর অটো লোকেটর কাজ করছে না ঠিকমত। হিডেন সার্কিটেও সমস্যা। সাত নং এর দেখা এখনও মিলছে না।
-আরে না মিললে কীভাবে হবে? সাতটা না হলে রঙধনু বানাবো কীভাবে? ছয়টা ঘ্যাটাঘ্যাট মিলে গেলো সাত নাম্বার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে কেন?
-কী জানি স্যার। এরকম প্রব্লেম হবার তো কথা না।
-ওসব আমি বুঝি না। আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরে ন্যাম ভিলেজে প্রোগ্রাম। বুকিং দেয়া হয়ে গেছে। এখন পাল্টাতে গেলে আর আগামী ছয়মাসের মধ্যে শিডিউল পাওয়া যাবে না। বোঝা গেলো? সুতরাং যা করার করো, টাকা পয়সা লাগলে নাও। টেকনিক্যাল দিকগুলো একদম নিট দেখতে চাই আমি পরশুর মধ্যে।
-স্যার একটা সিগন্যাল পাওয়া গেছে মনে হয়!
বিপ বিপ একটা শব্দ হতে থাকলো যন্ত্রে।
-টিউন করো! টিউন করে ক্যাপচার করো ঠিকমতো। এইবার আর মিস করা যাবে না। মনিটর ঠিক আছে তো? চেক। এ্যান্টেনাগুলো দেখো। ট্রান্সমিটারগুলো কাজ করছে? চেক। এইতো...এইতো পাওয়া গেছে!
অস্পষ্ট একটা অবয়ব ফুটে উঠলো মনিটরে।
-টিউন করতে থাকো। ফ্রিকুয়েন্সি আসছে। হ্যাঁ কিছুক্ষনের মধ্যে স্যাচুরেশন লেভেলে চলে আসবে। আমি "স্টপ" বলার সাথে সাথে টিউনিং বন্ধ করবা। হ্যাঁ এইতো আসছে...আসছে... স্টপ! স্টপ!!
-ক্যাপচারড স্যার! এখন দেখুন।
তৃপ্তমুখে জানালো টেকনিশিয়ান।
মনিটরে ভেসে উঠলো মোটর দুর্ঘটনায় আহত একজন বালকের দেহ। দশ বারো বছর হবে বয়স। মাথার খুলি ফেটে গেছে। কাঁচ ঢুকে গেছে শরীরের সর্বত্র। রক্ত পড়ছে টপটপ করে।
-আহা। এইসব কী। রিসেট করে আবার টিউনিং করো।
-যন্ত্রটা আবার সমস্যা করছে স্যার। এটা অটোমেটিক আপডেটেড হয়ে ডাটা ট্রান্সফার করছে মেইন সার্ভারে। ফ্রান্সে।
-মানে কী!
-মানে স্যার এটাকেই স্যাম্পল হিসেবে ফাইনালাইজড করে অটোমেটিক পাঠিয়ে দিচ্ছে সবগুলো সেকশনে।
-মানে এটাই আমাদের স্যাম্পল সেভেন? এটাকে দিয়েই অনুষ্ঠান করতে হবে? রঙধনু বানাতে হবে? নো ফাকিং ওয়ে!
-কিন্তু এটা করা ছাড়া কোন উপায়ও নেই স্যার। ওখানেও অটো আপডেটেড হতে থাকবে এটা। অন্য ছয়টা স্যাম্পলের সাথে সিনক্রোনাইজড হবে। ওয়েবসাইটে অটো আপলোড হবে।
-সর্বনাশ! একবার এই ঘটনা ঘটলে তো সে অনুযায়ী কাজ করা ছাড়া উপায় নেই। কর্পোরেট শকুনেরা ওৎ পেতে আছে ভুল ধরার জন্যে। এটাকে দিয়েই তাহলে আমাদের রঙধনু প্রজেক্ট সম্পূর্ন করতে হবে?
-আর কোন উপায় দেখছি না স্যার।
বালকের শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। সে অত্যন্ত "ননগ্ল্যামারাস" ভঙ্গিতে মাকে ডাকতে থাকে। তার গলা দিয়ে চি চি আওয়াজ বের হয়। উঠতে গিয়ে সে মুখ থুবরে পড়ে।
-একে কখন গ্রুমিং করাবো, কখন ডায়ালগ শেখাবো, কখন কী করবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না! একদম আগলি আর কমার্শিয়ালি আনইম্পরট্যান্ট একটা কমোডিটি। আর্ট ডিরেক্টরকে ডাকো তো। সাথে অন্যান্য পার্টিসিপেন্টদেরও ডাকো। ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে হবে।
রঙধনু
-ডিয়ার পার্টিসিপেন্টজ আপনাদের অতি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে রঙধনু বানাতে সাতজনের প্রয়োজন নেই। অধীর অপেক্ষার সময় শেষ। আমরা বানাবো সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকের ছয়রঙা রঙধনু। ছয় সংখ্যাটির কিন্তু বিশেষ তাৎপর্য আছে। এটা মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ। ছয়টি ইন্দ্রিয়ের যোগসাজসে গঠিত হবে সপ্তবর্না অনুভূতির রঙধনু...এই মেশিনটা বন্ধ কর। মনিটরটা আবার চালু হল কেন?
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরের ভাষণে ছেদ পড়লো মেশিন আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়ায়। মনিটরে "সাত নম্বর কেস" কে দেখা যাচ্ছে নেতিয়ে পড়া অবস্থায়। শরীর থেকে রক্ত ঝরছেই তার।
-স্যার, ফ্রান্স থেকে ফিডব্যাক এসেছে।
ফ্রেঞ্চ অডিওর সাথে বাংলা সাবটাইটেলে 'কেস' সম্পর্কে বলা হচ্ছে,
"১০ বছর বয়েসী বালক। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। একটি আঙুল কাটা পড়েছে। সর্বমোট ৬০০ মিলি রক্ত নির্গত হয়েছে।"
-এটা স্যার ডেমো ভার্শন। ডিটেইলস পরে পাঠাবে ওরা।
শুকনো মুখে জানায় টেকনিশিয়ান। কড়িৎকর্মা প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ব্যাপারটা সামলে নিয়ে নতুন করে ভাষণের প্রস্তুতি নেন,
-ওয়েল...আমরা অবশেষে পেয়ে গেলাম তাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইগনর করাটা সাফারিং কমায়। আর বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে আমরা দেখি, আপনাদের ছয়জনের প্রস্তুতি এবং আপনাদের পেছনে বিনিয়োগের বিপরীতে এই বালক মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাকে আমরা পরের এপিসোডে ব্যবহার করার কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করবো। নাউ টক বিজনেস। আমাদের গ্র্যান্ড ফিনালের বেশিদিন বাকি নেই আর। কেস-১, মিস্টার হেকমত, আপনার প্রতিক্রিয়া বলুন। হাউ আর ইউ ফিলিং?
-মনে হইতাছে আপনারে আমার ওই খাটের চিপায় ফালায়া মশারি দিয়া ঢাইকা মশার কয়েল জ্বালাই একশটা।
-কী বলেন এসব! কেস-২ অরিন...
-আমি আপনাকে বলবো উল্টো করে এক ঘন্টা হাঁটতে। আপনার মাথার জায়গায় পাছা থাকাটাই উত্তম।
-হোয়াট! কেস-৩ জুবায়ের। ইউ মাস্টন'ট লেট মি ডাউন লাইক আদার রিটার্ডস!
-রঙধনু বানাইবার চান, না? বাইর করতাছি।
-ওই ছোট্ট বাচ্চাটাকে ফেলে কোন রঙধনু হবে না। আমার কানে পানি যাওয়ার চেয়ে তার ব্যাপারটা অনেক বেশি গুরুতর এটা আমার ছোট্ট মনও বোঝে।
প্রতিবাদ করে ওঠে কেস-৪ সবুজ।
লুবনাও তার সাথে গলা মেলায়,
-ঠিকই বলেছে ওরা। আপনি আমাদের থেকে খুব বেশি বোঝেন তাই না? ভেবেছেন যে আমরা কিছু বুঝি না?
ঝাঁঝালো কন্ঠ তার।
-আমি সবসময় আবৃত্তি করতে গিয়ে একটা না একটা গড়বড় করেছি। কিন্তু আজ আমি যে কথাগুলো বলবে, তা নিশ্চিতভাবেই হবে আমার সুন্দরতম কবিতার চেয়েও সুন্দর। এতে কোন ভান নেই, ভনিতা নেই, রগড় নেই, টক্কর দেয়ার ইচ্ছে নেই। আছে অকৃত্রিম ভালোবাসা, হৃদকলমে লেখা।
কবির শান্ত সমাহিত কন্ঠে সবাই যেন সম্মোহিত হয়ে পড়ে। তিনি ভরাট কন্ঠে আবৃত্তি করে চলেন,
"আমরা রঙধনু দেখেছি আকাশে
দেখেছি ঝড়ের পরে জলের বর্ণালী
যাতে সিঞ্চিত হয় আমাদের ভালোবাসার সঞ্চয়।
একে অপরকে ভালোবেসে
থাকবো বেঁচে কায়ক্লেশে
তবুও বিকোতে দেবো না মুদ্রার কাছে রক্ত
ব্যবসার কাছে ঘুমবিকেলের আবছায়া
বিলবোর্ডের কাছে রঙপেন্সিল
বিজাতীয় ছিল-ছাপ্পরের কাছে সহোদরকে
আমরা সাতজনা
জীবনের তুলি দিয়ে আঁকবো রঙধনু
দুর্ঘটনাপ্রবন এলাকার ক্যানভাসে"
কেমন লাগলো কবিতাটি আপনার? কবিতা হৃদয়ঙ্গম করতে না পারলে এক কথায় বুঝিয়ে দিই, আমাদের ছোটখাটো দুর্ঘটনাকে সম্বল করে আপনাদের অতি বৃহৎ ব্যবসা পরিকল্পনা নাকচ করে দিলাম আমরা। নিকুচি করি প্রোগ্রামের, মেকি অনুভূতির, খ্যাতির। চলো সবাই মিলে আমাদের আহত ভাইটিকে খুঁজে বের করি। ওর চিকিৎসা দরকার। টেকনিশিয়ান ভায়া, ওর লোকেশনটা ঝট করে বের করে ফেলে বলো তো আমাদের।
যন্ত্রের সাথে মানুষগুলোর এভাবে বিগড়ে যাওয়া দেখে প্রজেক্টের সাথে জড়িত মানুষেরা স্থানুর মত দাঁড়িয়ে থাকে আর একে অপরকে দোষারোপ করে। উচ্চশক্তিসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে তারা নিশ্চয়ই ক্ষতির খতিয়ান বের করে ফেলবে। ততদিনে দুর্ঘটনাপ্রবন এলাকার বিলবোর্ডগুলো ঢেকে দেবে অজস্র রঙধনু।