Oh baby baby its a wild world! (স্বগতোক্তি)
ন্যান্সিকে আমি ভালোবাসি। ওকে অবশ্য অনেকেই ভালোবাসে। বাসবে নাই বা কেন? শি ইজ আ ফাকিং হট বিচ! আর ন্যান্সিও বেশ উদার। কাউকে নিরাশ করে না। আমার সাথে ওর প্রথম পরিচয় বিছানায় নাকি কোকেইন স্নিফ করতে গিয়ে নাকি কোন মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ে মনে পড়ছে না এখন। গত দুই বছরে আমাদের ব্যান্ডটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। আমার গিটারের ছয়টা তারও ধীরে ধীরে ছিড়ে গ্যাছে। আমি অবশ্য ভালো বাজাতে পারতাম না। আমরা কেউই পারতাম না। বাট উই গট দ্যা লুক! দ্যা রিয়াল পাঙ্ক জাঙ্ক লুক! সোনালি মদ আর ফ্ল্যাশি লাইটিংয়ের সাথে উন্মাতাল ড্যান্স ফ্লোরে তরুণ তরুণীরা উচ্চকন্ঠে নৈরাজ্যময় মিউজিক এর বেশি আর কিছু চাইতো না। মাঝেমধ্যে আমি গিটার ছুড়ে ফেলে টি-শার্ট ছিড়ে পেটে বুকে ব্লেড দিয়ে আঁকিবুকি করতাম, তখন যা একটা দৃশ্য হতো না! কে বলেছে বাঙালি রক্ত দিতে বিমুখ! অতি উৎসাহে কেউ ভদকার বোতল ভেঙে নিজের পেটে ঢুকিয়ে দিতো। অত্যাধিক ক্যানাবিস, ইয়াবা আর এক্সট্যাসি নিলে এগুলা খুবই সামান্য ব্যাপার।
ন্যান্সি ছিলো আমাদের গ্রুপের চিয়ারগার্লদের একজন। তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিলো বড় কোন আন্ডারগ্রাউন্ড রক গ্রুপের মেম্বার হবে। কিন্তু হাউয়ার পুলারা সব ওকে ইউজ কৈরা ছাইড়া দিছিলো। আমাদের গ্রুপেও অবশ্য এর ব্যত্যয় ঘটেনাই। লিড গিটারিস্ট, ভোকাল, ড্রামার, ম্যানেজার সবাই চাম নিছিলো। তা আমিও অবশ্য নিছি। তবে আমি ন্যান্সিকে ভালোবেসে ফেলছিলাম। গুলশানের এক বাড়ি থেকে যখন... ওয়েট আ মিনিট! নাউ আই ক্যান রিমেম্বার হাউ উই মেট।
কার সাথে যেন সারারাত ছিলো, সকালবেলায় ড্রিংকস করতে এসেছিলো একটা বারে, সাথে কিছু স্ন্যাকস। কিন্তু ওই হারামীটা ন্যান্সিরে কিছু দিতাছিলো না। একা একাই সাঁটাইতেছিলো। আর ন্যান্সির একটা স্বভাব আছে ওর তীক্ষ্ণ কন্ঠ দিয়া ক্যানক্যান করতেই থাকবে।
"আমারে দিবা না কেন? দেউ! দেউ! দেউ! এক ক্যান রয়াল ডাচ দেও। নাইলে অন্তত দুই পেগ হুইস্কি!"
ওই ছেলেটা শেষমেষ রেগে ওর ওপর গ্লাসের অবশিষ্ট পানীয় ছুড়ে মেরে চলে গ্যালো। ন্যান্সি আরো কিছুক্ষণ চিল্লাইলো। ওর চিল্লানি বড়ই শ্রুতিকটূ। না পেরে ওকে বাইর কইরা দিলো হোটেলের মানুষজন। আমি হোটেল থেকে বের হয়ে একটু সামনে আগায় দেখি যে সে কানতেছে ভেউভেউ কইরা একটা ইলেকট্রিক পোলরে জড়ায়া ধরে।
-আর ইউ অলরাইট?
আমি জিগাইলাম।
-হোয়াট ফাকিং অলরাইট! গো এ্যাওয়ে মাদারফাকার! লিভ মি এলোন!
তার কন্ঠের তীব্রতা আমাকে আবারও বিস্মিত করল।
-তোমার কাছে স্নিফ করার মত কিছু আছে? আমি কিনবো। আই এ্যাম রানিং সর্ট!
ন্যান্সি ঝট করে তাকালো আমার দিকে। ওর চোখের কোণে চঞ্চলতা।
-নাই, তবে যোগাড় করে দিতে পারবো। টাকা দাও।
আমি টাকা দিলাম। সে হুড়মুড় করে একটা চলন্ত বাসে লাফ দিয়ে উঠে গেলো। বাসশুদ্ধ মানুষকে চমকে দিয়ে আবারও তার সেই বিখ্যাত চিলকন্ঠে বলল,
"তুমি থাকো, আমি এক ঘন্টার মধ্যে আসতেছি!"
Self Destructing process
(ডায়েরির পাতা থেকে)
ন্যান্সি এসেছিলো। বাংলাদেশে নয়া উদ্ভুত জাঙ্কি সমাজের বদনাম আছে টাকা পেলে সব ভুলে যাওয়ার। কিন্তু ন্যান্সি এসেছিলো। সাথে উন্নত জাতের কোকেইন। ওইদিন রাতে আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিলো। ওকে বললাম আমাদের সাথে আসবে নাকি। ও সেইরকম একটা 'স্ক্রিম' দিয়ে রাজি হয়ে গেলো। আমি ওকে আমাদের বাড়োয়ারি ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলাম। এইসব জায়গায় কোন আসবাবপত্রের বালাই নাই। ফ্লোরিং। একদল জাঙ্কি থাকি আমরা। মিউজিক করি। পিনিক করি। সেক্স করি। কে কার সাথে কোন ঠিক নাই। ন্যান্সি আমার গিটার বাজানো দেখে খুব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। আমি কিছুটা অবাক হলাম। এর আগে কেউ আমার মত মেরিটলেস গিটারিস্টের প্রশংসা করেনাই। আমার মিউজিক জাস্ট শো অফ! এ্যাটিচুড আর পাঙ্ক গেট-আপের জোরে উৎরে যাই। ওকে আরেকটু মুগ্ধ করার জন্যে আমার নতুন লেখা একটা জ্বালাময়ী লিরিক দেখালাম। এরকম ছিলো লিরিকটা,
"শহরের সব বাতি জ্বলছে কেন?
নিভিয়ে দাও! নিভিয়ে দাও!
চাঁদটাও নিভিয়ে দাও
এখন হবে রক কনসার্ট
বন্ধ কর বিতোভেন আর মোৎসার্ট
শিরায় অন্ধকারের সুঁচ ভরে দাও
অন্ধকার বিস্ফোরিত হয়ে জ্বলবে এবার"
-ও মাই গড! তুমি কী লিখসো এসব? এত কঠিন। তুমি একটা জিনিয়াস! চল তুমি আর আমি আলাদা ব্যান্ড করি।
কিছু কিছু মুহূর্ত থাকে ভূতে পাওয়া। আমাদের মত বিকারহীন ঘোরগ্রস্থরাও কিউপিডের তীরবিদ্ধ হয়ে চমকে ওঠে।ওটা ছিলো সেরকম একটা সময়। আমরা অবশ্য ততক্ষণে ছয় পেগ করে গিলে ফেলেছি। আমি ওকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম।
সেই রাতে আমার পারফরম্যান্স হল দুর্দান্ত। গিটারে, ব্যাকভয়েসে, হারমোনাইজিংয়ে এবং অতঃপর ন্যান্সির সাথে রাতে, বিছানায়। এরপর থেকে আমরা একসাথেই থাকতাম। বারোয়ারি ফ্ল্যাট ছেড়ে নিজেদের জন্যে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলাম। এতে অবশ্য ব্যান্ডের সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে লাগলো। আর ফ্ল্যাটটাও ছিলো একদম যাচ্ছেতাই। বহুদিন কোন সংস্কারকার্য করা হয় নাই। দুর্গন্ধ, ছাড়পোকা, মশা। তবে সারাক্ষণ নেশায় ডুবে থাকলে ওসব কিছু মনে হয় না। ন্যান্সির সাথে আমার ভালোবাসা গাঢ় হতে থাকলো, সেইসাথে পুরোনো বন্ধুদের সাথে দূরত্ব বাড়তে লাগলো। আমরা ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতাম না কখনও। টাকা পয়সার কমতি হতে থাকলে ,ধারকর্জ্য করে বা টুকিটাকি হাতসাফাই করে চলতাম। নেশার জন্যে। একদিন ন্যান্সি আমাকে বললো, "এই জীবন আর ভালো লাগছে না. চল থিতু হই। আমি তো এসএসসি পাশ। একটা রিসিপশনিস্টের কাজ তো পাব অন্তত। চেহারা যেহেতু ভালো। আর তুমিও টুকটাক ক্ষেপ মারা বাদ দিয়ে একটা পার্মানেন্ট জব খোঁজো"
কথাগুলো শুনে আমার এত খারাপ লেগেছিলো যে কী বলবো! ন্যান্সি এই কথা বলতেছে! আমি মাথা গরম করে বসলাম "বুচ্ছি, ইনডাইরেক্টলি আমাকে না করতেছো তো? তোমার পুসি গরম হইছে, আবার যত্রতত্র ভাড়া না খাটলে চলবে না। Once a whore, always a whore! bitch!"
ন্যান্সি হিস্টিরিয়াগ্রস্থের মত হাসতে লাগলো। কী সে হাসি! থামতেই চায় না।
"হোয়াট? হোয়াট নাও বিচ?"
সে জবাবে আমাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কোকেইনটা আনপ্যাক করে স্নিফ করল গভীরভাবে। আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে এলিয়ে পড়ল বিছানায়। তারপর মৃদু হাসতে লাগলো।
তখন আমি বুঝতে পারলাম যে সে জোক করছিলো। জীবনটাকে আমরা একটা কৌতুক হিসেবেই নিয়েছিলাম। জীবনে বেঁচে থাকতে অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা জীবন বেছে নেই নি। তাই অন্যকিছু বেছে নেয়ার দরকারও পড়েনি। আমরা জীবনের সাথে ফ্লার্ট করতাম। শুনেছিলাম হেরোইন ওভারডোজ নিয়ে ঘুমাতে গেলে প্রতিটা র্যাপিড আই মুভমেন্টের সাথে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে, একসময় সেটা থেমে যায়। ন্যান্সিকে বলেছিলাম একদিন এই এক্সপেরিমেন্টটা করে দেখবো। সে খুব উৎসাহ দিয়েছিলো। ও বাজী ধরেছিলো আমি মারা যাবো। আমি বলেছিলাম, না। একদিন সত্যি সত্যি ওর সামনেই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হেরোইন নিয়ে বিশটা ই-পাম ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি যে আমি দিব্যি বেঁচে আছি। বাজীতে হেরে অবশ্য ন্যান্সিকে অখুশী মনে হয় নি। বরঙ আমাকে বাহবা দিলো "সত্যিকারের পুরুষ" বলে। তা নয়তো কী! আমার মত এরকম স্টোমাক কয়জনের আছে হু!
পেপার কাটিং
একদিন হেরোইনের রাঙতাটা খোলার সময় একটা হাস্যকর লেখা চোখে পড়ল। কোন এক শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়।
"আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে বাংলাদেশে সম্প্রতি নতুন এক ধরনের জীবনযাপন বেছে নিয়েছে তরুণ-তরুণীরা। তাদের বাবা-মার বিত্তের অভাব নেই। কিন্তু তারা সবকিছু ছেড়েছুড়ে একটা সম্পূর্ণ নিহিলিস্ট জীবন বেছে নিয়েছে। পারিবারিক মূল্যবোধ বলে সেখানে কিছু নেই। যথেচ্ছ যৌনাচার, সঙ্গীতের নামে অপসংস্কৃতির প্রসার, এবং নেশা হচ্ছে তাদের জীবনের অনুষঙ্গ। লিভিং টুগেদার এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখে না তারা, কোন পরিকল্পনা নেই। শরীরে দিনের পর দিন বিষ ভরে নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়া, যথেচ্ছ যৌনাচার কোথায় যাচ্ছে তরুণ সমাজ? আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে..."
এটুক পড়ে "ধুর বাল!" বলে আমি ফেলে দিলাম কাগজটা। শালারা এটা ২০৩০ সাল। নিউ ওয়েভ লাইফের তোরা কী বুঝবি? সারাজীবন ওই লেকচার মাইরাই জীবন কাটাইলা, জীবনের আসল মজা বুঝলা না। মর গিয়া!"
ন্যান্সিকেও পড়ে শুনালাম। আবার শুরু হল তার হিস্টিরিয়াগ্রস্থ হাসি। আজকে আমার ভালো লাগছিলো না।
"তুই থামবি?"
"হিহিহিহিহিহি! ক্যান না থামলে কী করবি?"
"খুন করে ফেলবো। চাকু ঢুকায়া দিবো পেটে।"
সে আরো হিহিহিহি করে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার ওপর। ধ্বস্তাধ্বস্তি হল বেশ কিছুক্ষণ। আমার হাতে তখনও চাকুটা ধরা। ব্র্যান্ডির নেশায় চোখ লাল, এক্সট্যাসির প্রভাবে শরীরে ভায়োলেন্সের বারুদগুলো জ্বলছে...
I did it my wayyyyyy (জবানবন্দী)
হু! আমি ওর বয়ফ্রেন্ড। ওর কী হয়েছে?
-তুমি ওকে খুন করছ হারামজাদা। ছবি দেখো কত রক্ত বের হইছে।
-তাতে আপনার কী?
-আমার কী মানে!
প্রচন্ড এক থাপ্পড়ে আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। কিন্তু গত কয়েকবছরের বিশ্বস্ত জাঙ্ক অভ্যস্ততায় ব্যথা বেদনা যৌনতা সবকিছুরই চেতনা নাশ পেয়েছে আমার। আর গতরাতে নিয়েছি অক্সিকোনটিন। ব্যথার বোধ এমনিতেও নাই।
-কেন খুন করছোস ওকে?
-আই ডিডনট মিন দ্যাট! আই থিনক শি উডন'ট অলসো। সো হোয়াই ইউ আর মেসিং আপ...
এরপরে প্রচন্ড এক আঘাতে আমার চেতনা নাশ পায়।
-আমার সাথে ইংরাজি চোদাস খানকির পোলা!
অজ্ঞান হবার আগে এটুকু শুনতে পাই। পুলিসগুলা সান অফ বিচ!
Coming back to life (পরিশিষ্ট)
গত দুই বছর ধরে জেলখানায় আছি। এইখানে অবশ্য ড্রাগসের অভাব নাই। সবই ম্যানেজ হয়ে যায়। ভালোই আছি। তবে ন্যান্সি আর আমার গিটারটাকে মাঝেমধ্যে মিস করি। আমি গিটার ভালো বাজাতে পারতাম না। কিন্তু একজোড়া মুগ্ধচোখ আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো, যদিও পিনিকড অবস্থায়, তবে ওইটাই আমার বেশি পছন্দ ছিলো। কাল রাতে ন্যান্সি এসেছিলো। ওহ, এটা শুনে তো কিছু গিয়ানি থিওরি চোদাবে যে, হ্যালুসিনেশন না বালছাল। দূরে বহুদূরে গিয়া শাহাদৎ বরণ কর। যাই হোক, অনেক আদর করল আমাকে। আমি ওকে স্যরি বললাম ওই এ্যাক্সিডেন্ট টার জন্যে। সেটা শুনে আবারও ওর সেই হিস্টিরিয়াগ্রস্থ হাসি, থামবেই না! কত করে বলি যে এটা আমাদের ফ্ল্যাট না, এটা একটা কয়েদখানা। তা কী শুনবে! চলে যাবার সময় বলল "সি ইউ সুন"।
পরেরদিন থেকে হঠাৎ করে আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করা শুরু করল কারারক্ষীরা। আমি কী খেতে চাই, আমার আর কী কী লাগবে ইত্যাদি। বুঝলাম আমার ডেথ সেন্টেন্স এ্যানাউন্স হয়ে গেছে। তবে তাদেরকে বুঝতে দিলাম না। জানিতো এগুলো ন্যান্সির চাল। একা একা থাকতে আর ভালো লাগছিলো না ওর। তাই আমাকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছে। এখানে ন্যান্সিই সব। ইশ্বর বা কারারক্ষী বা বিচারক বা মামলার প্যাঁচঘোচ কারো কোনকিচ্ছুরই ভূমিকা নেই।
ন্যান্সির কাছে যাওয়ার জন্যে আমি উত্তেজনামিশ্রিত আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি।
# গল্পটি Sid and Nancy চলচ্চিত্রটি অবলম্বনে লেখা।