(১)
অফিস থেকে বেরুনোর সময় প্রবল বাক-বিতন্ডা, না ঠিক বাক বিতন্ডা নয়, বলা যায় গঠনমূলক আলোচনা বা তর্ক-বিতর্ক হয়ে গেলো দীপের সাথে। দীপ, আমার সহকর্মী এবং বন্ধু। নৈতিকতার মূলে কী, ধর্মগুলোর পরিমার্জন করা দরকার কিনা অথবা আদৌ ধর্মের দরকার আছে কিনা এ নিয়ে দুইজনের দুইমত অথবা নানামত। এসবক্ষেত্রে যা হয় আর কী, শেষমেষ কোন মীমাংসা ছাড়াই চলে আসলাম। তবে রাস্তার পাশের ঝুপড়ি দোকানটায় বসে আমরা অন্তত একটা বিষয়ে একমত হই যে, নৈতিকতা ঠিক থাকাটাই বড়, ধর্ম-কর্ম পালন করা যার যার ব্যাপার। অনেকদিন পর এরকম স্বাস্থ্যকর আলোচনা আমাকে বেশ উদ্দীপ্ত করে তুললো। ন্যায় ও নীতির প্রতি প্রবল অনুরাগ জন্মালো। নীতিবান হতে গিয়ে যদি আমাকে স্প্রাইট থেকে মিনারেল ওয়াটার হতে হয়, তাই সই। থাকলোনা ঝাঁঝ! আমি এক ধরণের ব্রক্ষ্মচর্য পালন করার কঠিন শপথ নিলাম। প্রশান্ত মনে বশিরউদ্দীন রোড ধরে কলাবাগান বাসট্যান্ডের দিকে যাবার পথে গলির শেষ মাথা অতিক্রম করার সময় আমি এক মুহুর্তের জন্যে;
একটা বালিকা কন্ঠের চিৎকার
একজন নধর কিশোরের জোর জবরদস্তি এবং প্রহার ( সে মেয়েটিকে মেইন গেটের সাথে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করছিলো)
এসব দেখতে পাই।
রিকশাঅলা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি চলে এলে আমার নৈতিকতা দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজে। আমি তাকে ঘুরিয়ে আবার ঐ বাসাটায় যাবার নির্দেশ দেই।
ততক্ষণে বেশ লোক জমে গেছে কাহিনী দেখার জন্যে। আমিও উৎসুক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। মেয়েটির বয়স বারো তেরোর বেশি হবেনা। কিছুক্ষণ আগের অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রভাবে সে এখনও কাঁপছে এবং কাঁদছে। আর ছেলেটা? কী ভয়ানক তার দৃষ্টি! কী নেই সেই দৃষ্টিতে। রাগ, কামনা, ক্রোধ, ঘ্বণাও হয়তোবা ছিলো। একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাকে কিছু চড়-চাপড় এবং হুমকি দিয়ে বিদায় করে দেয়।
"এমুন কৈরা কাউরে মারে? নেক্সট টাইম দেখলে আস্তা পুইত্তা ফালামু কব্বরে"
ছেলেটি সেই একইরকম দৃষ্টি দিয়ে আরেকবার ছোবল হেনে চলে গেল। চড়-চাপড়গুলো যেন গায়েই মাখলোনা। ততক্ষণে অন্য একজন সবাইকে গেটের সামনে থেকে ভীড় কমানোর নির্দেশ দিচ্ছে।
"কিছু হয়নাইক্কা। যানগা আপনেরা"
সমবেত হতাশ জনতা চলে যেতে থাকে। আমার পোষাক-আষাক এবং চেহারা ওদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো হবার কারণে-অবশ্য ওদের প্রায় সবাই ছিলো রাস্তার ধারের সিগারেট বিক্রেতা অথবা গার্মেন্টস কর্মী- আমি আরো কিছুক্ষণ পরিস্থিতি অবলোকন করার সুযোগ পাই।
মেয়েটি তখনও অল্প অল্প কাঁদছে। বয়সের তুলনায় মেয়েটির শরীর বেশ বাড়ন্ত। ভারি বুক।
(২)
ঘটনাটা না জেনেই আমাকে ফিরতে হয়। আমি ব্যাপারটা নানাভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। ছেলেটার চোখ এত তীব্র ছিলো কেনো? হয়তোবা তারা ভাইবোন ছিলো। বড়ভাই কোন কারণে ভীষণ রেগে ছোটবোনকে মারধোর করা শুরু করল। কিন্তু তার চোখে সম্ভবত আমি কামনা আর লোভও দেখেছিলাম। তাই প্রথম সম্ভাবনাটা নাকচ করে দেই। অবশ্য অজাচার যে চলছেনা পৃথিবীতে তা বলা যায়না, কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে? নাহ প্রথম সম্ভাবনাটা বাদ। দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা হল, ছেলেটি মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে কোথাও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। মেয়েটা তা বুঝতে পেরে প্রতিরোধের চেষ্টা করে হেনস্তা হয়।
ছেলেটি মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলো।
কচিমুখের মেয়েটা যার স্তন স্ফীত, যার সতীচ্ছেদ পর্দা এখনও ফাটেনি-
তার চোখে ছিলো ভয়
ছেলেটির চোখের তীব্রতা তাহলে কামনাতেই কেন্দ্রীভুত ছিলো! আর সহিংসতা করেছিলো না পাওয়ার অক্ষম আক্রোশে। লোভ, কামনা, ঘৃণা, ক্রোধ, ভয়-এসবের আবরণ দিয়ে মোড়ানো এক টুকরো সহিংসতা আর যৌনতা।
সেক্স এ্যান্ড ভায়োলেন্স।
আমার নব্য হালনাগাদকৃত নৈতিকতার পুস্তকে ভায়োলেন্সকে তীব্রভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এজন্যে ছেলেটার ঐ সহিংস আচরণকে শাপ-শাপান্ত করতে করতে আমি দ্বিতীয় এলিমেন্ট অর্থাৎ সেক্স নিয়ে ভাবি, কাউকে জোর করা, ধর্ষণ করা-তাও আবার প্রায় নাবালিকা একজনকে, ঘৃণ্য ব্যাপার! জোরপূর্বক যৌনতা এবং সহিংসতার আমি তীব্র বিরোধী। স্প্রাইট হবার দরকার নেই আমার, মিনারেল ওয়াটার হয়েই না হয় থাকবো!
(৩)
নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। ঐ ঘটনাটা আমাকে এত ভাবাচ্ছে কেন? আমি কি ভায়োলেন্স এ্যাডিক্টেড হয়ে গেলাম? নাহ তা কী করে হয়? এই সেদিনও একজন পকেটমারকে ধরতে পেরে সুখী ভালোমানুষেরা কিভাবে দানবে রূপান্তরিত হল তাতো দেখেছিই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পকেটমারটাকে বাঁচিয়েছি। ভায়োলেন্সের প্রতি আকর্ষণ থাকলে নিশ্চয়ই আমি তা করতামনা। যোগ দিতাম আগ্রাসী, বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে। কিন্তু তাহলে কেন বারবার ছেলেটির মেয়েটিকে গেটের সাথে চেপে ধরার দৃশ্যটা ভাসছে? দীপের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
-ও কিছুনা, আসলে তোর মেয়েটার অবস্থা দেখে কষ্ট লেগেছিলো, তাই বারবার মনে পড়ছে। আর এত মন খারাপের কী আছে? ছেলেটাকে তো মার দিয়েছেই বললি। হি গট হিজ লেসন। তুই বা আমি কেউই ভায়োলেন্স এ্যাডিক্ট না।
-হু, ঠিকই বলেছিস। কিন্তু নিজেকে টানলি কেন আবার? তোর কথাতো বলিনি।
-কথা প্রসঙ্গে এলো আর কী! বাদ দে, চল ওঠ। যাবিনা? খামোখা অফিসে বসে থেকে হবেটা কী?
আমি সায় দিয়ে উঠে পড়ি। দীপ চলে যায় উল্টোদিকে, ফার্মগেটের ওখানটায়। আমাকে বেরুতে হবে ধানমন্ডি ৮ দিয়ে।
কিন্তু কেন যেন মনে হল, আজকে একটু কলাবাগান দিয়ে যাই! অনেক ঘোরা হবে যদিও, রিকশাভাড়া বেশি লাগবে, বাসেও ভীড় থাকবে, তারপরেও, যাইনা!
আমি ঐ বাসাটির সামনে এসে দাঁড়ালাম। আজকেও যদি কিছু ঘটে! বলা তো যায়না। আশেপাশে কোন দারোয়ানও নেই যে জিজ্ঞেস করব। অবশ্য জিজ্ঞেস করতেই বা যাব কেন? তুচ্ছ একটা ব্যাপার। ঘটেছিলো, মিটে গেছে,শেষ! খামোখাই ওটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। আসলে আমার মনটা অনেক কোমল তো, এসব অনাচার সহ্য করতে পারিনা।
(৪)
আমি বলবোনা যে আমার মধ্যে কামভাব নেই, নির্জলা মিথ্যা হয়ে যাবে সেটা। ভায়োলেন্সের প্রতি বিরাগের কথা আগেই বলেছি। উদাহরণও দিয়েছি। কিন্তু তারপরেও এখন অফিস থেকে বেরুবার সময় আমি আট নাম্বার না হয়ে কলাবাগান দিয়ে বেড়ুই। ঐ বাড়িটি নিরীখ করে যাই। বলা তো যায়না আবার কিছু হয় যদি! উন্মত্ত কিশোরের কাছ থেকে বাড়ন্ত বালিকাকে বাঁচাতেই হবে।
নো ফোর্সড সেক্স
নো ভায়োলেন্স
এখনও চোখ বুজলেই এক মুহুর্তের সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে পাই। যৌন উন্মত্ততায় কাতর কিশোর না পেরে ছোট্ট মেয়েটাকে মারা শুরু করল! কী ভয়ংকর ব্যাপার! আরেকবার ধরতে পারলে মেরে ফাটিয়ে ফেলবো!
আরেকবার করুক!
আরেকবার করুক!
আরেকবার করুক!
আর একবার...
(৫)
এই এলাকায় আনাগোনার সুবাদে চায়ের দোকানদারদের সাথে বেশ ভালোই পরিচয় হয়েছে। তাই কৌশলে কথা বের করার চেষ্টা করি তার কাছ থেকে।
-ঐ যে হলুদ পাঁচতলা বিল্ডিংটা আছেনা? ঐখানকার ছেমরা ছেমরি দুইটার কাহিনী জানেন নাকি কিছু?
-কুন ছেমরা ছেমরি?
-ঐ যে খাইস্টা পোলাডা একবার মাইয়াডারে ধরল, তারপর...
-হ হ! বুচ্ছি। অরা দুই ফ্ল্যাটে কাম করে। অহুন অবশ্য ওগো একলগে দেহাই যায়না। মাইয়া জব্বর ভয় পাইছে।
-ইয়ে...ওরা কী ভাইবোন?
-ধুরু মিয়া ভাইবোন হৈতে যাইবো কিল্লিগা? আপনে কী যে কন! আসলে...
চা বিক্রেতা দীর্ঘ বক্তৃতা দেয়া শুরু করল। আমি আমার প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে গেছি, তাই আর বাকিটুকু শুনলামনা। ওরা ভাইবোন না। তার মানে ছেলেটার ভবিষ্যতে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাঙ আমাকে আবার এই এলাকায় আসতে হবে। নিজ হাতে বদমাশটাকে শাস্তি না দিলে চলছেনা।
(৬)
-ঐ মিয়া সিটিং কয়া স্ট্যান্ডিং লয়া যাইতাছো? আবার ভাড়া নিতাছো সিটিং এর। মাইরা তরে...
কন্ডাক্টরের কলার ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে একজন রাগ দেখায়। সহিংসতা বর্জনীয়। তাই আমি দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে মিটমাট করে দিই। সিটে ফিরে যাবার সময় দেখি যে একজন মহিলা সহযাত্রীনি আমার সিটের একাংশ দখল করে রেখেছেন। আমি কোনমতে শরীর বাঁচিয়ে বসি। কিন্তু মেয়েটা যেন কেমন! ইচ্ছে করেই গায়ে গা লাগাচ্ছে। বেশ তো লাগাক! আমি আরেকটু কাছে বসি। এতে আমার নৈতিক বলের কোন ক্ষতি হবেনা। ফোর্সড সেক্সের বিরূদ্ধে আমি। যেমনটা করতে চেয়েছিলো কলাবাগানের সেই রাগী কিশোর ভীত বালিকার সাথে। আর এখনকার ব্যাপারটা ঠিক সেক্সুয়ালও না। সেনসুয়াল বলা যায়!
(৭)
গভীর রাতে ঘর থেকে বেরুতে ইচ্ছে করে। কলাবাগানের সেই বাসায়। গভীর রাত। রাগী ছোকড়া, তুমি আরেকবার করেই দেখোনা, তোমার কী দশা করি! ভীরু বালিকা, কোন ভয় নেই সোনা। আমি আছি না!
ঘুমের মধ্যে কী সব হাবিজাবি স্বপ্ন দেখি। দেখি যে ঐ হলুদ বিল্ডিংটা ভেঙে পড়েছে ভূমিকম্পে। ছেলেটার লাশ, মেয়েটার লাশ, আরো কত লাশ! ধুর! এটা ঠিক হলনা। ছেলেটাকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। তা আর হলনা!
স্বপ্ন ভাঙার পরে তাই স্বস্তি পাই।
(৮)
-যেহেতু ঘটনাটা প্রায় ছমাস হয়ে গেছে, এবং এখনও তুই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারিসনি ব্যাপারটা। বোঝাই যাচ্ছে তোকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে এই অমানবিকতা। কিন্তু, মাঝেমধ্যে মনে হয়, তুই অবসেসড না তো?
-কিসের অবসেশন?
-মেয়েটার প্রতি।
-একজন বালিকা গৃহচারিকার প্রতি?
-ছেলেটার প্রতি
-কী!!!!
বিস্মিত হই আমি দীপের এমনধারা প্রশ্ন শুনে।
-ব্যাপারটা আসলে ছেলেটা-মেয়েটা না। ব্যাপারটা হচ্ছে তীব্রতা। ছেলেটার চোখে যে তীব্র ক্রোধ আর কাম ছিলো, তা তুই হারিয়ে ফেলেছিস। সেই তীব্রতা তোর নেই। যেমনটা নেই কোন বালিকার ভীরু চাহনি তোর প্রতি। এসব কিছুই তুই হারিয়ে ফেলেছিস। তাই হয়তো মেয়েটার প্রতি...
-স্টপ ইট! স্টপ টকিং বুলশিট!
-আমার কথাগুলো কি অযৌক্তিক? আমরা হারিয়ে ফেলেছিনা এসব তীব্র পাপসুখ?
-'আমরা' বলছিস কেন? তার মানে তুইও?
-কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলেছি। নে, কফি খা।
তীব্র পাপসুখ আবার কী? এরকম কাব্যিক নোঙরামি আমার পছন্দ না মোটেও। আবার বলছে যে তীব্রতা হারিয়ে ফেলেছি। এটা অবশ্য ভুল বলেনি। স্প্রাইটের বদলে মিনারেল ওয়াটার হবার সিদ্ধান্ত তো আগেই নিয়ে ফেলেছি।
(৯)
আজ ফিরতে বেশ রাত হল। নয়টা বাজে। আমি যথারীতি কলাবাগান বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগুচ্ছি। এবং যথারীতি ঐ হলুদ বাড়িটার সামনে আবার দাঁড়ালাম। কই গেলো ঐ দুইজন! আরেকবার সিনক্রিয়েট করে দেখোনা, কী মজাটা দেখাই।
"প্রতীক্ষার অবসান হবে আজ। তুমি মজা দেখবে।"
কে যেন আমার ঘাড়ে হাত রেখে পেছন থেকে বলে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে আমি হতবাক হয়ে যাই। কোত্থেকে এক পাগল এসেছে, পুরো দেহ নগ্ন, একটা সুতোও নেই। বিচ্ছিরি করে হাসে সে।
"চল মেইট, মজা দেখি"
আমি তার উদ্ভট আচরণ এবং নগ্নগাত্র দেখে যারপরনাই বিরক্ত হই। কিন্তু কোথাকার কোন শীর্ণ পাগল, গায়ে তার কী জোর! নাকি সম্মোহন জানে? আমাকে টেনে নিয়ে চলে গেটের সামনে।
"একটা মন্ত্র বললে বেশ হয় কী বল?' হলদে দাঁত বের করে হাসে সে।
"চিচিঙ ফাঁক!"
আশ্চর্য্! দরোজা খুলে গেলো হুট করে! এ লোক ম্যাজিসিয়ান নাকি?
-এইবার দেখো, দেখতে পাচ্ছো? ঐ যে বালিকাটা ভীরু পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে। ঐ যে রাগী কিশোর, হনহন করে তার দিকে ছুটছে!
-এটার প্রতিরোধ করা দরকার। আজ আমি সুযোগ পেয়েছি।
আমি শার্টের হাতা গুটিয়ে এগুতে নিলে সে আমাকে শক্ত হাতে চেপে ধরে।
-দেখোইনা মজা! ঐ দেখো ছেলেটা মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরছে। মেয়েটা ছাড়াবার জন্যে চেষ্টা করছে, মজা না?
এই সাইকো ন্যাঙটা পাগলটার হাত থেকে রক্ষা পাই কীভাবে? গায়ে শক্তিও তো বেশুমার। এমন করে ধরে রেখেছে...
-দ্যাখো দ্যাখো, মেয়েটার উর্ধাঙ্গ অনাবৃত করে ফেলেছে। আহা! অল্প বয়সেই যা জিনিস বানিয়েছে না!
আমি হাত ছাড়াবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। কিন্তু উল্টো লোকটাই আমাকে বেঁধে ফেললো। তারপর ছুটে চলল এই অবাক নাটকের মঞ্চের দিকে। ছেলেটাকে সরিয়ে দিয়ে ভীষণ মারা শুরু করলো।
উহু! এতটা ভায়োলেন্স ঠিক না।
চোখ উপড়ে ফেলছে দেখছি!
"এই থামো থামো!" চিৎকার করি আমি। কিন্তু বৃথা সে চিৎকার। ওকে আজ ভায়োলেন্সের নেশায় পেয়েছে। নির্মমভাবে পিটিয়ে চলছে ছেলেটাকে। শাস্তি ছেলেটার প্রাপ্য, তাই বলে এমন অমানবিক শাস্তি! চোখ উপড়ে ফেলছে, তলপেটে লাথির পর লাথি, মাথাটা ঠুকে দিচ্ছে কঙক্রিট দেয়ালের সাথে। কী ভয়ানক লোক! মেয়েটার ওপর আবার নির্যাতন চালাবে নাতো? আমার আশঙ্কাই সত্যি হলো। ভয়ংকর ধর্ষণ, চোখে দেখা যায়না এ দৃশ্য। আমি চিৎকার করে ওকে থামতে বলি, কামোন্মত্ত পশুটাকে নিরুপায় নির্বোধের মত। যে মেয়েটা সেদিন কাঁপছিলো, কাঁদছিলো, আজকে তার আর বাঁধা দেয়ারও শক্তি নেই। এমনই উন্মত্ত আর পাশবিক ঐ ন্যাংটা জঘন্য লোকটা। আমি কিছুই করতে পারছিনা। অসহ্য আক্রোশে ঠোঁট কামড়ে ধরছি...অবশেষে ওদের পেলাম, কিন্তু নৈতিক অনাচারের বিরূদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া হলনা!
(১০)
কতক্ষণ পার হয়েছে জানিনা। নগ্ন লোকটি ঘর্মাক্ত গায়ে আমার কাছে এসে বাঁধন খুলে দিতে থাকে।
-ইউ স্টুপিড এ্যাসহোল!
-হেহে! রাগ কইরোনা। চল যাই।
-যাবো মানে? কোথায় যাবো?
-তুমি ছাড়া আমার আর কোথায় আশ্রয় বলো! তুমি যেখানে যাবে আমিও সেখানেই যাবো। আমি সাধারণত ঘুমিয়েই থাকি। মাঝেমধ্যে জেগে উঠলেই তোমার যা বিপত্তি হয়!
-তার মানে তুমি...?
-হ্যাঁ
প্রশ্নের জবাবে মাথা নেড়ে আমার শরীরের ভেতর সেঁধিয়ে গেলো সে...
আমি জানলাম আজকে, তীব্রতা কখনও মরেনা! শত শত নগ্ন গাত্রের মানুষের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি অবচেতন মনকে ঝাড়ি দেই,
"সেক্স আর ভায়োলেন্স না থাকলে তুই চিরকাল এভাবে ঘুমিয়েই থাকতি!"
"হে হে হে!"
প্রত্যুত্তরে তার হাসি শুনে আমার মনে হয়, নীতিবইটা হালনাগাদ করার সময় হয়েছে আবার।