একটা সময় এদেশে শিক্ষার হার খুবই কম
ছিল। বলা হয়, অশিক্ষিত জাতি ও বর্বর
জাতির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য
থাকে না। তবে এ কথা যে আমাদের
দেশের মানুষ কোনো দিনই মানেনি, তা
তাদের আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে
প্রকাশিত হয়েছে। তাদের শিক্ষার
ভিত্তি হয়েছিল, ধর্মীয়, পারিবারিক ও
সামাজিক মূল্যবোধ, বিধিনিষেধ এবং
অনুশাসন। এসব গুণাবলী আঁকড়ে ধরে মানুষ
অতুলনীয় মানবিকতার প্রতীকে পরিণত হয়।
তারা নিজেদের আলাদা কোনো সম্প্রদায়
মনে করেনি। আমরা
বাংলাদেশি, এই একটি সম্প্রদায়েই
বিশ্বাস করত।
এদেশের মানুষরা নাকি অতিথিপরায়ণ ছিল।
রাস্তা দিয়ে কোন অপরিচিত মানুষ হেটে
যাওয়ার পথে এক গ্লাস পানি খেতে চাইলে
তাদের বাড়িতে নিয়ে শুধু পানিই নয়,সাথে
মুড়ি-মিঠাইও খাওয়ানো হতো!
কিন্তু এ কোন সমাজ,যেখানে কিনা পিতৃতুল্য
শিক্ষকের কাছে ছাত্রী নিরাপদ না,বাবার
কাছে মেয়ে নিরাপদ না,ভাইয়ের কাছে
বোন নিরাপদ না!
কোথায় গেলো আমাদের সেই ধর্মীয়,
পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ?
কেনোই বা এই মূল্যবোধের অবক্ষয়?
আমি প্রথমেই দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে
দায়ী করছি।যে দেশের মানুষ ভাতকে শুধু
ভাত,আর দুধকে শুধু দুধই ভাবে।তাদেরকে তাই
ভাবতে দিন।কিন্তু তাদেরকে উল্টো পথ
দেখানো হচ্ছে।
কলেজ কিংবা ইউনিভারসিটিতে
মানবিক,সাংস্কৃতিক, নৈতিক শিক্ষার বদলে
শেখানো হচ্ছে জিপিএ বাড়ানোর শিক্ষা।
শিক্ষা এখন জিপিএ খাঁচায় বন্দি।
ছাত্রদেরকে গড়ে তোলা হচ্ছে চাকরির
মানষিকতায়।ভালো মানুষ হবার জন্য নয়।
সামাজিকীকরণ নামক একটা চক্র আছে।সেই
চক্রটাই নষ্ট করেছে আমাদের এই শিক্ষা
ব্যাবস্থা ।শিক্ষিতের হার বাড়ার সাথে
সাথেই এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ
করেছে।কারণ আমাদের এই শিক্ষা প্রকৃত
শিক্ষা নয়।এটা হলো চাকরি শিক্ষা।চাকরি
মানে টাকা।আর টাকার নেশাই একটা
সমাজকে কিংবা সামাজিক বন্ধনকে
ভাঙ্গার জন্য যথেষ্ঠ।
ব্যাক্তিগত টাকার নেশা প্রথমেই প্রভাব
ফেলে পরিবারে,তারপর সেটা সমাজ, দেশ
জাতির ওপর হানা দেয়।
আমি বলছি না সবাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
দেয়া টাকার নেশাটাকে গ্রহন করে।কেউ
কেউ প্রকৃত শিক্ষা নিয়েই যুদ্ধ করছে টাকার
নেশার বিপরীতে।আমার পরিচিত এক বড় ভাই
আছে।হয়তোবা আমি তার পরিচিত নই।তাকে
দেখেছি মাত্র দুইবার।যেকিনা প্রেসার
কুকাড়ের মত একাডেমিক চাপকে উপেক্ষা
করেই ছাত্র জীবন থেকেই লেখক নামক
যোদ্ধাদের তালিকায় যোগ দেন। আমি
পরিতোষ দাদার কথা বলছি। পিএইচডি
ডিগ্রি শেষ করেও যিনি টাকা পয়সার লোভ
ছেড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসার টানে
পড়ে আছেন ঢাকা শহর থেকে ৫০০
কিলোমিটার দুরে।
এসব কিছু তরুনদের যুদ্ধের কারনে সমাজ
তাঁজা হয়ে বেঁচে না থাকতে পারলেও বেঁচে
আছে।হয়তোবা আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থা
আস্তে আস্তে এই যোদ্ধাদের বিলুপ্ত করে
দেবে।তারপর।
তারপর যোদ্ধা না থাকলে যুদ্ধক্ষেত্রের কি
পরিণতি হয় সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
#Palash_Talukder
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭