somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘আব্বা বলতেন, কখনও কোনও বিপদে পড়লে মোশতাক কাকার কাছে যেও’

১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ুন চৌধুরীর স্ত্রী মাহজাবীন চৌধুরী র বর্ননায়..
শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনার দিন থেকে পরবর্তী ছয় দিন জার্মানিতে তদানীন্তন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর আশ্রয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তখনও তারা জানতেন না তাদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই। আর এই হত্যার ঘটনায় খন্দকার মোশতাক জড়িত তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘চাচা যেভাবে পারেন রাসেলকে এনে দেন।’ রাসেলের খুব কষ্ট হচ্ছে, বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে, মা নিশ্চয়ই পাগল প্রায়। রাসেলের খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না, থাকার নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে, ওর যত্ন হচ্ছে না, আমাদের কাছে রাসেলকে এনে দেন’। ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পরে জার্মানিতে যখন সেদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় শেখ হাসিনার তখন চিৎকার করে কান্না করতে করতে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
‘ততক্ষণে বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই। দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এ খবর জানলেও তাদের দুই বোনের পরিবার বলতে, আপনজন বলতে পৃথিবীতে আর কেউ যে বেঁচে নেই এটা তাদের কল্পনাতেই ছিল না। তাই তারা বাবার জন্যে কান্নাকাটি করলেও ছোট ভাই শেখ রাসেল—যে ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়িটি সারাদিন মাতিয়ে রাখতো আদরের সেই ছোট ভাইটির থাকা, খাওয়া ও যত্ন হচ্ছে না এটা ভেবেই ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন। তাই মা, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল ও তাদের স্ত্রীদের চেয়েও আগে শেখ রাসেলকে নিয়ে ভেবেছেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘাতকেরা যে শিশু রাসেলকেও হত্যা করে পৈশাচিকতার ইতিহাস রচনা করবেন এটা বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা দুই বোন ভাবতেও পারেননি। শুধু তাই নয়, আপন বলতে পৃথিবীতে তাদের কেউ যে আর বেঁচে নেই এই চিন্তা তাদের ছুঁতেই পারেনি অনেকদিন। জার্মানি থেকে ভারত যাওয়ার পরে জানতে পারেন পৃথিবীতে তাদের আর কেউ নেই।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই ৬ দিন জার্মানিতে যার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রী মাহজাবীন চৌধুরী কথাগুলো বলছিলেন।
ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে ওঠে চাকরির মায়া ত্যাগ করে বিদেশে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে আশ্রয় দিয়েছেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও মাহজাবীন চৌধুরী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রদূত হিসাবে জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন হুমায়ুন রশীদ। সঙ্গে থাকা স্ত্রী মাহজাবীন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত পিতৃহারা দুই কন্যার সেবাযত্ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ব্যস্ত ছিলেন তাদের মানসিকভাবে সাহস ও শক্তি যোগানোতে। সেখান থেকে দুই বোন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সরকারের আশ্রয়ে যান। ধানমন্ডির পুরনো ২৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাসায় বসে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন মাহজাবীন চৌধুরী। এসময় সঙ্গে ছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে নোমান রশীদ চৌধুরী।
মাহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘১৫ আগস্টের ঘটনায় দুই বোনের জিন্দেগি কষ্টের হয়ে গেল। ১৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের সবার একটাই চিন্তা ছিল বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা দুই কন্যার নিরাপত্তা নিয়ে। পরে এ দায়িত্ব নিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট যখন ওরা আমার বাসায় আসে জার্মানিতে। তিন তলার সেই বাসা থেকে গেইট ছিল কয়েক গজ দূরে। গেইট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা যখন ঢুকছিলেন তখন আশপাশের সব শব্দ ভেদ করে শুধু চিৎকার করা কান্নার শব্দই পেতে থাকলাম। সে কী কান্না! এই কান্না আর থামেনি। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা রাত শুধু কান্নার শব্দই শুনেছি দুই কন্যার মুখে আর রাসেলকে ফিরে পাওয়ার আঁকুতি। বাসার ভেতরে ঢুকে যখন হুমায়ুন রশীদের সঙ্গে তাদের প্রথম দেখা হয় শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাচা গো আমাদের কাছে রাসেলকে এনে দাও।’ জবাবে রশীদ সাহেব বলেন, ‘রাসেলকে এখানে আনার চেষ্টা করছি। তোমরা শান্ত হও।’
মাহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘৬ দিন শেখ সাহেবের দুই কন্যা আমাদের বাসায় ছিল, এক মুহুর্তের জন্যে তাদের স্বাভাবিক দেখিনি। শুধু কান্না, হাউ মাউ, চিৎকার করে কান্না। আমাদের বাড়িটি ছিল তিন তলা। তৃতীয়তলায় ওদের দুই বোনের জন্যে দুটি রুম ছিল। একটিতে ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনাকে নিয়ে থাকতেন, অপরটিতে শেখ হাসিনার সন্তান নিয়ে শেখ রেহানা থাকত। ওই দুই রুমেই তারা থেকেছে। খাওয়া নাই, ঘুম নাই দুই বোনের। অনেক চেষ্টা করেছি তাদের মুখে খাওয়ার তুলে দেওয়ার, ঘুম পাড়ানোর। কিন্তু কিছুতেই তাদের চিৎকার করা কান্না থামাতে পারতাম না। কোনোমতেই সান্ত্বনা দিয়ে তাদের দুই বোনকে কুলানো যেতো না।’
তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যে ৬ দিন আমাদের বাসায় ছিল শুধু কান্না করত, আব্বা গো, আব্বা গো করে। তারা তখন পর্যন্ত ধারণা করছিল, শুধু তাদের বাবা নেই, অন্যরা বেঁচে আছেন। ৬ দিন পরে দুই বোন যখন আমাদের বাসা থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী শেখ হাসিনার মাথায় হাত রেখে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে ‘যাও মা তুমি একদিন বাংলাদেশের ইন্দিরা গান্ধী হবে।’ সেই তো হল। ছোট একটা মেয়ে কেমন পলিটিশিয়ান হয়েছে। আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছে। কেউ তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। আমি অনেক দোয়া করি তাদের জন্যে।’’
মাহজাবীন বলেন, ১৮ না ১৯ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা শুনলেন বাংলাদেশের এই ক্যু-র সঙ্গে খোন্দকার মোশতাক আহমেদ জড়িত কথাটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। এই ঘটনার পর শেখ হাসিনা বারবার বললেন, ‘আব্বা আমাদের সবসময় বলতেন কখনও কোন বিপদে পড়লে তোমরা মোশতাক কাকাকে জানিও, যেও। সেই মোশতাক কাকাই আমাদের এতিম করলেন!’

ছবি :ব্লগ থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৩:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×