শাহবাগে সিদ্ধাš- হয় যে প্রক্রিয়ায়
দৈনিক প্রথম আলো : ২৫/০২/২০১৩
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি ব্লগাররা শুরু করলেও এটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধাš-গুলো এখন আর তারা নিচ্ছেন না। ব্লগারদের সংগঠনের নেতা কর্মসূচিগুলো ঘোষণা করলেও সিদ্ধাš- নেওয়া হচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের বৈঠকেই। সেখানে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিও থাকেন। তবে বৈঠকের সিদ্ধাš- ঘোষণা হওয়ার সময় পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার অভিযোগও আছে। সরেজমিন দেখা যায়, গত তিন দিনের শাহবাগ আন্দোলনের কর্মসূচির সিদ্ধাš- নিয়ে বার বার মিটিং করেছেন এর সংগঠক হিসেবে পরিচিতরা। জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ডের কারণেই এই ঘন ঘন বৈঠক ও সিদ্ধাš- পরিবর্তন। আন্দোলন নিয়ে গতকাল দ্বিতীয় দফায় একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে আগের মতো সেই কমিটির সদস্য কারা বা আহ্বায়ক কে তাও পরিষ্কার করা হয়নি, অস্পষ্টতায় খোদ আন্দোলন¯’লে ১৭ দিন অব¯’ান করা সাধারণ আন্দোলনকারীরাও। দুই সংগঠক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, কমিটি হয়েছে। অপর পক্ষে দুই সংগঠক বলেছেন, এ ধরনের কমিটি ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে বৈঠকে বসে যারা আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধাš- নিচ্ছেন তারা হলেন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও জিটিভির টকশো উপ¯’াপক অঞ্জন রায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বর্তমান সভাপতি এস এম শুভ, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর সাহা, জাসদ ছাত্রলীগের হোসাইন আহমেদ তাসপির, ছাত্র ফ্রন্টের সাহিদুজ্জামান সাকন। এ ছাড়া বিভিন্ন বৈঠকে উপ¯ি’ত থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তীরন্দাজ, স্লোগান’৭১, প্রজন্ম’৭১, ঘুণপোকা, বটতলা, ফাঁসির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্কৃতির নয়া সেতু, আমজনতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি, ঢাবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ট্যুরিজম সোসাইটির প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বর্তমানে সরকারের পদ¯’ কর্মকর্তা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক আন্দোলনকারী। তবে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করার অভিযোগও আছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও আছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের আদর্শের সংঘাতও রয়েছে। কারও কারও ‘কর্তৃত্ব’সূচক আচরণ নিয়েও ক্ষোভ আছে। এর পরও বৃহৎ স্বার্থে সব কিছু উপেক্ষা করেই সবাই দাবি তুলছেন রাজাকারদের ফাঁসির। জানা যায়, আন্দোলন নিয়ে বিভক্তির শুরু হয় যখন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের সংগঠনের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বিকাল ৩টা থেকে ১০টা পর্যš- আন্দোলনের ঘোষণা দেন। সে সময় ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধাš- ঘোষণা করা হয়। কিš‘ মানতে পারেননি অন্যান্য অরাজনৈতিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ সমর্থনকারীরা। সেদিনই খুন হন ব্লগার রাজীব হায়দার। ফলে সবার স্বতঃস্ফূর্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধাš- পরিবর্তন করা হয়। সেদিন বৈঠক হয় শাহবাগের ফুলের দোকান মালিক সমিতির কক্ষে (পরে বৈঠক¯’ল ¯’ানাš-রিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচ তলায়)। সেখানে উপ¯ি’ত এক ছাত্র সংগঠনের নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সং¯’ার জরিপ অনুসারে শাহবাগের নিরাপত্তা সমস্যা থাকার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া শাহবাগ এলাকায় দুটি বড় হাসপাতাল থাকায় আন্দোলনের সময়সূচি পরিবর্তন করার সিদ্ধাš- হয়েছিল। সেদিনই সিদ্ধাš- হয় শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলন¯’ল জাদুঘর বা পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ করা যায় কি না তা ভেবে দেখার।’ এর পরই পরে ও শুক্রবার আন্দোলন¯’ল পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। তবে বৃহস্পতি ও শুক্র বার ঘোষণা দেওয়া কর্মসূচির পরিবর্তন নিয়ে ক্ষোভ আছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে। তাদের মতে, শুক্রবারের মহাসমাবেশে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধাšে-র সঙ্গে তার অমিল আছে। জামায়াত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধাš- হয় কিš‘ ঘোষণা নয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে। আবার নিষিদ্ধ করতে ২৬ মার্চ পর্যš- সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধাš- হয়। কিš‘ পরে তা পাল্টে যায়, বলা হয়, নিষিদ্ধ করার ‘প্র¯-ুতি’ নিতে হবে ২৬ মার্চের মধ্যে। এ দুটি নিয়ে স্পষ্ট মতবিরোধ আছে আন্দোলনকারীদের। তবে সবারই আশা, স্পস্ট বক্তব্য বা আলোচনা সব সমস্যার সমাধান করতে পারে।
দুই দিন পর আসবে ঘোষণা : ২৬ ফেব্র“য়ারি শাহবাগ জাগরণের চূড়াš- দাবি পেশ করা হতে পারে। এ নিয়ে আলোচনায় গতকাল সন্ধ্যায়ও বৈঠকে বসেছিলেন আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা। শাহবাগে অব¯’ান করা এই তরুণ প্রজন্ম রাজাকারের ফাঁসি ও জামায়াত নিষিদ্ধ করা ছাড়া রাজপথ ছাড়বে না বলে বদ্ধপরিকর।