somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ এত গুলি ছুড়ছে কেন পুলিশ

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ এত গুলি ছুড়ছে কেন পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
হঠাৎই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের গুলিতে একের পর এক নিহতের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু হঠাৎই পুলিশ এত গুলি ছুড়ছে কেন? এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে অপরাধ-বিশেষজ্ঞদের। তাদের অনেকেই বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। গুলি করার আগে বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় আনছেন না পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের অতি-উৎসাহী কর্মকাণ্ডের ফল সরকারকেই ভোগ করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অপরাধ-বিশেষজ্ঞ বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দোহাই দিয়ে গুলি করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা কখনোই পুলিশকে শেখানো হয় না। বর্তমান পরিস্থিতি তো এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেনি যে, পুলিশকে নির্বিচারে গুলি করতে হবে। আইনে উল্লেখ করা না হলেও আগে পুলিশ হাঁটুর নিচে গুলি করত। এখন মেরে ফেলার উদ্দেশে সরাসরি বুকেই গুলি করছে। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক নয়।' সাবেক মুখ্য সচিব সা'দাত হোসেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'পুলিশ মনে হয় অনেক চাপে রয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। আবার তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। নইলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।'

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. এনামুল হক বলেন, 'পুলিশ তো হুকুমের চাকর। তাই হুকুম পালন তো করতেই হবে। তবে হুকুম দেওয়ার আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত। গুলির হুকুমটি আসলেই দায়িত্ববোধ থেকে দেওয়া হচ্ছে কি না।' ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হুকুমটিও অধস্তনকে নিজের বিবেকবোধ থেকে বিচার করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অনেক পুলিশ সদস্য গুলি করার ক্ষেত্রে ওপরের নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। তাদের সংখ্যাই বর্তমানে এ বাহিনীতে বেশি। আবার অনেক পুলিশ সদস্য হুকুম পাওয়ার পরও নিজের বিবেকবোধ থেকে বিবেচনা করার পর এর প্রয়োগ ঘটান।'

মানিকগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে ড. এনামুল বলেন, 'এ ঘটনাটি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে ওই এলাকার প্রতি আমার এক ধরনের টান কাজ করে। এ ধরনের ঘটনা যদি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। নীতি-নির্ধারকদেরও বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। আইন সবার জন্য সমান। তবে সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হয় কি? সম্প্রতি বরিশালে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনাটিও আমাকে অনেকটা আহত করেছে।'

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনাগুলো একেকটা একেক রকম। তবে জীবনের নিরাপত্তা কিংবা অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটলে পুলিশ গুলি ছুড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমের প্রয়োজন হয় না। তবে বর্তমান যুগ তো মোবাইলের যুগ। সে ক্ষেত্রে পূর্ব-নির্ধারিত কর্মসূচি থাকলে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি তো নিতেই পারে পুলিশ। ঢাকায় তো পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি!' রায়ট কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে পুলিশের উচিত প্রথমে ওয়ার্নিং দেওয়া এমন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল কিংবা ফাঁকা গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার উদ্যোগ নিতে পারে পুলিশ। পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য ও ক্ষমতা সম্পর্কে 'সিআরপিসি' ও 'পিআরবি' আইনে তো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, 'জান ও মালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ অবশ্যই গুলি চালাতে পারে। বাংলাদেশের দণ্ডবিধিই পুলিশকে এ ক্ষমতা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমেরও প্রয়োজন নেই। মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে সহকারী কমিশনার থেকে তদূর্ধ্ব পুলিশ কর্মকর্তাদের তো নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়াই আছে।' হাঁটুর নিচে গুলির বিষয়ে তিনি বলেন, 'হাঁটুর নিচেই গুলি করতে হবে আইনে এমন কথা নেই। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশই গুলি চালানোর জন্য যথেষ্ট। তবে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়টি নিয়ে যথাযথ জবাবদিহির প্রয়োজন আছে। প্রকৃতপক্ষেই ওই পরিস্থিতিতে গুলিবর্ষণ করা প্রয়োজন ছিল কি না।'
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×