জাতীয় সংসদের সর্বাধিক বাজেট পেশকারী এবং সিলেটের উন্নয়নের রূপকার...সিলেট তথা আমাদের দেশের গর্ব আমাদের সবার প্রিয় মরহুম এম সাইফুর রহমানের মতো বর্ষীয়ান নেতার ভীষণ অভাববোধ করছি এই মুহূর্তে....
সাইফুর রহমানের মত নেতা শত বছরে একবার আসে...
বিএনপি জাতীয় স্থায়ীকমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এ দিনে মৌলভীবাজার থেকে সড়কপথে ঢাকা ফেরার পথে আশুগঞ্জের খড়িয়ালায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।দেশের ইতিহাসে দীর্ঘসময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের অধিকারী সাইফুর রহমান ১৯৩২ সালের মার্চ মাসে মৌলভীবাজারের বাহারমর্দন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম ডিগ্রি লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন এবং দুই মাসেরও বেশি সময় কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন চলে যান এবং ’৫৮ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টস (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস)-এর ফেলো হন। পারিবারিক জীবনে তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যার পিতা ছিলেন। ৩৫ বছরের পেশাগত জীবনে সাইফুর রহমান কেমিক্যাল, তেল-গ্যাস উত্তোলন, ট্রান্সপোর্ট, ব্যাংকিং, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কলসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় বেতন কমিশনে প্রাইভেট সেক্টর থেকে একমাত্র সদস্য মনোনীত হন। ’৭৩-৭৫ সালে জাতীয় বেতন কমিশনের সদস্যসহ কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি রাজনৈতিক সরকারের হয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। জিয়াউর রহমান একজন সফল ও ব্যস্ত চার্টার্ড একাউন্টেন্ডেন্টকে রাজনীতিতে এনে সফল রাজনীতিবিদে পরিণত করেন।
তিনি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রী থাকা এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাজেট পেশ করার কৃতিত্বের অধিকারী। রাজনৈতিক জীবনে সাইফুর রহমান ৪ বার এমপি নির্বাচিত হন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে সর্বাধিক খ্যাত হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের প্রবর্তক সাইফুর রহমান বাংলাদেশের অর্থনীতির সংস্কার বিষয়ে বেশকিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরস নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ’৯৪ সালের অক্টোবরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ’৮০-৮২ ও ’৯১-৯৬ সালে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, আইএফএডিতে বাংলাদেশের গভর্নর ছিলেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি সব সময় থেকেছেন সামনের কাতারে।
সেই সাথে তিনি একজন কীর্তিমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন।
'তলাবিহীন ঝুড়ি' নামে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ নামের ভুখন্ডটি যে দুই জন মানুষের রক্তে ,ঘামে, মেধায়, প্রজ্ঞায় আর নেতৃত্বে আজকের আধুনিক বাংলাদেশ, শিল্প, ব্যাবসা, কৃষি কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের ব্যাস্ত বাংলাদেশ, তাদের অন্যতম একজন আমাদের মহান নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সাহেব। আজকে উনার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিনের দরবারে উনার জন্য জান্নাত উল ফিরদৌস ভিক্ষা চাইছি, আমীন।
শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে (বীর উত্তম) এর সহযোদ্ধা, আধুনিক বাংলাদেশের অন্যতম রুপকার এম সাইফুর রহমান এর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা,
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ..