রাত ১২ টায় দেয়াল ঘড়িটার বিকট শব্দে অরুণার ঘোর কাটে...অরুণা চমকে তাকিয়ে থাকে..ছোটছেলে বিদেশ থেকে এই বিকট শব্দের অধিকারী ঘড়িটা পাঠিয়েছে !
বইয়ের আলমারিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘোর চলে এসেছিল টের পায় নি !
অরুণা উঠে দাঁড়ায়..লাল মলাটের কবিতার বইটা আজ বড্ড বেশি আকর্ষণ করছে!
এতদিন আড়ালে থাকা বইটা হঠাৎ চোখের সামনে কীভাবে ধরা দিল,সেই রহস্য ভাবতে ভাবতে অরুণা বইটি হাতে নেয়..
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর "অন্ধকার বারান্দা"..অনিমেষের পছন্দের বই আর তার জীবনে পাওয়া প্রথম উপহার !
অরুণা বারান্দার দোল খাওয়া চেয়ারটায় বসে..."সোডিয়াম বাতির হলুদ আলোতে কবিতার বই পড়ো,দেখবে কবিতাকে ভালবেসে ফেলবে" - অনিমেষের এই সৌখিনতা অরুণার ভাল লাগতো ! ছন্নছাড়া পঁচিশ বছরের এই যুবক যখন ভরাট কন্ঠে আবৃতি করতো, অরুণা অবাক হয়ে শুনতো..কখনো কখনো চোখে পানি চলে আসাটাও অস্বাভাবিক ছিল না ! অরুণা খুব গোপনে পানি মুছতো যেন অনিমেষ না দেখে !
আজ ৪৩ বছর পরো যেন সেই কন্ঠ কানে লেগে আছে!
অরুণা আনমনে পৃষ্ঠা এলোমেলো করতে থাকে...অনিমেষের গন্ধ বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠায় লেগে আছে!
শেষ পাতায় একটি মৃত গোলাপ..৪৩ বছরের পুরনো মৃত গোলাপটি অরুণা পরম মমতায় হাতে তুলে নেয় ! কুঁচকে যাওয়া হাতে ফুলটি বেমানান..অরুণার বিয়ের দিন অনিমেষ দিয়েছিল, হেসে বলেছিল- "আমি জানি তুমি ভাল থাকবে "
শেষ পৃষ্ঠায় অনিমেষের গোটা গোটা হাতের লেখায় চোখ আটকে যায়..
"তুমি বলেছিলে, বিচ্ছেদই শেষ কথা।
শেষ কথা কেউ জানে?
কথা যে ছড়িয়ে আছে হৃদয়ের সব গানে,
সবখানে;
তারও পরে আছে বাঙময় নীরবতা"
- প্রিয়তমাসু
সোডিয়াম বাতির মৃদু আলোতে বৃদ্ধাশ্রমের বারান্দায় বসে থাকা ৬৬ বছরের বৃদ্ধার চোখের পানি আজো কারো চোখে পরে না..খুব গোপনেই তা সবার আড়ালে চলে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৩