১.
প্রায় ১০ মিনিট লাগলো রফিকের মেজাজটাকে বশে আনতে। সকাল সকাল এত ঝামেলা নিতে ভাল লাগে না। লেখাপড়ায় হাত খরচ বাঁচানোর আশায় সে লোকাল চ্যানেল "দেশ বাংলায়" চাকরী টা নিয়েছিলো।
শুরুতে কাজ ছিল শুধু টুকটাক ফাইল গুলা দেখা। মাসে মাসে যা পায় তা দিয়ে নিজের চলাতেই হিমশিম খেতে হয়। তারপরও বাড়িতে কিছুটা পাঠানোর চেষ্টা করতো। যতই দিন যাচ্ছে কাজের চাপ বাড়ছে। ডেস্ক থেকে কাজের ক্ষেত্র মাঠে ঘাটে স্থানান্তর হলো। রফিক তাও হাসি মুখে মেনে নিলো। চাকরীটা তার ভীষণ দরকার। নিজ পয়সা খরচ করে বিভিন্ন জায়গায় খবর করতে যেতে হতো। ধীরে ধীরে বাড়ির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় সে। নিজেরই যেখানে টানাটানি সেখানে বাড়িতে কি সাহায্য দিবে !
এত কিছুর পরো মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল সে,কিন্তু গত এক সপ্তাহ যাবৎ যা ঘটছে তা ধৈর্যসীমাকে অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন সকালের সংবাদ তাকে দিয়ে পড়ানো হচ্ছে ।
একে তো কম বেতন তার উপর এত সকালে কেউ সংবাদ দেখে না-এই সত্য রফিকের ভালভাবেই জানা। তাও সে মুখ শক্ত করে, "অমুক এলাকায় অমুকের মৃত্যু "
"অমুকের পুত্রের অপহরণ"
"অমুক সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত"
কতিপয় দুঃসংবাদগুলা এক নাগাড়ে পড়ে যায়। বদি ভাইকে বলেছিল, "এগুলা কি জোগাড় করেন? সকাল সকাল দুঃসংবাদ পড়তে ভাল্লাগেনা "
বদি ভাই মুখ বাঁকা করে বলেছিল," সকাল সকাল কেউ তোমার সংবাদ দেখার জন্য চানমুখ কইরা বইসাও থাকে না!"
বদি ভাই এর যদিও কোন নির্দিষ্ট পোষ্ট নাই এবং তার কথা বলার ধরন খারাপ কিন্তু সে এই চ্যানেলের সর্বেসর্বা। সংবাদ জোগাড় থেকে প্রচার সব কাজ সে প্রায় একাই করে। তা না হলে হাতে গোণা কয়েকজন সাংবাদিক নিয়ে এই অখ্যাত চ্যানেল কবে যে দেশ বাংলার মাটিতে মিশে যেতো কে জানে।
রফিক আর কথা বাড়ায় না। এই চাকরীটা তার ভীষণ দরকার। আর কয়েকটা বছর পর পাশ করে বের হতে পারলেই,নতুন চাকরী নিবে। বাড়ির সাথে যোগাযোগ করবে- রফিক নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে!
বদি ভাই পিছন থেকে বলে উঠে "কিচ্ছে তোমার? ৮ টা বাজে, দেখো না?"
রফিক নিজেকে প্রস্তুত করে,নতুন কোন মৃত্যু সংবাদ পড়ার জন্য!
২.
বদি ভাই ক্যামেরার পিছে দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করে " এই পোলা এই,কান্দো কেন? টিভিতে দেখাইতেছে তোমারে! ক্যামেরার সামনে এডি কি করতেছো!"
রফিকের মাথায় কিছু ঢুকছে না, "কেন্দুয়া গ্রামে ভিক্ষা করতে গিয়ে আব্দুল নামের একজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন!"
ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রফিক বলে উঠে "বাবা"
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৩