১.
রৌনককে যখন পাওয়া গেছে তখন প্রায় রাত ১০ টা। প্রায় কারণ ইন্সপেক্টর হাফিজের হাত ঘড়িটা গত ২০ দিন যাবৎ চলছে না। প্রথম প্রথম সমস্যা হতো,এখন আন্দাজে সময় ধরে নেয়।
রাত ১০ টায় ফার্মগেট ওভারব্রিজের গোড়ায় পুরানো টং দোকানটার সামনে রৌনক ছিল।মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে,বুঝাই যায় ড্রাগ এডিক্ট। রাত ৯ টার পর ফার্মগেট এলাকার নিয়মিত দৃশ্য এই নেশাখোর। তাদের নিয়ে কেউ খুব বেশি মাথা ঘামায় না।
রৌনক চা খেতে খেতে হঠাৎ মাটিতে পরে যায়। দোকানদারের কাজের ছেলেটা এগিয়ে যায় তবে ছোঁয় না।
দোকানের সামনে অজ্ঞান হবার জন্য দোকানদার দুটা গালি দেয়।
- "ও স্যার,হেতে দেহি নড়ে না"
- "দুইটা লাথি মারলেই নড়বো"
- "স্যার মইরা গেছেনি!"
জহির মিয়ার টনক নড়ে। ছ'মাস আগে এভাবে একজন মারা যায়। গাঁজা না হিরোইন কি জানি নিতে বসেই শেষ..তার দোকান উঠে যাবার মত হয়েছিল। পুলিশি ঝামেলাকে এরপর থেকেই জহির মিয়া ভয় পায়।
- "কুদ্দুস থানায় খবর দে! হালা সারাদিন খুন খারাবি কইরা মরার জন্য খালি আমার দোকানটাই পাস"
জহির মিয়া বিতৃষ্ণা নিয়ে রৌনকের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে থাকে...
২.
প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়ে রাবেয়ার প্রতিটা রাত কাটে। যন্ত্রণা এজন্য না যে ২৭ বছরের সাজানো সংসার শেষ হয়ে যাবে, এরথেকে রৌনককে সত্যটা জানানোই বেশি কঠিন।বাবাকে সে আদর্শ মানে। দিনে রৌনক আর রাবেয়ার দেখা প্রায় হয় না।ব্যাস্ত জীবন দুজনের। রৌনককে কীভাবে বলবেন, এই ব্যাস্ততার জীবনে ভাঙ্গন আসবে। রাবেয়ার বড্ড ভয় হয়। উঠতি বয়সের ছেলে,রাগে কিছু করে না ফেলে!
সকাল ১০ টায় গাজীপুর থেকে হারুন ভাইয়ের কাছ থেকে প্যাকেট নেবার কথা,এক প্যাকেট পুরিয়া। হিরোইনকে লোকাল ভাষায় পুরিয়া ডাকে হারুন ভাই। সিগারেটে অনভ্যস্ত রৌনক পুরিয়া নিতে সময়মত চলে যায়। ওভারডোজ নিলেই সব সমস্যার একসাথে সমাধান হবে।
হারুন ভাইয়ের খোঁজ দিয়েছে আফরান। ক্লাসের সবাই তাকে গাঞ্জাখোর হিসেবেই চিনে।
আফরান ভাবে নি রৌনকের মত ছেলেও একদিন তার কাছে আসবে,তাও পুরিয়ার খোঁজ নিতে!
এক সপ্তাহ আগেই জয়িতা আন্টির সাথে বাবাকে আবিষ্কার করে রৌনক। বুঝে ফেলে গত কয়েকমাস মা এর কান্নার কারণ।
স্কুল কলেজে তুখোড় ছাত্র হিসেবে রৌনককে সবাই চিনে। মাঝে মাঝে মনে হয়,এত তুখোড় না হলেও হতো। বেঁচে থাকার জন্য এত বুদ্ধিমান না হলেও চলে !
৩.
রৌনকের মৃতদেহটি মেডিকেল কলেজের বারান্দায় পরে আছে। লাশের নাম ঠিকানা জানা যায় নি। ড্রাগের ওভারডোজ। হাফিজ সাহেব বিড়বিড় করে "কুত্তার বাচ্চা" গালি দেন। বাবা মায়ের টাকা উড়িয়ে ড্রাগ খেয়ে আনন্দ করা এই ছেলেগুলাকে দেখে তার বারবার মনে হয় নিঃসন্তান হয়ে ভালই হয়েছে!
রাবেয়া গভীর রাত পর্যন্ত ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন। উঠতি বয়সের ছেলে,কখন কী করে রাবেয়ার ভীষণ ভয় হয় !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯