"আর পারি না,আর পারি না..আমার
ক্লান্তি আমায় কাঁদায়.." দূর থেকে
অর্থহীনের গান ভেসে আসছে !
অর্ণবের
কাছে আজকাল এসব গান খুব বেশি
অর্থহীন লাগে,আর ঘুম থেকে উঠে
এগুলা শুনার মানেই বা কি!
৭টা বাজে,১০ টায় ক্লাস। অর্ণব
বিছানা ছেড়ে উঠে হালকা ব্যায়াম
করে নেয়,প্রতিদিনের অভ্যাস! আয়নার
সামনে দাঁড়ানো নিজের প্রতিচ্ছবি
নিজেকেই মুগ্ধ করে!
অর্ণব রায়হান। ঢাকার নামকরা এক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাত্র দু'বছর
হলো চাকুরীজীবনে প্রবেশ করেছে! এর
মাঝেই সুনাম আর খ্যাতি কোনটারই
অভাব নেই! ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও
বেশ পরিচিতি তার..এখনো বিয়ে না
করায় ছাত্রী মহলে তার পরিচিতি
কিঞ্চিৎ বেশি! সুপাত্রীর অপেক্ষায়
আছেন। মা প্রায় প্রতিদিন কোন না
কোন সুপাত্রীর খবর নিয়ে
আসেন..আবার নিজেই বাতিল করে
দেন! তাই খুব বেশি কথা আগায় না।
অর্ণবের এগুলা নিয়ে কোন তাড়াহুড়া
নেই..সময় আসলে সবই হবে,এটাই তার
ধারণা!
ইউনিভার্সিটির সময় হয়ে গেছে।
বাসা থেকে নেমে গাড়িতে উঠে
বসে। ভার্সিটিরর দূরত্ব বাসা থেকে
খুব বেশি না,তবুও গাড়ি থাকতে পায়ে
হাঁটার কষ্ট করতে ইচ্ছা হয় না । কষ্ট ! এই
শব্দটা কে আবিষ্কার করেছে অর্ণবের
খুব জানতে ইচ্ছা হয়। তার জীবনের
একটা বড় অংশ হয়ে রয়েছে এই
শব্দটা...অতীত বলে উড়িয়ে দিলেও
মাঝে মাঝে প্রচন্ড ঘোর সৃষ্টি করে ! দম
বন্ধ হয়ে আসে অর্ণবের ! কয়েক বছর
আগেও এমন ছিল না । ছিল শুধুই কষ্ট !
তার কষ্টের নাম 'জয়িতা' !
জয়িতার সাথে পরিচয় কলেজে পড়ার
সময়। শান্ত স্বভাবের এই মেয়েটা
আস্তে আস্তে অর্ণবের জীবনের সাথে
কীভাবে জরিয়ে গিয়েছিল অর্ণব তা
নিজেও বুঝতে পারে নি। জয়িতা খুব
সুন্দর গান করতো, আর অর্ণব মুগ্ধ হয়ে
শুনতো! আনমনে জয়িতা তার জীবনের
লুকানো কথাগুলো অর্ণবকে
বলতো...অর্ণব কখনো শুনতো,কখনো শুনতো
না..সে ডুবে থাকতো নিজের ভাল
লাগায়!
সময় খুব দ্রুত সবকিছু গ্রাস করে
ফেলে..কিন্তু জয়িতাকে এত দ্রুত গ্রাস
করে ফেলবে অর্ণব তা বুঝে নি! এক
সন্ধ্যায় জয়িতার সাথে তার শেষ কথা
হয়..
জয়িতা তার শব্দগুলোকে গুছিয়ে
উঠতে পারছিল না...তবুও সে খুব
এলোমেলো ভাবে তার ভেঙে
যাওয়া পরিবার,তাকে একা ফেলে
যাওয়া ভালবাসার মানুষটার কথা
অর্ণবকে বলেছিল...
বাস্তবতার সাথে লড়াই করে ক্লান্ত
হয়ে যাওয়া জয়িতাকে অর্ণব
বলেছিল,"আমি তোকে খুব ভালবাসবো
জয়িতা ! দেখিস সব ঠিক হয়ে
যাবে..বিশ্বাস কর! "
জয়িতা আস্তে করে বলছিল,"আমি
তোকে বিশ্বাস করি"
এরপর বহুদিন জয়িতার খোঁজ পাওয়া যায়
নি..একদিন জানতে পারে জয়িতা
আত্মহত্যা করেছে! অর্ণবের ভীষণ কষ্ট
হচ্ছিলো...জয়িতার কন্ঠ তার মাথায়
ঘুরছিল,"আমার ক্লান্তি আমাকে মুক্তি
দিচ্ছে না"
অনেকক্ষণ যাবৎ ফোন বাজছে...অর্ণবের
ঘোর ভাঙে,মা ফোন দিয়েছে।
"কি রে ক্লাসে না কি তুই? "
"না, জ্যামে বসে আছি। কেন?"
"শোন, আজ তাড়াতাড়ি চলে
আসবি..একটা মেয়ে....খুব ভাল.."
অর্ণব আর কিছু শুনতে পায় না..মাথায়
যন্ত্রণা হচ্ছে ! কোথায় জানি
বাজছে,"আর পারি না, আর পারি
না..আমার ভীষণ ক্লান্তি আমায়
কাঁদায়.."
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৪১