somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারপর

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ৩টা..
আহসান সাহেবের আবার ঘুম ভেঙে গেলো..গত চারদিন যাবৎ এমনটা হচ্ছে !
মাঝরাতে ঘুম ভাঙার মত বাজে ব্যাপার আর নেই ! পরবর্তী রাতটুকু না ঘুমিয়ে কাটাতে হবে। বয়সের দোষ ! আহসান সাহেব বিরক্তি মুখে খাট থেকে নামলেন। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলেই চা এর তৃষ্ণা পায় । এটা আরো বিরক্তিকর। যত বয়স হচ্ছে সব অপছন্দের ব্যাপারগুলা পছন্দের তালিকায় চলে আসছে !

আহসান সাহেব ঘাড় ফিরিয়ে অমৃতার দিকে তাকালেন ! অমৃতাকে জাগানো যাবে না। কি শান্ত ভঙিতে ঘুমুচ্ছে ! দেখলেই মন ভাল হয়ে যায় । গত চল্লিশ বছর ধরে এভাবেই এই শান্ত মুখটা তার মন ভাল করে যাচ্ছে ! কে জানতো এমন একজন তার জীবনে আসবে! কত নাটকীয় ভাবেই না অমৃতার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার..

অমৃতাদের বাড়ি তাদের পাশাপাশিই ছিল..অমৃতার খেলার সময় হলেই তার ডাক পড়তো..অমৃতা বাড়ির পিছে এসে আস্তে করে ডাক দিতো, "বুলু চল না খেলি"
আহসান সাহেবকে বুলু বলার পিছনে এক মজার কারণ ছিল..অমৃতার সবচেয়ে পছন্দের বিড়ালের নাম ছিল বুলু... বুলু হঠাৎ মারা যায়... অমৃতা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।
এরপর অমৃতার মা শর্মিলা কাকি এসে আহসান সাহেবকে বলেন, "বাবা একটু দেখো তো,মেয়েটা তোমার কথা শুনে !" সেদিন অমৃতা আহসান সাহেবকে বুলু ডাকার অধিকার নিয়ে মুখে ভাত তুলে !
এসব কথা এখন পুরনো হয়ে গেলেও আহসান সাহেব ঠিক মনে রেখেছেন। এই স্মৃতি গুলো তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ !

অমৃতা আহসান সাহেবকে তার নিয়মিত খেলার সাথীতে পরিণত করেছিল...আহসান সাহেবও পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলা বাদ দিয়ে অমৃতার পুতুল খেলার সাথী হতেন। খেলার কারণ হিসেবে অমৃতার কথাগুলো সবচেয়ে বড় কারণ ছিল !

"আচ্ছা বুলু তুই আমার বিয়েতে কি দিবি?! অন্নির (অমৃতার আদরের পুতুল) বিয়েতে তো কিছুই দিলি না"

"আচ্ছা বুলু,তুই আমাকে বড় হলে বিয়ে করিস..আমরা এভাবেই খেলবো..তাহলে অন্নিকেও আলাদা ঘরে থাকতে হবে না! ওকে তো তোর মনার সাথেই বিয়ে দিচ্ছি ! "

আহসান সাহেব অমৃতার সব কথাতেই মাথা নেড়ে যেতেন..অনেকটা বাধ্য সন্তানের মত !

মাঝে মাঝে অমৃতা খুব আজব কথা বলতো..
"তুই কি আমাকে সিঁদুর পরাবি নাকি তোদের মাওলানা আসবে!"
অমৃতার আচমকা প্রশ্নে আহসান সাহেব ভেবে পেতেন না কি বললে অমৃতা খুশি হবে..ওর একটু বেশিই মেজাজ!
আহসান শেষে বলতেন, "তুই যা চাস"

অমৃতা খুশি হয়ে গান ধরতো..আর আহসান সাহেব তাকিয়ে থাকতেন, একটা মেয়ে এত অদ্ভুত হয়? কই তার বোনগুলো তো এমন না..নাকি ওরাও কাউকে এভাবেই লাল সিঁদুরের জন্য অনুরোধ করছে কে জানে !

ধীরে ধীরে সময় পাল্টাচ্ছিলো..অমৃতা বড় হচ্ছিলো..তার ঘরের নিয়মের জালগুলো আরো ছড়াচ্ছিলো...একসময় খুব সাধারণভাবেই পুতুল খেলা বন্ধ হয়ে যায়...আহসান সাহেবের এখনো মনে আছে, কত অস্থিরভাবো কাটতো সেই দুপুরগুলো !

এরপর ধীরে ধীরে আহসান সাহেব বাস্তবতার সাথে জড়িয়ে পড়েন..বাবা মারা যান...সংসারের হাল তার কাঁধেই পড়ে..আর ততদিনে তিনি জেনেও যান...এই সমাজে দুজনের ভিন্নধর্মের ভালবাসা পুতুল খেলাতেই সীমাবদ্ধ !

মাঝে অমৃতা আহসান সাহেবের মায়ের সাথে দেখা করতে আসতো...টুকটাক তার সাথে কথাও বলতো...সবই ছিল খুব সাধারণ ভদ্রতা। আহসান সাহেব অবাকভাবে তাকিয়ে থাকতেন....তার খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করতো,অমৃতার কি আজো তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করে কি না....অমৃতা অবশ্য খুব সাধারণভাবেই থাকতো..ছোটবেলার চঞ্চলতার কোন কিছুই তার মাঝে ছিল না..নিয়মের মাঝেই সে নিজেকে তরুণীতে পরিণত করেছিল...

এরপর কোন এক বৈশাখে শর্মিলা কাকি এসেছিলেন অমৃতার বিয়ের দাওয়াত নিয়ে ! ছেলে বিলেতে থাকে,বেশ সুদর্শন..
আহসান সাহেবে ভিতরের রুম থেকে সব শুনছিলেন ! সেই মুহূর্তে কেন জানি তার অমৃতার মুখ খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো....জানতে ইচ্ছে করছিল,সুদর্শন ছেলেটির কথা শুনে অমৃতার মুখ সিঁদুরের মত লালচে হয় কি না !

এরপর নিয়মমত অমৃতার বিয়ের সানাই বেজে উঠে..
আহসান সাহেব বিয়েতে জাননি..সাহসে কুলায় নি..ঘর থেকেই সানাইয়ের করুণ সুর শুনছিলেন ! বাচ্চাদের হইচই তার কানে আসছিল..বারবার নিজেকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছিলেন যে,এমনটাই হবার কথা ছিল..

আহসান সাহেবের এখনো সেই দিনটার কথা মনে আছে ! সন্ধ্যার দিকে কালবৈশাখীর তান্ডব শুরু হয় ! আহসান সাহেব মনে মনে প্রকৃতিকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন...অন্তত এখন আনন্দের সানাই তার কানে যাবে না..
ঠিক সেই সময় দরজায় টোকা পরে..আহসান সাহেব ক্লান্ত ভঙিতে দরজা খুলে দেখেন,অমৃতা ভিজে শাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে !
আহসান সাহেব বুঝতে পারেন,এগুলো সবই তার কল্পনা..তিনি কল্পনাকে প্রশ্রয় দিতে চান নি...কিছুতেই না..

অমৃতা হঠাৎ বলে ওঠে,"বুলু চল!" আহসান সাহেব জানতেন, এমনটা হবার কথা না...তবুও তিনি নিজেকে থামান নি...তার কাছে বাস্তব থেকে কল্পনার অমৃতাকে বেশি ভাল লাগছিল..তিনি তো এটাই চেয়েছিলেন..

এরপর গত চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি এই মেয়েটার সাথেই আছেন..হয়তো সে কল্পনা কিংবা বাস্তব..তাতে কিই বা যায় আসে ! তিনি এই মেয়েটাকে ভালবাসেন...মাঝরাতে তার স্নিগ্ধ মুখ তার মন ভাল করে দেয়....এই বা কম কি? তিনি তো এটাই চেয়েছিলেন !
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×