somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিটাসের কান্না

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা ১:
ইরার জীবনে আজকে সবচেয়ে খুশির দিন । তার ঊনিশ বছরের জীবনে বাবা মা কে দেয়া তার সবচেয়ে বড় উপহার,মেডিকেলের জীবনে পা রাখা ! আশা, আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন পূরণের দিন আজ । এক বছর সে অমানুষিক পরিশ্রম করেছে এখানে আসার জন্য ! প্রথমবার সরকারীতে চান্স না পাওয়ার কষ্ট আজ সে ভুলে গেছে ! ইরার হাতে আজ সবটুকু পৃথিবী!


মেডিকেল কলেজটা দেখার মত সুন্দর ! দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়! প্রথম
দিন শুধু পরিচয় আদান প্রদান ছাড়া কোন ক্লাস হয় না । এর মাঝেই ইরা নতুন বন্ধু পেয়ে গিয়েছে ! ক্লাস শেষে ইরা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার জন্য বের হয় । সাথে রাফিদ,নিমা,রাকিন ও আসে । আজকে তাদেরও খুশির দিন!

ইরা তার বন্ধুদের নিয়ে ল্যাব রুম,লাইব্রেরি,প্রফেসর হল ঘুরে ।
ল্যাব রুমের একপাশে সারি সারি আলমাড়ি রাখা,যেগুলোতে কংকাল রাখা । অন্যপাশে কয়েকটা বোতলে মোমের পুতুল। ইরা ভাল করে লক্ষ্য করার পর বুঝে, এগুলো বায়োলজির বইয়ে পড়া মাতৃগর্ভে শিশুর প্রতিকৃতি !
পিছন থেকে নিমা বলে ওঠে, "এগুলো কি মোমের পুতুল?"
রাফিদ বলে ওঠে," আরেহ না! এরা হল ওই শিশু যারা জন্মের আগে মারা যায়! পরে তাদের বাবা মা এখানে দান করে দিয়ে যান!"
রাফিদের বাবা মেডিকেলের প্রফেসর । তাই আর কেউ কথা বাড়ায় না ।
ইরা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে, ৬ মাসের শিশুটার নিচে লেবেল লাগানো
"নাম- আকাশ মালেক
পিতা- মজিদ মালেক
মাতা- নুরবানু"
ইরার বুঝে,পৃথিবীর আলো দেখতে না পাওয়া এই শিশুটার নাম আকাশ ! বাবা মা হয়তো অনেক স্বপ্ন দেখেছিল এই অনাগত প্রাণটিকে নিয়ে ! কে জানে,হয়তো এতদিনে আকাশের জায়গা আরেকজন এসেছে!


ইরা মনে মনে খুব উত্তেজিত হয়! প্র্যাকটিকেল ভাবে কিছু শিখতে পারলে তার ভীষন ভাল লাগে! এখন তার মনে হচ্ছে,মেডিকেলে কেরিয়ার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়াটা সার্থক হয়েছে! এরকম ইন্টারেস্টিং জিনিস আর কোথায় পাওয়া যায় !


ঘটনা ২ঃ

রাত ১২ টা বাজে । নাজনীন তার পাঁচ নম্বর কাস্টমারের অপেক্ষা করছে! নটি পাড়ায় এটা খুব বেশি রাত না । তবে নাজনীন ১২ টার পর আর কোন কাস্টমার ঘরে নেয় না । সে রাতটা ঘুমাতে পছন্দ করে!
এই নিয়ে সর্দারনীর সাথে তার কম বিবাদ হয় নি । তবে সবসময় সর্দানীই হার মানে । নাজনীন এই পাড়ার সব থেকে রূপবতী ।বাড়তি আয়ের হাত ভাল । একে রাগানো মানে বিশাল ক্ষতি ! নাজনীন এসব সাতপাঁচ ভাবে না । ব্যাবসা সে ব্যাবসার মতই করে !
পানের বাটা নিয়ে নাজনীন বিছানায় বসে । এখান থেকে তেঁতুল গাছের ফাঁকা দিয়ে সামান্য চাঁদ দেখা যায়! আগে চাঁদ দেখলেই গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছা হত ! চাঁদের আলোতে গান গাওয়া তার ভীষণ প্রিয় ছিল ! বিয়ের প্রথম প্রথম তার স্বামীও এই গানের পাগল ছিল ।
স্বামীর কথা মনে আসতেই নাজনীনের গা ঘিনঘিন করে ওঠে! অসম্ভব রূপবতী হওয়ায় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় । প্রথম দুই এক মাস স্বপ্নের মতো কেটেছিলো! এরপর শুরু হয় যৌতুকের জন্য অমানুষিক অত্যাচার! বিয়ের দুই বছরের এমন কোন স্মৃতি নাজনীন মনে করতে পারে না যেখানে শারীরিক যন্ত্রণা ছিল না !

মা বাবার কথা মত সে বাচ্চা নেয় ।বাচ্চার কথাতে যদি রশিদের মন নরম হয়! রশিদ বাচ্চার খবর পায়!নাজনীন রশিদের মাঝে বাবা হবার কোন আনন্দ খুঁজে পায় না । শুধু প্রতিদিনের মার বন্ধ হয় । আর নাজনীন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে !

নাজনীন প্রতিদিন তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো! সে তার জীবনে যা পায়নি,তার সবটুকুই সে উজাড় করে দেবে এই সন্তানের জন্য !
নাজনীন স্বপ্ন দেখতো সুন্দর সংসারের যেখানে আলো হয়ে এসেছে তার সন্তান!

নাজনীনের এখনো সেই দিনের কথা মনে আছে। শুক্রবার সবাই জুম্মার নামাজ পড়তে যখন চলে গেল, রশিদ মোল্লা তাকে নিয়ে নৌকায় ঘুরতে বের হয়। নদীর বুক দিয়ে যাবার সময় নাজনীন তার স্বামীর হাত চেপে ধরে রেখেছিল। তার মনে হচ্ছিল, তার থেকে সুখী বোধহয় আর কেও নেই!
এরপর সেই নৌকা এসে থামে জংশনপুরের এই পতিতাপল্লিতে!
নাজনীন সেদিন সমগ্র শক্তি দিয়ে কেঁদেছিল! কেঁদেছিল এই নষ্ট পৃথিবী থেকে মুক্তির জন্য, তার অনাগত সন্তানটাকে বাঁচানোর জন্য! কোনটাই সে পারে নি...তার ৬ মাসের অবুঝ সন্তানটিকে তারা বাঁচতে দেয় নি!

সে অচেতন হবার আগে শুধু চাদরে মোড়ানো একটা মাংশপিন্ড দেখতে পেয়েছিল! জ্ঞান ফিরার পর থেকে এই পতিতাপল্লিতে! নাজনীন পরে জানতে পারে, সেদিন শুধু সে তার সন্তান হারায় নি...তার মা হবার সব ক্ষমতাও হারিয়েছিল!
নাজনীনের প্রথম প্রথম পাগলের মত লাগতো...এখন আর লাগে না! তার কান্নার সব শক্তিই ফুরিয়ে গেছে!


ঘটনা ৩ :

সকাল আট টা থেকে ইরার ক্লাস শুরু হয় আর শেষ হয় চার টায়। আজকে ল্যাব আছে। তার মানে আজ ছয়টা বাজবে। ইরা ল্যাব রুমে কাজ করতে করতে দীর্ঘশ্বাস চাপায়!
ল্যাব রুমে ফরমালিনের বোতলে রাখা ছয় মাসের শিশুটাকে ইরা যতবারই দেখে তার অস্বস্তি লাগে! তার প্রতিবারই মনে হয় শিশুটা কাঁদছে!
কলেজ বিল্ডিং এ সাধারণ মানুষ ঢুকতে দেয় না! নাজনীন আয়াকে টাকা দিয়ে ঢুকেছে...কোথায় জানি সে শুনেছে,মরা বাচ্চাদের এখানে রাখা হয়!
নাজনীন ধীর পায়ে আগাচ্ছে! কালো বোরখায় নিজেকে আড়াল করা। সভ্য সমাজে তার মত মেয়েদের কেউ যদি চিনে ফেলে!
দোতলার করিডরের শেষ প্রান্তে ল্যাব! নাজনীনের পথ অতটুকুতেই আটকা পরে!
ইরা অনেকক্ষন যাবৎ বোরখা পরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে! মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর...ইরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করে, মেয়েটা ফরমালিনের ভিতরে রাখা ছোট্ট ফিটাসের মত! কিন্তু এই মেয়েটা কে? কেনই বা সে কাঁদছে!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৪
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×